বিষয়: নজরুল সঙ্গীত।
শিরোনাম: নিশি নিঝুম ঘুম নাহি আসে
রাগ: বেহাগ, তাল: ত্রিতাল
নিশি নিঝুম ঘুম নাহি আসে
হে প্রিয়, কোথা তুমি দূর প্রবাসে॥
বিহগী ঘুমায় বিহগ-কোলে,
ঘুমায়েছে ফুলমালা শ্রান্ত আঁচলে;
ঢুলিছে রাতের তারা চাঁদের পাশে॥
ফুরায় দিনের কাজ, ফুরায় না রাতি,
শিয়রের দীপ হায় অভিমানে নিভে যায়
নিভিতে চাহে না নয়নের বাতি।
কহিতে নারি কথা তুলিয়া আঁখি
বিষাদ-মাখা মুখ গুণ্ঠনে ঢাকি'
দিন যায় দিন গুণে, নিশি যায় নিরাশে॥
- পাণ্ডুলিপি
[নমুনা]
- ভাবসন্ধান:
যাম-যোজনায় কড়ি মধ্যম' গীতি-আলেখ্যের ৮টি রাগাশ্রয়ী গানের
সপ্তম গান। এই গানের শুরুতে যাম যোজনায় ছায়ানট রাগের রূপ বর্ণনা করা হয়েছে।
নিচে নজরুলের পাণ্ডুলিপি থেকে এই বিষয়ক পাঠ তুলে ধরা হলো।
ছায়ানটের পর আসে নিঝুম নিশি। বিহগ যখন ঘুমায়, বেহাগ তখন জাগে। শুদ্ধ
মধ্যমই এর আসল মা। কড়ি মধ্যম সৎ মা। দুই মধ্যম এর যে অপরূপ শ্রী ফুটে ওঠে
তার বুঝি তুলনা নেই।
যাম-যোজনায় কড়ি মধ্যম' গীতি-আলেখ্যের জন্য রচিত এই গানটিতে বেহাগ রাগের
রূপ বর্ণনা করা হয়েছে রূপকতার আশ্রয়ে। এই গীতি-আলেখ্যের অন্যান্য রাগের মতই
এই গানটি বেহাগের ভাব-লক্ষণগীত। এই রাগের মূল রস করুণ। কবি এই গানে বিরহের করুণ
রূপটিকেই শুধু উপস্থাপন করেছেন। কিন্তু কবির মূল উদ্দেশ্য কড়ি মধ্যমের মহিমা
প্রকাশ করা। করুণ রসের প্রকাশ ঘটে কড়িমধ্যমের সুকোশল প্রয়োগের মাধ্যমে, একই সাথে
পরের প্রহরের রাগে প্রবেশের পথ উন্মুক্ত করে দেয়- এই ভাবনা থেকে তিনি এই গানটি
রচনা করেছিলেন।
এটি রাত্রি দ্বিতীয় ও তৃতীয় প্রহরের সন্ধিরাগ।
নজরুল বেহাগের সুরের ভিতর দিয়ে বিরহীর অভিমানী অভিব্যক্তিকে উপস্থাপন করেছেন।
নিঃশব্দ গভীর রাত্রিতে প্রবাসী প্রিয়তমের সঙ্গকামনায় অধীরা নায়িকার মনে হাহাকার উঠে
'কোথা তুমি?'। সমগ্র চরাচর গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন। গভীর সুখনিদ্রায় বিহগের কোলে বিহগী
ঘুমায়, শ্রান্ত আঁচলে ঘুমায় ফুলমালা, আকাশে চাঁদের পাশে তারারাও ঘুমায়। শুধু
বিরহিণী একাকী জেগে থাকে। শিয়রের বাতি একসময় নিভে যায়, কিন্তু নিদ্রাহীনার চোখের
তারায় ঘুম আসে না। তবু কাউকে তা বলতে পারে না সে। বিরহবিধূর মুখ ঢেকে রাখে
অবগুণ্ঠনে। তারপরেও প্রবাসী প্রিয়তমার আশায় দিন কাটে, আর না পাওয়ার বেদনায় রাত্রি
অতিবাহিত হয়।
- রচনাকাল ও স্থান:
গানটির রচনাকাল সম্পর্কে সুনির্দিষ্টভাবে কিছু জানা যায় না।
১৯৪০ খ্রিষ্টাব্দের ২২শে জুন (শনিবার ৮ আষাঢ় ১৩৪৭), সন্ধ্যা
৬.৫৫টায় কলকাতা বেতারকেন্দ্র থেকে যাম-যোজনায় কড়ি মধ্যম
নামক গীতি-আলেখ্য প্রচারিত হয়। এই গীতি-আলেখ্যে গানটি প্রথম প্রচারিত হয়েছিল।
এই সময় নজরুল ইসলামের বয়স ছিল ৪১ বৎসর ১ মাস।
- গ্রন্থ: নজরুল-সঙ্গীত সংগ্রহ (নজরুল ইন্সটিটিউট । ফেব্রুয়ারি ২০১২)। ২৪৭ সংখ্যক গান।
- বেতার:
-
যাম যোজনায় কড়ি মধ্যম।
গীতি-আলেখ্য। কলকাতা বেতার কেন্দ্র। ১৯৪০ খ্রিষ্টাব্দের ২২শে জুন (শনিবার ৮ আষাঢ় ১৩৪৭),
সান্ধ্য অধিবেশন। ৬.৫৫-৭.৪৪।
সূত্র: বেতার জগৎ। ১১শ বর্ষ ১২শ সংখ্যা। ১৬ জুন, ১৯৪০। পৃষ্ঠা:
৬৫০-৬৫১
- একক অনুষ্ঠান। কলকাতা বেতারকেন্দ্র
-ক। শিল্পী শৈলদেবী। [৬ জুন ১৯৪১ (শুক্রবার, ২৩ জ্যৈষ্ঠ ১৩৪৭)] তৃতীয় অধিবেশন।
রাত ৯.০০-১০.১৪। এই গানটি ছিল এই অনুষ্ঠানের প্রথম গান। দ্বিতীয় গানটি ছিল- 'নীল
সাগরের আর্শিতে-জিপসী। এই গানটির
রচয়িতা সম্পর্কে জানা যায় নি।
- সূত্র:
- বেতার জগৎ। ১২শ বর্ষ ১১শ সংখ্যা। পৃষ্ঠা: ৩৬
-
প্রহর
পরিচারিকা।
গীত্ চিত্র। কলকাতা বেতার কেন্দ্র। ১১ অক্টোবর, ১৯৪১ খ্রিষ্টাব্দ (শনিবার ২৫ আশ্বিন। ১৩৪৮)। সময়: রাত ৭.৪৫-৮.২৯
সূত্র: বেতার জগৎ। ১২শ বর্ষ ১৯শ সংখ্যা। ১ অক্টোবর, ১৯৪১। পৃষ্ঠা:
১০৫৮
- রেকর্ড:
হিন্দুস্থান [সেপ্টেম্বর ১৯৪২ (ভাদ্র-আশ্বিন ১৩৪৯)। এইচ ১০০৯। শিল্পী বিজন কুমার বসু। সুর: কাজী নজরুল ইসলাম।]
- স্বরলিপিকার ও স্বরলিপি:
সুধীন দাশ
ও ব্রহ্মমোহন ঠাকুর
[নজরুল-সঙ্গীত
স্বরলিপি, অষ্টম খণ্ড নজরুল ইন্সটিটিউট ১২ ভাদ্র, ১৩৯৯ বঙ্গাব্দ/ ২৭
আগষ্ট, ১৯৯২ খ্রিষ্টাব্দ। ১৪ সংখ্যক গান। পৃষ্ঠা: ৭৩-৭৫]
[নমুনা]
- সুরকার: কাজী নজরুল ইসলাম
- পর্যায়:
- বিষয়াঙ্গ:
প্রকৃতি ও সঙ্গীত
- সুরাঙ্গ:
খেয়ালাঙ্গ
-