চিত্রকর্মে থোথ্। মুখের গড়ন আইবিস পাখির মতো |
থোথ্
সাধারণভাবে থোথ্-কে মানুষের আকৃতিতে দেখা যায়। তবে মাথাটা
মানুষের মতো নয়। মিশরীয় চিত্রকর্ম বা মূর্তিতে থোথ-এর মাথায় গড়ন দুই রকম দেখা যায়।
চিত্রকর্মে এর মুখমণ্ডল পাওয়া যায় আইবিস পাখির মতো। মূর্তিতে দেখা যায় মাথা বা
মুখমণ্ডল বেবুনের মতো।
প্রাচীন
মিশররের চিত্রকর্মে দেবতার এক হাতে ক্ষমতার দণ্ড দেখা যায়। এই দণ্ডের উপরের
দিকটা আইবিসের ঠোঁটের মতো এবং এর নিচের অংশ রোমান উল্টো ইউ বর্ণের মতো। এই
দণ্ডের নাম ওয়াজ। অন্য হাতে দেখা যায় জীবনের চাবি। এই চাবির নাম আঙ্খ।
কোনো কোনো মতে তিনি ছিলেন
সূর্য দেবতা রা-এর পুত্র। অন্য মতে তিনি দেবী
মায়েৎ-এর
সাথে স্বয়ং জন্মগ্রহণ করেছিলেন। কোনো কোনো মতে থোথের বোনের নাম ছিল সেসহাত। পরে
থোথের সাথে তাঁর বিবাহ হয়েছিল।
থোথ্-এর স্ত্রী হিসেবে কোনো কোনো রচনায়
মায়েৎ-এর নাম পাওয়া যায়। এর সহযোগী
হিসেব অপর বেবুনমুখী দেবতা আসেন্নুর নাম পাওয়া যায়।
মিশরীয় পৌরাণিক কাহিনিতে এই দেবতাকে নানা নামে অভিহিত করা হয়েছে। যেমন-
তিনি পৃথিবী ও আত্মার মহান পরিমাপকারী, জ্ঞান ও দৈব ভাষার দেবতা, প্রাচীন মিশরের কথ্য ও লিখিত ভাষারও উদ্ভাবক, গ্রন্থাদির প্রভূ, দেবতাদের লিপিকার, জ্যোর্তিবিজ্ঞান, জ্যামিতি এবং ঔষধের উদ্ভাবক।
ধারণা করা হয়, প্রাচীন মিশরের রহস্যময় গ্রন্থ 'বুক অব ডেড'-এর লেখক ছিলেন থোথ।
ব্রিটিশ মিউজিয়ামে রক্ষিত খ্রিষ্টপূর্ব ১৪০০ অব্দের একটি বেবুন-মুখো থোথ্-এর মূর্তি। |
এর প্রধান মন্দির ছিল খ্মুন নামক শহরে। পরে এই শহরের নাম হয় হার্মোপোলিস (Hermopolis)। হার্মোপলিসে বিকশিত হয়েছিল ওগ্দোয়াদ্ তত্ত্ব। বিশ্বব্রহ্মাণ্ড সৃষ্টির বিষয়ে ওগ্দোয়াদ্ তত্ত্বের দুটি পৃথক রূপ পাওয়া যায়। এই রূপ দুটি হলো‒ অণ্ড তত্ত্ব এবং পদ্মতত্ত্ব। এর অণ্ডতত্ত্বে বলা হয় থোথ্-এর বাহন বা সহচর আইবিস পাখি একটি ডিম প্রসব করেছিল। পরে এই ডিম থেকে বিশ্বব্রহ্মাণ্ড সৃষ্টি হয়।
ওগ্দোয়াদ্ তত্ত্বে থোথ্ ছিলেন মূলত চাঁদ। আকাশের দেবতা হোরাস-এর একটি চোখ ছিল চাঁদ অপরটি সূর্য। মিশরে চাঁদের উদয়-অস্ত, অমবস্যা-পূর্ণিমা ইত্যাদি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ছিল। চান্দ্রমাসের সাথে জড়িত ছিল তাঁদের ধর্মীয় অনুষ্ঠান, সামজিক জীবনযাত্রা। কালক্রমে আকাশের একটি চোখ হিসেবে থোথ্ গুরুত্বপূর্ণ দেবতায় পরিণত হয়েছিল। মিশরীয়দের কাছে পরে থোথ্ যাদুবিদ্যা এবং জ্ঞানের দেবতা হয়ে উঠেছিলেন। তৎকালীন মিশরে উদ্ভাবিত লিখন পদ্ধতি হাইরোগ্লিফ-এর জনক হিসেবে নির্দেশিত করা হয়। কালক্রমে মিশরে চাঁদ হিসেবে গুরুত্ব কমে যায়। তার পরিবর্তে তিনি হয়ে উঠেন প্রজ্ঞা এবং লিপির দেবতা।
থোথ্-এর বিশেষ ভূমিকা দেখা যায় হোরাস এবং সেথ্-এর যুদ্ধের সময়। হোরাস ও তাঁর মা আইসিস সেথের ভয়ে গোপনে লুকিয়ে থাকার সময় একটি বিষাক্ত সাপ হোরাসকে দংশন করে। এই সময় থোথ্ হোরাসকে বিষমুক্ত করে।
সূত্র :