লঙ্কাদহন সারং
উত্তর ভারতীয় সঙ্গীত পদ্ধতিতে কাফি ঠাটের অন্তর্গত রাগ বিশেষ। এর রাগাঙ্গ সারং

এই রাগটির নাম এরূপ কেন, এ নিয়ে একটি গল্প আছে। হিন্দু পৌরাণিক কাহিনি মতে– হনুমান সীতার খোঁজ করতে লঙ্কায় গিয়ে, ইন্দ্রজিৎ-এর হাতে ধরা পড়ে। বন্দী অবস্থায় অনুমানকে রাবণের সামনে তাঁকে উপস্থিত করা হলে, ইনি সীতা হরণের জন্য রাবণকে তিরস্কার করেন। ক্ষিপ্ত রাবণ তাঁকে হত্যা করতে উদ্যত হলে, বিভীষণের অনুরোধে এই হত্যাকাণ্ড থেকে রাবণ নিজেকে বিরত রাখেন। কিন্তু এর পরিবর্তে রাবণ হনুমানের লেজে আগুন লাগানোর আদেশ দেন। রাক্ষসেরা সেই আদেশ অনুসারে হনুমানের লেজে আগুন লাগিয়ে ছেড়ে দিলে, ইনি লাফিয়ে লাফিয়ে লেজের আগুন দ্বারা সমস্ত লঙ্কা নগরীতে আগুন ধরিয়ে দেন। এই সময় হনুমান যে সুরে গান করেছিলেন, সেই সুরে বাঁধা রাগের নামই হলো লঙ্কাদহন সারং। দক্ষিণ ভারতে এই নামে কোনো রাগ নেই। তাই ভাতখণ্ডেজি এইভাবে রাগ সৃষ্টির গল্পকে স্বীকার করেন নি। ভাতেখণ্ডেজির মতে- এই রাগে দুটি নিষাদ, অবরোহে সমান্য শুদ্ধ ধৈবত এবং বক্রভাবে কোমল গান্ধার ব্যবহৃত হয়।

সুরেশচন্দ্র চক্রবর্তী রাগ রূপায়ণ (প্রথম খণ্ড) গ্রন্থে লিখেছেন- 'এই রাগের বৈশিষ্ট্য কোমল গান্ধারের প্রয়োগে। জ্ঞ ম র স পদে কোমল গান্ধার প্রয়োগ করেও রাগের মধ্যে সারঙ্গ ভাব বজায় রাখতে হবে, এই হচ্ছে আসল কথা। রাগের অন্যান্য অংশ সাধারণ সারং-এর মতই।'

এই রাগে 'ণ ধপ' -এর পরিবর্তে 'ণ ধ ণ প' স্বরগুচ্ছ ব্যব্হার করা হয়। এছাড়া এই রাগে শুদ্ধ ধৈবত কুশলতার সাথে ব্যবহার করা হয়। এর প্রকৃতি শান্ত।
আরোহণ: প্ ণ্ স, র জ্ঞ ম প, ন র্স
অবরোহণ : র্স, ণ প, জ্ঞ ম র ‌স
ঠাট কাফি
জাতি : ষাড়ব-ষাড়ব
বাদীস্বর : ঋষভ
সমবাদী স্বর: পঞ্চম
অঙ্গ : পূর্বাঙ্গ প্রধান।
সময় : দিবা তৃতীয় প্রহর।
পকড় : প্, ন্ স র র, জ্ঞ জ্ঞ, মর স রস