বর্ণালী অনুসারে নক্ষত্র-শ্রেণিকরণ
ইংরেজি :
stellar classification
জ্যোতির্বিজ্ঞানে
নক্ষত্র থেকে আগত আলোর
রঙ অনুসারে,
নক্ষত্র-এর শ্রেণিবিভাজন করা হয়। নক্ষত্রের
আলোকমণ্ডল (Photosphere)
-এ আয়োনিত
বিভিন্ন পদার্থের পরমাণুগুলো উত্তপ্ত অবস্থায় বিভিন্ন রঙের আলো প্রদান করে। এর ফলে
নক্ষত্র থেকে আগত আলোর রঙ নানা রকমের হয়।
নক্ষত্র থেকে আগত এই সকল বিভিন্ন রঙের
আলো-কে বর্ণালী বলা হয়। এই বর্ণালী অনুসারে নক্ষত্রের আলোকমণ্ডলে কি ধরনের পদার্থ
আছে এবং নক্ষত্রের তাপমাত্রা কত তা নির্ণয় করা যায়।
নক্ষত্র থেকে আগত আলোকতরঙ্গকে ক্রমধারায় সাজালে যে রঙধনুর মতো বর্ণালী মান পাওয়া
যায়, তাকে বিজ্ঞানীরা ৭টি শ্রেণিমানে ভাগ করছেন। এই ভাগগুলো হলো—
O, B, A, F, G, K,
এবং
M। এর ভিতরে
O
শ্রেণির
নক্ষত্র হলো
—
সবচেয়ে উত্তপ্ত এবং সবচেয়ে শীতল
নক্ষত্র হলো —
M
। ইংরেজিতে এই আলোকতরঙ্গের
বর্ণানুক্রমকে মনে রাখার জন্য একটি বাক্য-সঙ্কেত আছে। এই বাক্য-সঙ্কেতটি হলো
—
Oh Be A
Fine Girl Kiss Me।
এই নক্ষত্র শ্রেণিমানের সাথে নির্দেশিত রঙগুলো হলো
—
O |
নীল |
B |
নীলাভ-সাদা |
A |
সাদা |
F |
হলুদাভ-সাদা |
G |
হলুদ |
K |
কমলা |
M |
লাল |
আধুনিক নক্ষত্র-শ্রেণিবিভাজনের ক্ষেত্রে
মোর্গান-কিনান (Morgan-Keenan)
পদ্ধতিতে, নক্ষত্রের বর্ণালী বিশ্লেষণে বর্ণমান ধরা হয়েছে ০-৯ মান। এই পদ্ধতিতে
উপরে ৭টি মানের প্রতিটি মানকে ১০টি ভাগে ভাগ করা হয়েছে। এই বিচারে সাদা রঙের
A
শ্রেণির নক্ষত্রটির উপবিভাগ হবে—
A0,
A1,
A2,
A5
ইত্যাদি।
A
শ্রেণির নক্ষত্রগুলোর ভিতরে
A0
হবে সবচেয়ে বেশি
উত্তপ্ত, পক্ষান্তরে
A9
হবে
সবচেয়ে শীতল। অর্থাৎ দুটি
নক্ষত্র থেকে আগত আলোর বর্ণমানকে দুটি নক্ষত্র- ১০টি ভাগে ভাগ করা হয়েছে। যেমন
A0।
তাপমাত্রার এই শ্রেণিবিভাজনের পাশাপাশি মোর্গান-কিনান নক্ষত্রের ঔজ্জ্বল্যের
শ্রেণিবিভাজন করা হয়েছে চারটি রোমান অঙ্কমান দ্বারা। এই মানগুলো হলো-
I, II, III, IVএবং
V।
নক্ষত্রের বর্ণালী বিশ্লেষণে কিছু অন্ধকার রেখা দেখা যায়। বর্ণালীর কোনো রঙ শোষিত
হলে এই কালো রেখার সৃষ্টি হয়। এই শোষিত রেখার বিস্তার অনুসারে নক্ষত্রের আকার
নির্ধারণ করা হয়। যেমন-
I
শ্রেণিকে বলা হয় সবচেয়ে বড় আকারের নক্ষত্র। এই মান অনুসারে নক্ষত্রের আকার যেভাবে
নির্দেশিত করা হয়, তা হলো—
সূর্যের নক্ষত্র-মান হলো—
G2V।
এই মান দ্বারা সূর্যের প্রকৃতি বুঝা যাবে যে ভাবে, তা হলো—
G=
হলুদ
G2=
পূর্ণ হলুদ-মানের ১০ ভাগের ২ ভাগ।
V=
প্রধান ধারার তারা বা
বামন তারা।
নক্ষত্রের শ্রেণিবিভাজনের ইতিহাস ও
শ্রেণিবিভাজন সমূহ |
সেচ্ছির শ্রেণি বিভাজন (Secchi
classes)
১৮৬৬ খ্রিষ্টাব্দে জ্যোতির্বিজ্ঞানী ফাদার
এ্যাঙ্গেলো সেচ্ছি নক্ষত্রের শ্রেণি-বিভাজনের একটি তালিকা প্রণয়ন করেন। এই তালিকাটি
হলো—
- Class I
:
বড় হাইড্রোজেন রেখা-সহ সাদা ও
নীল আলোর নক্ষত্র। যেমন—
Vega
ও
Altair
নক্ষত্র।
আধুনিক কালের
A
এবং
F
শ্রেণির শুরুর দিককার নক্ষত্র এই শ্রেণিতে পড়ে।
- Class I,
Orion subtype:
এটি
I
শ্রেণির নক্ষত্রের উপ-বিভাগ। এতে সরু
হাইড্রোজেন
রেখাযুক্ত
নক্ষত্রকে রাখা হয়েছে। এই জাতীয় নক্ষত্র হলো—
বাণরাজা
এবং
কার্তিকেয়
।
আধুনিক কালের
B
শ্রেণির শুরুর দিককার নক্ষত্র এই শ্রেণিতে
ছিল।
- Class II:
হলুদ বর্ণের তারা। এতে অপেক্ষাকৃত
দুর্বল
হাইড্রোজেন রেখা। এতে ধাতববর্ণালী রেখা লক্ষ্য করা যায়। এই
শ্রেণির নক্ষত্রগুলো হলো-
সূর্য,
Arcturus
এবং
ব্রহ্মহৃদয়
ইত্যাদি।
আধুনিক কালের
G,
K
এবং
F
শ্রেণির শেষের সারির
নক্ষত্র এই
শ্রেণিতে ছিল।
- Class III:
কমলা এবং লাল বর্ণের তারা। বর্ণালীতে
মিশ্র বর্ণ লক্ষ্য করা যায়। এই শ্রেণির নক্ষত্রগুলো হলো-
আর্দ্রা
এবং
Antares।
আধুনিক কালের
M
শ্রেণির
নক্ষত্র এই শ্রেণিতে ছিল।
১৮৬৮
খ্রিষ্টাব্দে প্রথম কার্বন নক্ষত্র আবিষ্কার হয়। এরপর তিনি এই তালিকায়
চতুর্থ শ্রেণি যুক্ত করেন। এই শ্রেণির বৈশিষ্ট্য ছিল।
- Class IV:
লাল বর্ণের তারা। এতে কার্বন-রেখা আছে।
১৮৭৭
খ্রিষ্টাব্দে তিনি পঞ্চম শ্রেণি যুক্ত করেন। এই শ্রেণির বৈশিষ্ট্য ছিল।
- Class V:
এতে নির্গমণ রেখা আছে। যেমন-
γ
Cassiopeiae
এবং
Sheliak।
হার্ভার্ড
শ্রেণিবিভাজন (Harvard
classification)
১৮৯০ খ্রিষ্টাব্দের ভিতরে একের পর এক নতুন নক্ষত্র আবিষ্কারের পর,
সেচ্ছির শ্রেণিবিভাজন দিয়ে নক্ষত্রের পরিচয়কে যথাযথভাবে নির্দেশিত করা
সম্ভব হচ্ছিল। ফলে নক্ষত্রের শ্রেণিবিভাজন নতুন করে সাজানো হলো। এই
নতুন শ্রেণি-বিভজনটি হার্ভার্ড শ্রেণিবিভাজন (Harvard
classification)
নামে পরিচিত। এই শ্রেণিবিভাজনের উল্লেখযোগ্য উপকরণগুলো নিচের সারণীতে
দেখানো হলো।
শ্রেণি |
উপরিতলের
তাপমাত্রা
(কেলভিন) |
বর্ণের
নাম |
ভর
(সৌরভর
) |
ব্যাসার্ধ
(সৌর
ব্যাসার্ধ
) |
ঔজ্জ্বল্য
(সৌর-উজ্জ্বলতা ) |
হাইড্রোজেন
রেখা |
O |
≥ ৩৩,০০০ K |
নীল
|
≥ ১৬
|
≥ ৬.৬ |
≥ ৩৩,০০০ |
দুর্বল |
B |
১০,০০০–৩৩,০০০ K |
সাদা থেকে
নীলাভ-সাদা |
২.১–১৬ |
১.৮–৬.৬ |
২৫–৩৩,০০০ |
মধ্যম |
A |
৭,৫০০–১০,০০০ K |
সাদা |
১.৪–২.১ |
১.৪–১.৮ |
৫–২৫ |
সবল |
F |
৬,০০০–৭,৫০০ K |
হলুদাভ-সাদা |
১.০৪–১.৪ |
১.১৫–১.৪ |
১.৫–৫ |
মধ্যম |
G |
৫,২০০–৬,০০০ K |
হলুদ |
০.৮–১.০৪ |
০.৯৬–১.১৫ |
০.৬–১.৫ |
দুর্বল |
K |
৩,৭০০–৫,২০০ K |
কমলা |
০.৪৫–০.৮ |
০.৭–০.৯৬ |
০.৮–০.৬ |
খুব
দুর্বল |
M |
২,০০০–৩,৭০০ K |
লাল |
≤ ০.৪৫
|
≤ ০.৭ |
≤ ০.৮ |
খুব
দুর্বল |
L |
১,৩০০–২,০০০ K |
পার্পেল-লাল |
অজ্ঞাত |
অজ্ঞাত |
অজ্ঞাত |
অতি
দুর্বল |
T |
৭০০-১–৩০০ K |
বাদামি |
অজ্ঞাত |
অজ্ঞাত |
অজ্ঞাত |
অতি
দুর্বল |
Y |
≤ ৭০০ K |
গাঢ়
বাদামি |
অজ্ঞাত |
অজ্ঞাত |
অজ্ঞাত |
অতি
দুর্বল |
ইয়ের্কার বর্ণালী
শ্রেণিবিভাজন (Yerkes
spectral classification)
এই বর্ণালী শ্রেণিবিভাজনটি ১৯৪৩ খ্রিষ্টাব্দে, ইয়ের্কার পর্যবেক্ষণ কেন্দ্র (Yerkes
Observatory)
থেকে উপস্থাপন করেছিলেন
William Wilson Morgan, Philip C. Keenan
এবং
Edith Kellman।
এই উপস্থাপনকারী তিনজনের নামের আদ্যাক্ষর নিয়ে এই বর্ণালী বিশ্লেষণের নামকরণ করা
হয়েছিল MKK
(Morgan,
Keenan, Kellman)।
একে সাধারণভাবে বর্ণালী বিশ্লেষণ বলা হলেও এতে বর্ণ এবং তাপমাত্রা প্রকাশের
ব্যবস্থা রাখা হয়েছিল। ১৯৫৩ খ্রিষ্টাব্দে এই শ্রেণিবিভাজন সংশোধন করা হয়। এই সংশোধন
করেছিলেন
William Wilson Morgan
এবং
Philip C. Keenan।
এই কারণে এই সংশোধনটির নামকরণ করা হয়
MK
(Morgan,
Keenan)।
নক্ষত্র পর্যবেক্ষণে দেখা যায়, দানব তারার
ব্যাসার্ধ বামন তারার চেয়ে অনেক বড় হয়ে থাকে। কিন্তু দানব তারার গ্যাসের
ঘনত্ব, চাপ বামন তারার চেয়ে কম। এই পার্থক্যের কারণে উভয় ধরনের নক্ষত্রের আকার,
ঔজ্জ্বল্য, তাপমাত্রায় পার্থক্য তৈরি করে। বেশি ঘনত্বযুক্ত এবং উপরিতলের উচ্চ
মাধ্যাকর্ষণ শক্তি নক্ষত্রের প্রান্ত-বরাবর বর্ণালী রেখা বরাবর বিশেষ প্রভাব
বলে। নিচের এই নতুন বর্ণালী বিভাজন দেখানো হলো।
0
মহাদানব তারাসমূহ
(hypergiants) |
|
I
|
অতি দানব তারাসমূহ (supergiants)
|
|
Ia-0
|
মহাদানব বা অত্যন্ত উজ্জ্বল
অতিদানব তারা (পরে এই তারা যুক্ত হয়েছে)। যেমন-
Eta Carinae |
|
Ia |
উজ্জ্বল অতিদানব তারা
(luminous supergiants),
যেমন-
Deneb (বর্ণালী
A2Ia) |
|
Iab |
মধ্যম মানের উজ্জ্বল অতিদানব তারা
(intermediate luminous
supergiants) । যেমন-
আর্দ্রা
(বর্ণালী
M2Iab) |
|
Ib |
অপেক্ষাকৃত কম উজ্জ্বল অতিদানব
তারা (less luminous
supergiants)। |
|
|
|
II
উজ্জ্বল দানব তারা (bright
giants) |
|
IIa
|
β Scuti (HD 173764) (বর্ণালী
G4 IIa) |
|
IIab
|
HR 8752 (বর্ণালী
G0Iab) |
|
IIb |
HR 6902 (বর্ণালী
G9 IIb) |
|
|
|
III
সাধারণ দানব তারা
(normal giants) |
|
IIIa |
ρ Persei (বর্ণালী
M4 IIIa) |
|
IIIab |
δ Reticuli (বর্ণালী
M2 IIIab) |
|
IIIb |
Pollux (বর্ণালী
K2 IIIb) |
|
|
|
IV
উপ দানব তারা (subgiants)
|
|
IVa |
ε Reticuli (বর্ণালী
K1-2 IVa-III) |
|
IVab |
|
|
IVb |
HR 672 A (বর্ণালী
G0.5 IVb) |
|
|
|
V
প্রধান ধারার তারা (বামন)
main-sequence stars
(dwarfs) |
|
Va |
AD Leonis (বর্ণালী
M4Vae) |
|
Vab |
|
|
Vb |
85 Pegasi A (বর্ণালী
G5 Vb) |
|
Vz |
LH10 : 3102 (বর্ণালী
O7 Vz), বড় ম্যাগলানিক মেঘে এই
তারাটি রয়েছে। |
|
|
|
VI
উপ-বামন তারা |
|
sd |
SSSPM J1930-4311 (বর্ণালী
sdM7) |
|
esd |
APMPM J0559-2903 (বর্ণালী
esdM7) |
|
|
|
VII
সাধারণভাবে
দেখা যায় না। এর ভিতরে রয়েছে সাদা দানব তারা। |
|
|
|
সূত্র :
তারা পরিচিত। মোহাম্মদ আব্দুল
জব্বার। বাংলাদেশ অ্যাস্ট্রোনমিক্যাল এসোসিয়েশান। ফেব্রুয়ারি ১৯৯৪
বাংলা একাডেমী বিজ্ঞান বিশ্বকোষ। ১-৫ খণ্ড।
http://en.wikipedia.org/wiki/
contemporary Astronomy/ Jay M. Pasachoff।
2nd edition
Essays about Univesre/Boris A. Vorontrov-Vel'Yaminov/Mir
Pulishers Moscow/1985