১৯৭১ খ্রিষ্টাব্দে
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের শেষের দিকে
পাকিস্তানের বিরুদ্ধে যুদ্ধ
পরিচালনার জন্য
বাংলাদেশ-
ভারত
যৌথবাহিনী গঠিত হয়। এই যুদ্ধে ভারতীয় সেনাপ্রধান প্রধান শ্যাম মানেকশ’
পূর্বাঞ্চলীয় কমান্ডকে প্রথমেই চট্টগ্রাম এবং খুলনা শহর দখল করতে নির্দেশ দেন।
সে সময় ভারতীয় সেনাবাহিনীর পূর্বাঞ্চলীয় কমাণ্ডার জেনারেল অরোরার পরিকল্পনা ছিল,
বাংলাদেশের সকল এলাকা দখল করে, রাজধানী ঢাকাকে ঘিরে ফেলা। কিন্তু জ্যাকব এই ধরনের
অভিযানের পক্ষে ছিলেন না। তিনি মনে করেছিলেন, এই প্রক্রিয়া ব্যাপক জানমালের ক্ষতি
হবে। তাছাড়া যুদ্ধ দীর্ঘতর হলে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং
চীনের প্রবল চাপের শেষ পর্যন্ত ভারত পাকিস্তানের মধ্যে সন্ধির প্রস্তাব আসতে পারে।
তাই তিনি রাজধানী
ঢাকাকে দ্রুত দখলমুক্ত করার পরিকল্পনা করেন। এই কারণে তিনি সুচারুভাবে এবং সুকৌশলে ঢাকার
দিকে অগ্রসর হয়েছিলেন।
তিনি ১৩ই ডিসেম্বর
ঢাকার উপকণ্ঠে পৌঁছে তিনি বেতারে জেনারেল
আমির আব্দুল্লাহ খান
নিয়াজিকে আত্মসমর্পণ করতে অনুরোধ করেন। সে সময় ঢাকাতে পাকিস্তানী ২৬,৪০০। এর
সাথে বিহারি ও দালালদের নিয়ে গঠিত আধা-সামরিক বাহিনীর সদস্যদের মিলে সশস্ত্র
সদস্যের সংখ্যা দাঁড়িয়েছিল প্রায় ৩০০০০। পক্ষান্তরে ঢাকার উপকণ্ঠে মুক্তিবাহিনী ও
ভারতীয় সৈন্য ছিল প্রায় ৩ হাজার। এই অবস্থায় জ্যাকব পাকিস্তানি সেনাপতিদের কাছে
নিজেদের এমন একটি ভাবমূর্তি তুলে ধরতে সক্ষম হয়েছিলেন যে, তারা একটি বিশাল
সেনাসদস্যদের নিয়ে ঢাকাকে ঘিরে ফেলেছে। মূলত পাকিস্তানীদের বড় ভয় ছিল যে, ঢাকাতে
মুক্তিবাহিনী ঢুকে পড়লে, নির্বিচারে পাকিস্তানী সৈন্যদের হত্যা করবে। অন্যদিকে
নিয়াজি পশ্চিম পাকিস্তান থেকে কোনো সামরিক সরবরাহ না পেয়ে অাতঙ্কিত হয়ে পড়েন এবং
আত্মসমর্পণের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। শেষ পর্যন্ত
নিয়াজিআত্মসমর্পণের রাজি হন
এবং সে বিষয়ে কথা বলতে ঢাকায় প্রবেশ করেন। এই সময় জ্যাকবের সাথে ছিল ভারতীয়
সেনাবাহিনীর শুধু একজন স্টাফ অফিসার। জ্যাকব মাত্র ত্রিশ মিনিটের মধ্যে নিয়াজিকে তিনি নিঃশর্তভাবে
আত্মসমর্পণ করতে রাজি করান।
আত্ম-সমর্পণে রাজি হলে- শ্যাম মানকেশর জ্যাকবকে বিষয়টি
জানান এবং ঢাকায় গিয়ে আত্ম-সমরপণের বিষয়ে প্রস্তুতি নিতে বলেন। এরপর তিনি আত্মসমর্পণ
দলিল হাতে নিয়ে ঢাকায় পৌঁছান এবং আত্মসমর্পণের প্রস্তুতি নিতে থাকেন। এই সময়
আত্মসমর্পণের অনুষ্ঠান সংগঠিত করার জন্য, তিনি জেনারেল নাগরাকে দুটি চেয়ার, একটি
টেবিল জোগাড় করতে আদেশ দেন। এছাড়া তিনি ঢাকা শহর বিমানবন্দর, ইন্টারকন্টিনেন্টাল
হোটেল ও একটি যৌথ গার্ড অব অনারের আয়োজন করতে বললেন।
আত্মসমর্পণের আনুষ্ঠিকতা সম্পন্ন করার সময়, ভারতে জেনারেল অরোরা ঢাকায় আসেন।
নিয়াজি আত্মসমর্পণে দলিলে স্বাক্ষরের সময় জ্যাকব অন্যান্যদের সাথে পিছনে
দাঁড়িয়েছিলেন। উল্লেখ্য, ঢাকার ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি ছাড়াই পাকিস্তানি সৈন্যদের
আত্মসমর্পণে বাধ্য করা এবং স্বাধীনতা যুদ্ধে সহায়তা করার জন্য, ২০১২ খ্রিষ্টাব্দের
২৭শে মার্চ জেনারেল জ্যাকব বাংলাদেশ সরকার তাঁকে মুক্তিযুদ্ধ সম্মাননা পদক প্রদান
করেন।
১৯৭৮ খ্রিষ্টাব্দে তিনি ল্যাফটেন্যান্ট জেনারেল হিসেবে ভারতীয় সামরিক বাহিনী থেকে অবসর নেন।
১৯৯০ খ্রিষ্টাব্দের দিকে তিনি ভারতীয় জনতা পার্টিতে যোগ দেন। এই দলে তিনি অনেক বছর
নিরাপত্তা পরামর্শকের দায়িত্ব পালন করেন। পরবর্তী সময়ে গোয়া ও পাঞ্জাবের গভর্নর
হন।
২০১৬ খ্রিষ্টাব্দে তিনি মৃত্যুবরণ করেন।
বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের উপর সৃত্মিচারণমূলক দুটি গ্রন্থ রচনা করেন। গ্রন্থ দুটি
হলো-