গীত
গীত শব্দের সাধারণ অর্থ হলো কণ্ঠসঙ্গীত।  সংস্কৃত শব্দের রূপতাত্ত্বিক বিশ্লেষণ হলো- গৈ (গান করা)+ ত (ক্ত), কর্মবাচ্য। এর সাধারণ অর্থ হলো- 'কণ্ঠের দ্বারা পরিবেশিত সঙ্গীতের সাধারণ নাম। এই বিচারে কণ্ঠের মাধ্যমে পরিবেশিত যে কোনো গানই গীত।

ভারতীয় সঙ্গীত শাস্ত্রের গীত একটি পারিভাষিক শব্দ।  বিশেষ অর্থে এই শব্দটি প্রথম পাওয়া খ্রিষ্টীয় দ্বিতীয় শতাব্দীতে রচিত ভরতের নাট্যশাস্ত্রে। ভরত নাট্যাশাস্ত্রে, ক্রিয়াত্মক সঙ্গীতের পরিবেশনের রীতি অনুসারে গীতকে চারটি ভাগ করেছিলেন। এগুলো হলো- মাগধী, অর্ধমাগধী, সম্ভাবিতা ও পৃথুলা। [ঊনত্রিংশ অধ্যায়। ৭৭-৮০] কিন্তু খ্রিষ্টীয় তৃতীয় শতাব্দীতে ভরতের পুত্র ও শিষ্য শার্দুল শুধু একপ্রকার গীতের উল্লেখ করেছিলেন। এই গীতটি হলো- ভাষাগীতি। এটি ছিল জাতিগানের বাইরে দেশী গীতের একটি প্রকরণ।

খ্রিষ্টীয় চতুর্থ শতাব্দীর সঙ্গীতজ্ঞ যাষ্টিকে মতে গীত ছিল তিন প্রকার। এগুলো হলো- ভাষা, বিভাষা এবং অন্তরভাষা। এই শ্রেণিকরণেও দেশী রাগগুলোকে বিশেষ অর্থে গীত হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়েছিল। তবে যাষ্টিক গীতগুলোকে গ্রামরাগের অধীনস্থ করে- ভাষা, বিভাষা এবং অন্তরভাষা হিসেবে উপস্থাপন করেছিলেন।

যাষ্টিকের সমসাময়িক সঙ্গীতজ্ঞ দুর্গাশক্তি গ্রামরাগ এবং দেশী রাগগুলোকে এক গোত্রে এনে শ্রেণিকরণ করেছিলেন। তিনি এই ধারার সকল গীতকে পাঁচটি ভাগে ভাগ করেছিলেন। এগুলো হলো- চোক্ষ (শুদ্ধা), ভিন্না (ভিন্নকা), গৌড়িকা, রাগগীতি ও  সাধারিতা।

খ্রিষ্টীয় ষষ্ঠ শতাব্দীতে মতঙ্গ পূর্ববর্তী সঙ্গীতজ্ঞদের ভাবনার সাথে তৎকালীন ভারতীয় রাগসঙ্গীতের সংমিশ্রণে একটি গীতের পূর্ণাঙ্গ শ্রেণিকরণ পদ্ধতি উদাহরণসহ ব্যাখ্যা করেন। তাঁর মতে গীত ছিল ৭ প্রকার। এগুলো হলো- চোক্ষ, ভিন্নকা, গৌড়িকা, রাগগীতি, সাধারণী, ভাষা ও বিভাষা। তিনি সে সময়ের প্রচলিত রাগগুলোর প্রকৃতি অনুসারে গ্রামরাগ এবং অন্যান্য দেশী রাগগুলোকে শ্রেণিকরণে 'গীত' শব্দটিকে শব্দ-ঊর্ধ্বক্রমবাচকতার সোপানে বিন্যস্ত করেছিলেন। এই শ্রেণি বিভাজনের উচ্চধাপে ছিল গ্রাম। এরপর নিম্নক্রমিক ধারাটি ছিল- গ্রামরাগ> জাতিরাগ> গীত> গ্রামরাগ ভিত্তিক গীত> রাগ। যেমন-


তথ্যসূত্র: