| 
		 
হিন্দি ভাষার পারিবারিক পরিচয়  | 
	
হিন্দি 
বানান বিশ্লেষণ:
হ্+ই+ন্+দ্+ই।
উচ্চারণ: 
ɦin.d̪i 
(হিন্.দি)
শব্দ-উৎস: 
সংস্কৃত সিন্ধু>ফারসি ছিন্দু>হিন্দু>> হিন্দী (हिन्दी)>বাংলা 
হিন্দি।
 
পদ: 
বিশেষ্য
 
ঊর্ধ্বক্রমবাচকতা 
{|
পূর্ব মধ্যাঞ্চলীয় 
| 
ভারতীয় 
আর্য ভাষা | 
ইন্দো-ইউরোপীয় ভাষা
| 
প্রাকৃতিক ভাষা 
| 
ভাষা
|
যোগাযোগ
|
বিমূর্তন
|
বিমূর্ত সত্তা
|
সত্তা
|}
হিন্দি  
ভারতবর্ষের পূর্ব-মধ্যপূর্বাঞ্চলের একটি 
উল্লেখযোগ্য ভাষা। 
বর্তমানে হিন্দি ভারতের রাষ্ট্র ভাষা। দিল্লি, 
উত্তরপ্রদেশ, উত্তরাখণ্ড, ছত্রিশগড়, হিমাচল প্রদেশ, চণ্ডিগড়, বিহার, ঝাড়খণ্ড, 
মধ্যপ্রদেশ, হরিয়ানা এবং রাজস্থানের অধিকাংশ মানুষ এই ভাষায় কথা বলে। এছাড়া ভারতের 
অন্যান্য প্রদেশে রাষ্ট্রভাষার সুবাধে এই ভাষার ব্যবহার রয়েছে। ২০০১ খ্রিষ্টাব্দেৱ আদমশুমারি 
মতে প্রকৃত হিন্দিভাষী লোকের সংখ্যা ছিল ২৫ কোটি ৮০ লক্ষ। 
এই ভাষা দেবনাগরী বর্ণমালায় লেখা হয়। 
প্রমিত হিন্দি এলাকা হিসেবে বিবেচনা করা হয় দিল্লি,  পশ্চিম উত্তর প্রদেশ, 
দক্ষিণ উত্তরাখণ্ডের অধিবাসীদের হিন্দি ভাষাকে।
হিন্দি ভাষার ইতিহাস
ভাষাতাত্ত্বিকদের মতে, মানুষের কথিত ভাষার 
		
		ইন্দো-ইউরোপিয়ান ভাষা পরিবারের অন্তর্গত 
		
		ইন্দো-ইরানিয়ান
ভাষা 
উপ-পরিবারের একটি শাখার নাম− 
 ভারতীয়-আর্য ভাষা। 
এই শাখার উপশাখা  
হলো  
পূর্ব মধ্যাঞ্চলীয় 
ভাষা। মূলত 
স্থানীয় প্রাকৃতজনের ভাষার (অনার্য ভাষা) সংমিশ্রণে ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলে নানা 
ধরনের মিশ্র ভাষার উদ্ভব হয়। এই সূত্রে বর্তমান ভারতের পূর্ব-মধ্যাঞ্চলে হিন্দি 
ভাষার উদ্ভব ঘটে।
ভারতেবর্ষের পশ্চিমাঞ্চলের উল্লেখযোগ্য নদের নাম সিন্ধু। ভারতবর্ষে আগত আর্যরা 
এই নদকে সিন্ধু নামে অভিহিত করতো। কিন্তু প্রাচীন পারসিক ভাষাভাষীরা এর উচ্চারণ 
করতো ছেন্দু বা ছিন্দু 
উচ্চারণ করতো। কালক্রমে এই উচ্চারণ বিকৃত হয়ে হিন্দু বা হেন্দু নামে অভিহিত হতে থাকে। বেদে পঞ্চনদ প্রদেশের 'সপ্তসিন্ধু'র কথা জানা যায়। 
কিন্তু প্রাচীন পারশিক ভাষায় রচিত 
আবেস্তায় পাওয়া যায় 'হপ্ত হেন্দু'। পারশ্যের লোকদের কাছ থেকে গ্রিকরা 
ভারতবর্ষ সম্পর্কে অবগত হয়। এই সময় গ্রিকদের উচ্চারণে পারশ্য হিন্দ হয়ে যায় 
indo।
এই সূত্রে পুরো ইউরোপে অন্যান্যভাষায় ভারতবর্ষের নাম হয়ে 
যায় ইন্দো 
(indo)। 
এই শব্দের সূত্রে 
ইংরেজি 
ভাষায় ভারতের নাম হয়েছে 
india। 
লক্ষ্যণীয় বিষয়, প্রাচীন ভারতের কোনো ভাষাতেই হিন্দ বা ইন্দো শব্দ পাওয়া যায় না। 
ভারতবর্ষে আগত মুসলমান সেনানায়করা যখন সিন্ধু জয় করেন, তখন তাঁরা 
এই জয়কে হিন্দুস্তান জয় হিসেবেই চিহ্নিত করেছেন। কালক্রমে মুসলমান শাসকরা দিল্লি 
এবং তৎসংলগ্ন অঞ্চল দখল করার পর, ওই অঞ্চলকেও তাঁরা হিন্দুস্তানের অংশ হিসেবে 
বিবেচনা করেছিলেন। এই সময় এই অঞ্চলে স্থানীয় অধিবাসীদের ভাষাকে হিন্দুস্থানী ভাষা 
হিসেবে পরিচিয় দিয়েছেন। কালক্রমে হিন্দুস্তানী ভাষার নাম সংক্ষেপে হিন্দি ভাষা হয়ে 
যায়। যদিও আক্ষরিক অর্থে হিন্দুস্থানী ভাষা বলতে সিন্ধু অঞ্চলের ভাষা বুঝায়, কিন্তু 
বর্তমানে হিন্দুস্থানী ভাষা বলতে হিন্দিকেই বুঝায়।
মুসলমানদের সিন্ধু বিজয়ের সময়, হিন্দি নামের কোনো উল্লেখযোগ্য ভাষা ছিল না। সে 
সময়ের প্রাকৃতভাষাকে ভাষাকে প্রাক্-হিন্দি ভাষা বলা যেতে পারে। ভারতের 
পূর্ব-মধ্যাঞ্চলের সেকালের 
ঘরোয়া ভাষায় ছিল, সংস্কৃত ভাষার জটিল উচ্চারণ থেকে বেরিয়ে আসা  সহজে 
উচ্চারণযোগ্য শব্দের আধিক্য। এই কারণে সেকালের ভাষা হয়ে 
পড়েছিল অতিকোমলা। এই সূত্রে তৈরি হয়েছিল রেখ্তি, জেনানী বোলি বা আউরাৎ কা বোলি। 
রাজশক্তি হিসেবে মুসলমানদের আবির্ভাবের আগেও পারশ্য ও আফগানিস্থান ব্যবসায়ীদের 
আনাগোনা ছিল। সেই সূত্রে পুরুষদের অনেকেই বাইরের ভাষার শব্দ ব্যবহার করতো। কিন্তু 
সেসব শব্দ ঘরোয়া জেনানী বোলিতে ততটা প্রভাব ফেলেনি। মুসলমানদের আগমনের পর, ফারসি, 
আফগানি, তুর্কি ইত্যাদি ভাষা এই অঞ্চলের ঘরের ভাষার কাছাকাছি চলে এলো। ফলে বহির্গামী পুরুষদের দ্বারা নানারকম শব্দ 
এই জেনানী বোলি-তে প্রবেশ করতে থাকে। ফলে প্রাক্-হিন্দি ভাষায় তৎসম, অর্ধৎসম, তদ্ভব 
এবং দেশী শব্দের সাথে যুক্ত হতে থাকলো প্রচুর বিদেশী শব্দ। একটি বড় অংশ জুড়ে বিদেশী 
শব্দের সংমিশ্রণ এই পরিবর্তন ঘটতে থাকলেও সকল 
স্থানে একই রকম শব্দ-মিশ্রণ ঘটেনি। ভারতের পূর্বাঞ্চলের দিকে, বিশেষ করে বিহারে এই 
ভাষার সাথে মিশ্রণ ঘটেছিল মাগাধি প্রাকৃতি। আর পশ্চিম ভারতে প্রবেশ করেছিল আরবি, 
ফার্সি, তুর্কি, আফগানিস্থানের নানা রকম আঞ্চলিক শব্দ। আর উভয় ক্ষেত্রে সনাতন ধর্ম 
চর্চার সূত্রে সংস্কৃত শব্দ প্রবেশ করেছিল, তৎসম, অর্ধতৎসম এবং তদ্ভব শব্দরূপ তো 
ছিলই। কিন্তু এত কিছুর মিশ্রণের ফলে হিন্দুস্থানী ভাষার একটি মৌলিক কাঠামো গড়ে 
উঠেছিল। আঞ্চলিকতার কারণে ধ্বনিগত বা শব্দরূপের হেরফের থাকলে, এই অঞ্চলের মানুষ 
পরস্পরের সাথে ভাব বিনিময় করতে পারতো সেই মৌলিক কাঠামো ধরেই।
শব্দ মিশ্রণের বিচারে হিন্দু ভাষাভাষী অঞ্চলকে কয়েকটি ভাগে ভাগ করা হয়ে থাকে। এই 
ভাগগুলো হলো
১. বিহার অঞ্চল: মাগধি প্রাকৃতির মিশ্রণ
২. মথুরা অঞ্চল: ব্রজ ভাষার শব্দ মিশ্রণ
৩. দিল্লী, লক্ষ্ণৌ অঞ্চল: আরবি-ফার্সি ভাষার শব্দমিশ্রণ
৪. কাশী অঞ্চল: সংস্কৃত শব্দের মিশ্রণ।
৫. রাজপুতনা অঞ্চল: জয়পুর, যোধপুর ও বিকানে মাড়ওয়াড়ি শব্দের মিশ্রণ।
যতদূর জানা যায়, রাজপুতনার ভাট কবিদের রচিত 
কীর্তনগাথাই হিন্দি সাহিত্যের আদি নমুনা। এই ধারার কবি চাঁদবর্দাই খ্রিষ্টীয় দ্বাদশ 
শতাব্দীতে 'পৃথ্বীরাজ রায়সা' নামক কাব্য রচনা করেছিলেন পৃথ্বিরাজের গুণকীর্তন করে। 
এই সময় পাওয়া যায় পৃথ্বীরাজের শত্রু পরমর্দ্দীরাজের সভাকবি জগনায়ক-এর রচিত 'আলহাখণ্ড' নামক কাব্যগ্রন্থ। ১৩০০ 
খ্রিষ্টাব্দের দিকে, রণধরস্তম্ভ গড়ের রাজা হম্মিরের বীরকীর্তি রচনা করেছিলেন কবি 
শার্ঙ্গদেব। ১৫৮০ খ্রিষ্টাব্দের বুর্হানপুরের কবি কেহারীও খ্যাতি লাভ করেছিলেন। 
খ্রিষ্টীয় ১৭শ শতাব্দীতে রাজপুতনার মেবার ও মারবাড় অঞ্চলের রাজদরবার ঘিরে দুই দল 
কবির আবির্ভাব ঘটে। এঁরা স্ব স্ব রাজ্যের রাজন্যবর্গের গুণকীর্তন করেছেন।  
১৬৫০ খ্রিষ্টাব্দের দিকে লাল কবি বুন্দেলখণ্ডের ইতিহাস রচনা করেন। এই সময়ে আরও 
কিছু কবির সন্ধান পাওয়া যায়। ১৭শ শতাব্দীর পরে এই সব ভট্টকবিদের রচনার ধারাবাহিকতা 
লক্ষ্য করা যায় না।
হিন্দি বলয়ের গাঙ্গেয় উপত্যাকায় ১৫শ শতাব্দীতে বৈষ্ণব কবিদের উত্থান ঘটে। ভগবান 
রামচন্দ্রের অবতার হিসেবে পরিচিত রামানন্দ ১৪০০ খ্রিষ্টাব্দের দিকে খ্যাতির শীর্ষে 
উঠেন। এই সময়ে রচিত হয় তাঁর উপদেশাবলী। এরপর তাঁর শিষ্য কবীর হিন্দু-মুসলমানের 
সামঞ্জস্য বিধান করে বহু পদ রচনা করেন। আর এই ভাবনাকে সমৃদ্ধতর করেছিলেন তুলসী দাস। 
তাঁর রচিত হিন্দি-রামায়ন হিন্দি সাহিত্যের উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ হিসেবে বিবেচিত হয়। 
এই সময় ব্রজধামে বৈষ্ণব সম্প্রদায়ের কবিদের হাতে হিন্দি গীতিকবিতার জন্ম হয়। ১৪০০ 
খ্রিষ্টব্দের দিকে ব্রজকবি বিদ্যাপতি বাংলা, হিন্দি ও মৈথিলি ভাষায় কাব্য রচনা করে 
খ্যাতি লাভ করেন। অন্যদিকে রাজপুতনায় মীরাবাঈ মাতিয়ে দেন ভজনগানে।
হিন্দি বলয়ের এই সকল রচনা হিন্দিভাষীদেরকে মুগ্ধ করেছিল বটে, কিন্তু হিন্দি ভাষায় তখনও আধুনিকতার ছোঁওয়া লাগেনি। এক্ষেত্রে ভাষাগত স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য নিয়ে আত্মপ্রকাশ করেন মালিক মহম্মদ জায়সি। তাঁর কাব্যের নাম 'পদ্মমৎ'। উল্লেখ্য এই গ্রন্থের অনুসরণে বাংলার কবি আলাওল রচনা করেছিলেন পদ্মাবতী কাব্য। উল্লেখ্য জায়সি ছিলেন ১৫৪০ খ্রিষ্টাব্দের দিককার কবি।
খ্রিষ্টীয় ষোড়শ শতাব্দীতে ব্রজমণ্ডলে 
বল্লভাচার্য এবং তাঁর পুত্র বিট্ঠল নাথ গোঁসাই হিন্দি ভাষায় শ্রীকৃষ্ণের বৃন্দাবন 
লীলার বর্ণনা করেন। এঁদের অষ্টছাপ নামক শিষ্যদের মধ্যে সেই ধারা বজায় রাখতে সক্ষম 
হয়েছিলেন কৃষ্ণদাস ও সুরদাস। এর মধ্যে সুরদাসকেই শ্রেষ্ঠ কবি হিসেবে মান্য করা হয়। 
অষ্টছাপ কবিদের ভিতরে কিশন দাশ, সুরদাস, পরমানন্দদাস এবং কুম্ভনদাস ১৫৫০ 
খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত কাব্য রচনা করেছিলেন বলে জানা যায়। ১৫৬৭ খ্রিষ্টাব্দের ভিতরে 
উল্লেখযোগ্য কবি হিসেবে পাওয়া যায় চতুর্ভুজ দাস, ছতী  স্বামী, নন্দদাস ও 
গোবিন্দদাসকে। ১৫৭৫ খ্রিষ্টাব্দের ভিতরে উল্লেখযোগ্য কবিরা ছিলেন অগ্রদাস, কেবলরাম, 
গদাধর দাস, দেবা কবি, কল্যাণ দাস, ছতী নারায়ণ ও পদুমদাস। খ্রিষ্টীয় ১৬শ শতাব্দীর 
অন্যান্য যে সকল কবির নাম পাওয়া যায়, তাঁর ভিতরে উল্লেখযোগ্য ছিলেন শ্রীভট্ট, 
ব্যাসস্বামী, হিত হরিবংশ গোঁসাই, নরবাহন, ধ্রুব দাস, হরিদাস স্বামী, তানসেন, ভগবন্ত 
রমিত, বিপুল বিট্ঠল, কেশবদাস, অভয় দাস, চতুর বিহারী, নারায়ণ ভট্ট প্রমুখ। এই সময় 
বৈষ্ণব পদাবলী রচনা করে  সৈয়দ ইব্রাহিম নামক একজন মুসলমান কবি খ্যাতি লাভ 
করেছিলেন। উল্লেখ্য কবি হিসেবে তিনি রস খাঁ নামে পরিচিত। একই ধারার পদ রচনা করে, 
তাঁর শিষ্য কাদির বক্স এবং নাভাদাস ১৬০০ খ্রিষ্টাব্দের দিকে খ্যাতি লাভ করেছিলেন।
বিশেষ করে ১৬০০ খ্রিষ্টাব্দের দিকে মোগল  শাসনামালে, 
রাজদরবারে সুলতানদের পৃষ্ঠপোষকতায় অনেক কবি কাব্য রচনা করেন। এই কাব্যে প্রচুর 
আরবি-ফার্সির ব্যবহৃত হয়েছে। আকবরের সেনাপতি রাজা টোডরমল্ হিন্দি-ফার্সি শব্দের 
মিশ্রণে বহু কবিতা রচনা করেছিলেন। এই মিশ্রণের সূত্রে পৃথক একটি ভাষা শৈলীর সৃষ্টি 
হয়। এই মিশ্র ভাষাই কালক্রমে উর্দু ভাষায় পরিণত হয়। এক সময় পূর্ব-মধ্য ভারতের 
অনেক অঞ্চলে আদালতের ভাষা হিসেবে উর্দুর চর্চা বৃদ্ধি পায়। অবশ্য তখনও উর্দু ভাষাকে 
হিন্দি থেকে আলাদা ভাষা হিসেবে বিবেচনা করা হতো না। এই সময়ে হিন্দি-ফার্সি শব্দের 
মিশ্রণে কবিতা রচনা করে খ্যাতি লাভ করেছিলেন বীরবল, মানসিংহ, আব্দুল রহিম খাঁ, 
নরহরি, হরিনাথ, গঙ্গাপ্রসাদ, করনেশ প্রমুখ। 
এই ধারায় ১৬০০ থেকে ১৬২৪ খ্রিষ্টাব্দের ভিতরে হিন্দি কবিতাকে উচ্চতর স্থানে পৌঁছে 
দিয়েছিলেন কবি তুলসীদাস। ১৭শ শতাব্দীর মধ্যাভগে চিন্তামণি ত্রিপাঠী হিন্দিভাষার 
আদর্শ রূপ দেওয়ার উদ্যোগ নেন। এই শতাব্দীর শেষভাগে কালিদাস ত্রিবেদী এই প্রচেষ্টাকে 
বেগবান করেন।  ১৭শ শতাব্দীতে দাদুপন্থী সম্প্রদায়ের প্রবর্তক দাদু (১৬০০ 
খ্রিষ্টাব্দ), প্রাণনাথী সম্প্রদায়ের প্রবর্তক প্রাণনাথ (১৬৫০ খ্রিষ্টাব্দ) এবং 
গুরুনানকের বাণীর সংকলক গোবিন্দ সিংহ (১৬৯৮ খ্রিষ্টাব্দ) হিন্দি সাহিত্যের 
পুষ্টসাধন করেন। এছাড়া ১৬৫০ খ্রিষ্টাব্দের দিককার কবি বিহারীলাল চৌবে 'সাতশই' 
গ্রন্থ রচনা করে খ্যাতি লাভ করেছিলেন। শোনা যায়, বিহারীলালের পৃষ্ঠপোষক রাজা জয় 
সিংহ প্রতিটি কবিতার জন্য একটি করে আসরফি দিতেন। পরবর্তীকালে মোগল সম্রাট আজম শাহ 
এই কবির পদ সংগ্রহ করেছিলেন। বর্তমানে এই সংকলন 'আজমশাহী পাঠ' নামে পরিচিত। 
১৮শ শতাব্দীতে মোগল সাম্রাজ্যের পতন শুরু হয়। এই সময় মারাঠী, রাজপুত ও মোগলদের 
মধ্যে নানা ধরনের যুদ্ধ বিগ্রহের কারণে, ভারতের পূর্বমধ্য এবং পশ্চিমাঞ্চল অশান্ত 
হয়ে উঠে। রাজপৃষ্ঠপোষকতার অভাবে  হিন্দি সাহিত্যের স্বাভাবিক বিকাশ বন্ধ হয়ে 
যায়। এই সময়ে হিন্দি রচনা ছিল মূলত রাজাকার্যের সহায়ক ভাষা হিসেবে। এর অধিকাংশই 
আবার রচিত হতো উর্দুর আদর্শে। 
১৯শ শতকে হিন্দির খরিবলি আঞ্চলিকরূপকে প্রমিত হিন্দি হিসেবে প্রতিষ্ঠার 
জন্য হিন্দিভাষী বুদ্ধিজীবীরা প্রচারণা চালাতে থাকে। এর ফলে প্রমিত হিন্দি থেকে 
প্রমিত উর্দু পৃথক হয়ে, দুটি পৃথক ভাষায় স্বীকৃতি লাভ করে। কিন্তু উর্দু ভাষা 
সমাজের উচ্চস্তরের মানুষের ভিতর প্রচলিত থেকেই যায়। এই শতাব্দীর শুরুর দিকে (১৮০২ 
খ্রিষ্টাব্দ) ভাগবতের ১০ম স্কন্ধকে মার্জিত গদ্য অনুবাদ করেন লাল্লুজি লাল। 
গুকুলনাথ অনুবাদ করেছিলেন সংস্কৃত ভাষার মহাভারত অনুবাদ করেন হিন্দিতে।  ১৮০৮ 
খ্রিষ্টাব্দে লর্ড মিন্টোর শাসনামলে আব্রাহাম লোফিটে এই গ্রন্থটি প্রকাশ করেন। এই 
সময়ে অনেক গ্রন্থ হিন্দিতে অনূদিত হতে থাকে। এই সময়ে হিন্দি সাহিত্য পুরানো খোলস 
ত্যাগ করে আধুনিকতার পথে পা বাড়ায়। ব্রিটিশ শাসনাধীনে ভারতের অনেক অংশেই স্থানীয় 
নরপতিরা রাজ্যের অধিকারী ছিলেন। এদের পৃষ্ঠপোষকতায় উল্লেখযোগ্য বহু গ্রন্থ রচিত হয়। 
যেমন নাগপুরের রাজা রঘুনাথ আপ্পার সভাকবি পদ্মাকর ভট্ট রচনা করেন জগৎবিনোদ ও 
গঙ্গালহরী। বুন্দেলখণ্ডের রাজা বিক্রমশাহ (১৭৮৫-১৮২৮ খ্রিষ্টাব্দ) রচনা করেছিলেন 
'বিক্রমবিরুদানলী' ও বিক্রমসাতসই'। এই সময়ে সমালোচক সাহিত্য রচনা করে খ্যাতি লাভ 
করেছিলেন কবি হরিশচন্দ্র। তাঁর রচিত উল্লেখযোগ্য গ্রন্থগুলো হলো সুন্দরী তিলক 
(কাব্যসংগ্রহ), প্রসিদ্ধ মহাত্মাওঁ কা জীবনচরিত্র, কাশ্মীরকুসুম (কাশ্মীরের 
ইতিহাস), কাশীকা ছায়াচিত্র (নাটক), কবিবচন সুধা। উল্লেখ্য তিনি তাঁর  সমুদয় 
রচনার জন্য ১৮৮০ খ্রিষ্টাব্দে ভারতেন্দু উপাধি লাভ করেছিলেন।
১৮৮১ খ্রিষ্টাব্দে বিহার 
প্রদেশে সরকারী ভাষার মর্যাদা পায়। এটাই ছিল হিন্দি বলয়ে ভারতের কোনো প্রদেশের 
সরকারী ভাষা। এই সময় থেকে হিন্দি কাব্য, সঙ্গীত, নাটক ইত্যাদিতে  ক্রমে ক্রমে 
সমৃদ্ধ হয়ে উঠে। পাশাপশি হিন্দি চলচ্চিত্র এই ভাষার প্রসারে বিশেষ অবদান রাখতে 
সমর্থ হয়। ১৯৪৭ খ্রিষ্টাব্দের পর হিন্দিকে ভারতের রাষ্ট্রভাষা গ্রহণ করার জন্য 
ভারতের অন্যান্য প্রদেশ মেনে নেয়। ১৯৪৯ খ্রিষ্টাব্দের ১৪ই সেপ্টেম্বর হিন্দি 
রাষ্ট্র ভাষা হিসেবে, সাংবিধানিক  স্বীকৃতি পায়। এই কারণে এই দিনকে হিন্দি 
দিবস বলা হয়। এই স্বীকৃতি লাভের পর দেখা গেল, এই ভাষার জন্য কোনো আদর্শ ব্যাকরণ 
নেই। ১৯৫৪ খ্রিষ্টাব্দে ভারত সরকার প্রমিত হিন্দি ব্যাকরণ তৈরির জন্য একটি কমিটি 
তৈরি করে। এই কমিটি ১৯৫৮ খ্রিষ্টাব্দে আধুনিক হিন্দি ব্যাকরণ তৈরি করতে সমর্থ হয়।
যথার্থভাবে বলতে গেলে, হিন্দি এবং উর্দুভাষার মধ্যে খুব বেশি পার্থক্য নেই। এই দুই 
ভাষার উচ্চারণরীতিও একই। মোটাদাগে বিচার করলে, পার্থক্য ধরা পড়ে দুটি। এই পার্থক্য 
দুটি হলো-
১. হিন্দির বর্ণমালা দেবনাগরী, এবং বর্ণমালা আরবি।
২. হিন্দিতে সংস্কৃত শব্দের ব্যবহার বেশি, হিন্দিতে আরবি-ফারসি শব্দের ব্যবহার বেশি।
হিন্দি ভাষায় ব্যবহৃত শব্দভাণ্ডার বাংলার মতোই। উল্লেখ্য, প্রমিত হিন্দি ব্যাকরণ তৈরির ক্ষেত্রে হিন্দি-ব্যাকরণবিদরা অনেকটাই বাংলা ব্যাকরণের সাহায্য নিয়েছিল। হিন্দি শব্দভাণ্ডারকে ৫টি ভাগে ভাগ করা হয়ে থাকে। এই ভাগগুলো হলো−
সূত্র :
ভাষা-প্রকাশ বাঙ্গালা ব্যাকরণ। 
সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায়। রূপা। বৈশাখ ১৩৯৬।
ভাষার ইতিবৃ্ত্ত। সুকুমার সেন। আনন্দ পাবলিশারস্ প্রাইভেট লিমিটেড। নভেম্বর 
১৯৯৪।
বাঙ্গালা ভাষার ইতিবৃত্ত। ডঃ মুহম্মদ শহীদউল্লাহ। মাওলা ব্রাদার্স। জুলাই ১৯৯৮
সাধারণ ভাষা বিজ্ঞান ও বাংলা ভাষা। ডঃ রামেশ্বর শ। 
বিশ্বকোষ, দ্বাবিংশ খণ্ড। শ্রীনগেন্দ্রনাথ বসু সঙ্কলিত, ১৩১৮ বঙ্গাব্দ।
http://en.wikipedia.org/wiki/Indo-Aryan_languages 
http://www.ethnologue.com/language/hif/18