Kingdom (জীবরাজ্য): Animalia (প্রাণিজগৎ)
Phylum
(পর্ব): Chordata (কর্ডাটা)
Clade
(থাক্): Sauropsida
Class
(শ্রেণি): Reptilia (সরীসৃপ)
Laurenti, 1768

সরীসৃপ
ইংরেজি :
Reptile
 

মেরুদণ্ডী প্রাণীর একটি শ্রেণি।  Reptile শব্দের অর্থ হলো- বুকে ভর করে চলা। এই অর্থে এই জাতীয় প্রাণী শ্রেণিগত নাম গৃহীত হয়েছে reptilia  নামটি গৃহীত হয়েছে। এই শ্রেণীর প্রাণীর ত্বক শুষ্ক ও আঁইশযুক্ত থাকে। সাধারণভাবে এই শ্রেণীর অন্তর্গত প্রাণীগুলোর মধ্যে, আমাদের অতি পরিচিত প্রাণীগুলো হলো নানা রকমের সাপ, কুমির, টিকটিকি, কচ্ছপ ইত্যাদি হিসাবে। (সরীসৃপ)

সরীসৃপ শ্রেণির ক্রমবিবর্তন
প্রাণীর ক্রমবিবর্তনের ধারায় সিলুরিয়ান অধিযুগের শেষের দিকে ৪১ কোটি ৬০ লক্ষ খ্রিষ্টপূর্বাব্দের দিকে সারকোপটেরিজাই জাতীয় প্রাণী থেকে উদ্ভব ঘটেছিল হৃপিডিস্টিয়া মৎস্যকূল থেকে। এ সময় চলছিল কারু বরফযুগ

৪০ কোটি খ্রিষ্টপূর্বাব্দের ভিতরে মহা-মহাদেশীয় উপকুলের কোনো কোনো অঞ্চলে পানি কমে গিয়ে অগভীর জলভূমিতে পরিণত হয়েছিল। একই সাথে তাপমাত্রার পরিবর্তনের কারণে ভার্টিব্রেটা উপপর্বের কিছু প্রাণী এই সব অগভীর জলভূমিতে বসবাসে অভ্যস্থ হয়ে উঠেছিল। কালক্রমে এরা বড় বড় জলাশয় ছেড়ে ছোট ছোট হ্রদ জাতীয় জলাশয়ে বসবাস শুরু করে।

ডেভোনিয়ান অধিযুগর ৩৯ কোটি ৭০ লক্ষ খ্রিষ্টপূর্বাব্দের অগভীর জলের ভার্টিব্রেটা উপপর্বের প্রজাতিগুলো তাদের পাখনা প্যাডেলের মতো ব্যবহার করে পানিতে সাঁতার কাটতো। এর ফলে পাখনাগুলো শক্তিশালী হয়ে উঠেছিল। এরা দ্রুত চলাচলের জন্য অগভীর জলাভূমির তলদেশের মাটিতে এই মজবুত পাখনা দিয়ে আঘাত করতো। এর ফলে এদের চলাচলের জন্য পাখনা পায়ের মতো অঙ্গে পরিণত হয়েছিল। ফলে এই প্রজাতিগুলো চতুষ্পদী প্রাণীতে পরিণত হয়েছিল। বিজ্ঞানীরা এই জাতীয় সকল প্রজাতিকে টেট্রাপোড (Tetrapod) নামে অভিহিত করে থাকেন।

কালক্রমে এরা বড় বড় জলাশয় ছেড়ে ছোট ছোট হ্রদ জাতীয় জলাশয়ে বসবাস শুরু করে। এদের কিছু কিছু প্রজাতি এই সময় ক্রমাগত ডাঙায় উঠে আসার চেষ্টা করতে থাকে। এর ফলে পানিতে বসবাসকারী প্রাণীর পাখনা ক্রমে ক্রমে পা-এ রূপান্তরিত হয়। এর ফলে এদের দেহের ব্যাপক পরিবর্তন ঘটে। এই সূত্রে এরা হয়ে উঠেছিল চার পেয়ে প্রাণী। বিজ্ঞানীরা এদের নামকরণ করেছে । প্রথম দিকে এরা জলস্থলে বিচরণ করতো। কিন্তু এদের অনেক প্রজাতি পানিতে থাকার অভ্যাস অনেকাংশে ত্যাগ করেছিল। এই সময় তাদের আর্দ্র ত্বক দিয়ে শ্বাসকার্য চালাতো। ডাঙায় বসবাসে অভ্যস্ত হয়ে উঠেছিল, এদের দেহে ফুসফুস নামক অঙ্গ সৃষ্টি হয়েছিল। ৩৪ কোটি খ্রিষ্টপূর্বাব্দের ভিতরে  রেপ্টিলিওমোর্ফা (Reptiliomorpha) নামক ট্রেটাপোডের আবির্ভাব ঘটে। এই রেপ্টিলিওমোর্ফা টেট্রাপোডের  কিছু প্রজাতির যখন এ্যাম্নিওটা (Amniota) ডিম প্রসব করা শুরু করে, তখনই অন্যান্য উভচর থেকে এরা পৃথক হয়ে যায়। উল্লেখ্য, সাধারণত ডিমের কুসুমে থাকে ভ্রূণের খাবার হিসেবে। এই কুসুম এবং ভ্রূণকে ঘিরে থাকে এক ধরনের তরল পদার্থ। একে বলা হয় এ্যাম্নিয়ন (amnion)। যে সকল প্রাণীর ডিম এ্যামিওন-যুক্ত হয়, সে সকল ডিমকে বলা হয় এ্যাম্নিয়োটা । ‌এদের কিছু প্রজাতির ডিমের বাইরে ছিল একটি শক্ত খোলস। এই জাতীয় ডিমে অন্তর্নিষেক হওয়ার পর, স্ত্রী-প্রাণী উপযুক্ত স্থানে ডিম প্রসব করা শুরু করেছিল। আবার কোনো কোনো প্রাণী ডিম্বনালীতে ডিম ধারণ করে রাখতো  এবং পরে সেখান থেকে ডিম ফুটে বাচ্চা বের হয়ে আসতো।

৩৪ কোটি খ্রিষ্টপূর্বাব্দের দিকে রেপ্টিলিওমোর্ফা
(Reptiliomorpha) নামক ট্রেটাপোডের আবির্ভাব ঘটে। এদেরকে এ্যাম্নিওট এবং উভচরের উত্তর-পুরুষ বিবেচনা করা হয়। মূলত এই রেপ্টিলিওমোর্ফা টেট্রাপোডের কিছু প্রজাতির যখন এ্যাম্নিওট ডিম প্রসব করা শুরু করে, তখনই অন্যান্য উভচর থেকে এরা পৃথক হয়ে যায়।

৩২.২ কোটি খ্রিষ্টপূর্বাব্দের ভিতরে এ্যাম্নিয়োট ডিম প্রসবকারী প্রাণিকুল থেকে উদ্ভব ঘটে  সিন্যাপ্সিডা (Synapsida) ক্ষুদ্রপর্বের প্রজাতিসমূহ। পরে  এই ক্ষুদ্রপর্ব থেকে উৎপন্ন হয়েছিল স্তন্যপায়ী। অনেক সময় থেরোপ্সিডা (theropsida) বলা হয়। ৩২ কোটি খ্রিষ্ট-পূর্বাব্দের ভিতরে  রেপ্টিলিওমোর নামক টেট্রাপোডদের কিছু প্রাণী এ্যাম্নিয়োট (Amniote) ডিম প্রসব করার সূত্রে এ্যাম্নিওট টেট্রাপোডদের আবির্ভাব ঘটে। এই সূত্রে টেট্রাপোড-এর মূলধারা থেকে আদি সরীসৃপ জাতীয় প্রাণীর বিকাশ ঘটে।

৩১.২ কোটি খ্রিষ্টপূর্বাব্দের ভিতরে আদি সরীসৃপ শ্রেণির প্রাণীকূল থেকে উদ্ভব হয়েছিল
ইউরেপ্টিলিয়া ( Eureptilia)  জাতীয় প্রজাতিসমূহ। এই ধারার প্রজাতিসমূহ একালেও পাওয়া যায়। থেকে অন্যদিকে সরীসৃপের মূলধারা থেকে প্যারারেপ্টিলিয়া (Parareptilia) ২৯ কোটি ৮৯ লক্ষ খ্রিষ্টপূর্বাব্দে বিকশিত হয়েছিল। তবে এদের সকল প্রজাতি ২০ কোটি ১৩ লক্ষ খ্রিষ্টাব্দের ভিতরে বিলুপ্ত হয়ে গিয়েছিল।

কার্বোনিফোরাস অধিযুগের শেষের দিকে, ৩০ কোটি খ্রিষ্টপূর্বাব্দের ভিতরে সরীসৃপ শ্রেণীর প্রাণীকূল বিভিন্ন বৈশিষ্ট্যে বিভক্ত হয়ে পড়েছিল। এর উল্লেখযোগ্য উপশ্রেণীগুলো হলো
‌   
এ্যানাপ্সিডা (Anapsida) : উল্লেখযোগ্য প্রাণী কচ্ছপ।
   
লেপিডোসোরিয়া (Lepidosauria) : একালের সাপ জাতীয় প্রাণী।
    আ
র্কোসোরিয়া (Archosauria) : ডাইনোসরের শাখা।
   
প্যারাপ্সিডা (Parapsida) : ডাইনোসরের আবির্ভাবের পূর্ববর্তী একটি বিলুপ্ত শাখা।
    আরিওস্কেলিডা
(Araeoscelida) : এর সকল প্রজাতি বিলুপ্ত হয়ে গেছে।

এই গুলোকে বর্তমানে সরীসৃপ শ্রেণির উপশ্রেণি হিসাবে বিবেচনা করা হয়।

র্কোসোরিয়া (Archosauria)
Archosauria
শব্দের অর্থ হলো- শাসক সরীসৃপ (ruling reptiles)। এটি সরীসৃপ শ্রেণির প্রাণির একটি উপশ্রেণি। এই উপশ্রেণীর সরীসৃপগুলোর উদ্ভব ঘটেছিল ২৫ কোটি বৎসর পূর্বকালে (পারমিয়ন অধিযুগের শেষাংশ) এবং এদের দৌরাত্ম ছিল মেসোজোয়িক যুগের শেষভাগ পর্যন্ত। এই উপশ্রেণীর অন্তর্গত কিছু পাখি ছাড়া, সকল প্রজাতি মেসোজোয়িক যুগের শেষে বিলুপ্ত হয়ে যায়। ১৯৯৯ খ্রিষ্টাব্দে এর নামকরণ করেছিলেন কোপে।

এই সরীসৃপগুলোর কিছু প্রাণীর করোটির উপরিভাগে এবং চোখের পিছনে ছিদ্র রয়েছে। এই জাতীয় করোটিকে বলা হয়- ডায়াপ্সিড (Diapsid )। আর্কোসোরিয়া উপশ্রেণীতে ডায়াপসিড করোটি রয়েছে। এদের চোয়ালের দাঁতগুলো সকেটে আবদ্ধ থাকতো। করোটি ছিল হাল্কা ও সরু। এই কারণে কেউ কেউ ডায়াপ্সিড  অধিশ্রেণি হিসাবে উল্লেখ করে থাকেন।

আর্কোসোরিয়া উপশ্রেণির অধীনে রয়েছে ডাইনোসোরিয়া নামক অধিবর্গ (Dinosauria)। আর এই অধিবর্গের অধীনে রয়েছে দুটি বর্গ। সরিশ্চিয়া (Saurischia) ও অর্নিথিশকিয়া (Ornithischia)


সূত্র :
ডাইনোপেডিয়া
। কামরুল হায়দার। বলাকা বুকস ইন্টারন্যাশনাল। শ্রাবণ ১৪১২, জুলাই ২০০৫।