Domain : Eukaryota |
ডাইনোসর
ইংরেজি :
Dinosaur।
জীবজগতের সরীসৃপ শ্রেণির প্রাণীর সাধারণ নাম।
গ্রিক δεινός (deinos,
ভয়ঙ্কর, ভয়াল বিশাল) এবং
σαορος
(sauros, টিকটিকি বা
সরীসৃপ) এই দুটি শব্দের সমন্বয়ে ইংরেজ জীববিজ্ঞানী স্যার রিচারড ওয়েন (Sir
Richard Owen) ১৮৪২ খ্রিষ্টাব্দে প্রথম
Dinosaur
শব্দ ব্যবহার করেন। কালক্রমে এই শব্দটি অন্যান্য ভাষায় প্রবেশ করেছে। বাংলা ডাইনোসর
শব্দটি ইংরেজি
Dinosaur শব্দের ধ্বনিগত রূপ
মাত্র।
ডাইনোসরের উদ্ভব ঘটেছিল
মেসোজোয়িক
যুগের
ট্রায়াসিক অধিযুগে।
এই অধিযুগে মধ্যবর্তীকালে—
২৬ কোটি খ্রিষ্টপূর্বাব্দে
কারু বরফযুগের
অবসান হয়। আনুমানিক
২৩ কোটি খ্রিষ্টপূর্বাব্দে
প্যাঙ্গিয়া মহা-মহাদেশ-প্রথম ডাইনোসরের আবির্ভাব ঘটেছিল।
ট্রায়াসিক অধিযুগের পরবর্তী অধিযুগ ছিল
জুরাসিক
(২০.১৩
থেকে ১৪.৫০ কোটি খ্রিষ্টপূর্বাব্দ) অধিযুগে ডাইনোসরের নানা ধরনের প্রজাতিতে পৃথিবী ছেয়ে গিয়েছিল।
১৪.৫-৬.৬ কোটি
খ্রিষ্টপূর্বাব্দে ক্রেটাসিয়াস
অধিযুগে ডাইনোসরের
প্রায় বিলুপ্তি ঘটে।
ডাইনোসর-এর ক্রমবিকাশ
পৃথিবীর এককোষী জীব থেকে বহুকোষী জটিল প্রাণী ও উদ্ভিদের ক্রমবিকাশের ধারা চলছিল
কোটি কোটি বৎসর ধরে। এই ক্রমবিবর্তনের ধারায়
৪৬ কোটি ২০ লক্ষ খ্রিষ্টপূর্বাদের দিকে ভার্টিব্রেটা উপপর্বের প্রাণীকুল উদ্ভব
হয়েছিল
গ্ন্যাথোস্টোমাটা
অধপর্বের মৎস্য
জাতীয় প্রাণীকুল।
৪৪ কোটি ৫০ লক্ষ
খ্রিষ্টপূর্বাব্দের ভিতরে
গ্ন্যাথোস্টোমাটা
অধপর্ব্বের প্রজাতিকুলের পরিবর্তন ঘটে। বিজ্ঞানীরা
বিবর্তিত প্রাণীকুলকে ইউগ্ন্যাথোস্টোমাটা
(Eugnathostomata)
থাক নামে অভিহিত করে থাকেন। এই সূত্রে আবির্ভূত হয় টেলোস্টোমি
(Teleostomi)
থাকের প্রাণীকুল।
৪৩ কোটি
খ্রিষ্টপূর্বাব্দের দিকে
গ্ন্যাথোস্টোমাটা অধপর্বের কিছু প্রজাতির মাথা এবং
বক্ষদেশ বরাবর শক্ত
প্রতিরক্ষা আবরণ যুক্ত হয়। আর দেহের অবশিষ্ট অংশ শক্ত আঁইশে আবৃত হয়ে যায়।
বিজ্ঞানীরা এই জাতীয় প্রাণীকে প্লাকোডার্মি (Placodermi)
শ্রেণির অন্তর্ভুক্ত করেন। এই শ্রেণির সকল প্রজাতি ৩৬ কোটি খ্রিষ্টপূর্বাব্দে
বিলুপ্ত হয়ে গিয়েছিল।
এর
কাছাকাছি সময়ে
গ্ন্যাথোস্টোমাটা অধপর্ব থেকে উদ্ভব হয় অস্থি এবং তরুণাস্থির সমন্বয়ে
মৎস্য। ১৮৪৬ খ্রিষ্টাব্দে ইংরেজ বিজ্ঞানী ওয়েন এর নাম দিয়েছিলেন- এ্যাকান্থোডি
(Acanthodii)।
বর্তমানে একে
গ্ন্যাথোস্টোমাটা অধপর্বের একটি শ্রেণি হিসেবে বিবেচনা করা হয়।
৪২.২ কোটি খ্রিষ্টপূর্বাব্দে
ইউগ্ন্যাথোস্টোমাটা থাকের কিছু প্রজাতির
মুখে চোয়াল যুক্ত হয়। এছাড়া এদের দেহাঙ্গে জোড়া পাখনার সৃষ্টি হয় এবং দেহাংশ
শক্ত প্রতিরক্ষা আবরণের
পরিবর্তে আঁইশা দ্বারা আবৃত হয়। মূলত এদের দেহকাঠামো গড়ে উঠেছিল তরুণাস্থি দিয়ে।
এদের শ্বাসপ্রশ্বাস জন্য হৃদপিণ্ড কক্ষ যুক্ত হয়।
এই সব
বৈশিষ্ট্য বিচার করে, ১৮৮০ খ্রিষ্টাব্দে ইংরেজ বিজ্ঞানী থমাস হেনরি হাক্সলে এই
জাতীয় প্রাণীকুলের নামকরণ করেন
তরুণাস্থিময় কন্ড্রিক্থিস
(Chondrichthyes)।
৪২ কোটি খ্রিষ্টপূর্বাব্দে
ইউগ্ন্যাথোস্টোমাটা থাক থেকে উদ্ভব হয়
অস্থিময় প্রাণীকুল। ১৮৮০ খ্রিষ্টাব্দে ইংরেজ বিজ্ঞানী থমাস হেনরি হাক্সলে এই জাতীয়
প্রাণীকুলের নামকরণ করেন
ওস্টেক্থিস
(Osteichthyes)।
এই সময়ের ওস্টেক্থিস থেকে
উদ্ভব হয়েছিল
সারকোপ্টেরিজাই
শ্রেণির মৎস্যের উদ্ভব হয়েছিল।
৪১ কোটি ৬০ লক্ষ খ্রিষ্টপূর্বাব্দের দিকে
সারকোপটেরিজাই
উপপর্বের কিছু সদস্য মিষ্টি পানিতে বসবাস করায় অভ্যস্থ হয়ে উঠেছিল।
পরে এই প্রাণিগুলো দুটো ভাগে ভাগ হয়ে যায়। এই ভাগ দুটোকে বলা হয়
coelacanths এবং
rhipidistians। এদের ভিতরে
Rhipidistians-রা নদী অববাহিকায় অপেক্ষাকৃত মিষ্টি পানিতে বসবাস করা শুরু
করে। পরে Rhipidistians-রা দুটো ভাগে
পুনরায় বিভক্ত হয়ে পড়ে। ভাগ দুটো হলো- লাংফিস
(lungfish) এবং
টেট্রাপোডোমোর্ফস (tetrapodomorphs)।
কারু বরফযুগের শুরুতে
কোন কোন অঞ্চলে পানি কমে
যাওয়ায় ও তাপমাত্রার পরিবর্তনের কারণে টেট্রাপোডোমোর্ফস
প্রাণীকুলের
কিছু প্রাণী ডাঙার দিকে উঠে
আসা শুরু করে। ফলে পানিতে বসবাসকারী প্রাণীর পাখনা ক্রমে ক্রমে পা-এ রূপান্তরিত হয়।
এর ফলে এদের দেহের ব্যাপক পরিবর্তন ঘটে।
আদিকালের সেই চার পেয়ে প্রাণিগুলোকে আদি
টেট্রাপোড (Tetrapod)-এর
পূর্বপূরুষ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। উল্লেখ্য, ১৭৬৮ খ্রিষ্টাব্দে এর টেট্রাপোড
নামকরণ করেছিলেন
Laurenti
।
৩২ কোটি খ্রিষ্টপূর্বাব্দের দিকে রেপ্টিলিওমোর নামক টেট্রাপোডদের কিছু প্রাণী এ্যাম্নিয়োটা (Amniota) ডিম প্রসব করা শুরু করে। উল্লেখ্য, ডিমের কুসুমে থাকে ভ্রূণের খাবার। এই কুসুম এবং ভ্রূণকে ঘিরে থাকে এক ধরনের তরল পদার্থ। একে বলা হয় এ্যামনিয়ন (amnion)। যে সকল প্রাণীর ডিম এ্যামিওন-যুক্ত হয়, সে সকল ডিমকে বলা হয় এ্যাম্নয়োটা (Amniota)। এ্ই সময়েই এ্যাম্নিয়োট ডিম প্রসবকারী প্রাণিকূলকে ২টি ভাগে বিভাজিত হয়ে যায়। এই ভাগ দুটি হলো-
৩১ কোটি ২০ লক্ষ
খ্রিষ্টপূর্বাব্দে সোরাপ্সিডা থেকে সরীসৃপ শ্রেণির আদিম প্রাণীকূলের আবির্ভাব
হয়েছিল। এই সময়ে আদিম সরীসৃপ থেকে
ইউরেপ্টিলিয়া
( Eureptilia) সরীসৃপকুল
পৃথক হয়ে যায়। অন্যদিকে
২৯ কোটি ৮৯ লক্ষ
খ্রিষ্টপূর্বাব্দে
অবশিষ্ট
সরীসৃপ থেকে উদ্ভব হয়
প্যারারেপ্টিলিয়া
(Parareptilia)
সরীসৃপকুল। তবে এদের
সকল প্রজাতি ২০ কোটি ১৩ লক্ষ খ্রিষ্টাব্দের ভিতরে বিলুপ্ত হয়ে গিয়েছিল।
৩১ কোটি ২০ লক্ষ
খ্রিষ্টপূর্বাব্দের দিকে
সরীসৃপের মূলধারা হিসেবে বিকশিত
ইউরেপ্টিলিয়া থেকে উৎপন্ন হয়েছিল
রোমেরিডা (Romeriida)
নামক থাক।
৩০ কোটি ৭০ লক্ষ
খ্রিষ্টপূর্বাব্দের ভিতরে রোমেরিডা থাকের
কিছু প্রজাতির করোটিতে এক
ধরনের ছিদ্র তৈরি হয়েছিল। একে বলা হয়ে থাকে টেম্পোরাল (temporal)
ছিদ্র। কোনো কোনো প্রজাতিতে এই ছিদ্রের সংখ্যা ছিল ২টি। এই ছিদ্র দুটির কারণে
সৃষ্টি হয়েছিল পোস্ট অরবিটাল ও স্কোয়াসোসাক অস্থি। এর ফলে উভয় অস্থি মিলিত হয়ে
দণ্ডের আকার তৈরি করেছিল। এই দণ্ডকে বলা হয়- সুপ্রাটেম্পোরাল আর্কেড। এক্ষত্রে
আর্কেড ও প্যারাইটালে আবদ্ধ ছিদ্রকে বলা হয় সুপ্রাটেম্পোরাল ছিদ্র। আবার জুগাল ও
কোয়াড্রেটোজুগাল মিলিত হয়ে তৈরি করে ইনফ্রাটেম্পোরাল আর্কেড। এক্ষেত্রে উৎপন্ন
ছিদ্রকে বলা হয়- ইনফ্রাটেম্পোরাল ছিদ্র।
টেম্পোরাল ছিদ্রযুক্ত
প্রাণীদেরকে
বিজ্ঞানীরা নাম দিয়েছেন
ডায়াপ্সিডা
(diapsida)
এই অধিশ্রেণীর
ভিতরেই রয়েছে সরীসৃপ।
৩০ কোটি ২০ লক্ষ
খ্রিষ্টপূর্বাব্দের দিকে
ডায়াপ্সিডা জাতীয় প্রাণীকূল
থেকে উদ্ভব হয় আরিয়োস্কেলিডা
(Araeoscelidia)
বর্গের প্রজাতিসমূহ। উল্লেখ্য, এই বর্গের সকল প্রজাতি বিলুপ্ত হয়ে গিয়েছিল ২৭ কোটি
৫৬ লক্ষ খ্রিষ্টপূর্বাব্দে।
অন্যদিকে সরীসৃপ শ্রেণির
ডায়াপ্সিডা জাতীয় প্রাণীকূলে
নব্য রূপ লাভ করে। বিবর্তিত নতুন ডায়াপ্সিডাকে বিজ্ঞানীরা নাম দিয়েছেন
নিয়োডায়াপ্সিডা
(Neodiapsida)।
এদের আবর্ভাব হয়েছিল ২৮
কোটি
৯০ লক্ষ
খ্রিষ্টপূর্বাব্দের ভিতরে।
উল্লেখ্য এই
নিয়োডায়াপ্সিডা থেকে উদ্ভব হয়েছিল সকল ধরনের টিকটিকি, কুমির, পাখি এবং অন্যান্য
প্রাণীকুল।
নিয়োডায়াপ্সিডা'র ক্রমবিবর্তনে ধারায় ২৬ কোটি ৫৮ খ্রিষ্টপূর্বাব্দের দিকে উৎপন্ন
হয়েছিল সোরিয়া
(Sauria)
নামক প্রাণীকূল। সরীসৃপের
ক্রমবিবর্তনের ধারায় পরবরতীয় সময়ে নানা ধরনের প্রজাতির উদ্ভব হয়। এই সূত্রে সোরিয়া
থাককে বিভিন্ন ভাগে ভাগ করা হয়ে থাকে। এই ভাগগুলো হলো-
আর্কোসোরোমোরফা (Archosauromorpha): ২৬ কোটি ৫১ লক্ষ খ্রিষ্টপূর্বাব্দের দিক এই থাকের সরীসৃপের উদ্ভব হয়। এই থাক থেকে ডাইনোসর, কুমির এবং পাখির উৎপত্তি ঘটেছিল।
লেপিডোসোরোমোর্ফা (Lepidosauromorpha): ২৪ কোটি ৭৩ লক্ষ খ্রিষ্টপূর্বাব্দের দিক এই থাকের উদ্ভব হয়।
এটোপোডেন্টাটাস (Archosauromorpha): ২৪ কোটি ৭০ লক্ষ খ্রিষ্টপূর্বাব্দের দিক এই গণের উদ্ভব হয়। এই গণের সরীসৃপের নাম Atopodentatus unicus।
প্যান্টেস্টুডাইন (Pantestudines): ২৪ কোটি খ্রিষ্টপূর্বাব্দের দিকে এই থাকের প্রজাতিসমূহ উৎপন্ন হয়েছিল।
২৬ কোটি খ্রিষ্টপূর্বাব্দের দিকে আর্কোসোরোমোরফা থেকে উৎপন্ন হয়েছিল আর্কোসোরিফর্মেস থাকের প্রাণীকুল। এই থাক থেকে ডাইনোসর-সহ অন্যান্য প্রাণীর উদ্ভব হয়েছিল। নিচে এই প্রাণীকুলের ক্রমবিবর্তনের ধারা তুলে ধরা হলো-
আর্কোসোরিয়া: ২৫ কোটি খ্রিষ্টপূর্বাব্দে এই থাকের উৎপন্ন হয়েছিল ।
এ্যাভেমেটাটার্সালিয়া (Avemetatarsalia): ২৪ কোটি ৫০ লক্ষ খ্রিষ্টপূর্বাব্দে এই থাকের উৎপন্ন হয়েছিল।
ডাইনোসোরোমোর্ফা (Dinosauromorpha): ২৪ কোটি ৫০ লক্ষ খ্রিষ্টপূর্বাব্দে এই থাকের উৎপন্ন হয়েছিল।
ডাইনোসোরোমোর্ফেস (Dinosauriformes): ২৪ কোটি ৫০ লক্ষ খ্রিষ্টপূর্বাব্দে এই থাকের উৎপন্ন হয়েছিল।
ডাইনোসোরিয়া (Dinosauria): ২৩ কোটি ১৪ লক্ষ খ্রিষ্টপূর্বাব্দে এই থাকের উৎপন্ন হয়েছিল। ২০ কোটি খ্রিষ্টপূর্বাব্দে ডাইনোসোরিয়া থেকে উৎপন্ন হয় অর্নিথিশকিয়া (Ornithischia) বর্গের প্রজাতিসমূহ। বিজ্ঞানীরা ২৩ কোটি ১৪ লক্ষ খ্রিষ্টপূর্বাব্দে মূলধারাকে অভিহিত করেছেন সরিশ্চিয়া (Saurischia)।
ডাইনোসোরিয়া প্রজাতিকুলকে দুই ভাগে ভাগ
করা হয়েছে পেলভিস
(pelvis)-এর
গঠনপ্রকৃতি অনুসারে।
জীবজগতে দ্বিপদী বা চতুস্পদী জীবের নিতম্বের কাঠামো গঠিত হয় তিনটি হাড়ের সমন্বয়ে। একে বলা হয় পেলভিস
(pelvis)।
এর কেন্দ্রে থাকে একটি গর্ত। এখানেই উরুর অস্থির
(femur)
মাথা যুক্ত হয় এবং নিতম্বের অস্থিসন্ধি (hip
joint) তৈরি করে।
জীবাশ্ম সংগ্রহের সূত্রে বিজ্ঞানীরা এমন কিছু পেলভিসের নমুনা পেয়েছিলেন,
যেগুলোর সাথে
সরীসৃপ শ্রেণির প্রাণীর মিল রয়েছে,
কিন্তু সেগুলো এই সকল
সরীসৃপের মতো নয়। আবার এগুলো স্তন্যপায়ী
বা পক্ষী ইত্যাদির মতোও
নয়।
বিজ্ঞানীদের কাছে প্রাথমিকভাবে এই জাতীয় প্রজাতির যে সকল নমুনা জমা হয়েছিল,
সেগুলো দেখে মনে ছিল
ভয়ঙ্কর দৈত্যের নিতম্ব। আবার এদের গড়ন ছিল টিকটিকির মতো। ফলে এর নামকরণ করা হলো-
dinosaur
(নামকরণ)।
ডাইনোসোরিয়ার পেলভিসের
নমুনা পরীক্ষা করে বিজ্ঞানীরা দেখলেন,
কিছু কিছু প্রজাতির পেলভিসের গঠন পাখির মতো। আবার কিছু কিছু প্রজাতির
পেলভিসের গড়ন প্রাচীন টিকটিকির মতো। এই বিচারে তাঁরা এর দুটি বর্গ নির্ধারণ করলেন।
এই বর্গ দুটি হলো- অরিনিথিশ্কিয়া ও সরিশ্চিয়া। ১৯৮৮ খ্রিষ্টাব্দে সিলি
(Seeley)
এই বিভাজন করেন এবং এর নামকরণ
করেন- অরিনিথিশ্কিয়া
ও সরিশ্চিয়া।
এই দুটি বর্গ থেকেই সকল ডাইনোসরের উৎপত্তি হয়েছিল
ডাইনোসর বিলুপ্তির
কারণ
অরিনিথিশ্কিয়া
ও সরিশ্চিয়া
বর্গ থেকে আদি ডাইনোসরের উৎপত্তি
হয়েছিল প্রায় ২৩ কোটি খ্রিষ্টপূর্বাব্দের দিকে। আর ৬ কোটি খ্রিষ্টপূর্বাব্দের
ভিতরে এদের অধিকাংশই বিলুপ্ত হয়ে গিয়েছিল।
ডাইনোসর
বিলুপ্তির কারণ হিসাবে,
বিজ্ঞানীরা বিভিন্ন মতবাদ
প্রকাশ করেছেন। এ সকল মতবাদ নিয়ে বিস্তর মতভেদ রয়েছে। যেমন—
১। উল্কাপাত: ক্রেটাসিয়াস অধিযুগে শেষের দিকে প্রচণ্ড গতিতে কোন বিশালাকারের উল্কা ভূপৃষ্ঠে আছড়ে পড়েছিল। এর ফলে একটি মহাবিস্ফোরণ সংঘটিত হয়েছিল। এই বিস্ফোরণের পর, তাৎক্ষণিকভাবে সমগ্র পৃথিবীর তাপমাত্রা অস্বাভাবিক বৃদ্ধি পেয়েছিল। এ ছাড়া সারা পৃথিবী ধুলা এবং জলীয়-মেঘে ঢেকে গিয়েছিল। এই মেঘের আবরণ ভেদ করে সূর্যের কিরণ পৃথিবীতে এসে পৌঁছাতে না পারায়, সবুজ উদ্ভিদ বিলুপ্ত হয়ে যায়। এর ফলে ডাইনোসরদের খাদ্য খাটতি পড়ে এবং উত্তাপহীন পৃথিবীতে শীতল রক্তের এই ডাইনোসারগুলো মৃত্যুবরণ করে।
অনেকে উল্কাপাতের সময় উল্কার ভিতরের ইরিডিয়াম নামক ধাতুর বিকিরণকে দায়ী করেছেন বটে। তবে বিজ্ঞানীরা ভূপৃষ্টের কাছাকাছি স্তরে কোন ইরিডিয়ামের সন্ধান পান নাই। তারপরেও অনেকে এমন ধারণাও করেন যে- উল্কা খণ্ডের ভিতরই ইরিডিয়াম ছিল। এই তর্কবিতর্কের ভিতরই এক সময় বিজ্ঞানীরা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আরিজোনা অঞ্চলের ফ্লাগস্টাফে একটি বিশাল গর্ত আবিষ্কার করেন এবং সেখানে তিনি একটি উল্কা-খণ্ডের সন্ধান পান। উল্লেখ্য ক্যানিয়ান ডিয়াব্লো (Canyon Diablo) নামক এই গর্তটির ব্যাস ১১৮০ মিটার এবং গভীরতা ১৭৫ মিটার। অস্ট্রেলিয়াতে অপর একটি উল্কা পাওয়া যায়। এর ধ্বংসাবশেষ পরীক্ষা করে, বয়স নিরূপণ করা হয়েছে ৬ কোটি ৪০ লক্ষ বৎসর পূর্বকাল।
উল্কা-ধারণার বিপক্ষযুক্তি : এই যুক্তির বিপক্ষবাদীরা প্রশ্ন তোলেন যে, এতবড় একটি বিস্ফোরণের ফলে শুধু মাত্র ডাইনোসরই ধ্বংস হবে কেন ? এর কোনো সন্তোষজনক উত্তর পাওয়া যায় নাই।
২. খাদ্য হিসাবে ডাইনোসরের বিলুপ্তি: সকল মাংসাশী ডাইনোসরগুলো সকল উদ্ভিদভোজী ডাইনোসরদেরকে হত্যা করে। পরে, খাদ্যের অভাবে মাংসাশীরা অন্য মাংসাশী ডাইনোসর খেয়ে ফেলে। ফলে ডাইনোসরদের বিলুপ্তি ঘটে।
৩. খাদ্য-ঘাটতি ধারণার বিপক্ষযুক্তি : এই যুক্তিটিকে অনেকেই অত্যন্ত অগ্রহণযোগ্য হিসাবে বিবেচনা করে থাকেন। কারণ, এই রকম ঘটনা ঘটলে, সবচেয়ে আগে উদ্ভিদভোজী ডাইনোসর বিলুপ্ত হলেও, মাংসাশী ডাইনোসর বিলুপ্ত হতো না। কারণ, মাংসাশী ডাইনোসররা শুধু ডাইনোসরদেরই হত্যা করতো না। খাদ্য নিয়ে এরা নিজেরা বিবাদ করার আগে— অন্যান্য প্রাণীদের হত্যা করতো। ফলে সকল বড় ধরনের প্রাণীই বিলুপ্ত হয়ে যেতো। আর যেহেতু বড় প্রাণীদের উত্তর-পুরুষেরা এখনও পৃথিবীতে রয়ে গেছে, সে কারণে মাংসাশী ডাইনোসরদের কিছু প্রজাতি এখনো টিকে থাকতো।
৪. বিষাক্ত খাবার: বিষাক্ত গাছে পৃথিবী ছেয়ে গিয়েছিল। উদ্ভিদভোজীর ডাইনোসরগুলো এই সকল গাছ খেয়ে মৃত্যুবরণ করার পর, মাংসাশী ডাইনোসরগুলো খাদ্যাভাবে বিলুপ্ত হয়ে যায়।
বিষাক্ত গাছ ধারণার বিপক্ষযুক্তি : এই যুক্তিটি গ্রহণযোগ্য নয়, এই জন্য যে— পৃথিবীর সকল গাছ বিষাক্ত হয়ে গিয়েছিল এমন হওয়াটা স্বাভাবিক নয়। অন্ততঃ বিজ্ঞানীরা সেই সময়ের তেমন কোন বিষাক্ত গাছের সন্ধানও পান নাই। আর যদি এই বিষাক্ত গাছের বিষয়টি সত্যও হয়, তা হলে প্রশ্ন থেকে যায় যে, অন্যান্য উদ্ভিদভোজী প্রাণীরা কি ভাবে বেঁচে রইল।
৫. স্থূল শরীরে কারণে: উদ্ভিদভোজীরা অত্যধিক খাবার খেয়ে খেয়ে এত মোটা হয়ে গিয়েছিল যে, এরা একসময় চলাফেরা করতে অক্ষম হয়ে মাংসাশী ডাইনোসারের সহজ শিকারে পরিণত হয়েছিল। এই যুক্তি উদ্ভিদভোজীদের জন্য খাটলেও মাংসাশীদের জন্য তা খাটে না। তাছাড়া অত্যন্ত মোটা হয়ে বয়স্ক ডাইনোসরের মৃত্যু হলেও, তাদের শাবক থাকবে না বা বংশ বৃদ্ধি হবে না এটা ভাবা যায় না।
৬. তুষার-আমলের আবির্ভাব : অকস্মাৎ তুষার-আমলের আবির্ভাবে সকল ডাইনোসর ঠাণ্ডায় জমে মৃত্যুবরণ করে।
তুষার-আমলের বিরুদ্ধযুক্তি : বিরুদ্ধবাদী বিজ্ঞানীরা প্রমাণ করেছেনে যে, ক্রেটাসিয়াস অধিযুগের শেষে তুষার-আমল আসেনি।
৭. ক্রম অগ্নুৎপাত : সারা পৃথিবী জুড়ে আগ্নেয়গিরিগুলো ক্রমরীতিতে অবিরত বিষাক্ত গ্যাস ও লাভা নিক্ষেপ করতে থাকে। ফলে ডাইনোসরগুলোর বিলুপ্তি হয়।
ক্রম অগ্ন্যুৎপাতের বিরুদ্ধযুক্তি : ক্রেটাসিয়াস অধিযুগের এই ধরনের অগ্ন্যুৎপাতের ঘটনা ঘটেনি। তা ছাড়া এই জাতীয় ঘটনা ঘটলে স্তন্যপায়ী, পাখি শ্রেণীর প্রাণী, এমনকি উদ্ভিদেরও বিলুপ্তি হতো।
সকল যুক্তিই খণ্ডন করা
যায়,
কিন্তু ডাইনোসরদের বিলুপ্তি
ঘটেছে এটা তো খণ্ডন করা যায় না। এক্ষেত্রে বিষয়টি ভিন্ন আঙ্গিকে চিন্তা করলে হয়তো
সমাধানের কাছাকাছি পৌছানো যেতে পারে। মেসোজোয়িক যুগের প্রাপ্ত জীবাশ্মের সূত্রে
বলা যায়,
ডাইনোসর ছিল।
কিন্তু বর্তমানে এরা
পৃথিবীতে নেই এটাও সত্য।
প্রকৃতিতে কোন বিশেষ
প্রজাতি বিলুপ্ত হবে কি হবে না,
তা নির্ভর করে পরিবেশের
উপর। এই পরিবেশগত কারণের ভিতর রয়েছে,
আবহাওয়া,
খাদ্য,
রোগ,
অন্য প্রাণীর আক্রমণ
থেকে রক্ষা করার ক্ষমতা,
বংশবৃদ্ধিজনিত প্রতিকুলতা
ইত্যদি। প্রকৃতির এই সকল উপকরণকে জয় করতে পারলেই একটি প্রজাতি টিকে থাকতে পারে।
একথা ভাবার কারণ নেই যে,
প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে সকল প্রজাতি
বিলুপ্ত হয়ে যাবে। আবার এটাও ভাবা যায় না যে,
এক্ষেত্রে সকল প্রজাতিই
বেঁচে থাকবে। সকল প্রজাতির বিলুপ্তি হওয়ার মতো কারণগুলো যদি ক্রমাগত ঘটতেই থাকে,
তা হলে সকল প্রজাতিই
বিলুপ্ত হয়ে যেতে পারে। এই ধারণা থেকে অবশ্য মানুষকে বাদ রাখতে হবে। কারণ মানুষই
একমাত্র প্রাণী যারা প্ররিবেশকে বিভিন্নভাবে জয় করতে পেরেছে। জীবজগতের
প্রজাতিসমূহের ভিতর টিকে থাকার সহজাত ক্ষমতা রয়েছে। বৈরি পরিবেশ যখন এই ক্ষমতাকে জয়
করে,
তখন প্রজাতির বিলুপ্তি ঘটবে।
এবার দেখা যাক ডাইনোসরের ক্ষেত্রে এই পরিবেশ কিভাবে তাদের ধ্বংসের কারণ হয়ে
উঠেছিল।
ডাইনোসর বিলুপ্তির সকল
কারণই ছিল প্রতিকূল পরিবেশ। ক্রেটাসিয়াস অধিযুগের শেষের দিকে ডাইনোসরের অধিকাংশ
প্রজাতি বিলুপ্ত হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু এর আগে অন্য কোন প্রজাতি বিলুপ্ত হয় নি,
এমনটা বিজ্ঞানীরা দাবী
করেন না। ক্রেটাসিয়াস অধিযুগের আগে,
ডাইনোসরগুলোর
বিলুপ্তির পিছনেও এই বৈরি পরিবেশর অবদান ছিল। আলোচনার সুবিধার্থে এই বৈরি পরিবেশকে
কয়েকটি শর্ত দ্বারা বিভাজিত করে নির্দেশিত করা যায়।
ক। মহাদেশগুলোর বিভাজন : এখন যে পৃথিবীর মহাদেশগুলোকে যেভাবে পাই, সেভাবে সবসময় ছিল না এবং ভবিষ্যতেও তা থাকবে না। মেসোজোয়িক যুগের শুরুতে অর্থাৎ ট্রায়াসিক অধিযুগে(২৫.১৯০২-২০.১৩ কোটি খ্রিষ্টপূর্বাব্দ) পৃথিবীর অধিকাংশ ভূভাগ একটি অখণ্ড মহাদেশ হিসাবে বিরাজ করছিল। বিজ্ঞানীরা এর নামকরণ করেছিলেন প্যানজিয়া। এই অখণ্ড মহাদেশেই ডাইনোসরের উদ্ভব ঘটেছিল। পরবর্তী জুরাসিক অধিযুগ (২০.১৩-১৪.৫ কোটি খ্রিষ্টপূর্বাব্দ) ডাইনোসরের সংখ্যা বৃদ্ধি পায়। এই অধিযুগের শেষের দিকে প্যানজিয়া বিভাজিত হতে থাকে। ক্রেটাসিয়াস অধিযুগে (১৪.৫-৬.৬ কোটি খ্রিষ্টপূর্বাব্দ) মহাদেশগুলো বেশ কয়েকটি খণ্ডে বিভাজিত হয়ে ছড়িয়ে পড়তে থাকে। এই সুদীর্ঘ কালের ভিতর পৃথিবীর মহদেশগুলো যেমন বিভাজিত হয়েছে, তেমনি মহাদেশগুলো উত্তর-দক্ষিণ গোলার্ধ কিম্বা বিষুব রেখা বরাবর সঞ্চালিত হয়েছে। ফলে বিচ্ছিন্ন মহাদেশগুলোর আবহাওয়ার পরিবর্তন ঘটেছে। পৃথিবীর মহাদেশগুলো যখন বিচ্ছিন্ন হয়, তখন অখণ্ড মহাদেশ প্যানজিয়ার উদ্ভিদ ও প্রাণীকূলও বিভাজিত হয়েছিল। ভিন্ন ভিন্ন মহাদেশের আবহাওয়াগত বৈশিষ্ট্যও একই ধারায় ছিল না। এর ফলে কতকগুলো মৌলিক পরিবর্তন দেখা দিয়েছিল। যেমন—
১. তাপমাত্রার পরিবর্তন: বিচ্ছিন্ন মহাদেশগুলো যখন ক্রমান্বয়ে দূরে সরে যাচ্ছিল, তখন তার আবহাওয়ার পরিবর্তনও ঘটছিল। জীবজগতে সরীসৃপ জাতীয় প্রাণীদের তাপমাত্রার সাথে অভিযোজন করার ক্ষমতা সবচেয়ে কম। সেই কারণে ডাইনোসরদের উপর প্রভাব পড়েছিল সবচেয়ে বেশি। ফলে, বিভিন্ন মহাদেশের বিচিত্র তাপমাত্রাগত পার্থক্যের কারণে বিভিন্ন প্রজাতির ডাইনোসর বিলুপ্ত হয়ে গিয়েছিল। এক্ষেত্রে পক্ষী বা স্তন্যপায়ী প্রাণীদের উপর প্রভাব পড়েছিল কম। ছোট ছোট প্রজাতির সরীসৃপরা মাটির গভীরে বা পর্বতগুহায় আশ্রয় নিয়ে হয়তো নিজেদের রক্ষা করতে সমর্থ হয়ে উঠলেও বিশালদেহী ডাইনোসরদের তাপমাত্রার কাছে আত্মসমর্পণ করা ছাড়া অন্য কোন উপায় ছিল না। বিশেষ করে চলমান মহাদেশগুলোর কোন কোন অঞ্চল যখন মরুভূমিতে পরিণত হচ্ছিল, কিম্বা উত্তর-দক্ষিণ মেরু বরাবর যে সকল মহাদেশ স্থাপিত হচ্ছিল, সে সকল অঞ্চলে ডাইনোসরদের বিলুপ্তি ঘটেছিল দ্রুত।
২. খাদ্যভাব: মহাদেশগুলো যখন বিচ্ছিন্ন হচ্ছিল, তখন মহাদেশগুলোতে তাপমাত্রা, বায়ুপ্রবাহ, বৃষ্টিপাতের অধিক্য বা অনাবৃষ্টি, তুষারপাত ইত্যাদির বিচারে পরিবেশ পাল্টে যাচ্ছিল। ফলে প্রাণিজগতের বিভিন্ন প্রজাতি যেমন লোপ পাচ্ছিল, তেমনি বহু প্রজাতির উদ্ভিদও বিলুপ্ত হয়ে গিয়েছিল। ফলে উদ্ভিদভোজী প্রাণিকূলের খাদ্যাভাব দেখা দিয়েছিল প্রবলভাবে। বিশেষ করে উদ্ভিদভোজী ডাইনোসরগুলো এর শিকার হয়েছিল প্রথম। তাপমাত্রাগত পরিবর্তনে এরা কাহিল হয়ে পড়েছিল, সেই সাথে পর্যাপ্ত খাদ্য না পাওয়ার কারণে, এদের বিলুপ্তি ঘটেছিল। অন্যদিকে মাংসাশী ডাইনোসরগুলো তাপামাত্রা এবং খাদ্য হিসাবে উদ্ভিদভোজী প্রাণীর অভাবে মারা গিয়েছিল একটু বিলম্বে।
৩. রোগ ব্যাধি: সনাতন পরিবেশে যখন সুস্থ-সবল ডাইনোসরগুলো বিচরণ করতো তখন, ডাইনোসরগুলোর উপর ব্যাকটেরিয়া বা ভাইরাসগুলো হয়তো ততটা প্রভাব বিস্তার করতে পারে নি। কিন্তু বৈরি পরিবেশের কারণে তাদের দেহের প্রতিরোধ ক্ষমতাও কমে গিয়েছিল। তাছাড়া আবহাওয়াগত পরিবর্তনের কারণে ব্যাকটেরিয়া বা ভাইরাসদের আক্রমণ করার ক্ষমতাও বৃদ্ধি পেয়েছিল। সব মিলিয়ে ডাইনোসরগুলো রোগাক্রান্ত হয়ে পড়ছিল দ্রুত।
৪. প্রজনন ক্ষমতা হ্রাস : সাধারণত দেখা যায়, দীর্ঘকাল অনুকূল পরিবেশ না পেলে, কোন কোন প্রজাতির যৌন স্পৃহা বা প্রজনন ক্ষমতা হ্রাস পায়। ডাইনোসরের কোন কোন প্রজাতি এই কারণেই বিলুপ্ত হয়ে গিয়েছিল।
৫. অন্যান্য কারণ: উল্কাপাত, অগ্ন্যুৎপাত, বিষাক্ত খাদ্যগ্রহণ ইত্যাদির কারণেও কোন বিশেষ অঞ্চলের ডাইনোসর বিলুপ্ত হতে পারে, কিন্তু তা সকল ডাইনোসরের উপর ব্যাপক প্রভাব ফেলেছিল এমন ধারণা করার কারণ নেই। তবে এক্ষেত্রে কোন বিশেষ অঞ্চলের ডাইনোসর বিলুপ্ত হতে পারে। যেমন বর্তমান সময়ে যদি উল্কাপাতের কারণে সুন্দরবন ও তৎসংলগ্ন অঞ্চল পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে যায়, তা হলে, রয়েলবেঙ্গল টাইগারের (চিড়িয়খানা ছাড়া প্রকৃতিগতভাবে) বিলুপ্তি ঘটবে। একই ভাবে অগ্ন্যুৎপাতের কারণে পম্পেই নগরী যেমন চাপা পড়ে গিয়েছিল, তেমনটা হলো কোন বিশেষ প্রজাতি বিলুপ্ত হতে পারে। প্রজাতি মাত্রই বিষাক্ত খাদ্যকে সহজাত প্রবৃত্তিতে বর্জন করে। কোন কারণে, বিষাক্ত খাদ্য গ্রহণে কোন প্রজাতি দলে দলে মারা গেছে এমন ঘটনা বিরল। তবে কোন অঞ্চলের সকল খাদ্যদ্রব্য বিষাক্ত হয়ে পড়লে অন্য কথা। এর ফলেও বিশেষ দুই একটি প্রজাতি বিলুপ্ত হলেও হতে পারে।
সূত্র
:
ডাইনোপেডিয়া। কামরুল হায়দার। বলাকা বুকস ইন্টারন্যাশনাল। শ্রাবণ ১৪১২, জুলাই
২০০৫।
http://www.enchantedlearning.com/subjects/dinosaurs/glossary/