ডেভোনিয়ান
অধিযুগ
(Devonian
period)
৪১.৯২-৩৫.৮৯ কোটি
খ্রিষ্টপূর্বাব্দ
ফ্যানেরোজোয়িক
কালের প্যালোজোয়িক
যুগের
চতুর্থ অধিযুগ। ৪১ কোটি ৯২ লক্ষ
খ্রিষ্টপূর্বাব্দে এই যুগের সূচনা
হয়েছিল।
আর শেষ হয়েছিল ৩৫ কোটি
৮৯ লক্ষ খ্রিষ্টপূর্বাব্দে। এই অধিযুগের প্রথম
যে শিলাসমূহের পর্যবেক্ষণ করা হয়েছিল, তা পাওয়া গিয়েছিল ইংল্যান্ডের
Devonshire
(ডেভোনশেয়ার)
কাউন্টিতে। এই কারণে এই কাউন্টির Devon
অংশ থেকে এই
অধিযুগের নামকরণ করা হয়েছে।
এই অধিযুগের
৪১.৮ কোটি খ্রিষ্টপূর্বাব্দের দিকে
লাউরেনশিয়া,
বাল্টিকা এবং
এ্যাভালোনিয়া
সংঘর্ষ হয় এবং এর মাধ্যমে সৃষ্টি হয়েছিল
ইউরোমেরিকা
মহামহাদেশ। এই
সংঘর্ষের ফলে
স্কটল্যান্ড,
আয়ারল্যান্ড,
ওয়েল্স্,
স্ক্যান্ডিনেভিয়ান দেশসমূহে
(সুইডেন,
ডেনমার্ক,
নরওয়ে)
ক্যালিডোনীয়
গিরিজনি
সৃষ্টি হয়েছিল।
এছাড়া ৪৮ কোটি খ্রিষ্টপূর্বাব্দে সৃষ্ট এ্যাপ্লেচিয়ান
পর্বতমালার পুনরুত্থান শুরু হয়েছিল।
পাত সঞ্চালন প্রক্রিয়ায় এই
অধিযুগে ইউরেমিকা (লাউরুশিয়া) মহাদেশ এবং
গোণ্ড্ওয়ানা
মহা-মহাদেশ বিষুবরেখার কাছে খুব কাছাকাছি চলে এসেছিল।
এই অধিযুগে সাগরের জলের উচ্চতা অনেক বেশি ছিল। ফলে মহাদেশীয় উপকূলীয় অঞ্চলের বিশাল
অংশ অগভীর জলাভূমিতে পরিণত হয়েছিল। সাগর জলের উষ্ণতাও ছিল বেশি। সব মিলিয়ে সাগরের
প্রাণিজগতে এর বিশাল প্রভাব পড়েছিল।
এই অধিযুগের উল্লেখযোগ্য বিষয়গুলো নিচে তুলে
ধরা হলো।
- ৪১
কোটি ৬০ লক্ষ খ্রিষ্টপূর্বাব্দ:
সারকোপটেরিজাই
উপপর্বের
সারকোপটেরিজাই
উপপর্বের কিছু সদস্য মিষ্টি পানিতে বসবাস
করায় অভ্যস্থ হয়ে উঠেছিল।
পরে এই প্রাণিগুলো দুটো ভাগে
ভাগ হয়ে যায়। এই ভাগ দুটোকে বলা হয়
coelacanths এবং
rhipidistians। এদের ভিতরে
Rhipidistians-রা নদী অববাহিকায়
অপেক্ষাকৃত মিষ্টি পানিতে বসবাস করা শুরু করে।
Rhipidistians-রা এক সময় দুটো
ভাগে পুনরায় বিভক্ত হয়ে পড়ে। ভাগ দুটো হলো
lungfish এবং
tetrapodomorphs।
কারু বরফযুগের শুরুতে
কোন কোন
অঞ্চলে পানি কমে যাওয়ায় ও তাপমাত্রার পরিবর্তনের কারণে ভার্টিব্রেটা
উপপর্বের কিছু প্রাণী ডাঙার দিকে উঠে আসা শুরু করে। ফলে পানিতে বসবাসকারী
প্রাণীর পাখনা ক্রমে ক্রমে পা-এ রূপান্তরিত হয়। এর ফলে এদের দেহের ব্যাপক
পরিবর্তন ঘটে। আদিকালের সেই চার পেয়ে প্রাণিগুলোকে আদি
টেট্রাপোড (Tetrapod)-এর
পূর্বপূরুষ হিসেবে বিবেচনা করা হয়।
-
৪০
কোটি ৯০ লক্ষ খ্রিষ্টপূর্বাব্দ:
এই সময়ের দিকে হৃপিডিস্টিয়া
(Rhipidistia)
জাতীয় মৎস্য থেকে উদ্ভব ঘটে টেট্রাপোডোমোর্ফস (
tetrapodomorphs)
এবং
ডিপোনি
(Dipnoi)
বা লাংফিশ
(lungfish)
জাতীয় মৎস্য। এছাড়া
এ্যাক্টিনিস্টিয়া উপশ্রেণি থেকে উদ্ভব
হয় কোয়েলাক্যান্থ (coelacanths)
বর্গের মৎস্য।
-
৪০ কোটি খ্রিষ্টপূর্বাব্দ:
এই সময়ের প্রথমদিকে আবর্ভাব হয় এলাস্মোব্রান্চি (Elasmobranchii)
জাতীয় হাঙরের। এরপর সাগরজলে
আবরিভাব হয়
ইউসেলাচি
(Euselachii)
জাতীয় হাঙর। এই সময়ের ভিতরে মহা-মহাদেশীয়
উপকুলের
কোনো কোনো অঞ্চলে
পানি কমে গিয়ে অগভীর জলভূমিতে পরিণত হয়েছিল। একই সাথে তাপমাত্রার
পরিবর্তনের কারণে ভার্টিব্রেটা উপপর্বের কিছু প্রাণী এই সব অগভীর জলভূমিতে
বসবাসে অভ্যস্থ হয়ে উঠেছিল।
কালক্রমে এরা বড় বড়
জলাশয় ছেড়ে ছোট ছোট হ্রদ জাতীয় জলাশয়ে বসবাস শুরু করে।
-
৩৯ কোটি ৭০ লক্ষ খ্রিষ্টপূর্বাব্দ:
অগভীর জলের
ভার্টিব্রেটা উপপর্বের
প্রজাতিগুলো তাদের পাখনা
প্যাডেলের মতো ব্যবহার করে পানিতে সাঁতার কাটতো। এর ফলে পাখনাগুলো
শক্তিশালী হয়ে উঠেছিল।
এরা দ্রুত চলাচলের জন্য অগভীর জলাভূমির তলদেশের মাটিতে এই মজবুত পাখনা দিয়ে
আঘাত করতো। এর ফলে এদের চলাচলের জন্য পাখনা পায়ের মতো অঙ্গে পরিণত হয়েছিল।
ফলে এই প্রজাতিগুলো চতুষ্পদী প্রাণীতে পরিণত হয়েছিল। বিজ্ঞানীরা এই জাতীয়
সকল প্রজাতিকে টেট্রাপোড নামে অভিহিত করে থাকেন।
আদি টেট্রাপোডরা
সাগরের ডাঙার কাছাকছি অগভীর জলাভূমিতে বসবাস করতো।
প্রথম
দিকের টেট্রাপোডরা তাদের পরিবর্তিত পাগুলো জলের ভিতর প্যাডেলের মতো ব্যবহার করতো
এবং একই সাথে জলাভূমির তলদেশে ভূমিতে ধাক্কা দেওয়ার জন্য পায়ের মতো ব্যবহার
করতো। ক্রমবিবর্তনের ধারায় এদের কিছু প্রজাতি এই সময় ক্রমাগত ডাঙায় উঠে আসার চেষ্টা করতে থাকে।
এদের কিছু কিছু প্রজাতি শেষ পর্যন্ত এই প্রচেষ্টা সফল
এবং ধীরে ধীরে এরা এক সময় ডাঙায় বসবাসে অভ্যস্থ হয়ে উঠে। প্রথম দিকে এরা
জলস্থলে বিচরণ করতো। কিন্তু এদের অনেক প্রজাতি পানিতে থাকার
অভ্যাস অনেকাংশে ত্যাগ করেছিল। এই সময় তাদের আর্দ্র ত্বক দিয়ে শ্বাসকার্য চালাতো।
ডাঙায় বসবাসে অভ্যস্ত হয়ে উঠেছিল,
এদের দেহে ফুসফুস
নামক অঙ্গ সৃষ্টি হয়েছিল।
-
৩৮ কোটি
খ্রিষ্টপূর্বাব্দ:
আদি
ওল্ডেরিয়া মহা-মহাদেশ এই সময় বিভাজিত হয়ে যায়। এরপর বিচ্ছিন্ন নতুন ভূখণ্ডগুলো
নতুন ভাবে সজ্জিত হতে থাকে।
- ৩৭ কোটি
খ্রিষ্টপূর্বাব্দ: টেট্রাপোডের ক্রমবিবর্তনের ধারায়
আবির্ভাব ঘটে উভচর জাতীয়
প্রাণীকুলের আদিম ব্যাঙ।
-
৩৬ কোটি ৩০ লক্ষ খ্রিষ্টপূর্বাব্দ:
এই সময় ডাঙাতে পতঙ্গের
আবির্ভাব ঘটে। সেই সাথে মস, ফারন, সবীজ উদ্ভিদের বহুবিধ প্রজাতির আবির্ভাব হয়।
এই সময় প্রচুর পরিমাণে নানা ধরনের হাঙরের আবিভার্ব ঘটে। এই সময় হাঙরই ছিল
প্রধান শিকারী জলজ প্রাণী। এই সময় সপুস্পক উদ্ভিদ স্থলভাগকে ঢেকে ফেলেছিল।
এর ফলে নিবিড় বনভূমির সৃষ্টি হয়েছিল।
- ৩৬ কোটি
খ্রিষ্টপূর্বাব্দ:
এই সময় পৃথিবীর চতুর্থ বরফযুগ হিসেবে পরিচিত
কারু বরফযুগের সূচনা ঘটে।
উল্লেখ্য এই বরফযুগটি শেষ হয়েছিল ২৬ কোটি
খ্রিষ্টপূর্বাব্দে।
দক্ষিণ
আফ্রিকার কারু (Karoo)
অঞ্চলে এই বরফযুগের সুষ্পষ্ট নমুনা পাওয়া গিয়েছিল। এই কারণে এই বরফযুগকে কারু
বরফযুগ বলা হয়।
এই বরফযুগের প্রভাবে সাগরের প্রায় ৭৯ ভাগ প্রাণী বিলুপ্ত হয়ে গিয়েছিল। আবার এই
সময়ে আবির্ভাব হয়
মোলাস্কা পর্বের কাঁকড়া জাতীয় প্রাণী।
সূত্র :
http://essayweb.net/geology/timeline/mesoproterozoic.shtml
http://en.wikipedia.org/wiki/Neoproterozoic