শুদ্ধষাড়ব
ভিন্ন নাম: ষাড়ব

প্রাচীন ভারতীয় সঙ্গীত পদ্ধতিতে মধ্যমগ্রামের রাগ বিশেষ। মতঙ্গের রচিত বৃহদ্দেশী গ্রন্থ মতে- এটি শুদ্ধগীত বা চোক্ষরাগের অন্তর্ভুক্ত একটি রাগ। ধারণা করা হয়, খ্রিষ্টীয় ৪০০ থেকে ৫০০ অব্দের ভিতরে এই রাগের উদ্ভব হয়েছিল।

শাস্ত্রীয় সঙ্গীতে ছয়টি স্বরের রাগকে ষাড়ব জাতির রাগ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। মতঙ্গের রচিত বৃহদ্দেশী গ্রন্থে বলা হয়েছে- ছয়টি স্বর নিয়ে গঠিত বা ছয়টি রাগের মধ্যে এই রাগটি মুখ্য, তাই এর নাম ষাড়ব। এই রাগটি ৭টি স্বর নিয়ে গঠিত, তাই 'ছয়টি স্বর নিয়ে গঠিত; রাগের নামকরণে এই যুক্তি গ্রহণ করা যায় না। দ্বিতীয় অংশে বর্ণিত ছয়টি রাগের মধ্যে মুখ্য- এই কারণে এর নাম ষাড়ব। এটি  যৌক্তিক। কিন্তু কোন ছয়টি রাগের মধ্যে এই রাগটি মুখ্য তা জানা যায় না।

প্রাচীন ভারতে নাট্যরঙ্গে পূর্বরঙ্গ ভাগে এই রাগের ব্যাপক ব্যবহার হতোও।
নাটকের প্রয়োগের সূত্রে বলা যায়, এই রাগে গীত হতো ধ্রুবা গান। এছাড়া রাগের প্রভাব অন্যান্য রাগকে প্রভাবিত করতো। তাই এখানে শুদ্ধ হলো- মুখ্য বা প্রধান অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে। সেই সূত্রে এর নাম শুদ্ধষাড়ব রাগ। এই রাগের গান চচ্চৎপুট তাল ব্যবহৃত হতো।

এই রাগ ব্যবহৃত হতো নাটকের পূর্বরঙ্গে।  এই রাগে নিবদ্ধ গান চচৎপুট তালে পরিবেশিত হতো। গানগুলো চিত্রমার্গে (দুটি মাত্রা নিয়ে সৃষ্ট ১ কলা), বার্তিক মার্গে (চার মাত্রায় ১ কলা) এবং দক্ষিণ মার্গে (৮ মাত্রায় ১ কলা) পরিবেশিত হতো।  

এটি মধ্যমগ্রামসম্বন্ধীয় রাগ। শুদ্ধপঞ্চমী এবং ষড়্জোদীচ্যবা জাতি থেকে এই রাগের উৎপত্তি ঘটেছিল। এই রাগে কাকলী নিষাদ ও অন্তরগান্ধার ব্যবহৃত হতো। উল্লেখ্য বর্তমানে কাকলী নিষাদ হলো- শুদ্ধ নিষাদ এবং অন্তর গান্ধার হলো- শুদ্ধ গান্ধার। এতে প্রসন্নান্ত অলঙ্কার (র্সর্সস) যুক্ত হয়। এই রাগে গান্ধার অল্প প্রয়োগ হতো।
গ্রাম: মধ্যম গ্রাম
আরোহণ:   স র গ (অন্তর) ম প ধ ন (কাকলী) র্স
অবরোহণ: র্স ন (কাকলী) ধ প ম গ (অন্তর) র স
জাতি:সম্পূর্ণ
অংশস্বর /বাদীস্বর: মধ্যম
সমবাদী স্বর: ষড়্‌জ
অনুবাদী স্বর ঋষভ ও পঞ্চম
গ্রহস্বর: মধ্যম
ন্যাস স্বর: মধ্যম
রস: শৃঙ্গার ও হাস্য
এই রাগের আরোহী বর্ণের শেষে প্রসন্নান্ত অলঙ্কার যুক্ত হতো। অর্থাৎ অলঙ্কারে শেষ স্বর মন্দ্র বা ষড়জ হতো। এর আক্ষিপ্তিকা বৃহদ্দেশীতে নেই। শারঙ্গদেবের রচিত সঙ্গীত রত্নাকরে প্রদত্ত আক্ষিপ্তিকা নিচে তুলে ধরা হলো।



তথ্যসূত্র: