মানব সভ্যতার কালানুক্রমিক ইতিহাস
তৃতীয় পর্ব
(৫০-২৫ হাজার খ্রিষ্টপূর্বাব্দ)

আয়োনিয়ান আমল ১ লক্ষ থেকে ৭৫ হাজার খ্রিষ্টপূর্বাব্দের ভিতরে হোমো স্যাপিয়েন্-রা  আফ্রিকা থেকে বেরিয়ে ইউরেশিয়ায় ছড়িয়ে পড়া শুরু করেছিল। 

৫০ হাজার খ্রিষ্টপূর্বাব্দের দিকে
হোমো স্যাপিয়েন ব্যাপক অনুপ্রবেশ ঘটে ইউরোপে। এদের যে অংশটি ইউরোপে প্রবেশ করেছিল, তাদের একটি অংশকে ক্রো-ম্যাগনান নামে অভিহিত করা হয়। ধারণা করা হয় ক্রো-ম্যাগনান-রা  খ্রিষ্টপূর্বাব্দ ৪৩০০০-৩৭০০০ অব্দের ভিতরে ইউরোপের বিভিন্ন অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়েছিল। প্রাথমিক পর্যায়ে এরা তুরস্কের আনাতোলিয়া অঞ্চলে বসতিস্থাপন করেছিল। পরবর্তী ১৫০০০ খ্রিষ্টপূর্বাব্দের ভিতরে এরা ইউরোপের স্পেন, ফ্রান্স, অস্ট্রিয়া, হাঙ্গেরি, রুমানিয়া, ক্রোয়েশিয়া, রাশিয়ার বিভিন্ন অঞ্চলে বসতি স্থাপন করেছিল। সভ্যতার ক্রমবিকাশের ধারায় এরা তাদের শিকারের পাথুরে অস্ত্র, গৃহস্থালী কাজের জন্য পাথুরে যন্ত্রপাতির উন্নতি করেছিল। এরা পাথর ও ম্যামোথের দাঁত ও হাড় খোদাই করে মানুষ ও অন্যান্য প্রাণীর মূর্তি নির্মাণ করা শিখেছিল। বিশেষ করে হাতির দাঁত এবং হরিণের শিং-এ অল্পবিস্তর রিলিফের সাহায্যে চিত্র তৈরি করা শিখেছিল। সম্ভবত এরা নিয়ানডার্থালদের মতো সঙ্গীত চর্চা করতো। অবশ্য এদের আবাসস্থল থেকে সঙ্গীতের সাথে সম্পর্কিত বস্তুবাচক কোনো নমুনা পাওয়া যায় নি। এরা সহজাত প্রবৃত্তিতে আগুনের ব্যবহার শিখেছিল।

সামগ্রিকভাবে ইউরোপে আগত ক্রো-ম্যাগনানদের সাংস্কৃতিক বিকাশ ঘটেছিল চারটি পর্যায়ে। এই পর্যায় চারটি হলো-

অরিগ্ন্যাসিয়ান ভাস্কর্য ও চিত্রকর্ম। ভাষ্কর্য শিল্পকর্ম সৃষ্টিতে এদের অভাবনীয় দক্ষতার পরিচয় পাওয়া যায়। বিশেষ করে ম্যামোথের হাড় বা দাঁতের মূর্তি এবং খোদাই-কৃত চিত্র। এরা পাথুরে যন্ত্রপাতির ব্যবহারের পাশাপাশি, হাতির দাঁত ও অস্থি, হরিণারে শিং ইত্যাদি দিয়ে অস্ত্র এবং গৃহস্থালী যন্ত্রপাতি তৈরি করা শিখেছিল। এছাড়া নানা ধরনের চিত্রকর্ম ও ভাস্কর্য তৈরিতে দক্ষ হয়ে উঠেছিল। এই স্তরে এরা শিকারের অস্ত্রগুলোর অগ্র ও প্রান্তভাগ তীক্ষ্ণ করেছিল বেশ সুচারুরূপে। এদের হাতে তীরধনুক এবং বর্শা'ত উন্নতি ঘটেছিল। এদের শিকারে তালিকায় ছিল ম্যামথ. রাইনোসেরোস গণের গণ্ডার, টারপান জাতীয় আদিম ঘোড়া।

ক্রো-ম্যাগনান সভ্যতার অরিগ্ন্যাসিয়ান স্তরে বহু গুহাচিত্রের সন্ধান পাওয়া গিয়েছে ইউরোপের বিভিন্ন স্থানে। মূলত এরা ছিল তখন গুহাবাসী। তাদের বসবাসে গুহাগুলোর গায়ে এবং এরা চিত্রকর্ম করেছিল শিল্পসৃষ্টির তাড়নায়। নিচের এই সভ্যতায় প্রাপ্ত অঙ্কিত বা খোদিত চিত্রকর্মের কালানুক্রমিক তালিকা দেওয়া হলো।