মায়েৎ
Mayet
অন্য নাম: Ma'at

মিশরে পৌরাণিক কাহিনি মতে- ঐশ্বরিক বিধান,মহাবিশ্বের ভারসাম্য, নৈতিকতা, সততা, বাস্তবতা এবং ন্যায় বিচারের দেবী। প্রাচীন মিশরীয় ভাষায় মা'আত শব্দের অর্থ হলো সত্য। সত্যের ধারণা অনুসারে এই দেবী মায়েৎ নামে অভিহিত করা হয়। তবে মা'আত শব্দটিও প্রচলিত ছিল।

মিশরে প্রাচীন পৌরাণিক যুগ বা হেলিপোলীসীয় পৌরাণিক কাহিনীতে আটুমকে সূর্যদেবতা হিসেবে মান্য করা হতো। আটুমের ইচ্ছাতে সৃষ্টির কাজ শুরু হয়। এই সময় তাঁকে স্বর্গীয় বিধি মান্য করতে হতো। এই বিধির দেবী হিসেবে মায়েৎ-কে বিশেষভাবে মান্য করা হতো।

প্রতিদিন ভোরে যখন নু থেকে সূর্য দেবতা রা জন্মগ্রহণ করেন, তখন মায়েত সেখানে উপস্থিত হন এবং সকল কিছুর নিয়ন্ত্রণভার গ্রহণ করেন। এই ভাবে তিনি নক্ষত্রসমূহ,ঋতুচক্র এবং মরণশীল প্রাণীর কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণ করেন। বিশৃঙ্খল জনলরাশি থেকে যখন দেবদেবী উৎপন্ন হয়েছিল, সে সময় থেকে তিনি এই নিয়ন্ত্রণ নিজের হাতেই রেখেছেন।

মৃত মানুষের আত্মার প্রাথমিক বিচার তিনিই করতেন। এই বিচারের সময় আত্মাকে দেবী মায়েতের কাছে ‘বিশুদ্ধতার ৪২টি ঘোষণা’ দিতে হত। এই ঘোষণা লিপিবদ্ধ রয়েছে ‘বুক অভ ডেড' গ্রন্থে। এই ঘোষণা গুলো হলো-
১ আমি পাপ করি নি।
২ আমি নৃশংসভাবে ডাকাতি করি নি।
‌৩ আমি চুরি করি নি
৪ আমি নরনারী হত্যা করি নি
৫ আমি শষ্য চুরি করি নি
৬ আমি দেবতাদের অর্ঘ চুরি করি নি
৭ আমি দেবতাদের সম্পদ চুরি করি নি
৮ আমি মিথ্যে কথা বলি নি
৮ আমি খাদ্য (চুরি করে) নিয়ে যাই নি
১০ আমি কারুকে অভিশাপ দিই নি
১১ আমি ব্যাভিচার করি নি। আমি পুরুষের শয্যসঙ্গিনী হই নি (নারীদের জন্য)
১২ আমি কাউকে কাঁদাই নি। (অর্থাৎ কারু মনে কষ্ট দিইনি)
১৩ আমি অহেতুক আক্ষেপ প্রকাশ করি নি।
১৪ আমি কোনও পুরুষকে আক্রমণ করি নি।
১৫ আমি প্রতারক নই।
১৬ আমি কৃষিজমি চুরি করি নি।
১৭ আমি কারও কানে কথা লাগাইনি। ১৮ আমি কারও সম্মানহানি করিনি। ১৯ যথাযথ কারণ ছাড়া রাগ করিনি। ২০ অন্যের স্ত্রীকে নীতিভ্রস্ট করিনি। ২১ অন্যের স্ত্রীকে নীতিভ্রস্ট করিনি। (এটি ২০ নং ঘোষনার মতো হলেও অন্যদেবতাকে বলা। সম্ভবত থোথ।) ২২ আমি নিজেকে দূষিত করিনি। ২৩ আমি কাউকে আতঙ্কিত করিনি। ২৪ আমি আইনের বিধান লংঘন করিনি। ২৫ আমি অতিরিক্ত রাগান্বিত হয়নি। ২৬ সত্য কথার প্রতি আমি আমার কান বন্ধ রাখিনি। ২৭ আমি দেবদেবীর বিরুদ্ধে বিদ্বেষ ছড়াইনি। ২৮ আমি সন্ত্রাসী নই। ২৯ আমি শান্তি শান্তিকে বিঘিœত করিনি। ৩০ আমি তাড়াহুড়ো করে বিচার করিনি। ৩১ আমি কোনও বিষয়ে প্রতি শিকারীসুভল আচরণ করিনি। (নাক গলানো অর্থে সম্ভবত) ৩২ কথা বলার সময় শব্দকে দ্বিগুন করিনি। ৩৩ আমি কারও ক্ষতি করিনি, আমি অশুভ কিছু করিনি। ৩৪ আমি রাজার (ফারাও) এর বিরুদ্ধে জাদুটোনা করিনি। ৩৫ আমি জলের প্রবাহ রুদ্ধ করিনি। ৩৬ আমি ক্রোধান্বিত হয়ে কন্ঠস্বর উচ্চে তুলিনি। ৩৭ দেবতাদের অভিশাপ দিইনি। ৩৮ আমি উদ্ধত হয়ে কাজ করিনি। ৩৯ আমি দেবতাদের রুটি চুরি করিনি। ৪০ আমি মৃতদের আত্মা থেকে পিঠা নিয়ে যাইনি। (সম্ভবত পিরামিড বা সমাধিসৌধ থেকে কোনও কিছু নেওয়াকে বোঝানো হচ্ছে) ৪১ আমি শিশুদের থেকে খাবার কেড়ে নিইনি, এমন কী আমার নগরের অধিশ্বর দেবতার বিরুদ্ধে কটূবাক্য বলিনি। ৪২ আমি দেবতাদের পশু হত্যা করিনি। তাঁর পুরুষ-সঙ্গী ছিলেন  প্রজ্ঞার দেবতা এবং লিখন পদ্ধতি হাইরোগ্লিফ-এর জনক থোথ্মায়েৎ আটটি সন্তানের জননী ছিলেন।


সূত্র: