ভিন্নষড়্জ
উত্তর ভারতীয়
সঙ্গীত পদ্ধতিতে
বিলাবল
ঠাটের
অন্তর্গত রাগ বিশেষ।
খ্রিষ্টীয়
চতুর্থ বা পঞ্চম শতাব্দীতে এই রাগটি উৎপন্ন হয়েছিল। ষাষ্টিকের সময় এই রাগটিকে
গ্রামরাগ হিসেবে প্রচলিত ছিল। যাষ্টিক এই গ্রামের অধীনে ভাষা, বিভাষা ও অন্তরভাষা ভেদে
৯টি ভাষা রাগের উল্লেখ করেছিলেন। এর ভিতরে ভাষা রাগের সংখ্যা ৪টি। এগুলো হল- বিশুদ্ধা, গান্ধারী, বঙ্গালী,
সৈন্ধবী। বিভাষা রাগের সংখ্যা ৩টি। এগুলো হলো: দাক্ষিণাত্যা, শ্রীকণ্ঠী ও পৌরালী।
অন্তরভাষা রাগের সংখ্যা ২টি। এগুলো হলো কালিন্দী ও পুলিন্দী।
খ্রিষ্টীয় ষষ্ঠ শতাব্দীতে প্রচলিত গ্রামরাগগুলোকে যখন গীতি
প্রকরণের অন্তর্ভুক্ত করা হয়, তখন এই রাগটিকে ভিন্না গীতের অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছিল।
এই সময়ের রচিত বৃহদ্দেশীতে- ভিন্ন ষড়জের ভাষারাগের অন্তর্গত যে তা তালিকা দেওয়া
হয়েছে, তা হলো- ত্রাবণী, ষড়্জ ভাষা, মালব, গুর্জরী,
বাহ্যষাড়ব, কৌসলী, গান্ধারী, স্বরবলিতা, ললিতা, নিষাদবতী, তুম্বুর এবং গান্ধারললিতা।
রাজ্যেশ্বর মিত্রে অনূদিত বৃহদ্দেশীতে বলা হয়েছে 'উদ্ধৃততে যে অংশটুকু পাওয়া যায়নি,
তাতে মধ্যমা এবং পার্বতী এই দুটি ভাষার উল্লেখ নেই।
প্রাথমিক পর্যায়ে
'ষড়্জোদীচ্যবতী'
গ্রামরাগ থেকে এই রাগটি উৎপন্ন হয়েছিল। শুদ্ধ ষাড়ব (ষড়্জ) গ্রাম রাগ থেকে কিছুটা
ভিন্ন হওয়ায় গীতি হিসেবে একে ভিন্নকা শ্রেণিতে ফেলা হয়েছিল এবং রাগটিকর নামকরণ করা
হয়েছিল 'ভিন্নষড়্জ'। এর গ্রহস্বর ও অংশস্বর শুদ্ধ ষাড়ব থেকে ভিন্ন ছিল। এছাড়া এই
রাগে অন্তরগান্ধার ও কাকালী নিষাদ
নামক দুটি বিকৃত স্বরের ব্যবহার ছিল।
এই দুটি
রাগের পার্থক্য
গ্রাম রাগ |
গ্রাম রাগ |
গ্রহস্বর |
অংশস্বর |
ন্যাস স্বর |
শুদ্ধ ষাড়ব |
মধ্যম |
মধ্যম |
মধ্যম |
মধ্যম |
ভিন্ন ষড়্জ |
ষড়্জ |
ধৈবত |
ধৈবত |
মধ্যম |
বৃহদ্দেশীতে বর্ণিত এই
রাগের সাধারণ রূপ।
- গ্রাম:
ষড়্জ গ্রাম
- গ্রামরাগ: 'ষড়্জোদীচ্যবতী'
- গীতি: ভিন্নকা
- গ্রহস্বর: ধৈবত
- অংশস্বর: ধৈবত
- ন্যাসস্বর: মধ্যম
- অনুবাদী: ধৈবত
- জাতি: ঔড়ব-ঔড়ব [ঋষভ
ও পঞ্চম বর্জিত]
- ব্যবহৃত বিকৃত স্বর: অন্তর গান্ধার ও কাকলী নিষাদ
- অলঙ্কার: প্রসন্নাদি
- রস: বীভৎস ও ভয়ানক
- তাল:
চচ্চৎপুট
- মার্গ: চিত্রা,
বার্তিক ও দক্ষিণ
- প্রয়োগ: নাটকে
ব্যবহৃত ধ্রুবাগান।
মৃগয়া প্রবৃ্ত্তিতে নায়কের প্রবেশের সময় এই গান গাওয়া হতো।
শারঙ্গদেবের রচিত
সঙ্গীতরত্নাকরে এর আক্ষিপ্তিকা দেওয়া আছে।

খ্রিষ্টীয় দ্বাদশ
শতাব্দীর দিকে শ্রুতি স্বরের অবস্থান পাল্টে যাওয়ার পর, স্বরের অবস্থান না
পাল্টালেও নাম পাল্টে গেছে। যেমন- প্রাচীন সঙ্গীতশাস্ত্রে এতে ব্যবহৃত হতো
অন্তরগান্ধার ও কাকালী নিষাদ। শ্রুতির নবতর বিন্যাসে এই দুটি স্বর আধুনিক কালে
শুদ্ধ গান্ধার ও শুদ্ধ নিষাদ হিসেবে ব্যবহৃত হয়। প্রাচীন পদ্ধতি অনুসারে
কেউ কেউ এই রাগের বাদী স্বর
ধৈবত বলে দাবি করেন। এই মতে সমবাদী স্বর গান্ধার হয়। কিন্তু
প্রাচীন গ্রামরাগে কোনো সম্বাদী স্বর ছিল না। বর্তমানে এই রাগটি অবশ্য ধৈবতকে যাঁরা বাদী স্বর
হিসেবে মান্য করেন, তাঁরা এই রাগটি দিনের প্রথম প্রহরে গেয়ে থাকেন।
এক সময় বাংলা
দেশে এই রাগটিকে কেউ কেউ হিন্দোলী নামে অভিহিত করতেন। প্রাচীন
সঙ্গীতশাস্ত্রে মূলত হিন্দোল বা হিন্দোলক নামে স্বতন্ত্র গ্রামরাগ রাগ ছিল।
আরোহণ:
স
গ মধ ন র্স
অবরোহণ
: র্স নধ
মগ, স
ঠাট
:
বিলাবল
জাতি
: ঔড়ব-ঔড়ব।
বাদীস্বর
: মধ্যম (মতান্তরে ধৈবত)
সমবাদী স্বর
: ষড়্জ (গান্ধার)
অঙ্গ
: পূর্বাঙ্গ।
সময়
:
রাত প্রথম প্রহর।
পকড় : র্স, নধ,
মধনর্স, নধ মগ, মগ স।
তথ্যসূত্র:
- বৃহদ্দেশী। মতঙ্গ। সম্পাদনা রাজ্যেশ্বর মিত্র। বিশ্বভারতী, কলকাতা। পৃষ্ঠা
১৪৭-১৪৮।