বৈশাখ
বঙ্গাব্দের একটি মাস। প্রচলিত বঙ্গাব্দের বিচারে এই মাসটি বৎসরের প্রথম মাস।
গ্রীষ্ম ঋতুর প্রথম মাস এবং মেষ রাশিতে অবস্থিত। আধুনিক বঙ্গাব্দ গণনার বিচারে
এর দিন সংখ্যা ৩১। বিশাখা নক্ষত্রের নামানুসারে এই মাসের নামকরণ করা হয়েছে।
বৈশাখ মাসের লোকাচার ও উৎসব
পহেলা বৈশাখ
বাংলা ভাষাভাষী অঞ্চলে বৈশাখ মাসের প্রথম দিন নববর্ষ হিসেবে উৎযাপিত হয়। বাংলাদেশের
বিপুল উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে বাংলা নববর্ষ উৎযাপিত হয় ১লা বৈশাখে। বৎসর গণনার আধুনিক
রীতি অনুসারে বাংলাদেশে এই দিনটি উৎযাপিত হয়
গ্রেগোরিয়ান পঞ্জিকা অনুসারে ১৪ই এপ্রিলে। কিন্তু পুরাতন পঞ্জিকা অনুসারে ভারতে
নববর্ষ পালিত হয় এর একদিন পরে।
গ্রাম বাংলায় নববর্ষের দিনে ব্যবসায়ীরা হালখাতা
করে থাকতেন। এখন এই বিষয়টি সকল ব্যবসায়ী মান্য না করলেও, কোথাও কোথাও তা প্রচলিত
আছে। সাধারণ মানুষের কাছে নববর্ষের উৎসব বলতে ছিল গ্রাম্য মেলা। এই সকল মেলায় নানা
ধরনের লোকজ দ্রব্যাদি বেচাকেনা হতো। তবে তাতে উৎসবের মেজাজ থাকতো।
বর্তমানে বাংলাদেশে ১লা বৈশাখে বাংলা নববর্ষ সারা দেশব্যাপী উৎযাপিত হয় এবং এদিন
সরকারি ছুটি থাকে। বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকা শহরের রমনা বটমূলে
ছায়ানট-এর আয়োজিত পহেলা বৈশাখ এখন জাতীয় অনুষ্ঠানের পর্যায়ে চলে গেছে।
বৈশাগু নৃত্য
পশ্চিম বঙ্গের উত্তরাঞ্চলের (উত্তর বঙ্গ) মেচ সম্প্রদায়ের মধ্যে এক ধরনের আগমনী
নৃত্য করে থাকে। একে স্থানীয় ভাষায় বলা হয় বৈশাগু নৃত্য। ১লা বৈশাখ থেকে তিন
দিন ধরে মেচ যুবক-যুবতীরা এই নৃত্যোৎসব করে থাকে। এই উৎসবে তরুণীরা সানছালি
রঙিন নকশি কাপড়ের ওড়না, গলাবন্ধনী পরিধান করে। এরা ঢোল, বাঁশি, করতাল নিয়ে
―
নতুন নতুন গান এবং নাচের
মধ্য দিয়ে এই উৎসব পালন করে।
বিজু উৎসব
চাকমাদের বড় সামাজিক উৎসব হল
'বিজু'।
এই উৎসবটির মুখ্য উদ্দেশ্য হল পুরাতন বছরকে বিদায় জানানো এবং নতুন বছরকে সাদরে
গ্রহণ করা। চৈত্র মাসের শেষ দুই দিন এবং পহেলা বৈশাখ নিয়ে মোট তিন দিন ধরে বিজু
উৎসব চলে।
বিজু উৎসবে তিন দিনের আলাদা নাম করণ করা হয়েছে। যেমন, প্রথম দিন ফুল
বিজু, দ্বিতীয় দিন মূল বিজু ও তৃতীয় দিন গোজ্যাপোজ্যা।
সাংগ্রাই :
মার্মা জাতির চারদিন ব্যাপী পালিত নববর্ষের উৎসব। এর প্রথম দিন থাকে,
পূর্ববর্তী বৎসরের শেষ তিন দিন। আর শেষ দিন অনুষ্ঠিত হয় বৎসরের প্রথম দিন।
সূত্র :
প্রাচীন ভারতীয় লিপিমালা। গৌরীশঙ্কর হীরাচাঁদ ওঝা। অনুবাদ মণীন্দ্রনাথ সমাজদার্। বাংলা একাডেমী ঢাকা। আষাঢ় ১৩৯৬। জুন ১৯৮৯।
প্রাচীন জ্যোতির্বিজ্ঞান /মোহাম্মদ আব্দুল জব্বার। বাংলাদেশ অ্যাস্ট্রোনমিক্যাল এসোসিয়েশন, ফাল্গুন ১৪০৬। ফেব্রুয়ারি ২০০০।
পহেলা বৈশাখ বাঙালির ঐতিহ্যের বাহক। আনু মাহ্মুদ সম্পাদিত। ঐতিহ্য, আশ্বিন ১৪০৮। সেপ্টেম্বর ২০০১।
বঙ্গীয় লোকসংস্কৃতি কোষ। সম্পাদনা বরুণকুমার চক্রবর্তী, ডি.লিট্। অপর্ণা বুক ডিস্ট্রিবিউটার্স। ডিসেম্বর ২০০৭।