মালবকৈশিক
প্রাচীন ভারতীয় সঙ্গীত পদ্ধতিতে গ্রামরাগ বিশেষ।  ধারণা করা হয় এই রাগ মালব অঞ্চলে খ্রিষ্টীয় পঞ্চম শতাব্দীর দিকে উৎপন্ন হয়েছিল। এই রাগের প্রথম উল্লেখ পাওয়া যায় মতঙ্গের বৃহদ্দেশী গ্রন্থে খ্রিষ্টীয় পঞ্চম শতাব্দীর সঙ্গীতজ্ঞ যাষ্টিকের উদ্ধৃতিতে। সে সময়ে এই রাগটি ছিল- মধ্যম গ্রাম থেকে উৎপন্ন গ্রামরাগ । এই বিচারে বলা যায়- এই গ্রাম রাগটির উদ্ভব হয়েছিল- পঞ্চম শতাব্দীর সঙ্গীতজ্ঞ যাষ্টিকের আমলে।

খ্রিষ্টীয় ষষ্ঠ শতাব্দীতে মতঙ্গের রচিত বৃহদ্দেশী গ্রন্থ মতে- এই রাগটির গঠন প্রকৃতি নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। এই গ্রন্থ মতে- রাগটি উৎপন্ন হয়েছিল- মধ্যম গ্রামের বিকৃত জাতি কৈশিকী থেকে। একে বিকৃত জাতি বলা হয়েছে কারণ- এই জাতিগান তৈরি হয়েছিল- ষড়্‌জগ্রামের ষাড়্‌জী, নৈষাদী এবং মধ্যম গ্রামের গান্ধারী, মধ্যমা পঞ্চমী-এর সংমিশ্রণে। অর্থাৎ খ্রিষ্টীয় পঞ্চম-ষষ্ঠ শতাব্দীতে এই রাগটি, মধ্যম গ্রাম থেকে উৎপন্ন একটি মিশ্র রাগ হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছিল।  এই রাগে ধৈবতের অল্প প্রয়োগ হয়।

খ্রিষ্টীয় ষষ্ঠ শতাব্দীর ভিতরে দেশী সুরাবলম্বনে আরও বহুরাগের  হয়েছিল।  এই সময়ের ভিতরে প্রাচীন শাস্ত্রীয় গীতসমূহকে সাতটি ভাগে ভাগ করা হয়েছিল। এগুলো হলো- শুদ্ধা ( চোক্ষ), ভিন্নকা ,গৌড়িকা , রাগগীতি, সাধারণী, ভাষাও বিভাষা এর ভিতরে হিন্দোলকে রাগগীতির অন্তর্ভুক্ত রাগ হিসেবে বিবেচিত হয়েছিল।

বৃহদ্দেশী থেকে প্রাপ্ত এই রাগের তথ্য নিচে দেওয়া হলো।

মালবকৈশিক গ্রামরাগের পরিচিতি
গ্রাম: মধ্যমগ্রাম
রাগ প্রকৃতি:  গ্রামরাগ, বেসরা
রাগ-উৎস:  মধ্যম গ্রামের অন্তর্গত কৈশিকী গ্রামরাগ
গীতি-লক্ষণ: রাগগীত
জাতি: সম্পূর্ণ-সম্পূর্ণ [কাকলী নিষাদ ব্যবহৃত হয়।]
অংশস্বর: ষড়্‌জ
গ্রহস্বর: ষড়্‌জ
ন্যাস স্বর: ষড়্‌জ
অলঙ্কার: প্রসন্নমধ্য বর্ণালঙ্কার
তাল: চচ্চৎপুট তাল
মার্গ: চিত্র, বার্তিক ও দক্ষিণ
রস: বীর, রৌদ্র, অদ্ভুত, বিপ্রলম্ভশৃঙ্গার।
খ্রিষ্টীয় দ্বাদশ-ত্রয়োদশ শতাব্দীতে রচিত সঙ্গীত নারদের রচিত সঙ্গীতমকরন্দঃ গ্রন্থে একে সরাসরি রাগ হিসেব উল্লেখ করা হয়েছে। খ্রিষ্টীয় ত্রয়োদশ শতাব্দীতে শার্ঙ্গদেব রচনা করেন সঙ্গীতরত্নাকর। এই গ্রন্থে তিনি মালবকৈশিককে বেসরা  রাগ নামে অভিহিত করেছে। সঙ্গীতরত্নাকর থেকে এই রাগের আক্ষিপ্তিকা তুলে ধরা হলো।

বৃহদ্দেশীতে যাষ্টিকের উদ্ধৃতিতে বলা হয়েছে- এই রাগের অধীনে ৮টি ভাষারাগ ছিল। এই রাগের অধীনস্থ রাগের সংখ্যা ৮টি। এগুলো হলো- পৌরালী (শুদ্ধা), আদ্যবেসরিকা, হর্ষপুরী, মাঙ্গলী, সৈন্ধবী, আভীরী, খঞ্জরী, গুঞ্জরী।


তথ্যসূত্র: