পৌরালী
প্রাচীন ভারতীয় সঙ্গীত পদ্ধতিতে ভাষা রাগ বিশেষ। খ্রিষ্টীয় দ্বিতীয়-তৃতীয় শতাব্দীতে ভরতের পুত্র ও শিষ্য শার্দুল এই রাগকে টক্ক ভাষারাগের বিভাষা রাগ হিসেবে উল্লেখ করেছিলেন। ৩০০-৫০০ খ্রিষ্টাব্দের ভিতরে যাষ্টিক এই রাগকে দুটি স্থানে স্বতন্ত্র পরিচয়ে বর্ণনা করেছেন। এর একটি হলো- মালবকৈশিক গ্রামরাগ ের ভাষারাগ এবং ভিন্নষড়্‌জ ভাষা রাগের   বিভাষা রাগ।

শার্দুলের মতে- এই রাগের পরিচয় ছিল-
ভাষারাগ : টক্ক
গীতরীতি: দেশাখ্য (আঞ্চলিক সুর থেকে উদ্ভূত রাগ)
রাগ প্রকৃতি: বিভাষা ।
আরোহণ : স, র, গ, ম, ধ, ন, র্সা
আরোহণ: র্সা, ন , ধ, ম, গ, র, স
জাতি: সম্পূর্ণ-সম্পূর্ণ
অংশস্বর: মধ্যম
ন্যাস স্বর: ষড়্‌জ
এই গ্রন্থের শার্দুলের নির্দেশিত আক্ষিপ্তিকা  নিচে তুলে ধরা হলো।  [পৃষ্ঠা: ২৪০]
        মা মা মা মা গা রী রী রী সা রী মা রী গা গা রিগ রিগ
        সা সা নী ধা মা ধা  মা মা ধা ধনি সা নী গা গা গা নী ধা
        নী সা সা মা নী গা মা পা ধা নী নিধ পা ধা নী ধা পা মা
        মা মা মা গা মা গা রিরি গা সা নী সা।
                                            ॥পৌরালী ॥

যাষ্টিকের মতাআনুসারে পৌরালী
বৃহদ্দেশী গ্রন্থে যাষ্টিকের উদ্ধৃতিতে মালবকৈশিক গ্রাম রাগের অষ্ট ভাষা রাগের নাম দেওয়া হয়েছে, তাতে পৌরালীর নাম নেই। [পৃষ্ঠা: ১৯২]।  কিন্তু মালবকৈশিকের বর্ণনা অংশে এই রাগটিকে মালবকৈশিকের প্রথম রাগ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। [পৃষ্ঠা: ২০৪-২০৫] এই গ্রন্থে পরে [পৃষ্ঠা: ২২৭] ভিন্নষড়্‌জ ের  বিভাষা রাগ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।

বৃহদ্দেশীতে বর্ণিত মালবকৈশিক গ্রাম রাগের পৌরালী ভাষারাগ

গ্রাম: মধ্যমগ্রাম
গ্রামরাগ: মালবকৈশিক
রাগ প্রকৃতি: ভাষা (গীত) । শার্দুল মতে- টক্ক ভাষারাগের বিভাষা রাগ
আরোহণ : স, র, গ, ম, ধ, কাকলী নিষাদ, র্সা
আরোহণ: র্সা, কাকলী নিষাদ, ধ, ম, গ, র, স
জাতি: সম্পূর্ণ-সম্পূর্ণ [কাকলী নিষাদ ব্যবহৃত হয়]
অংশস্বর: মধ্যম
ন্যাস স্বর: ষড়্‌জ
পৌরালী রাগের আক্ষিপ্তিকা

বৃহদ্দেশীতে বর্ণিত ভিন্নষড়্জ গ্রাম রাগের পৌরালী বিভাষা রাগ
বৃহদ্দেশী গ্রন্থে যাষ্টিকের মতানুসারে এই রাগটিকে ভিন্নষড়জের অন্তর্গত বিভাষা রাগ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। [পৃষ্ঠা: ২২৭]

এই মতে এই রাগের যে বিবরণ পাওয়া যায়, তা হলো- এই রাগে ঋষভের প্রয়োগ দুর্বল। তারপরেও মধ্যম, ঋষভ এবং পঞ্চম- এই তিন স্বরের মধ্যে প্রায়ই স্বরসংযোগ হয়। একে নাগলোকের প্রিয় রাগ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। ষাষ্টিকের এই বর্ণনার সাথে রাগের অন্যান্য পরিচয় দেওয়া হয় নি। তবে এই রাগের স্বরবিস্তার দেওয়া আছে। নিচে বৃহদ্দেশী থেকে স্বরব-বিস্তারটি তুলে ধরা হলো।


তথ্যসূত্র: