পাপিয়ো হামাড্রাইয়াস
Papio hamadryas

বেবুনের একটি প্রজাতি বিশেষ। ১৭৫৮ খ্রিষ্টাব্দে এই প্রজাতির নামকরণ করেছিলেন ফরাসি জীববিজ্ঞানী
René Primevère Lesson

এদের পাওয়া যায় হর্ন অফ আফ্রিকা এবং আরব উপদ্বীপে। জীববিজ্ঞানীরা বেবুনকে প্রাচীন পৃথিবীর বানর হিসেবে বিবেচনা করে থাকেন। প্রায় ২০ লক্ষ খ্রিষ্টপূর্বাব্দের দিকে পাপিয়োনিনিগোষ্ঠী থেকে পাপিয়ো গণের এই প্রজাতির উদ্ভব হয়েছিল আফ্রিকায়। পরে এরা প্রাচীন মিশরে এরা ধীরে ধীরে ছড়িয়ে পড়েছিল বর্তমানে এদের পাওয়া যায় আফ্রিকার এশিয়া সংলগ্ন আরব উপদ্বীপের সৌদি আরব, ইয়েমেন অঞ্চলের আধা-মরু অঞ্চলে এবং এর কাছাকাছি আফ্রিকার ইরিত্রিয়া ও ইথিওপিয়া, সোমালিয়া তৃণাচ্ছাদিত আরণ্য এবং প্রস্তরময় অঞ্চলে।

এদের পুরষের আকার স্ত্রী-বেবুনের প্রায় দ্বিগুণ। পুরুষ বেবুনের গায়ে রয়েছে রুপালি-সাদা বর্ণের লোম। এদের মাথা ও ঘাড়ে রয়েছে সাদা রঙের টুপির মতো কেশর। এদের দৈর্ঘ্য প্রায় ৮০ সেন্টিমিটার (৩১ ইঞ্চি) এবং ওজন ২০ থেকে ৩০ কেজি।

স্ত্রী-বেবুনের মাথায় কোনো কেশর থাকে না। দেহে রয়েছে বাদামি বর্ণের লোম। এদের দেহের দৈর্ঘ্য ৪০-৪৫ সেন্টিমিটার (১৬-১৮ ইঞ্চি) এবং ওজন ১০ থেকে ১৫ কেজি।

স্ত্রী-পুরুষ উভয়েরই ৪০-৬০ সেন্টিমিটার দীর্ঘ লেজ।

প্রায় ছয় মাস গর্ভধারণের পরে সাধারণত স্ত্রী বেবুন একটি সন্তান প্রসব করে। শাবকদের দেহে থাকে গাঢ় বাদমী বা কালো রঙের লোম। প্রায় এক বছর মা-বেবুন শাবকদের প্রতিপালন করে। ৪ বছর বয়সে স্ত্রী বেবুন এবং ৭ বছর বয়সে পুরুষ বেবুন প্রজননে সক্ষম হয়ে ওঠে।

এরা সর্বভুক। খাদ্য তালিকায় রয়েছে ঘাসের বীজ, বাবলা জাতীয় গাছের শিকড়, পাতা, বাকল, ফল, ফুল। প্রাণিজ খাদ্যের মধ্যে রয়েছে কীটপতঙ্গ, সরীসৃপ, পাখি, ছোটো ছোটো স্তন্যপায়ী প্রাণী।

এরা সাধারণত শুকনো জায়গায় থাকতে পছন্দ করে। তবে সব সময় পর্যাপ্ত খাবার জল পাওয়া যায় এমন জায়গায় দলবদ্ধভাবে বাস করে। এই কারণে শুষ্ক মৌসুমে এরা কোনো ঝর্না বা কোনো জলাশয়ের কাছে বাস করে।

এরা দলবদ্ধভাবে বাস করে। এদের ছোটো ছোটো পরিবার গড়ে ওঠে একজন শক্তিশালী পুরষের নেতৃত্বে। প্রতিটি পুরুষে অধীনে থাকে প্রায় ১০ জন্ স্ত্রী। এই জাতীয় পরিবারকে বলা হয় হারেম। প্রতিটি হারেমে প্রাপ্তবয়স্কদের সাথে থাকে, শাবক এবং তরুণ-তরুণী।

একটি হারেমের কোনো পুরুষ শাবক যখন শক্তিশালী হয়ে ওঠে, তখন সে কিছু স্ত্রী বেবুন নিয়ে পৃথক হয়ে যায় এবং পৃথক হারেম তৈরি হয়। তবে আত্ময়ীতার সূত্রে একাধিক হারেম শান্তিতে সহ-অবস্থান করে। এর ফলে কয়েকটি হারেম মিলে তৈরি হয় একটি বড় দল। এই বড় দলগুলোকে বলা হয় বংশীয় দল
। এরূপ দূর আত্মীয়ের সূত্রে অন্যান্য বংশীয় দলগুলো একত্রে আরও বড়দল তৈরি হয়। প্রতিটি বড়দলে প্রায় ৪০০ পর্যন্ত বেবুন থাকে। এরা নির্বিবাদে মিলেমিশে থাকে। কিন্তু নিজেদের হারেম, বংশীয় দলের অস্তিত্ব বজায় রাখে। অনেক সময় বড়দলগুলো মিলে একটি বিশাল বেবুন রাজ্যের সৃষ্টি করে।

অনেক সময় কোনো হারেমের তরুণ শক্তিশালী পুরুষ নিজের হারেম পর্যাপ্ত স্ত্রী না পেলে, অন্য হারেমের নেতৃত্বদানকারী পুরুষ বেবুনকে আক্রমণ করে। জয়ী হলে ও ওই হারেমের সকল স্ত্রী তার অধীনস্ত হয়ে যায়।

সূত্র: