ভারতবর্ষের একটি ভাষা।
ভারতের বিহার রাজ্য ও নেপালের পূর্বাঞ্চলীয় তেরাই
এলাকায় এই ভাষা প্রচলিত আছে।
বাংলা, অসমীয়া ও ওড়িয়ার এবং হিন্দির সাথে ধ্বনিগত, শব্দগত এবং বাক্যবিন্যাসে
অনেক মিল রয়েছে। ভারতের আদমশুমারিতে এটিকে
হিন্দির একটি উপভাষা হিসেবে গণ্য করা হতো। ২০০৩ খ্রিষ্টাব্দে এটি
ভারতের একটি স্বতন্ত্র ভাষা হিসেবে সাংবিধানিক স্বীকৃতি পায়। প্রাচীন মৈথিলি লিপির
সাথে বাংলা লিপির মিল ছিল। বর্তমানে মৈথিলি ভাষা লেখা হয় দেবনাগরী লিপিতে লেখা হয়। প্রাচীন ভারতীয় রাজ্য মিথিলায়
এই ভাষা রাষ্ট্রীয় ভাষা ছিল। মিথিলা শব্দ থেকে এই ভাষার নাম মৈথিলি গৃহীত হয়েছে। প্রায় সাড়ে চার কোটি লোক মৈথিলি ভাষায় কথা বলেন। এ ভাষার সবচেয়ে বিখ্যাত
সাহিত্যিক হলেন কবি বিদ্যাপতি। অবশ্য বিদ্যাপতির কোনো কোনো রচনা অনুসারে, তাঁকে
বাংলা ভাষার কবিও বলা হয়।
মানুষের কথিত ভাষার
ইন্দো-ইউরোপিয়ান ভাষা
পরিবারের অন্তর্গত
ইন্দো-ইরানিয়ান ভাষা উপ-পরিবারের একটি
শাখার নাম− ভারতীয়-আর্য ভাষা।
এই শাখার উপশাখা হলো পূর্বাঞ্চলীয়
আর্য ভাষা।
এই উপশাখার প্রধান ধারার ভাষা হলো
সংস্কৃত।
স্থানীয় প্রাকৃতজনের ভাষার (অনার্য ভাষা) সংমিশ্রণে ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলে নানা
ধরনের মিশ্র ভাষার উদ্ভব হয়। এই সূত্রে বর্তমান ভারতের দক্ষিণ বিহারের মগধ অঞ্চলে
যে ভাষার জন্ম হয়, তাকে সাধারণভাবে বলা হয় মাগধি। কালক্রমে এই ভাষা বিবর্তিত হয়ে
নতুনভাবে বিকশিত হয়। একে সাধারণভাবে বলা হয় অপভ্রংশ।
উল্লেখ্য, খ্রিষ্ট-পূর্ব দ্বিতীয় শতাব্দীতে- বিশিষ্ট বৈয়াকরণ পতঞ্জলি তাঁর
'মহাভাষ্যে' গ্রন্থে প্রাচীন ভারতীয় প্রাকৃত ভাষাকে অপভ্রংশ নামে অভিহিত
করেছিলেন। তিনি সংস্কৃত ভাষার বিচারে প্রাকৃতজনের ভাষাকে অধঃপতিত ভাষা হিসেবে এই
শব্দটি ব্যবহার করেছিলেন। তাঁর মতে- অপভ্রংশ ছিলো
শাস্ত্রহীনের ভাষা বা অশিষ্ট
লোক-সাহিত্যের ভাষা হলো।
আধুনিক কালের ভাষাবিজ্ঞানীরা এর নামকরণ করেছেন
মাগধি
অপভ্রংশ বা মাগধি অবহট্ট ।
পরে এই ভাষা অঞ্চলভেদে ভিন্ন ভিন্ন রূপ লাভ করে। এসকল ভাষার প্রকৃতি অনুসারে মাগধি
অপভ্রংশকে দুটি ভাগে ভাগ করা হয়। এই ভাগ দুটি হলো- পূর্বাঞ্চলীয় মাগধি এবং
পশ্চিমাঞ্চলীয় মাগধি।
পশ্চিমাঞ্চলীয় মাগধিকে সাধারণভাবে 'বিহারি' গোত্র নামে অভিহিত করা হয়। এই
গোত্রের ১১টি ভাষার মধ্যে মৈথিলি একটি। বাকি ১০টি ভাষা হলো কুদমালি, পঞ্চপরগণিয়া,
ভোজপুরি, মাগহি, মাঝি, মুসাসা, সাদ্রি, সাদ্রি ওরান, সুরিনাম, সূর্যপুরি।
এই ভাষায় রচিত সাহিত্যের
সর্বপ্রাচীন নমুনা পাওয়া যায়, উমাপতি ওঝার 'পারিজাত হরণ' এবং জ্যোতিরীশ্বর ঠাকুরের
'বর্ণন রত্নাকর'। ধারণা করা হয় এ দুটি গ্রন্থ রচিত হয়েছিল খ্রিষ্টীয় চতুর্দশ
শতাব্দীর প্রথমার্ধে। পঞ্চদশ শতকের দিকে
বিদ্যাপতি
এই ভাষায় কবিতা রচনা করে খ্যাতি লাভ
করেছিলেন। এই ভাষায় রচিত অপর একটি সঙ্গীতবিষয়ক গ্রন্থ
রাগতরঙ্গিনী
১৮৬১ খ্রিষ্টাব্দে রচনা করেছিলেন
লোচন শর্মা।
সূত্র :
ভাষা প্রকাশ বাঙ্গালা ব্যাকরণ। সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায়
বাঙ্গালা ভাষার ইতিবৃত্ত। ডঃ মুহম্মদ শহীদুল্লাহ।
সাধারণ ভাষা বিজ্ঞান ও বাংলা ভাষা। ডঃ রামেশ্বর শ। ডঃ মুহম্মদ শহীদুল্লাহ
http://en.wikipedia.org/wiki/Indo-Aryan_languages
http://www.ethnologue.com/language/san