কত ফুল তুমি পথে ফেলে দাও (প্রিয়) মালা গাঁথ অকারণে
আমি চেয়েছিনু একটি কুসুম সেই কথা পড়ে মনে॥
তব ফুলবনে কত ছায়া দোলে
জুড়াইতে চেয়েছিনু তারি তলে
চাহিলে না ফিরে চলে গেলে ধীরে ছায়া-ঢাকা অঙ্গনে॥
অঞ্জলি পাতি' চেয়েছিনু, তব ভরা ঘটে ছিল বারি
শুষ্ক-কণ্ঠে ফিরিয়া আসিনু পিপাসিত পথচারী।
বহুদিন পরে দাঁড়াইনু এসে
তোমারি দুয়ারে উদাসীন বেশে
শুকানো মালিকা কেন দিলে তুমি তব ভিক্ষার সনে॥
১৯৪০ খ্রিষ্টাব্দে এইচএমভি থেকে প্রকাশিত এই গানের সুরারোপ করেছিলেন কমল দাশগুপ্ত। রেকর্ডে গানটির সুরের পরিচয় ছিল 'আধুনিক'। মূলত সুরকার এই গানের সুর রচনা করেছিলেন বিংশ শতাব্দীর আধুনিক গানের সুরশৈলীর স্বরবিন্যাস। গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করলে হয়তো এই গানে জয়জয়ন্তীর ছায়াই পাওয়া যায়। অবশ্য কোমল ধৈবত ব্যবহারে ভৈরবীর কিছু আভাষ ফুটে মাত্র। এই বিচারে এই গানটিকে মিশ্র জয়জয়ন্তী বলা যেতে পারে। মূলত গানটির ভাবের সাথে সঙ্গতি রেখে তৎকালীন আধুনিক বা প্রচলিত সুরের ঢং অনুসরণ করে কমল দাশগুপ্ত নিজের মতো সুর করেছিলেন। যদিও এই গানের সুরে পাওয়া যায় অভিমান ও বিরহের যুগপৎ অনুভাব। গানটির স্থায়ীতে শিল্পী সন্তোষ সেনগুপ্তের গায়কীতে এই যুগপৎ ভাবটিই পাওয়া যায়। স্থায়ীর 'পড়ে মনে' শব্দ দুটি 'পা মা মদঃ দপঃ' স্বর বিন্যাসে ব্যবহৃত কোমল ধৈবত (দ) ব্যবহার করা হয়েছে, 'মনে পড়ে' পৃথক অভিব্যক্তি এনে দেয়। প্রেমিকের প্রেমের ফুল অবহেলায় ফেলে দেয়া একটি বিবরণ মাত্র। এর ভিতরে বিশেষ ঘটনাটিই হলো- একটি প্রেমের কুসুম প্রার্থনা, এবং সেই প্রার্থনার কথা মনে পড়ে যাওয়া।অন্তরাতে প্রেমিকার ব্যর্থ প্রেমের হাহাকার হয়ে উঠেছে 'চেয়েছিনু' শব্দটি 'র্গরম র্গর্মর্গা র্রা' স্বর বিন্যাসে। এই হাহাকার পাওয়া 'চাহিলে না'র 'না'-তে নর্রা র্সনর্স'। এখান থেকে সুরে আসে সুরচিত্র হয়ে গমা হয়ে। এরূপ সুরচিত্র গানটির সর্বত্র ছড়িয়ে আছে। বাড়তি সুরালঙ্কারের ব্যবহার থাকলেও তা সুরের ভাবের ব্যাঘাত ঘটায় নি। গানটি ২।২ মাত্রা ছন্দে নিবদ্ধ। এই ছন্দটি বাণী ও সুর ছোটো ছোটো অভিঘাতে বিশেষ আবেদন তৈরি করে।