আব্দুল আলীম
(
১৯৩১-১৯৭৪ খ্রিষ্টাব্দ)
লোক ও পল্লীসঙ্গীতের শিল্পী।

১৯৩১ খ্রিষ্টাব্দের ২৭ জুলাই ভারতের পশ্চিমবঙ্গের মুর্শিদাবাদের তালিবপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন।  পিতার নাম মোহাম্মদ ইউসুফ আলী। স্থানীয় প্রাইমারি স্কুলে লেখাপড়ার সময় গ্রামোফোন রেকর্ডে গান শুনে- তাঁর গান শেখার আগ্রহ জন্মে। তাঁর সঙ্গীতের হাতখড়ি হয়েছিল সৈয়দ গোলাম আলীর কাছে।

১৯৪১-৪২ খ্রিষ্টাব্দের দিকে
ইসলামিয়া কলেজ একটি অনুষ্ঠানে, বড় ভাই শেখ হাবিবের সাথে কিশোর শিল্পী হিসেবে যোগদান করেন।  সেই অনুষ্ঠানে, আব্দুল আলীমের গান শুনে মুগ্ধ হয়েছিলে- তৎকালীন অবিভক্ত বাংলার মুখ্যমন্ত্রী একে ফজলুল হক। পরে ইসালমী গানের গীতকার মোহাম্মদ সোলতান তাঁকে নিয়ে মেগাফোন রেকর্ড কোম্পানিতে কাজী নজরুল ইসলাম-এর কাছে নিয়ে যান। নজরুল ইসলাম আব্দুল আলীমের গান শুনে মুগ্ধ হন। সোলতান নজরুল ইসলামকে আলীমের জন্য দুটি গান রচনার জন্য অনুরোধ করেন। এই সময় নজরুল জরুরি কাজে ব্যস্ত থাকায়- তিনি নজরুল ইসলামকে আলীমের জন্য গান রচনার কথা বলেন। একই সাথে তিনি ধীরেন্দ্রনাথ দাসকে সোলতানের লিখিত গানে সুরারোপের দায়িত্ব দেন। এই কথা মত সোলতান তাঁর দুটি গান রচনা করেন। এই গান দুটির সুর দিয়েছিলেন ধীরেন্দ্রনাথ দাস। পরে এই গান দুটির সুর সংশোধন করে দিয়েছিলেন নজরুল ইসলাম। এই গান দুটি ছিল-

        [সূত্র: নজরুলের শ্রুতিধর ধীরেন দাস। আসাদুল হক। হতেখড়ি, ঢাকা। জানুয়ারি ২০০৪। পৃষ্ঠা: ৫৭-৫৮]

এই সময় তিনি গান পরিবেশেনে কাজী নজরুল ইসলাম, আব্বাসউদ্দিন, ধীরেন্দ্রনাথ দাস-এর সাহযর্যে সমৃদ্ধ হয়েছিলেন।
পরবর্তী সমায়ে আব্দুল আলীম গান শিখেছিলেন-  বেদারউদ্দীন আহমেদ, ওস্তাদ মোহাম্মদ খসরু, মমতাজ আলী খান, আব্দুল লতিফ, কানাইলাল শীল, আব্দুল হালিম চৌধুরী প্রমুখের কাছে।

১৯৪৭ খ্রিষ্টাব্দে পাক-ভারত বিভাজনের পর, তিনি তদানীন্তন পূর্ব-পাকিস্তানে চলে আসেন। তিনি এরপর রেডিওতে স্টাফ আর্টিস্ট হিসেবে গান গাওয়া শুরু করেন।  ১৯৪৮ খ্রিষ্টাব্দে ৯ আগষ্ট  তিনি বেতারে প্রথম, ‘ও মুর্শিদ পথ দেখাইয়া দাও' গানটি পরিবেশন করেন।

ঢাকায় আসার পর তাঁর সাথে বিশেষ হৃদ্যতা হয়- জসীম উদ্দীনের কাছে। পরে তিনি
মমতাজ আলী খানের কাছে লোকগানের তালিম গ্রহণ নেন

১৯৫৬ খ্রিষ্টাব্দে আব্দুল জব্বার খানের পরিচালনায় পূর্ব-পাকিস্তানের প্রথম সবআক চলচ্চিত্র 'মুখ ও মুখোশ'  মুক্তি পায়। এই ছবিতে তিনি প্রথম প্লে-ব্যাক শিল্পী হিসেবে কণ্ঠ দান করেন।

১৯৬৪ খ্রিষ্টাব্দের ২৫ ডিসেম্বর (শুক্রবার ১০ পৌষ ১৩৭১) আনুষ্ঠানিকভাবে ঢাকায় টেলিভিশন (বর্তমানে বাংলাদেশ টেলিভিশন)কার্যক্রম শুরু হয়।

রেকর্ড ও চলচ্চিত্রে তিনি প্রায় ৫ শতাধিক গান পরিবেশন করেছেন। পেশাগত জীবনে আবদুল আলীম ছিলেন ঢাকা সঙ্গীত কলেজের লোকগীতি বিভাগের অধ্যাপক।  

১৯৭৪ খ্রিষ্টাব্দের ৫ সেপ্টেম্বর তিনি মৃত্যুবরণ করেন।

পুরস্কার