রা
Ra
মিশরে পৌরাণিক কাহিনি মতে- সূর্য দেবতা। এঁর দেহের আকার ঈগলের মতো।
এঁর মাথার উপরে উদীয়মান সূর্য এবং এর সাথে রয়েছে সাপের ছবি।
রা এর সৃষ্টি নিয়ে একাধিক মতামত পাওয়া যায়। যেমন-
- প্রথম মত:
মিশরীয়রা মনে করতো, নু
পানির বিশৃঙ্খল বর্জ্য রূপে বিরাজ করতেন।
হার্মোপোলিস মত-এ
নু
ছিলেন অনন্ত, শূন্যময় এবং অন্ধকারময় দশায়। সমগ্র বিশ্বব্রহ্মাণ্ড জুড়ে
নু-র অবস্থান ছিল এবং
নু -থেকে সমগ্র জগতের সকল উপাদান তৈরি হয়েছে।
এই নু
থেকে রা জন্মগ্রহণ করেছিলেন। এরপর তিনি মহাবিশ্ব তৈরি করলেন।
এরপর তিনি সৃষ্টি করলেন আদিম দেবদেবী।
রা-এর সন্তানর ছিলেন
শু, তেফনুৎ।
শু
ও তেফনুৎ-এর সন্তান ছিলেন গেব ও
নুৎ।
- দ্বিতীয় মত:
রা ছিলেন
গেব ও
নুতের পুত্র।
- তৃতীয় মত:
প্রতিদিন ভোরে রা গোশাবক হিসেবে জন্মগ্রহণ করেন। দুপুরে তিনি বলশালী ষাঁড়ে
পরিণত হন। সন্ধ্যায় তিনি মৃত্যুবরণ করেন। ভোর বেলায় তিনি পুনরায় গোশাবক হিসেবে
জন্মগ্রহণ করেন। এই জীবন-চক্রে রা আবদ্ধ হয়ে রয়েছেন।
- তৃতীয় মত:
আদি পিতা পিতাহ'র
(মেমফিস নগরের তিনি ছিলেন প্রধান দেবতা) তৈরি কাদার
ডিম থেকে জন্ম গ্রহণ করেছিলেন রা।
রা-এর চোখ ও অশ্রু: মিশরীয় পৌরাণিক কাহিনিগুলোতে রা-এর চক্ষু একটি বিশেষ
স্থান দখল করে আছে। যেমন-
- রা-কে মান্য করা হতো জীবন্ত সকল কিছুর জনক হিসেবে। তাঁর চোখ থেকে ঝরে পড়া অশ্রু থেকে জন্ম নিয়েছিল সকল
জীবন্ত সত্তা। একদিন রা-এর চোখ থেকে অশ্রু-নির্গত বন্ধ হয়ে যায়। সৃষ্টির বিপর্যয় রোধের জন্য,
তাঁর পুত্র
শু এবং কন্যা
তেফনুৎকে
চোখের পিছনে আঘাত করতে বলেন। এঁদের আঘাতে পুনরায় অশ্রু ঝরা শুরু হয়। এই অশ্রু থেকে জন্ম নিয়েছিল মানুষ।
- একবার অন্ধকার জলের ভিতরে শু ও তেফনুৎ হারিয়ে যান। এই সময় রা এঁদেরকে
খুঁজে আনার জন্য একটি চোখকে পাঠান। কিন্তু চোখ এই কাজে ব্যর্থ হলে, তিনি আগের
চোখের জায়গায় থোটকে (চন্দ্র) স্থাপন করেন। অনুসন্ধানকারী চোখ ফিরে এসে
চন্দ্র-চোখ দেখতে পেয়ে ক্ষুব্ধ হয়। তাঁর রাগ প্রশমন করার জন্য, রা এই চোখকে
ইউরেইয়াস সাপের আকার দেন এবং নিজের কপালে স্থাপন করেন। পরে এই সর্প চোখকে
পৃথিবীর শাসনকর্তা বানিয়ে দেন। এই কারণে ইউরেইয়াস সাপকে বিশ্বের শাসক হিসেবে
মান্য করা হতো। ফারাও-রা মনে করতেন তাঁরা রা-এর বংশধর। এই কারণে ইউরেইয়াস সাপ
ছিল তাঁদের শাসনের প্রতীক।
প্রতিদিন ভোরে যখন
নু থেকে সূর্য দেবতা
রা জন্মগ্রহণ করেন, তখন
মায়েৎ
সেখানে উপস্থিত হন এবং সকল কিছুর নিয়ন্ত্রণভার গ্রহণ করেন। এই কারণে তিনি নিষ্ঠার সাথে
মায়েৎ-এর
বিধি মান্য করা হয়।
অন্যমতে সূর্য প্রতিটি ভোরে তাঁর বজরায় চড়ে আকাশ পথে পশ্চিম দিকে রওয়ান দেন।
সন্ধ্যায় রা-এর বজরা পাতালে প্রবেশ করে এবং ভোর বেলা তিনি তার উদয়-স্থানে অপেক্ষা
করেন। এই সময় তাঁর বজরা রক্ষণাবেক্ষণ করেন পূর্ব পশ্চিম দিকের অভিভাবক
আকের।
তিনি শাসন কার্য সুচারুরূপে পরিচালনার জন্য, তাঁর রাজ্যকে ১২টি প্রশাসনিক বিভাগ তৈরি করেছিলেন।
এই ১২টি প্রদেশ শাসনের জন্য তিনি তাঁর পুত্র
শু-কে সহকারী হিসেবে
নিয়োগ দিয়েছিলেন।
একবার সাপ এপিপ রা-কে তাঁর দিনের যাত্রার শুরুতে (সূর্যোদয় কাল) আক্রমণ করে হত্যা
করতে উদ্যত হন। ফলে উভয়ের ভিতরে ঘোরতর যুদ্ধ হয়। এই সময় রা বিড়াল বা সিংহের ধারণ করে
এপিপের সাথে যুদ্ধ করেন। এবং শেষ পর্যন্ত এপিপকে পরাজিত করে তাঁর শিরোশ্ছেদ করেন।