গুর্জরী রাগ
ভারতীয় সঙ্গীত পদ্ধতিতে একটি রাগ। সমতুল্য নাম গুজ্জরী, গুঞ্জরী।

খ্রিষ্টীয় ষষ্ঠ শতাব্দীতে রচিত বৃহদ্দেশী গ্রন্থে বলা হয়েছে- এই রাগের উৎপন্ন হয়েছিল টক্ক গ্রামরাগ থেকে। এই গ্রন্থে এই রাগের পরিচয়ে বলা হয়েছে, এটি একটি টক্ক রাগের অন্তর্গত ভাষারাগ। এটি গুর্জর দেশের দেশী রাগ ছিল। এই রাগের নিকটবর্তী রাগ ছিল সৌরাষ্ট্রিকা

বৃহদ্দেশী গ্রন্থে বর্ণিত গুর্জরী রাগের পরিচয়
গ্রাম: ষড়্‌জ গ্রাম
গ্রামরাগ: টক্ক
রাগ প্রকৃতি: ভাষা (গীত)
আরোহণ : স, র, অন্তর গান্ধার, ম, প ধ, কাকলী নিষাদ, র্সা
আরোহণ: র্সা, কাকলী নিষাদ, ধ, প, ম, অন্তর গান্ধার, র, স
জাতি: সম্পূর্ণ-সম্পূর্ণ
অংশস্বর: নিষাদ
ন্যাস স্বর: ষড়্‌জ
গুর্জরী রাগের আক্ষিপ্তিকা। বৃহদ্দেশী

প্রাচীন ভারতীয় প্রবন্ধগানের সলাগসূড় ধারার উৎপন্ন ধ্রুব গান এবং ধ্রুবা গান-এ এই রাগের ব্যবহার ছিল। প্রাচীন প্রবন্ধগানের স্বতন্ত্র ধারা হিসেবে উৎপন্ন হয়েছিল-চর্যাপদ। খ্রিষ্টীয় ৬৫০ থেকে ১২০৪ অব্দের ভিতরে বাংলা গানে এই রাগ প্রথম ব্যবহৃত হয়েছিল চর্যাগীতি-তে। হরপ্রসাদ শাস্ত্রী-কর্তৃক উদ্ধারকৃত গ্রন্থে এই রাগের গান সংখ্যা। এই রাগে নিবদ্ধ গানের সংখ্যাসংখ্যা ৪টি। এই গানগুলো হলো-

  1. ভবণই গহণ গম্ভীর বেগেঁ বাহী [তথ্য] [পদ সংখ্যা ৫]
  2. আপণে রচি রচি ভব নির্ব্বাণা [তথ্য] [পদ সংখ্যা ২২]
  3. আই এ অণু অনা এ জগ রে ভাংতিএঁ সো পড়িহাই [তথ্য]   [পদ সংখ্যা ৪১] এই পদে রাগের নাম উল্লেখ আছে -কাহ্ণু গুংজরী (কহু গুজ্জরী)
  4. কমল কুলিশ মাঝেঁ ভইঅ মইলী  [তথ্য] [পদ সংখ্যা ৪৭]
সুলতান আলাউদ্দীন খিলজি রাজত্বকালে (১২৯৬-১৩১৬ খ্রিষ্টাব্দ), বৈজু বাওরাগোপাল নায়ক এই রাগে ধ্রুপদ রচনা করেছিলেন। এঁদের রচিত ভৈরবী রাগে নিবদ্ধ ধ্রুপদের নমুনা পাওয়া যায়। পরবর্তী সময়ে গুর্জরী রাগে নিবদ্ধ গান রচনা করেছিলেন- তানসেন

বৈজুবাওরা রচিত ধ্রুপদ
তানসেনের রচিত ধ্রুপদ দক্ষিণ ভারতীয় পদ্ধতিতে এই রাগটিকে মায়ামালবগৌড় বা মায়ামালবগৌল মেলের অন্তর্গত রাগ হিসেবে গ্রহণ করা হয়েছে। দক্ষিণভারতীয় পদ্ধতিতে এর স্বরগুলোও হলো- আরোহ-অবরোহ হলো স র গু ম প ধ নু র্স- স ধ নু প ম গু র স। উত্তর ভারতীয় পদ্ধতিতে এর সমতুল্য মায়ামালবগৌড় -এর সমতুল্য ঠাট ভৈরব।

বর্তমানে উত্তর ভারতীয় সঙ্গীত পদ্ধতিতে এই রাগের যে পরিচয় পাওয়া যায়, তা হলো-

আরোহণ: স জ্ঞ ম প দ ন র্স
অবরোহণ: র্স ন দ প ম জ্ঞ ঋ স
ঠাট: ভৈরবী
জাতি: ষাড়ব-সম্পূর্ণ
বাদীস্বর:দ
সমবাদী স্বর:জ্ঞ
অঙ্গ: পূর্বাঙ্গ।
সময়:দিবা দ্বিতীয় প্রহর

তথ্যসূত্র:
  • রাগ বিজ্ঞান অভিধান। নিত্যানন্দ কর্মকার। প্রগেরসিভ পাবলিশাসর্স। কলকাতা।। পৃষ্ঠা: ৪৬।
  • হাজার বছরের পুরাণ বাঙ্গালা বৌদ্ধ গান ও দোঁহা, হরপ্রসাদ শাস্ত্রী, বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদ, কলকাতা, ১৩২৩
  • চর্যাগীতি পদাবলী, সুকুমার সেন, আনন্দ পাবলিশার্স প্রাইভেট লিমিটেড, কলকাতা, ১৯৯৫
  • Materials for a Critical Edition of the Old Bengali Charyapadas (A comparative study of the text and the Tibetan translation), Part I, প্রবোধচন্দ্র বাগচী, Journal of the Department of Letters, Vol. XXX, কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়, কলকাতা, ১৯৩৮
  • Development of the Bengali LanguageSuniti Kumar Chatterji. London. George Allen & Unwin Ltd, 1970
  • বাংলা ভাষার ইতিবৃত্ত। ডঃ মুহম্মদ শহীদুল্লাহ। মাওলা ব্রাদ্রাস। ঢাকা। জুলাই ১৯৯৮।
  • বাংলা সাহিত্যের সমগ্র ইতিহাস, ক্ষেত্র গুপ্ত, গ্রন্থনিলয়, কলকাতা।কলকাতা ২০০১।
  • বৃহদ্দেশী। মতঙ্গ। রাজ্যেশ্বর মিত্র সম্পাদিত। সংস্কৃত পুস্তক ভাণ্ডার। কলকাতা। ১৯৯২।
  • চর্যাগীতিকা। সম্পাদনায় মুহম্মদ আবদুল হাই ও আনোয়ার পাশা। স্টুডেন্ট ওয়েজ। অগ্রহায়ণ ১৪০২।
  • চর্যাগীতি পাঠ। ড. মাহবুবুল হক। পাঞ্জেরী পাবলিকেশান লি.। ঢাকা। জুলাই ২০০৯।
  • চর্যাগীতি পরিক্রমা। দে'জ সংস্করণ। জানুয়ারি ২০০৫।
  • চর্যাগীতিকোষ। নীলরতন সেন সম্পাদিত। সাহিত্যলোক। কলকাতা। জানুয়ারি ২০০১।
  • সঙ্গীতচন্দ্রিকা। গোপেশ্বর বন্দ্যোপাধ্যয়