ওর্ডোভিসিয়ান
অধিযুগ
(Ordovician
period)
৪৮.৫৪- ৪৪.৩৮
কোটি খ্রিষ্টপূর্বাব্দ।
ফ্যানেরোজোয়িক
কালের অন্তর্গত
প্যালোজোয়িক যুগের দ্বিতীয় অধিযুগ।
প্রাচীন গ্রেট ব্রিটেনে রোমানদের আগ্রাসনের পূর্বে কেল্টিকদের অনেকগুলো গোষ্ঠী
বসবাস করতো। ধারণা করা হয় এরা বর্তমান গ্রেট ব্রিটেনের ওয়েল্স্ অঞ্চলে বসবাস করতো।
এদের ভিতরে একটি বিশিষ্ট গোষ্ঠী ছিল ওর্ডোভিসেস
(Ordovices)।
এই জাতির নামানুসারে, ১৮৭৯ খ্রিষ্টাব্দে ব্রিটিশ বিজ্ঞানী চার্লস ল্যাপওর্থ
(Charles Lapworth),
এই অধিযুগের নামকরণ করেছিলেন।
পূর্ব্ববর্তী
ক্যাম্ব্রিয়ান অধিযুগের
৫০ কোটি ৪০ লক্ষ খ্রিষ্টপূর্বাব্দে ভেঙে যাওয়া
প্যান্নোশিয়া
মহা-মহাদেশের খণ্ডাংশসমূহ এই অধিযুগে পূনর্বিন্যাসের মধ্যবর্তী দশায় ছিল।
এই অধিযুগে
এ্যান্ডিয়ান-সাহারান বরফযুগ
(Andean-Saharan)
সূচনা হয়। এর ফলে জলজ উদ্ভিদ প্রাণীর বিলুপ্ত হয় এবং নতুন নতুন প্রজাতির উদ্ভব হয়।
- ৪৮.৫৪-৪৬ কোটি
খ্রিষ্টপূর্বাব্দ: এই সময়ে ভিতরে সবুজ উদ্ভিদের ব্যাপক বিকাশের ফলে
কার্বন-ডাই-অক্সাইডের পরিমাণ অনেক কমে যায়। ফলে পুরো পৃথিবী জুড়ে শৈত প্রবাহ
শুরু হয়। এই সূত্রে
৪৬
কোটি খ্রিষ্টপূর্বাব্দ
এ্যান্ডিয়ান-সাহারান বরফযুগের
সূচনা
হয়। এই বরফযুগের শেষ হয়েছিল ৪৩ কোটি খ্রিষ্টপূর্বাব্দে। অর্থাৎ এই অধিযুগটির
পুরোটাই বরফযুগের ভিতর অতিবাহিত হয়েছিল। তবে এর প্রভাব সবচেয়ে বেশি পড়েছিল মেরু
অঞ্চলে। আবহাওয়ার এই পরিবর্তনের কারণে
জীবজগতের
প্রায় ৪৯ ভাগ প্রজাতি বিলুপ্ত হয়ে গিয়েছিল।
তবে নতুন পরিবেশে নতুন নতুন উদ্ভিদ ও প্রাণীর উদ্ভব ঘটেছিল এই বরফযুগের শেষে।
৪৮ কোটি
খ্রিষ্টপূর্বাব্দের দিকে
লোফোট্রোকোজোয়া
ঊর্ধবপর্ব থেকে
এনেলিডা পর্বের প্রাণীর আবির্ভাব ঘটেছিল।
এই সূত্রে এই সময়ে আবির্ভূত হয়েছিল প্রাণীজগতের এ্যানেলিডা পর্বের
প্রজাতিসমূহ।
অভিযোজনের
পথ ধরে আর্থ্রোর্পোডে পর্বের বিশালাকারের কিছু প্রজাতির উদ্ভব ঘটে এই সময়ে। বিজ্ঞানীরা
এদেরকে
ইউরিপ্টেরাইড (Eurypterid)
বর্গ হিসেবে উল্লেখ করে থাকেন। এই বর্গের কোনো কোনো
প্রজাতি দৈর্ঘ্যে প্রায় ৭-৮ ফুট পর্যন্ত ছিল। অনেক সময় এই বর্গকে সাগর বৃশ্চিক
নামে অভিহিত করা হয়। এখনো পর্যন্ত ইউরিপ্টেরাইড
বর্গের প্রজাতিগুলোকে আর্থ্রোপোডা পর্বের বৃহৎ প্রজাতি হিসেবে বিবেচনা করা হয়।
- ৪৬.৭ কোটি
খ্রিষ্টপূর্বাব্দ: ৪৬ কোটি ৭০ লক্ষ ৩০ হাজার খ্রিষ্টপূর্বাব্দের দিকে
আর্থ্রোপোডা পর্বের সিলেসেরাটা উপপর্ব থেকে
উদ্ভব হয়েছিল ইউরিপ্টেরিডা বর্গের প্রজাতিসমূহ। এরা তাদের পাগুলো পাখার মতো
ব্যবহার করে জলের ভিতরে দ্রুত চলাচলে সক্ষম হয়ে উঠেছিল। আকারে এই বর্গের
Jaekelopterus
rhenaniae-এর
মতো কোনো কোনো প্রজাতির দৈর্ঘ্য ছিল প্রায় ৮ ফুট।
৪৬-৪৫.৮
কোটি খ্রিষ্টপূর্বাব্দ:
এই সময়ের ভিতরে মস বর্গের উদ্ভিদের আবির্ভাব ঘটেছিল। এই যুগের শুরুর দিকে জলজ
প্রাণীর বিবর্তনের সূত্রে সাগরজলে আবির্ভূত হয়েছিল, শক্তিশালী চোয়াল ও বর্ম
আবৃত ভয়ঙ্কর আদিম মৎস্য। এই মাছগুলোকে হাঙর ও অন্যান্য মাছের আদিম গোষ্ঠী
হিসেবে বিবেচনা করা হয়। বিজ্ঞানীর
এদের দলগত নাম দিয়েছেন-
গ্ন্যাথোস্টোমাটা
(Gnathostomata)।
এই সময়ের ভিতরে গোণ্ড্ওয়ানা মহা-মহাদেশ একটি
সুস্থির দশায় পৌঁছেছিল। এই সময়ে এই মহামহাদেশের ভিতরে ছিল- উত্তর চীন, দক্ষিণ
চীন, অস্ট্রেলিয়া, এ্যান্টার্ক্টিকা, ভারত, আফ্রিকা, সাহারা মরুভূমি এবং দক্ষিণ
আমেরিকা। এই মহা-মহাদেশের
বাইরে বিচ্ছিন্ন দশায় ছিল সাইবেরিয়া, লাউরেনশিয়া মহাদেশ, বাল্টিকা,
এ্যাভালোনিয়া মহাদেশ। উল্লেখ্য এ্যাভালোনিয়া মহাদেশের ভিতরে ছিল কানাডা এবং
পশ্চিম ইউরোপ। এই সময়ে গণ্ডোয়ানা মহামহাদেশ এবং সাইবেরিয়া ও বাল্টিকার
মধ্যবর্তী সাগরেকে বিজ্ঞানীরা নাম দিয়েছে প্যালো-টেথিস মহাসাগর। এই সময়ের বৃহৎ
মহাসাগরের নাম ছিল প্যান্থালেসিক মহাসাগর।
-
৪৪.৫
কোটি খ্রিষ্টপূর্বাব্দ:
এই সময় আবির্ভূত হয়েছিল টেলোস্টোমি (Teleostomi)
জাতীয় মৎসকূল।
৪৪
কোটি ৪০ লক্ষ খ্রিষ্টপূর্বাব্দ: এই সময়ের ভিতরে পৃথিবীর তাপমাত্রা বৃদ্ধি
পেতে থাকে। পৃথিবীর স্থলভাগের শুষ্কতা বৃদ্ধি পায়। জলজ উদ্ভিদের একটি অংশ
অভিযোজনের মাধ্যমে স্থলে জীবনধারণের ক্ষমতা অর্জন করে। বিশেষ করে বিভিন্ন
হ্রদের প্রান্ত ঘেষে সবুজ শেওলা ডাঙাতে ছড়িয়ে পড়ে। এই
সূত্রে
পরে মস বর্গের উদ্ভিদের নানা প্রজাতির আবির্ভাব ঘটেছিল।
এছাড়া সাগরের পানিতে
প্রবাল
কীটের
জন্ম হয়েছিল। এবং সেই সূত্রে সাগর তলে প্রবাল-প্রাচীর তৈরির প্রক্রিয়া শুরু
হয়েছিল।
এই সময়ে আদিম মাছগুলো বিবর্তিত হয়ে অস্থিময় মাছে পরিণত হয়।
এছাড়া বিশাল আকারের আর্থ্রোপোডার উদ্ভব হয়েছিল।
৪৪.৩৮
কোটি খ্রিষ্টপূর্বাব্দে এই অধিযুগের শেষে
এরপর শুরু হয়
প্যালোজোয়িক যুগের
অন্তর্গত
সিলুরিয়ান অধিযুগ।
সূত্র :