গোণ্ড্ওয়ানা মহা-মহাদেশ
Gondwana
supercontinent
প্রাচীন পৃথিবীর একটি উল্লেখযোগ্য মহা-মহাদেশ। প্রায় প্রায় ৫৭ কোটি পূর্বাব্দের দিকে কিছু ক্ষুদ্র মহাদেশ যুক্ত হয়ে এই মহা-মহাদেশটির তৈরি প্রক্রিয়া শুরু হয়েছিল। ক্রমে ক্রমে এই মহাদেশ দুটি বড় খণ্ডে পরিণত হয়। এই ভাগ দুটিকে চিহ্নিত করা হয় পূর্ব গোণ্ড্ওয়ানা এবং পশ্চিম গোণ্ড্ওয়ানা নামে। ৫১-৫০ কোটি পূর্বাব্দে এই দুই অংশ একত্রিত হয়ে তৈরি হয় বিশাল গোণ্ড্ওয়ানা মহা-মহাদেশ। উত্তর-মধ্য ভারতের গোণ্ড্ওয়ানা অঞ্চলের নামানুসারে এই মহামহাদেশের নামকরণ করেছিলেন অস্ট্রেলিয়ান বিজ্ঞানী Eduard Suess।
৩০ কোটি পূর্বাব্দের অখণ্ড প্যাঙ্গিয়া মহা-মহাদেশ |
ওর্ডোভিসিয়ান
অধিযুগের
৪৫
কোটি ৮০ লক্ষ বৎসরের দিকে এই মহাদেশের ভিতরে ছিল- উত্তর চীন, দক্ষিণ চীন,
অস্ট্রেলিয়া, এ্যান্টার্ক্টিকা, ভারত, আফ্রিকা, সাহারা মরুভূমি এবং দক্ষিণ আমেরিকা।
এই মহা-মহাদেশের
বাইরে বিচ্ছিন্ন দশায় ছিল সাইবেরিয়া, লাউরেনশিয়া মহাদেশ, বাল্টিকা, এ্যাভালোনিয়া
মহাদেশ। উল্লেখ্য এ্যাভালোনিয়া মহাদেশের ভিতরে ছিল কানাডা এবং পশ্চিম ইউরোপ। এই
সময়ে গোন্ড্ওয়ানা মহামহাদেশ এবং সাইবেরিয়া ও বাল্টিকার মধ্যবর্তী সাগরেকে বিজ্ঞানীরা
নাম দিয়েছে প্যালো-টেথিস মহাসাগর। এই সময়ের বৃহৎ মহাসাগরের নাম ছিল প্যান্থালেসিক
মহাসাগর।
সিলুরিয়ান অধিযুগ (৪৪.৩৮-৪১.৬ কোটি খ্রিষ্টপূর্বাব্দ) গোন্ড্ওয়ানা মহামহাদেশ দক্ষিণ দিকে অগ্রসর হতে থাকে এবং এক সময় দক্ষিণ মেরুর দিকে একটি বিশাল ভূখণ্ডের সৃষ্টি করে। ফলে উত্তর মেরুর দিকে সৃষ্টি হয় বিশাল মহাসাগর। এর ভিতরে বিষুবরেখা অঞ্চলে লাউরেনশিয়া এবং বাল্টিকা নামক দুটি ছোটো মহাদেশ বিচ্ছিন্ন অবস্থায় ছিল। এই অবস্থায় আরো এ্যাভালোনিয়া নামক ছোটো একটি মহাদেশ গোণ্ড্ওয়ানা থেকে বিচ্ছিন্ন অবস্থায় উত্তর দিকে যাত্রা শুরু করেছিল। পরে লাউরেনশিয়া, বাল্টিকা এবং এ্যাভালোনিয়া মিলিত হয়ে তৈরি হয়েছিল ইউরোমেরিকা মহামহাদেশ।
৩০ কোটি পূর্বাব্দে ইউরোমেরিকা এবং গোণ্ড্ওয়ানা মিলিত হয়ে তৈরি হয় প্যাঙ্গিয়া মহা-মহাদেশ। এই সময় লাউরেশিয়া ছিল প্যাঙ্গিয়ার উত্তরাংশে আর গোণ্ড্ওয়ানা ছিল দক্ষিণাংশে। এই মহা-মহাদেশের উত্তরে ছিল ইউরেশিয়া। এর দক্ষিণ-পূর্ব দিক জুড়ে ছিল উত্তর ও দক্ষিণ আমেরিকা। মধ্য দক্ষিণাঞ্চলে ছিল আফ্রিকা। আর দক্ষিণাঞ্চল জুড়ে ছিল ভারত, এন্টার্ক্টিকা, অস্ট্রেলিয়া।
২০ থেকে ১৮ কোটি পূর্বাব্দের প্যাঙ্গিয়া মহা-মহাদেশের কাল্পনিক চিত্র |
এই নতুন মহা-মহাদেশটি ২০ থেকে ১৮ কোটি পূর্বাব্দ পর্যন্ত টিকে ছিল। এই সময় গোণ্ড্ওয়ানার অন্তর্ভুক্ত ছিল একালের এ্যান্টার্কটিকা, দক্ষিণ আমেরিকা, আফ্রিকা, মাদাগাস্কার, অস্ট্রেলিয়া, আরব উপদ্বীপ, ভারত উপমহাদেশের দক্ষিণাঞ্চল। এসকল ভূখণ্ড ছিল দক্ষিণ গোলার্ধে। পরে পাত-সঞ্চালনের কারণে এর বিশাল অংশ উত্তর গোলার্ধের দিকে চলে এসেছে।
১৮ কোটি ৪০ লক্ষ পূর্বাব্দে,
গোণ্ড্ওয়ানার মধ্যাঞ্চলের আফ্রিকা অংশ থেকে এ্যান্টার্ক্টিকা,
মাদাগাস্কার, ভারত এবং অষ্ট্রেলিয়া পৃথক হয়ে গিয়েছিল।
১৩ কোটি পূর্বাব্দে আফ্রিকার পূর্ব দিক থেকে
দক্ষিণ আমেরিকা পৃথক হয়ে দক্ষিণ দিকে অগ্রসর হতে থাকে। ১১ কোটি পূর্বাব্দে
গোণ্ড্ওয়ানা থেকে অনেক দূরে সরে গেলে দক্ষিণ আটলান্টিক মহাসাগরের সৃষ্টি হয় ।
১৩ কোটি পূর্বাব্দ পর্যন্ত এ্যান্টার্ক্টিকা, মাদাগাস্কার, ভারত এবং অষ্ট্রেলিয়া এক
সাথেই ছিল। কিন্তু ১৩ কোটি পূর্বাব্দের দিকে অস্ট্রেলিয়া থেকে নিউজিল্যাণ্ড পৃথক
হয়ে যায়। ১২ কোটি খ্রিষ্টপূর্বাব্দের দিকে ভারত পৃথক হয়ে যায় এবং
উত্তর দিকে অগ্রসর হতে থাকে।
১০-৮ কোটি খ্রিষ্টপূর্বাব্দের দিকে বিচ্ছিন্ন ভারতীয় ভূখণ্ডে ভূসংকোচনের
পশ্চিমঘাট পর্বতমালার উত্থান হয়েছিল। এরপর গোণ্ডওয়ানায় থেকে যায় অস্ট্রেলিয়া এবং
এ্যান্টার্ক্টিকা। শেষ পর্যন্ত
৮ কোটি পূর্বাব্দে অস্ট্রেলিয়া পৃথক হয়ে যায়। ফলে নিঃসঙ্গ এ্যান্টর্ক্টিকা
একাকী দক্ষিণ মেরুর দিকে চলে যায়।