সৈন্ধবী
প্রাচীন ভারতীয় সঙ্গীত পদ্ধতিতে ভাষা রাগ বিশেষ। ৩০০-৫০০ খ্রিষ্টাব্দের ভিতরে বিকশিত সঙ্গীত রীতি অনুসারে  যাষ্টিক যে সকল সঙ্গীত বিষয়ক তথ্য উপস্থাপন করেছিলেন, তাঁরই ভিত্তিতে খ্রিষ্টীয় ষষ্ঠ শতাব্দীতে মতঙ্গের রচিত বৃহদ্দেশী গ্রন্থ এই রাগের পরিচয় তুলে ধরা হয়েছে।

বৃহদ্দেশী গ্রন্থে বর্ণিত টক্ক রাগের অন্তর্গত ১৬টি ভাষা রাগের ভিতরে সৈন্ধবী ছিল একটি রাগ। সিন্ধু দেশের দেশী রাগ হিসেবে এর নামকরণ করা হয়েছিল- সৈন্ধবী। এই রাগের ষড়্জ-ধৈবত, গান্ধার-মধ্যম  এবং উভয় স্বরই গমকযুক্ত হয়  তবে এদের ভিতরে ধৈবতের ব্যবহার প্রাধান্য পায়।

সঙ্গীতরত্নকরের মতে- সৈন্ধবী চার প্রকার। এগুলো হলো- টক্ক ভাষা জাত, পঞ্চম ভাষাজাত, মালবকৈশিক-জাত এবং ভিন্নষড়্‌জ-জাত। নিচে এই সৈন্ধবীগুলো সম্পর্কে আলোকপাত করা হলো।

টক্ক-জাত সৈন্ধবী রাগের পরিচিতি

গ্রাম: ষড়্‌জ গ্রাম
গ্রামরাগ: টক্ক
রাগ প্রকৃতি: ভাষা (গীত)
আরোহণ : স, র, অন্তর গান্ধার, ম, প, ধ, কাকলী নিষাদ, র্সা
আরোহণ: র্সা, কাকলী নিষাদ, ধ, প, ম, অন্তর গান্ধার, র, স
জাতি: সম্পূর্ণ-সম্পূর্ণ
অংশস্বর: মধ্যম
ন্যাস স্বর: ষড়্‌জ

টক্ক-জাত সৈন্ধবী রাগের আক্ষিপ্তিকা। বৃহদ্দেশী [পৃষ্ঠা: ১৯৮-১৯৯]

মালকৈশিক-জাত সৈন্ধবী রাগের পরিচিতি
সিন্ধ দেশে উদ্ভব বলে এর নাম সৈন্ধবী। সিন্ধু দেশের  লোক গানের সুর অবলম্বনে এই রাগটি উদ্ভব হয়েছিল। এই কারণে একে দেশাখ্যা রাগ শ্রেণির রাগ বলা হয়। এই রাগ ষড়্‌জ, মধ্যম, নিষাদ এবং ঋষভের ব্যবহার অধিক হয়ে থাকে। নাট্যসঙ্গীতে বন্ধু-সম্পর্কিত ধ্রুবা গানে এই রাগের ব্যবহার ছিল। বৃহদ্দেশীতে যাষ্টিকের রাগবিধির কথাই বিশেষভাবে বলা হয়েছে।
গ্রাম: মধ্যমগ্রাম
গ্রামরাগ: মালবকৈশিক
রাগ প্রকৃতি: ভাষা (গীত)
আরোহণ: স, র, অন্তর গান্ধার, ম, প, ধ, কাকলী নিষাদ, র্সা
আরোহণ: র্সা, কাকলী নিষাদ, ধ, প, ম, অন্তর গান্ধার, র, স
জাতি: সম্পূর্ণ-সম্পূর্ণ
গ্রহস্বর: ষড়্‌জ
অংশস্বর: ষড়্‌জ
ন্যাস স্বর: ষড়্‌জ
মালবকৈশিক-জাত সৈন্ধবী রাগের আক্ষিপ্তিকা। বৃহদ্দেশী [পৃষ্ঠা: ২০৮]

সঙ্গীত রত্নাকরে মতে- এই রাগ নিষাদ ও গান্ধার বর্জিত ছিল। এই বিচারে একে ঔড়ব-ঔড়ব জাতির রাগ বলা হয়েছে। এই গ্রন্থে পঞ্চমের ব্যবহার ছিল দুর্বল। মন্দ্র ষড়জের ব্যবহার ছিল অধিক।

পঞ্চম-জাত সৈন্ধবী রাগের পরিচিতি
 
[পৃষ্ঠা: ২১৯-২২০]
দক্ষিণ ভারতীয় সঙ্গীত পদ্ধতির খরহরপ্রিয়া মেলের অন্তর্গত রাগ বিশেষ। এই রাগটি পঞ্চমের বিভাষা রাগ বলা হয়েছে। এই রাগে পঞ্চমের ব্যবহার উজ্জ্বল। এতে ষড়্‌জ-মধ্যম স্বরসংবাদ পরিলক্ষিত হয়।

গ্রাম: ষড়্‌জ গ্রাম
রাগ:  পঞ্চম
রাগ-প্রকৃতি:
বিভাষা রাগ
আরোহণ: স, র, অন্তর গান্ধার, ম, প, ধ, কাকলী নিষাদ, র্সা
আরোহণ: র্সা, কাকলী নিষাদ, ধ, প, ম, অন্তর গান্ধার, র, স
জাতি: সম্পূর্ণ-সম্পূর্ণ।
অংশস্বর: পঞ্চম
ন্যাস স্বর: পঞ্চম

পঞ্চম-জাত সৈন্ধবী বিভাষা রাগের আক্ষিপ্তিকা। বৃহদ্দেশী [পৃষ্ঠা: ২১৯-২২০]


তথ্যসূত্র: