প্রায় ২ .৬ থেকে ৩.৫ লক্ষ খ্রিষ্টপূর্বাব্দের ভিতরে দিকে
এদের একটি দল ইথিওপিয়া অঞ্চলে প্রবেশ করেছিল। পরে এরা ইউরেশিয়া হয়ে পৃথিবীর নানা
প্রান্তে ছড়িয়ে পড়েছিল। ইউরোপের গ্রিসের আপিডিমা গুহায় প্রাপ্ত মানুষের
জীবাশ্মের বয়স নিরূপণ করা হয়েছে খ্রিষ্টপূর্ব ২ লক্ষ ১০ হাজার খ্রিষ্টপূর্বাব্দ। আর
এশিয়ার ইস্রায়িলের প্রাপ্ত প্রাচীনতম মানুষের জীবাশ্মের বয়স নিরূপণ করা হয়েছে ১
লক্ষ ৯০ হাজার খ্রিষ্টপূর্বাব্দ। এ থেকে ধারণা করা যায়- আফ্রিকা থেকে আগত মানবগোষ্ঠী
ইউরোপ ও এশিয়ার বিভিন্ন অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়েছিল খ্রিষ্টপূর্ব ২ লক্ষ বছরের দিকে।
আবহাওয়ার অভাবনীয়
পরিবর্তন এসেছিল বরফযুগের কারণে। ১.৬ লক্ষ খ্রিষ্টপূর্বাব্দের ভিতরে তাপমাত্রা
অভাবনীয়ভাবে কমে গিয়েছিল। এর ফলে হিমবাহের সৃষ্টি হয়েছিল ইউরোপ জুড়ে।
এই
হিমবাহ যুগের ১ লক্ষ ৩৫ হাজার খ্রিষ্টপূর্বাব্দের দিকে
পৃথিবীর তাপমাত্রা ব্যাপকভাবে কমে গি্য়েছিল। এই সূত্রে সৃষ্টি হয়েছিল ইমিয়ান আন্তঃ
হিমবাহ অধিযুগ (Eemian interglacial)।
এর ফলে বিষুব অঞ্চলে বরফের প্রভাব কমে গিয়েছিল। এর ফলে
পৃথিবীর বিভিন্ন বরফাচ্ছাদিত অঞ্চলের বরফ গলে গিয়ে সাগরের জলরাশি বৃদ্ধি করেছিল।
এছাড়া বিশাল বিশাল বরফের স্তূপগুলোর
তলদেশ দুর্বল হয় পড়ার কারণে বড় বড়
হিমবাহ সচল হয়ে উঠেছিল।
১,৩০,০০০ খ্রিষ্টপূর্বাব্দের দিকে এই তাপমাত্রা কমে গেলেও, বর্তমান পৃথিবীর
তাপমাত্রার চেয়ে কিছুটা বেশি ছিল। বিশেষ করে বর্তমান কালের উত্তর
মেরু অঞ্চলের
তাপামাত্রার চেয়ে প্রায় ২-৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেশি ছিল। ফলে উত্তর মেরুতে বনভূমিতে
কাষ্ঠাল বৃক্ষের উদ্ভব হয়েছিল। নরওয়ের তুন্দ্রা অঞ্চল এবং ফিনল্যান্ড অঞ্চলে
হ্যাজেল ও ওক গাছের বিস্তার ঘটেছিল।
জীববিজ্ঞানীদের মতে ১.৩ লক্ষ থেকে ৮০ হাজার খ্রিষ্টপূর্বাব্দের ভিতরে মানুষের
দেহকোষে
mitochondrial
haplogroup (L2)-এর
আবির্ভাব হয়েছিল।
আফ্রিকার উত্তরাঞ্চল ও দক্ষিণাঞ্চলের আদিম জনগোষ্ঠীর দেহে আদি
এল২-এর বিকাশ ঘটেছিল। বহির্গোত্রীয় নারী-পুরুষের যৌনসংসর্গে অন্যান্য জনগোষ্ঠীর
ভিতরে সঞ্চলিত হয়েছিল।
১,২৫,০০০ খ্রিষ্টপূর্বাব্দের দিকে পৃথিবীর তাপমাত্রা সর্বোচ্চ মাত্রায় পৌঁছেছিল।
পৃথিবীর হিমবাহগুলো নিঃশেষ হয়ে না গেলেও, ব্যাপক হ্রাস পেয়েছিল। এই সময় জলহস্তীদের
একটি অংশ জার্মানির রাইন এবং ইংল্যান্ডের টেমস নদীতে আশ্রয় নিয়েছিল। আর ক্যানাডার
বাফিন দ্বীপ এবং মেরুসংলগ্ন দ্বীপগুলোতে বৃক্ষের সম্প্রসারণ ঘটেছিল। গ্রীষ্মকালে
বর্তমান আলাস্কার উপকূলীয় অঞ্চলে ব্যাপক তাপমাত্রা বৃদ্ধির ফলে জমাট বরফের অস্তিত্ব
ছিল না।
এরপর পৃথিবীর তাপমাত্রা আবার কমা শুরু করেছিল।
১,১৫,০০০ খ্রিষ্টপূর্বাব্দের দিকে তাপমাত্রা ব্যাপকভাবে কমে গিয়ে
আবার বরফের স্তূপ জমে উঠা শুরু হয়েছিল। এবং এই সূত্রে শুরু হয়েছিল শেষ হিমবাহ
অধিযুগ। ১,১০,০০০ খ্রিষ্টপূর্বাব্দের দিকে তাপমাত্রা এই অধিযুগের শুরু হয়েছিল। এরই ভিতরে ৯৫,০০০ থেকে ২০,০০০ খ্রিষ্টপূর্বাব্দের
ভিতরে উত্তর আমেরিকা এবং কানাডার বিস্তীর্ণ অঞ্চল জুড়ে বরফে ঢাকা পড়েছিল। বিজ্ঞানীরা
এই অঞ্চলের বরফ-আবরণের নাম দিয়েছেন- লাউরেন্টিড বরফ আবরণ (Laurentide
Ice Sheet)। জমাটবদ্ধ বরফের বিশাল আবরণের ফলে ভূপ্রকৃতিতে নানা ধরনের
পরিবর্তন ঘটেছিল। সেই সাথে গ্রীষ্মকালে সৃষ্টি হয়েছিল
বিশালাকার হিমবাহ। তবে আলাস্কার উপকূলীয় ভাগে বরফ মুক্ত ছিল। তবে আমেরিকার রকি
পর্বব্তমালা বরফে ঢেকে গিয়েছিল। সাইবেরিয়ার নেভাদা তুষারটুপির উদ্ভব হয়েছিল এই সময়।
এছাড়া স্ক্যান্ডেনেভিয়ান তুষার ক্ষেত্রে ব্রিটেন, ইউরোপের মূল ভূখণ্ড, উত্তর-পশ্চিম
এশিয়া পর্যন্ত সম্প্রসারিত হয়েছিল। এই সময় এ সকল দেশসংলগ্ন অঞ্চলে গ্রীষ্মকালে
হিমশৈলের আধিক্য ঘটেছিল। অন্যদিকে দক্ষিণ মেরু এবং এর সংলগ্ন সাগর জল বিশাল
বরফক্ষেত্র তৈরি করেছিল। এর প্রভাবের অস্ট্রেলিয়ার কিছু অংশ বরফের আবরণে ঢাকা
পড়েছিল। এই বরফ বলয়ে আটকা পড়েছিল নিউজিল্যান্ড এবং তৎসংলগ্ন দ্বীপপুঞ্জগুলো। দক্ষিণ
আমেরিকার চিলি, পশ্চিম নিউ গায়না,
ইন্দোনেশিয়াতে এর প্রভাব পড়েছিল ব্যাপকভাবে।
পৃথিবীর শেষ বরফযুগের টানোপোড়নের বিরাট প্রভাব পড়েছিল উদ্ভিদ ও প্রাণিজগতে। বিশেষ করে পৃথিবীর বহু স্থান বরফের কারণে উদ্ভিদশূন্য হয়ে পড়েছিল। ফলে প্রাণিকূলে খাদ্য সংকটের সৃষ্টি হয়েছিল। এক দিকে ছিল প্রচণ্ড শীত, অন্যদিকে ছিল খাদ্যাভাব। উভয় সংকট থেকে উদ্ধার পাওয়ার জন্য, মানুষ আফ্রিকার অভ্যন্তরে এবং আফ্রিকার বাইরে ইউরেশিয়ার দিকে পা বাড়িয়েছিল।
- মানব সভ্যতার কালানুক্রমিক ইতিহাস
- প্রথম পর্ব [৩৬-৩.৫ লক্ষ খ্রিষ্টপূর্বাব্দ]
- দ্বিতীয় পর্ব [৩.৫ লক্ষ-৫০ হাজার খ্রিষ্টপূর্বাব্দ]
- তৃতীয় পর্ব [৫০ হাজার খ্রিষ্টপূর্বাব্দ]
সূত্র: