বিশ্বলোকের গল্প
প্রিক্যাম্বরিয়ান
পর্ব
তৃতীয় অধ্যায়। দ্বিতীয় ভাগ। তৃতীয় অংশ
স্টেনিয়ান অধিযুগ
(১২০
থেকে
১০০
কোটি খ্রিষ্টপূর্বাব্দ)
মেসোপ্রোটারোজোয়িক যুগ-এর তৃতীয় অধিযুগ যুগ। গ্রিক stenos শব্দের অর্থ হলো —সংক্ষিপ্ত বা সরু। এর বাংলা হতে পারে 'সংক্ষিপ্ত অধিযুগ'। এই অধিযুগের স্থায়ীত্বকাল বেশ অল্প সময় ছিল বলে, এর এইরূপ নামকরণ করা হয়েছে। এই অধিযুগে নানা ধরনের অধঃক্ষেপ ও আগ্নেয় উপাদান দিয়ে তৈরি হয়েছিল নানা ধরনের শিলা । পরে এই শিলা ও অন্যান্য উপাদানের সমন্বয়ে ভূস্তর তৈরি হয়েছিল।
১২০-১১০ কোটি খ্রিষ্টপূর্বাব্দ: এই
সময়ে নেনা, উর এবং আরও কিছু স্থলভাগ যুক্ত হয়ে সৃষ্টি হয় রোডিনা
মহা-মহাদেশ সৃষ্টি হয়। এই সময় সাইবেরিয়া রোডিনার অংশ
হিসেবে ছিল। এই
সময় সর্ব উত্তরে ছিল ভারত এবং অস্ট্রেলীয় পাত এবং ভারতীয় পাতের গা ঘেঁষে ছিল
মাদাগাস্কার। এর নিচে ছিল পূর্ব এন্টার্ক্টিকা। এই চারটি ভূখণ্ড মিলে
প্রাক্-গোণ্ড্ওয়ানা তৈরি হয়েছিল। এরপর বিষুবরেখা বরাবর ছিল কালাহারি, লাউরেনশিয়া
(কানাডিয়ান ঢাল-ভূখণ্ড)। বিষুব রেখার উত্তরে ছিল সাইবেরিয়া অঞ্চল। আর দক্ষিণে ছিল
কঙ্গো,
আমাজোনিয়া, পশ্চিম আফ্রিকা এবং
বাল্টিকা।
১১০-১০০ কোটি খ্রিষ্টপূর্বাব্দ: এই সময়ের ভিতরে
রোডিনা মহা-মহাদেশ ভাঙন
শুরু হয়েছিল।
এর মধ্য
দিয়ে নতুন মহাদেশের সৃষ্টির সম্ভাবনা প্রবল হয়ে উঠছিল।
জীবজগতের
ক্রমবিবর্তনের ধারা
আগের অধিযুগের
শৈবাল ব্যাপকভাবে সাগরজলে ছড়িয়ে পড়ার প্রক্রিয়াটি এই অধিযুগেও সচল ছিল।
এর পাশাপাশি
প্লান্টি রাজ্যের অন্তর্গত
উন্নতর উদ্ভিদের ক্রমবিকাশের ধারাটিও সচল ছিল।
সারা বছর পর্যাপ্ত সূর্যের আলো থাকে এমন সাগরজলের উপরিভাগে আদিম
প্রাক্-প্রাণকেন্দ্রিক কোষ-ভিত্তিক
শৈবালগুলো দলবদ্ধভাবে বাস করা শুরু করেছিল। এর ফলে সাগর জলে বিশাল শৈবালক্ষেত্রের
সৃষ্টি হয়েছিল। এর ভিতরে থাকতো আদিম ব্যাক্টেরিয়া, ভাইরাস এবং
বাইকোন্টা
ও
পোডিয়াটা
থাকের ইউনিকোন্টা
জাতীয় জীব। সব মিলিয়ে যে জৈব দল তৈরি হয়েছিল, বিজ্ঞানীরা তার নাম দিয়েছেন
প্লাঙ্কটন (Plankton)।
মূলত প্লাঙ্কটন হলে সমুদ্রে ভাসমান ভাইরাস, ব্যাক্টেরিয়া, আর্কিয়া, শৈবাল,
ক্ষুদ্রাকার এককোষী ও বহুকোষী উদ্ভিদ ও প্রাণীর দলগত পরিচিয়। জৈবসত্তার প্রকৃতি
অনুসারে প্লাঙ্কটনকে নানা ভাবে ভাগ করা হয়। যেমন
ফাইটোপ্লাঙ্কটন (Phytoplankton): গ্রিক phyton (উদ্ভিদ)। সব মিলিয়ে Phytoplankton বাংলা অর্থ হতে পারে উদ্ভি্জ প্লাঙ্কটন। ধারণা করা হয়, ১২০-১১০ কোটি খ্রিষ্টপূর্বাব্দের ভিতরে এই জাতীয় প্লাঙ্কটনের সূত্রপাত হয়েছিল।
ব্যাক্টেরিয়োপ্লাঙ্কটন
জুপ্লাঙ্কটন (Zooplankton): ক্ষুদ্রাকার এককোষী ও বহুকোষী প্রাণী এবং এদের লার্ভা, ডিম ইত্যাদি নিয়ে এই জাতীয় প্লাঙ্কটন তৈরি হয়। এই জাতীয় প্লাঙ্কটনের বিকাশ ঘটেছিল ক্ষুদ্রাকার প্রাণীর আবির্ভাবের পরে। জীবের ক্রমবিবর্তনের ধারায় এদের আদি রূপ বিকাশিত হয়ৈছিল ১০০-৯৫ কোটি খ্রিষ্টপূর্বাব্দের ভিতরে।
মাইকোপ্লাঙ্কটন (Mycoplankton): ছত্রাক এবং ছত্রাক জাতীয় জীবের সমন্বয়ে এই জাতীয় প্লাঙ্কন তৈরি হয়েছিল। এদের আদি রূপ বিকাশিত হয়ৈছিল ৯৫-৮৫ কোটি খ্রিষ্টপূর্বাব্দের ভিতরে।
এই সময় আগের অধিযুগের সৃষ্ট
বাইকোন্টা
ও
পোডিয়াটা
থাকের ইউনিকোন্টা
জাতীয় জীব
এদের
সাগর জলে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়েছিল।
এদের ভিতরে
বাইকোন্টা
থাকের নানা ধরনের শৈবালের বিকাশ অব্যাহত ছিল। অন্যদিকে ১৪০ কোটি
খ্রিষ্টপূর্বাব্দের দিকে আবির্ভুত ইউনিকোন্টা ও
ভারিসুকালা
জীবকুল থেকে নতুন ধারার প্রজাতিসমূহ বিকশিত হচ্ছিল।
প্রায় ১০৩.১-১০০ কোটি খ্রিষ্টপূর্বাব্দের দিকে ইউনিকোন্টা
দুটি ধারায় বিভাজিত হয়ে গিয়েছিল। এই ধারা দুটি হলো- ওবাজোয়া ও এ্যামিবোজোয়া। ১০০ কোটি খ্রিষ্টপূর্বাব্দের দিকে ইউনিকোন্টাদের
কিছু কিছু প্রজাতির ভিতর দেহের পরিবর্তন করার ক্ষমতার জন্ম হয়। এরা কখনো কখনো দেহের
কোনো অংশ বর্ধিত করে অঙ্গুলির মতো ক্ষণপদ তৈরি করা শুরু করেছিল। এই ক্ষণপদের দ্বারা
এরা চলাচল করা এবং খাদ্যগ্রহণের কাজ করতে পারতো। এই সূত্রে সৃষ্টি হয়েছিল আবির্ভুত
হয় এ্যামিবোজোয়া থাকের জীব। মূলত এ্যামিবা নামক একোষী জীবের আদি-জীব ছিল সেকালের
এ্যামিবোজোয়া থাকের জীবগুলো।
অবশিষ্ট
ওবাজোয়া
থাক থেকে উদ্ভব হয়েছিল ছত্রাক ও অন্যান্য জীব। এই কারণে
ওবাজোয়া
থাককে মানুষের উদ্ভবের একটি আদিম ধাপ হিসেবে বিবেচনা করা হয়।
ওবাজোয়া থাক: যথারীতি এরা ছিল এককোষী। তবে এদের দেহে ফ্লাজেলা ছিল। ১০০ কোটি খ্রিষ্টপূর্বাব্দের দিকে ওবোজোয়া থাকের ভিতরে উল্লেখযোগ্য কিছু বির্তন দেখা গিয়েছিল। এই সূত্রে ওবোজোয়া থাকটি তিনটি ধারায় বিভাজিত হয়ে গিয়েছিল। এই ধারা তিনটি হলো-
ব্রেভিয়াটা (Breviata): এরা দেহকে এ্যামিবার মতো পরিবর্তন করতে পারতো। তবে এদের দেহে ফ্লাজেলা ছিল। এদের উল্লেখযোগ্য প্রজাতি হলো- B. anathema।
আপুসোজোয়া (Apusozoa): এরা দেহে ফ্লাজেলা ছিল। এই ফ্লাজেলা দিয়ে এরা চলাচল করতো এবং ব্যাক্টেরিয়া শিকার করতো।
ওপিস্থোকোন্টা (Opisthokonta): এই থাক থেকে উৎপন্ন হয়েছিল প্রাণী ও ছত্রাকসমূহ। ১০০ কোটি খ্রিষ্টপূর্বাব্দে এই থাক যে সকল থাকের উদ্ভব হয়েছিল, সে গুলোকে প্রধান দুটি ভাগে ভাগ করা হয়েছে।
হোলোমাইকোটা (Holomycota): এই থাক থেকে পরবর্তী সময়ে উদ্ভব হয়েছিল ছত্রাক এবং ছত্রাকের মতো জীব।
হোলোজোয়া
(Holozoa): জীবজগতের
ক্রমবিবর্তনের ধারায় হোলোজোয়াকে বলা হয়- প্রাণীজগতের আদিম ধাপ।
এই থাকের
জীবগুলো ছিল ছত্রাকের কাছাকাছি, কিন্তু ছত্রাকের মতো নয়। তাই ছত্রাককে
বাইরে রেখে বিজ্ঞানীরা এককোষী এই জীবগুলোর হোলোজোয়া নামে অভিহিত করেছেন।
এই থাক থেকে পরবর্তী সময়ে উদ্ভব হয়েছিল মানুষ-সহ অন্যান্য প্রাণীকুলের
উদ্ভব হয়েছিল।
এই প্রক্রিয়ার ভিতর দিয়ে প্রোটেরোজোয়িক কালের দ্বিতীয় যুগের সমাপ্তি ঘটে। এরপর শুরু হয় প্রোটেরোজোয়িক কালের শেষ যুগ- নিওপ্রোটারোজোয়িক যুগ।
সূত্র :
http://essayweb.net/geology/timeline/mesoproterozoic.shtml
http://en.wikipedia.org/wiki/Mesoproterozoic