''ষড়্জমধ্যমগান্ধারাস্ত্রয়ী গ্রামাঃ প্রকীতর্তিতা।নারদের সময়ে প্রচলিত তিনটি গ্রাম ছিল যড়্জ, গান্ধার ও মধ্যম। নারদ এই সকল রাগের প্রচলনের স্থান হিসেবে পৌরাণিক ভাবনা থেকে লিখেছিলেন- পৃথিবীতে ষড়্জগ্রাম, ভুর্বলোকে মধ্যমগ্রাম এবং স্বর্গলোকে গান্ধার গ্রাম প্রচলিত ছিল। নারদ যদিও ষড়্জ, মধ্যম ও গান্ধার গ্রামের কথা উল্লেখ করেছেন, কিন্তু সে সময়ে গান্ধার গ্রামের প্রচলন ছিল না। তবে গান্ধার গ্রাম সম্পর্কে নারদ বিশেষভাবে অবগত ছিলেন। নারদীয় শিক্ষায় পাওয়া যায় ৭টি গ্রামরাগের কথা। এগুলো হলো- ষড়জগ্রাম, পঞ্চম, কৈশিক, কৈশিক মধ্যম, মধ্যমগ্রাম, সাধারিত ও ষাড়ব। এগুলোর উদ্ভব হয়েছিল গ্রাম থেকে।
ভূলোকজ্জায়তে ষড়্জো ভূবর্লোকচ্চা মধ্যমঃ৬
সর্গান্ননাত্র গান্ধারো নারদস্য মতং যথা।
স্বররাগবিশেষণ গ্রামরাগো ইতি স্মৃতাঃ। ৭
গ্রাম সম্পর্কে প্রথম বিস্তৃত তথ্য পাওয়া যায়-
খ্রিষ্টীয় দ্বিতীয় শতাব্দীতে ভরতের নাট্যশাস্ত্রে। ভারতের নাট্যশাস্ত্রে দুটি গ্রামের উল্লেখ পাওয়া যায়। এই গ্রাম দুটি হলো- ষড়্জ
গ্রাম ও মধ্যম গ্রাম (দ্বৌগ্রামৌ ষড়্জোমধ্যমশ্চেতি।
ষড়্জ গ্রামের মধ্যমই হতো মধ্যমগ্রামের গ্রামের ষড়্জ।
কিন্তু এক্ষেত্রে পঞ্চমের ছিল তিন শ্রুতি এবং ধৈবতের হতো চার শ্রুতি। এই বিচারে
মধ্যম গ্রামের স্বরবিন্যস দঁড়িয়েছিল নিম্নরূপ
শ্রুতি সংখ্যা ও নামম | নাট্যশাস্ত্রে বর্ণিত মধ্যম গ্রামের শুদ্ধস্বর | নাট্যশাস্ত্রে বর্ণিত ষড়্জ গ্রামের শুদ্ধস্বর |
১. তীব্রা | ||
২. কুমুদ্বতী | ||
৩. মন্দা | ||
৪. ছন্দোবতী |
মধ্যম |
ষড়্জ |
৫. দয়াবতী | ||
৬. রঞ্জনী | ||
৭. রক্তিকা |
পঞ্চম |
ঋষভ |
৮. রৌদ্রী | ||
৯. ক্রোধা |
গান্ধার |
|
১০. বজ্রিকা | ||
১১. প্রসারিণী |
ধৈবত |
|
১২. প্রীতি | ||
১৩. মার্জনী |
নিষাদ |
মধ্যম |
১৪. ক্ষিতি | ||
১৫. রক্তা |
|
|
১৬. সন্দীপিনী | ||
১৭. আলাপিনী |
ষড়জ |
পঞ্চম |
১৮. মদন্তী | ||
১৯. রোহিণী | ||
২০. রম্যা |
ঋষভ |
ধৈবত |
২১. উগ্রা |
|
|
২২. ক্ষোভিণী |
গান্ধার |
নিষাদ |
খ্রিষ্টীয় মতঙ্গ তাঁর বৃহদ্দেশী গ্রন্থে- ষড়্জ গ্রাম ও মধ্যম গ্রামকে সর্বলোকের উপযোগী বিবেচনা করে বলেছেন-
সমূহবাচিনৌ গ্রামৌ স্বর-শ্রুত্যাদিসংযুতৌ।
যথা কুটুম্বিনঃ সর্ব একীভূতা বসন্তী হি।
সর্বলোকস্য স গ্রামো যত্র নিত্যং ব্যবস্থিতিঃ॥
অর্থাৎ সর্বলোকের রীতি অনুসারে কোন গ্রামে গৃহস্থ যেমন সর্বদাই তার পরিবারের সদস্যদের নিয়ে একত্রে বসবাস করে তেমনি সংগীতেও স্বর-শ্রুতি ইত্যাদির সমন্বয়কে গ্রাম বলে।
মধ্যম গ্রাম থেকে উৎপন্ন হয়েছিল গ্রাম রাগ। আর এই
গ্রামরাগগুলো ব্যবহৃত হতো নাটকের ধ্রুবাগানে। ভরত জাতিগান হিসেবে মধ্যম গ্রাম থেকে
উৎপন্ন গ্রামরাগগুলোকে যে ভাবে ভাগ করেছিলেন, তা নিচে তুলে ধরা হল-
মধ্যম গ্রামের সামগ্রিক শ্রেণিকরণ
মধ্যম গ্রামজাত জাতি: মোট ১১টি জাতি। এগুলো হলো- আন্ধ্রী, কর্মারবী, কৈশিকী, গান্ধারপঞ্চমী, গান্ধারী, নন্দয়ন্তী, মধ্যমা, পঞ্চমী, রক্তগান্ধারী, গান্ধারোদীচ্যবা ও মধ্যমোদীচ্যবা । এই রাগগুলো শুদ্ধ ও বিকৃত হিসেবে বিভাজিত ছিল।
- শুদ্ধ জাতি: মধ্যমগ্রামের শুদ্ধ শ্রেণিতে জাতি ছিল ৩টি। এগুলো হলো- গান্ধারী, মধ্যমা, পঞ্চমী।
- বিকৃত জাতি: একাধিক জাতির সংমিশ্রণে সৃষ্ট জাতিগানে বিকৃত জাতি হিসেবে বিবেচনা করা হতো। বিকৃত শ্রেণিতে ছিল- আন্ধ্রী, কর্মারবী, কৈশিকী, গান্ধারপঞ্চমী, গান্ধারোদীচ্যবা, নন্দয়ন্তী, মধ্যমোদীচ্যবা, রক্তগান্ধারী
মধ্যমগ্রাম থেকে উৎপন্ন গীতসমূহ
খ্রিষ্টীয় মতঙ্গ তাঁর বৃহদ্দেশী গ্রন্থে- ষড়্জ গ্রাম ও মধ্যম গ্রামকে সর্বলোকের উপযোগী বিবেচনা করে বলেছেন-
সমূহবাচিনৌ গ্রামৌ স্বর-শ্রুত্যাদিসংযুতৌ।মতঙ্গের মতে- সামবেদ থেকে জাত স্বরসমূহ থেকে ষড়্জ ও মধ্যম গ্রামের উৎপত্তি হয়েছে। উভয় গ্রামের মধ্যে প্রধান বা মুখ্য গ্রাম হচ্ছে ষড়জ গ্রাম। গ্রামের এই সাধারণ কাঠামোর উপর ভিত্তি করে আরোহণ ও অবরোহণের সূত্রে তৈরি হয়েছিল মূর্চ্ছনা।
যথা কুটুম্বিনঃ সর্ব একীভূতা বসন্তী হি।
সর্বলোকস্য স গ্রামো যত্র নিত্যং ব্যবস্থিতিঃ॥
অর্থাৎ সর্বলোকের রীতি অনুসারে কোন গ্রামে গৃহস্থ যেমন সর্বদাই তার পরিবারের সদস্যদের নিয়ে একত্রে বসবাস করে তেমনি সংগীতেও স্বর-শ্রুতি ইত্যাদির সমন্বয়কে গ্রাম বলে।
প্রাথমিকভাবে গ্রাম নির্ধারিত হয়েছিল শুদ্ধ স্বরের বিচারে। এই বিচারে মূর্চ্ছনাগুলো ও তৈরি হয়েছিল। গ্রামভেদে এসকল মূর্ছনার প্রত্যেকটির স্বতন্ত্র নাম ছিল। দেখুন: মধ্যম গ্রামের মূর্ছনা