বিষয়: নজরুল সঙ্গীত। 
শিরোনাম: অরুণ-কান্তি কে গো যোগী ভিখারি 
	
		
অরুণ-কান্তি কে গো যোগী ভিখারি।
নীরবে হেসে দাঁড়াইলে এসে
	প্রখর তেজ তব নেহারিতে নারি ॥
		রাস-বিলাসিনী আমি আহিরিণী
শ্যামল কিশোর রূপ শুধু চিনি,
অম্বরে হেরি আজ একি জ্যোতিঃপূঞ্জ
হে গিরিজাপতি!  কোথা গিরিধারী
		॥
সম্বর সম্বর মহিমা তব, হে ব্রজেশ ভৈরব,
                    আমি ব্রজবালা।
হে শিব সুন্দর, বাঘছাল পরিহর, ধর নটবর-বেশ
                    পর নীপ-মালা।
নব মেঘ−চন্দনে 
	ঢাকি' 
	অঙ্গজ্যোতি
প্রিয় হয়ে দেখা দাও ত্রিভুবন পতি
পার্বতি নহি আমি, আমি শ্রীমতী
বিষাণ ফেলিয়া হও বাঁশরিধারী
	॥ 
		
	
	- 
	ভাবসন্ধান:  এই গানে পাওয়া যায় শ্যাম ও শ্যমার দ্বৈত্ব ভক্তি ভাব। 
	বৈষ্ণব-নয়িকা শ্রীরাধা আর শাক্ত- নায়ক শিবের রূপ দর্শনের যুগপৎ মিলন।  এ গানের 
	নায়িকা রাধা শিবকে দেখতে চেয়েছেন কৃষ্ণের প্রেম-সৌন্দর্য-ধারী রূপে।  
 
 কোনো এক সময় আকস্মিকভাবে শ্রীরাধার সাথে যোগীবেশী শিবের সাক্ষাৎ 
	হয়। অরুণ-কান্তি (ভোরের সূর্যের মতো স্নিগ্ধ জ্যোতির্ময় রূপধারী)  স্নিগ্ধ 
	সহাস্য যোগী শিবকে দেখে শ্রীরাধা বিহ্বলিত হয়ে পড়েন। এই গানে মূলত রাধার 
	অভিব্যক্তিতে শিবের রূপকেই উপস্থাপন করা হয়েছে। রাধার কাছে সার্বিক 
	রূপ-সৌন্দর্যের আদর্শ ছিলেন শ্রীকৃষ্ণ। তাই শিবের প্রখর তেজপূর্ণ রূপের সাথে 
	কৃষ্ণের শ্যাম-স্নিগ্ধ রূপের তুলনা উঠে এসেছে বার বার। গানটিতে একই সাথে শাক্ত 
	ও বৈষ্ণব ভক্তির ভাব প্রকাশ পেলেও- উপলক্ষের বিচারে একে শাক্ত সঙ্গীত হিসেবে 
	বিবেচনা করা যেতে পারে।
 
 গানটির অন্তরাতে রাধা শিবকে বলছেন- তিনি রাসোৎসব-অভিলাষিণী গোপ-ললনা। তিনি 
	কিশোর কৃষ্ণের স্নিগ্ধরূপ দর্শনে অভ্যস্থ। তিনি অরুণ-কান্তি শিবের প্রখর তেজকে, 
	সহ্য করতে পারছেন না। তেজপূর্ণ শিবের (গিরিজাপতি) ভিতরে চিরচেনা কৃষ্ণের (গিরিধারী) 
	সন্ধান করেছেন।
 
 সঞ্চারীতে ব্রজবালা (ব্রজধামের গোপ-ললনা) রাধা, শিবকে তাঁর ভৈরবরূপী তেজ মহিমাকে 
	সম্বরণ  করার জন্য সকাতর প্রার্থনা করছেন। তিনি শিবকে তাঁর পরিধেয় বাঘছাল 
	ত্যাগ করে, বর্ষার স্নিগ্ধ-শ্যামল সৌন্দর্যে মহিমান্বিত নীপমালা (কদমফুলের 
	মালা) গলে নটবরের (কৃষ্ণ) বেশ ধারণ করতে অনুরোধ করছেন। আভোগে শিবের তেজময় রূপকে 
	ঢাকার উপকরণ হিসেবে বর্ষার নতুন মেঘ-চন্দনের কথা বলা হয়েছে রূপাকার্থে। যেমন 
	বর্ষার মেঘের আবরণে প্রখর সূর্যে আলো প্রশমিত হয় এবং বর্ষার আকাশকে 
	শ্যামল-স্নিগ্ধ সৌন্দর্যে মহিমান্বিত করে; সেই মহিমান্বিত রূপ ধারণের জন্য রাধা 
	শিবেকে অনুরোধ করেছেন। শিবের প্রখর তেজকে সহ্য করার ক্ষমতা পার্বতী (হিমালয় 
	পর্বতের কন্যা রূপী দুর্গা) আছে। ব্রজবালা রাধা শিবের ওই তেজ গ্রহণে অসমর্থা। 
	কারণ তিনি বংশীধারী কৃষ্ণের সহচরী। তাই শিবকে তাঁর প্রলয়ঙ্করী বিষাণ (পশুর শিং 
	দিয়ে তৈরি সুষির বাদ্যযন্ত্র) ত্যাগ করে, কৃষ্ণের মোহন বাঁশী ধারণ করার জন্য 
	অনুরোধ করেছেন।
 
- 
	রচনাকাল ও স্থান: গানটির 
		রচনাকাল সম্পর্কে সুনির্দিষ্টভাবে কিছু জানা যায় না। 
	১৯৩৯ খ্রিষ্টাব্দের ১লা অক্টোবরে (রবিবার ১৪ আশ্বিন ১৩৪৬) প্রকাশিত 
		'বেতার জগত'-এ 'আমাদের কথা' বিভাগে কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে উল্লেখ করা হয়েছে
	
'হারামনি- যাঁরা সঙ্গীত 
			সম্বন্ধে গবেষণা করেছেন তাঁরা জানেন কত অপ্রচলিত রাগ রাগিণী 
			ওস্তাদজীদের ঘরোয়ানা পেটিকার অন্ধকার ভেদ করে দিনের আলোকে দেখা দিতে 
			আরম্ভ করেছে। যাঁরা এই উদ্ধার সাধনে লিপ্ত আছেন তাঁরা আমাদের বরেণ্য। 
			কবি নজরুল ইসলাম এই শ্রেণীর একজন লুপ্ত রত্নোদ্ধারের কর্মী। তিনি বহু 
			অপ্রচলিত রাগ রাগিণীকে বাংলা গানের ভিতর দিয়ে রূপায়িত করে তুলেছেন। কবি 
			ও সুরকার, এই দুই জাতীয় প্রতিভার সৃজনী শক্তিতে সেই সঙ্গীতগুলি বাংলার 
			সঙ্গীতকে সমৃদ্ধি দান করেছে। এবারে ৮ই অক্টোবর রবিবার সন্ধ্যা ৭টা ১০ 
			মিনিটে তিনি আহীর ভৈরব রাগের সঙ্গে আমাদের শ্রোতাবৃন্দের পরিচয় স্থাপন 
			করবেন।'
	 উল্লিখিত বিজ্ঞাপনের পর, ১৯৩৯ খ্রিষ্টাব্দের ৮ অক্টোবর (রবিবার, ২১ 
		আশ্বিন ১৩৪৬), সন্ধ্যা ৮.১০ মিনিটে, বেতারের 
		'হারামণি' নামক অনুষ্ঠানে রাগ আহীর ভৈরব নিবদ্ধ নজরুলের রচিত এই
গানটি প্রথম সম্প্রচারিত হয়েছিল।  এই সময় নজরুলের বয়স ছিল ৪০ বৎসর ৪ মাস।
 
- বেতার:
	
		- হারামণি-১ (লুপ্ত রাগের পুনরুদ্ধার-বিষয়ক 
			সঙ্গীতানুষ্ঠান)।  বিষয়:
		আহির ভৈরব।  
		কলকাতা বেতার কেন্দ্র। [৮ অক্টোবর ১৯৩৯ খ্রিষ্টাব্দ (রবিবার, ২১ 
			আশ্বিন ১৩৪৬), সান্ধ্য অনুষ্ঠান ৮.১০-৮.২৯ মিনিট]।
 
সূত্র:
		- বেতারজগৎ। 
			১০ম বর্ষ, ১৯শ সংখ্যা। ১লা অক্টোবর ১৯৩৯। পৃষ্ঠা: ৭৫১]
- 
		
The Indiann-Listener. 22 Sepetember 
			1939/Vol. IV No. 19. Page 1379]
 
	
	
		ষট ভৈরব
		(ছয়টি ভৈরব অঙ্গের রাগ নিয়ে সৃষ্ট 
			সঙ্গীতানুষ্ঠান)। কলকাতা বেতার কেন্দ্র।  ১৩ জুলাই ১৯৪১ (রবিবার ২৯ আষাঢ়। ১৩৪৮)। 
		সান্ধ্য অধিবেশন। ৮.২৫-৯.০৪। 
		
		- সূত্র: 
		
		- বেতার জগৎ [১২শ বর্ষ ১৩শ সংখ্যা, মঙ্গলবার, ১ 
			জুলাই ১৯৪১, ১৭ আষাঢ় ১৩৪৮ পৃষ্ঠা ৭৭৮] 
 
The Indiann-Listener [22 Sepetember 
			1939/Vol. VI No. 13. Page 79]
 
	
	
	
	
	সঙ্গীতবিষয়ক তথ্যাবলি: