মোলাস্কা

বানান বিশ্লেষণ: ম্+ও+লাস্+ক্+আ
উচ্চারণ:
mo.las.ka (মো.লাস্.কা)

মো.লাস্.কা [মো একাক্ষর হিসেবে উচ্চারিত হবে। স্ক এর স্ ধ্বনি লা-এর সাথে যুক্ত হয়ে একাক্ষর লাস্ ধ্বনি তৈরি করবে। অবশিষ্ট কা একাক্ষর হিসেবে উচ্চারিত হবে।]

শব্দ-উৎস: গ্রিক এ্যারিস্টোটেল কৃত নাম τᾲ μαλάκια>ল্যাটিন mollis (নরম)>molluscus>ফরাসি mollusque>ইংরেজি mollusc (ব্রিটিশ), mollusk (মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র)>mollusca বাংলা মোলাস্কা।
পদ: বিশেষ্য
ঊর্ধ্বক্রমবাচকতা {| অমেরুদণ্ডী প্রাণী | প্রাণী | জীবসত্তা | জীবন্তবস্তু | দৈহিক-লক্ষ্যবস্তু | দৈহিক সত্তা | সত্তা |}

অর্থ: প্রাণিজগতের অমেরুদণ্ডী প্রাণির একটি পর্বের নাম।
ইংরেজি সমার্থক নাম:
mollusk, mollusc, shellfish

 

বিস্তারিত: প্রাণিরাজ্যের পর্বের নাম মোলাস্কা (Mollusca)। গ্রিক Molis থেকে এই নাম গৃহীত হয়েছে। প্রাণিজগতের একটি অন্যতম বৃহৎ পর্ব।

 

                    Kingdom (রাজ্য) : Animalia

                    Phylum (পর্ব) : Mollusca


এই পর্বের ভিতরে রয়েছে শামুক, ঝিনুক, সেপিয়া, অক্টোপাস ইত্যাদি। এদের দেহে ক্যালসিয়াম সমৃদ্ধ একটি শক্ত খোলস থাকে। এই খোলসের অভ্যন্তরে থাকে এদের নরম দেহ। এর
অধিকাংশ প্রজাতির অঙ্কীয়দেশে মাংসল নরম পদ বা পা থাকে। এর সাহায্যে ভূমিতে চলাচল এবং পানিতে সাঁতারে জন্য ব্যবহার করে। এছাড়া মাটিতে গর্ত খনন, কঠিন কোনো অবলম্বন আঁকড়ে থাকা,  খাদ্য গ্রহণে এই পদ ব্যবহৃত হয়।

এদের শরীকে প্রধানত দেহ মস্তক, ম্যান্টল, পদ ও ভিসারাল মাস -এ বিভক্ত। এরা ত্রিস্তরী প্রাণী এবং এদের দেহে প্রকৃত সিলোম দেখা যায়। তবে তা হৃদযন্ত্রের চারপাশে, জননাঙ্গের গহ্বরে ও বৃক্কের চারপাশে সীমাবদ্ধ থাকে। এদের বেশিরভাগই দ্বিপার্শ্বীয় প্রতিসম, তবে অনেকেই অপ্রতিসম প্রজাতিও আছে। অধিকাংশ প্রজাতির মস্তক, কর্ষিকা ও সংবেদী অঙ্গ আছে। এদের সাধারণত পৌষ্টিকনালী ইউ আকৃতির। তবে কোনো কোনো প্রজাতির পৌষ্টিকনালী সোজা আকারের হয়ে থাকে। অধিকাংশের মুখ গহ্বরে র‍্যাডুলা নামক কৃন্তক অংশ বর্তমান। প্রজাতিভেদে এরা উভলিঙ্গ
(Hermaphroditic) বা একলিঙ্গ (Dioecious) হতে পারে। এদের দেহে অন্তঃনিষেক অথবা বহিঃনিষেক দেখতে পাওয়া যায়।

 

বর্তমানে এই পর্বের প্রায় ৯৩০০ হাজার প্রজাতি পাওয়া যায়। ১৭৫৮ খ্রিষ্টাব্দে লিনিয়াস এই পর্বের নামকরণ করেন। এর পূর্বসূরী প্রাণীকুলকে বলা হয় লোফোট্রোকোজোয়া (Lophotrochozoa)। এই প্রাণীকুল থেকে মোলাস্কা পর্বের প্রাণীর আবির্ভাব ঘটেছিল ৫ কোটি ০ লক্ষ্ খ্রিষ্টপূর্বাব্দের দিকে

 

মোলাস্কা পর্বের প্রাণিদের অধিকাংশ শামুক (Gastropoda) এবং ঝিনুক (Bivalvia) শ্রেণির প্রাণী। প্রজাতিভেদে এরা লোনা বা স্বাদু পানিতে বাস করে। বিলুপ্ত ও বিদ্যমান মোলস্কার সকল প্রাণিদেরকে মোট ৮টি শ্রেণিতে ভাগ করা হয়েছে। এই শ্রেণিগুলো হলো
        ১.
মনোপ্ল্যাকোফোরা (Monoplacophora): একমাত্র গণ neopilina জীবিত আছে ।
        ২. এ্যাপ্লোকোফোরা (Aplacophora)
        ৩. পলিপ্লাকোফোরা (Polyplacophora)

        ৪. স্কাফোপোডা (Scaphodopa)
        ৫. রোস্ট্রোকোন্‌চিয়া (Rostroconchia): বিলুপ্ত
        ৬. গ্যাস্ট্রোপোডা (Gastropoda)
        ৭. বিভাল্‌ভি্য়া (Bivalvia)
        ৮. সেফালোপোডা (Cephalopoda)

 

এদের দেহ কোমল এবং দ্বিপার্শ্বীয় প্রতিসম। মাথার একটি সুষ্পস্ট নিদর্শন আছে। অঙ্কীয় দেহপ্রাচীরে মাংসল পা আছে।  এর সাহায্যে এরা সাঁতার কাটে, ভূমিতে ধীরগতিতে চলে এবং নরম মাটিতে গর্ত করে। এক প্রকার ৃষ্ঠীয় ভাঁজ লক্ষ্য করা যায়। একে বলা হয় ম্যান্টল (mantle) হয়। এই ম্যান্টেল একটি ম্যন্টেল গহ্বরকে ঘিরে রাখে। এদের ম্যান্টেল থেকে ক্ষরিত রসের দ্বারা শক্ত খোলস তৈরি হয়।

এরা এক লিঙ্গীক প্রাণী। অধিকাংশ মোলাস্কার ডিমের নিষেক ঘটে দেহের বাইরে, কোনো জলাশয়ে। কিন্তু কিছু মোলাস্কা স্ত্রী মোলাস্কার সাথে দৈহিক মিলন ঘটে। এ সকল মোলাস্কার ডিম বেশ বড় হয়।

 

অধিকাংশ মোলাস্কা সামুদ্রিক প্রাণী। অল্প কিছু শামুক, ঝিনুক জাতীয় প্রাণী স্বাদু পানিতে বাস করে। আবার কিছু মোলাস্কা আর্দ্র পরিবেশে ডাঙায় বাস করে। সামুদ্রিক মোলাস্কার ঝিনুক ও শামুক জাতীয় খোলস অত্যন্ত নান্দনিক হয়ে থাকে। এই সব খোলস অলঙ্কার বা গৃহ সজ্জায় ব্যবহার করা হয়। এদের নরম দেহাংশ অনেকে খাদ্য হিসাবে মানুষ গ্রহণ করে।

মোলাস্কা পর্বের উল্লেখযোগ্য প্রাণীর তালিকা
অক্টোপাস, এ্যাবালোন


তথ্য :
বাংলা একাডেমী বিজ্ঞানকোষ। তৃতীয় খণ্ড। আষাঢ় ১৪০৮/জুন ২০০১