টক্ক
প্রাচীন ভারতীয় সঙ্গীত পদ্ধতিতে গ্রামরাগ বিশেষ। এই রাগের প্রথম উল্লেখ পাওয়া যায়- বৃহদ্দেশী গ্রন্থে শর্দুলের (খ্রিষ্টীয় তৃতীয় শতাব্দী) উদ্ধৃতিতে টক্ক ভাষা রাগের উল্লেখ রয়েছে। এই ভাষারাগের রাগের ৭টি বিভাষা রাগের উল্লেখ করা হয়েছে। এগুলো হলো- দেবালবর্ধনী, পৌরালী, ত্রাবণী, তানবলিতিকা, দোহ্যা, শার্দূলীঅলঘ্বী

শার্দুলে পরে খ্রিষ্টীয় চতুর্থ শতাব্দীর সঙ্গীতজ্ঞ যাষ্টিকের রচিত গ্রন্থে এই রাগকে গ্রামরাগ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। বৃহদ্দেশীতে যাষ্টিকের উদ্ধৃতিতে বলা হয়েছে- এই রাগের অধীনে ১৬টি ভাষারাগ ছিল। এগুলো হলো- ত্রবণা, ত্রবোণদ্ভবা, বেরঞ্জিকা, ছেবাটী, মালবেসরী, গুর্জরী, সৌরাষ্ট্রিকা, সৈন্ধবী, বেসরিকা, পঞ্চম, রবিচন্দ্রিকা, অম্বাহেরী, ললিতা, কোলাহলী, মধ্যমগ্রামিকা, গান্ধারপঞ্চমী। মূল রাগের ভিন্নভাবে উপস্থাপনের সূত্রে ভাষারাগের উদ্ভব হয়েছিল। যাষ্টিকের মতে- ভাষারাগসমূহ গ্রামরাগ থেকে উদ্ভূত হয়েছে এবং ভাষা থেকে বিভাষা (বিভাসিকা) রাগসমূহ উদ্ভব হয়েছে।

যাষ্টিকের পরে  খ্রিষ্টীয় চতুর্থ শতাব্দীর সঙ্গীতজ্ঞ কশ্যপ বেসরা গীতসম্পর্কে উল্লেখ করেছিলেন- 'স্থায়ী, অন্তরা, আরোহী, অবরোহী, -এই  চতুর্বর্ণের প্রয়োগ, যা শোভিত হয়ে রাগপ্রাপ্তি ঘটায় এবং এতদ্বারা সম্পূর্ণতা প্রাপ্তি হয়, তাকে সেই কারণে রাগ আখ্যা প্রদান করা হয়।'  তাঁর মতে- এই পর্যায়ের মুখ্য রাগ হলো- টক্ক। তিনি টক্ক রাগকে লক্ষ্মীর প্রীতিকার মুখ্যরাগ হিসেবে উল্লেখ করেছেন।[বৃহদ্দেশী। পৃষ্ঠা ১৬২]

শার্ঙ্গদেব তাঁর সঙ্গীতরত্নাকর গ্রন্থের রাগবিবেকাধ্যায়ের প্রথম প্রকরণে ২১ (খ)-৪৭-এ টক্ক রাগের ২১টি ভাষা রাগের নামোল্লেখ করেছেন। এগুলো হলো- শ্রবণা (ত্রবণা), শ্রবণোদ্ভোবা (ত্রবোণদ্ভবা), বৈরঞ্জী, মধ্যমগ্রামদেহা (মধ্যমগ্রামিকা), মালবেসরী, ছেবাটী, সৈন্ধবী, কোলহলা (কোলাহলী), পঞ্চমলক্ষিতা, সৌরাষ্ট্রী (সৌরাষ্ট্রিকা), পঞ্চমী (পঞ্চম), বেগরঞ্জিনী,  গান্ধারপঞ্চমী, মালবী, তানবলিতা,  ললিতা, রবিচন্দ্রিকা, ভানা, অম্বাহেরিকা(অম্বাহেরী), দোহ্যা ও বেসরী (বেসরিকা)

টক্করাগের বিভাষা রাগসমূহ
শার্ঙ্গদেব তাঁর সঙ্গীতরত্নাকর গ্রন্থের রাগবিবেকাধ্যায়ের প্রথম প্রকরণে ২১ (খ)-৪৭-এ টক্ক রাগের ৪টি বিভাষা রাগের উল্লেখ করেছেন। এগুলো হলো- দেবারবর্ধনী, আন্ধ্রী, গুর্জরী ও ভাবনী।

টক্ক রাগের পরিচিত
গ্রাম: ষড়্‌জ গ্রাম
রাগ প্রকৃতি:  গ্রামরাগ, বেসরা।
রাগ-উৎস:  ষড়্‌জ গ্রামের অন্তর্গত শুদ্ধ জাতির ধৈবতী এবং বিকৃত জাতির ষড়্‌জমধ্যমা জাতি থেকে উৎপন্ন হয়েছে।
জাতি: সম্পূর্ণ-সম্পূর্ণ [অন্তর গান্ধার ও কাকলী নিষাদ ব্যবহৃত হয়। নিষাদ ও পঞ্চমের অল্প প্রয়োগ হয়]
অংশস্বর: ষড়্‌জ
গ্রহস্বর: ষড়্‌জ
ন্যাস স্বর: ষড়্‌জ
অলঙ্কার: প্রসন্নান্ত বর্ণালঙ্কার
তাল: চচ্চৎপুট তাল
মার্গ: চিত্র, বার্তিক ও দক্ষিণ
রস শুদ্ধবীর, বীর ও অদ্ভুত।
এই তথ্যানুসারে ধারণা করা যায়, এর রাগটি ট্ক্ক দেশের দেশী রাগ ছিল। পরে রাগটিকে শাস্ত্রীয় রাগ হিসেবে গ্রহণ করা হয়েছিল। সঙ্গীতরত্নাকরে সূত্রে বলা হয় এই রাগের উৎপত্তি ঘটেছিল ষড়্‌জ-মধ্যম-ধৈবতী থেকে। এর আক্ষিপ্তিকা দেওয়া আছে।


তথ্যসূত্র:
  • বৃহদ্দেশী। মতঙ্গ। সম্পাদনা রাজ্যেশ্বর মিত্র। সংস্কৃত পুস্তক ভাণ্ডার। ১৯৯২। অধ্যায়: রাগ। 
  • সঙ্গীতরত্নাকর। সুরেশচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায় অনূদিত। রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়খ কলিকাতা। শ্রাবণ ১৪০৮।