রাগ তরঙ্গিনী
খ্রিষ্টীয় সপ্তদশ শতাব্দীর মিথিলার কবি নাম লোচন ঝা
কর্তৃক রচিত বিষয়ক গ্রন্থ।
মিথিলার রাজা নরপতি ঠাকুরের আদেশক্রমে ১৮৬১ খ্রিষ্টাব্দে
লোচন শর্মা এই গ্রন্থটি রচনা করেছিলেন। গ্রন্থটি
রচিত হয়েছিল তৎকালীন প্রচলিত
মৈথিলি ভাষায়।
তবে মাঝে মাঝে কিছু
সংস্কৃত ভাষায়
রচিত পাঠ যুক্ত হয়েছে। গ্রন্থটিতে মোগল শাসনামলে
বিহার
সুবার অন্তর্গত তীরহুত জনপদে প্রচলিত রাগভিত্তিক সঙ্গীত নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে।
উল্লেখ্য, তীরহুত জনপদ তৈরি হয়েছিল- বর্তমান ভারতের মুজাফ্ফরপুর, ভাগলপুর, দারভাঙা
এবং মুঙ্গেরেরর কিছু অংশ নিয়ে।
এই গ্রন্থের রয়েছে পাঁচটি তরঙ্গে ভাগ করা হয়েছে। এগুলো হলো-
- প্রথম তরঙ্গ: পুংরাগরূপবর্ণনম্।
এই তরঙ্গের শুরুতে প্রসঙ্গক্রমে মিথিলার রাজন্যবর্গের
সংক্ষিপ্ত পরিচয় তুলে ধরা হয়েছে। এরপর কিছু রাগতকে পুরুষমূর্তি কল্পনা করে
মৈথিলি ও
সংস্কৃত
ভাষায় কিছু শ্লোক উপস্থাপন করা হয়েছে। হনুমন মতানুসারে ৬টি রাগকে রাগকে পুরুষবাচক অধিকর্তা
বা স্বামী হিসেবে বিবেচনা করা হয়েছে। এই ছয়টি রাগ হলো- ভৈরব, কৌশিক, হিন্দোল,
দীপক, শ্রী এবং মেঘ।
- দ্বিতীয় তরঙ্গ: রাগিণীমূর্তিনিরূপণ্ম। এই তরঙ্গে
ছয়টি রাগকের অধীনে বেশকিছু রাগকে স্ত্রী হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। অন্তর্ভুক্ত
রাগগুলিকে অধিকর্তা রাগের স্ত্রী হিসেবে কল্পনা করে রাগিণী নামে অভিহিত করা হয়েছে।
উল্লিখিত রাগ ও এদের অধীনস্ত রাগিণীগুলো হলো-
- ভৈরব। রাগিণী সংখ্যা ৫টি। রাগিণীগুলো হলো- বঙ্গালী,
মধুমাধবী, বরাড়ী এবং সিন্ধু (সৈন্ধবী)
- কৌশিক। রাগিণী সংখ্যা ৫টি। রাগিণীগুলো হলো- টোড়ী,
খম্ভাবতী, গওরী (গৌরী), ককুভ এবং গুণকরী।
- হিন্দোল। রাগিণী সংখ্যা ৫টি। রাগিণীগুলো হলো- বেলাওল,
দেশাখ (দেশাখ), রামকরী, ললিতা এবং পটমঞ্জরী
- দীপক। রাগিণী সংখ্যা ৫টি। রাগিণীগুলো হলো- কেদারা, কানরা,
দেশী, কামোদ ও বিহগর (বিহগড়া)
- শ্রী। রাগিণী সংখ্যা ৫টি। রাগিণীগুলো হলো- ঋতুপতি (বসন্ত),
মালও (মালব), মালস্রী (মালশ্রী), ধনাস্রী (ধনাশ্রী), আসাবরী (আশাবরী)।
- মেঘ। রাগিণী সংখ্যা
৫টি। রাগিণীগুলো হলো- ঋতুপতি (বসন্ত), মালও (মালব), মালস্রী (মালশ্রী), ধনাস্রী
(ধনাশ্রী), আসাবরী (আশাবরী)।
- তৃতীয় তরঙ্গ:
রাগবিবরণ্ম। এই তরঙ্গে রাগের
জন্য ব্যবহৃত বিভিন্ন পারিভাষিক শব্দ নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। যেমন- নাদ, মূর্ছনা,
গীত ইত্যাদি নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। এছাড়া রয়েছে তাল পদ্ধতির কথা। লোচন শর্মা
মিথিলার তিরহুত অঞ্চলের উপযোগী একটি তাল ও গায়ন রীতি প্রণয়নে উৎসাহী ছিলেন। এটি
রাগরাগিণীর পরিবেশনের পরীক্ষামূলক অধ্যায়।
- চতুর্থ তরঙ্গ:
সংকীর্ণ রাগ। এই তরঙ্গে মিথিলার
প্রসিদ্ধ রাগগুলো নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে।
- পঞ্চম তরঙ্গ:
রাগসংস্থানাদিকথনং। এই তরঙ্গটি
সংস্কৃত ভাষায় রচিত। সম্ভবত এই তরঙ্গে উল্লেখযোগ্য কিছু সংস্কৃত গ্রন্থাদি থেকে
রচনা নিয়ে সংকলন হিসেবে উপস্থাপন করা হয়েছে। এতে পাওয়া যায়, তম্বুরু নাটকের
উদ্ধৃতি পাওয়া যায়। সঙ্গীত দামোদর গ্রন্থ থেকে নায়ক-নায়িকার বিবরণ সংকলিত হয়েছে।
সূত্র:
রাগতরঙ্গিণী । লোচন শর্মা। ভাষান্তর ও সম্পাদনা রাজ্যেশ্বর মিত্র। নবপত্র প্রকাশন। ১৩৯১।