র
১.
আন্তর্জাতিক ধ্বনিলিপি :
kɔ
ইউনিকোড: u+09B0
বিশেষ্য
ঊর্ধ্বক্রমবাচকতা
{|
বর্ণ
|
বর্ণচিহ্ন |
লিখিত প্রতীক
|
প্রতীক
|
সঙ্কেতচিহ্ন
|
যোগাযোগ |
বিমূর্তন
|
বিমূর্ত
সত্তা
|
সত্তা
|}
সমার্থক শব্দসমূহ
(synonyms):
র।
এই বর্ণের নাম
-র
।
বাংলা বর্ণমালার
অষ্টাত্রিংশ (৩৮)
বর্ণ,
ব্যঞ্জনবর্ণের
২৭ সংখ্যক
বর্ণ।
স্বাধীনভাবে উচ্চারণযোগ্য
রূপ হলো– র +অ=র।
।
এটি
দন্ত্যমূলীয় (Alveolar),
কম্পিত ধ্বনি (Trilled/Rolled)
এবং স্পর্শ ধ্বনি
।
অন্যান্য বাংলা লিপির মতই ব্রাহ্মীলিপি থেকে র-বর্ণটি উদ্ভূত হয়েছে। খ্রিষ্টপূর্ব তৃতীয় থেকে প্রথম শতাব্দীর ভিতরে এই বর্ণটি বিভিন্ন চিহ্ন দ্বারা প্রকাশ করা হয়েছে। নিচের ছকে এই বিবর্তিত রূপগুলোর নির্দশন তুলে ধরা হলো।
কুষাণলিপিতে (১০০-৩০০ খ্রিষ্টাব্দ) থেকে গুপ্তলিপি (৪০০-৫০০ খ্রিষ্টাব্দ) পর্যন্ত র-বর্ণটির যে নমুনা পাওয়া যায়, তাতে আধুনিক র-বর্ণটির কোনো আদল পাওয়া যায় না। নিচে গুপ্তলিপি পর্যন্ত র-এর নমুনা তুলে ধরা হলো।
কুটিললিপিতে এই বর্ণটি নাগরি র-এর একটি প্রকরণ ছিল মাত্র। খ্রিষ্টীয় ১০ম-১১শ শতাব্দীতে এই বর্ণটি ছিল ন-এর মতো। ১২শ-১৭শ শতাব্দী পর্যন্ত এই বর্ণটি ছিল ব-এর বিভিন্ন প্রকরণ। আধুনিক র-বর্ণটি পাওয়া যায় ১৭শ শতাব্দীর পরে। নিচে কুটিললিপি থেকে বর্তমান কাল পর্যন্ত এর ক্রমবিবর্তনের নমুনা তুলে ধরা হলো।
শব্দে র-এর উচ্চারণ
১. শব্দের ভিতরের স্বাধীন বর্ণ হিসেবে র-ধ্বনি
স্বাভাবিকভাবে উচ্চারিত হয়।
২. ব্যঞ্জনবর্ণের সাথে র যুক্ত হয়ে দুই ধরনের যুক্ত ব্যঞ্জনবর্ণ তৈরি করে। এই রূপ
দুটি হলো−
রেফ্ ও র-ফলা।
১.১. রেফ্: কোনো ব্যঞ্জনবর্ণের পূর্বে র্ যুক্ত হলে, ওই বর্ণের উপরে ডান-মুখী তীর্যক রেখা হিসেবে বসে। এই চিহ্নকে রেফ বলা হয়। যেমন র্+ক=র্ক, র্+গ=র্গ ইত্যাদি।
উচ্চারণ বিধি
সংস্কৃত থেকে সরাসরি যে সকল শব্দ বাংলাতে প্রবেশ করেছে, তার অনেক শব্দই বানান সংস্কার রীতি দ্বারা আধুনিকীকরণ করা হয়েছে। মূল সংস্কৃত শব্দে কিছু শব্দের রেফ-যুক্ত ব্যঞ্জনবর্ণ দ্বিত্ত্ব হতো। কিন্তু বানান সংস্কার রীতিতে তা একটিতে এসে দাঁড়িয়ে গেছে। যেমন সংস্কৃত ধর্ম্ম বানান আধুনিক বাংলায় হয়েছে ধর্ম। যদিও লিখন পদ্ধতিতে দ্বিত্ব বর্জিত হয়েছে, কিন্তু উচ্চারণে তা থেকেই গেছে।
১. বাংলাতে স্বরবর্ণের সাথে রেফ্ ব্যবহৃত হয় না। এবং শব্দের আদিতে রেফযুক্ত বর্ণ ব্যঞ্জনবর্ণ হয় না। তাই এই দুটি ক্ষেত্রে উচ্চারণের বিষয়টি আলোচনার যোগ্য নয়।
২. শব্দের আদ্য স্থান ছাড়া অন্যত্র কোনো ব্যঞ্জনবর্ণের এই রেফ থাকলে, তা ব্যঞ্জনধ্বনির আগে উচ্চারিত হয়। যেমন−অর্ক= অ-র্ক, অর্গ= অ-র্গ ইত্যাদি।
৩. তৎসম শব্দের উচ্চারণের সময়, রেফ্ থাকার কারণে ব্যঞ্জনবর্ণের দ্বিত্ব উচ্চারণ হয়। তবে এই বিধি দুটি সূত্রকে অনুসরণ করে। যেমন−
ক. রেফ্ যুক্ত অল্পপ্রাণ বর্ণ দ্বিত্ব উচ্চারণ রূপ প্রকাশ করে। এবং তা ওই বর্ণটিতে সীমাবদ্ধ থাকে ।
যেমন: পূর্ব (পুর্ব্.বো), ধর্ম (ধর্ম্.মো)।
খ. রেফ্ যুক্ত বর্ণটি যদি মহাপ্রাণ হয়, তা হলে, উক্ত মহাপ্রাণ বর্ণের পূর্ব অল্পপ্রাণ ধ্বনি উচ্চারিত হয়, পরে মূল ধ্বনিটি উচ্চারিত হয়। যেমন−মূর্খ (মুর্ক্.খো) [খ-এর আগের অলপপ্রাণ বর্ণ ক]
অর্ঘ (অর্গ্.ঘো) [ঘ-এর আগের অলপপ্রাণ বর্ণ গ]
মূর্ছা (মূর্চ্.ছা) [ছ-এর আগের অলপপ্রাণ বর্ণ চ]
অর্থ [অর্ত্.থো] [থ-এর আগের অলপপ্রাণ বর্ণ ত]
অর্ধ [অর্দ্.ধো] [ধ-এর আগের অলপপ্রাণ বর্ণ দ]
গর্ভ [অর্ব্.ভো] [ভ-এর আগের অলপপ্রাণ বর্ণ ব]
বিশেষ বিধি:
১. ল এবং হ-এর সাথে রেফ থাকলে, হ-এর উচ্চারণ দুইবার হয় না।
২. উভয় ক্ষেত্রেই রেফযুক্ত বর্ণের সাথে কোনো কার চিহ্ন না থাকলে, তা ওকারান্ত হয়।১.২. র-ফলা: র-বর্ণটি কোনো ব্যঞ্জনবর্ণের পরে বসে যুক্ত বর্ণ সৃষ্টি করলে, র-ফলা হিসেবে বিবেচিত হয়।
যেমন: গ্+র=গ্র, ত্+র=ত্র ইত্যাদি।উচ্চারণ বিধি
১. হ-বর্ণটি ছাড়া অন্য সকল বর্ণের সাথে র-ফলা যুক্ত হলে, ব্যঞ্জনবর্ণের উচ্চারণ আগে হয়। যেমন−প্র= প্+র্, ক্র=ক্+র্
কিন্তু হ-এর ক্ষেত্রে হবে, হ্র=র্+হ্২. হ-বর্ণটি ছাড়া, শব্দের আদিতে র-ফলাযুক্ত শব্দের সাথে কোনো কারচিহ্ন না থাকলে, ওই বর্ণটি ওকারান্ত হবে। যেমন−
প্রকার (প্রো.কার্), গ্রহণ (গ্রহণ)।
হ-এর ক্ষেত্রে অর্ধ-বিবৃত অ যুক্ত হবে। যেমন−
হ্রদ=র্+হ্+অ+দ্। এরূপ হ্রস্ব,৩. আদ্য বর্ণ হিসেবে র-ফলা যুক্ত ব্যঞ্জনবর্ণ না থাকলে, উচ্চারণের সময় র-ফল যুক্ত ব্যঞ্জন ধ্বনি দ্বিত্ব উচ্চারণ রূপ প্রকাশ করে। তবে এক্ষেত্রে দুটি বিধি অনুসৃত হবে।
ক. র-ফলা যুক্ত অল্পপ্রাণ দ্বিত্ব উচ্চারণ রূপ প্রকাশ করে। এবং তা ওই বর্ণটিতে সীমাবদ্ধ থাকে ।
যেমন: অগ্র (অগ্.গ্রো), নম্র (নম্.ম্রো)।
খ. র-ফলা যুক্ত বর্ণটি যদি মহাপ্রাণ হয়, তা হলে, উক্ত মহাপ্রাণ বর্ণের পূর্ব অল্পপ্রাণ ধ্বনি উচ্চারিত হয়, পরে মূল ধ্বনিটি উচ্চারিত হয়। যেমন−ব্যাঘ্র (ব্যাগ্.ঘ্রো)
শুভ্র (শুব্.ভ্রো)
উভয় ক্ষেত্রেই রেফযুক্ত বর্ণের সাথে কোনো কার চিহ্ন না থাকলে, তা ওকারান্ত হয়।
বিশেষ বিধি:
অংশ শব্দের পরে র-ফলা যুক্ত শব্দের দ্বিত্ব হয় না। যেমন: অংশগ্রহণ, অংশগ্রাহী,
অংশপ্রার্থী।
২. সংস্কৃত কৃৎপ্রত্যয়। এই প্রত্যয় এবং অনুরূপ প্রত্যয়ের সংখ্যা ৪টি। এগুলো হলো−
৩. সংস্কৃত তদ্ধিত প্রত্যয়। এর সংখ্যা ১টি।
৪. বাংলা ক্রিয়ামূল।
দেখুন:
র
সূত্র :