বিষয়: নজরুল সঙ্গীত।
শিরোনাম: চন্দ্রমল্লিকা, চন্দ্রমল্লিকা (চাঁদের দেশের)
চন্দ্রমল্লিকা, চন্দ্রমল্লিকা ─
চাঁদের দেশের পথ-ভোলা ফুল চন্দ্রমল্লিকা।
রঙ্-পরীদের সঙ্গিনী তুই অঙ্গে চাঁদের রূপ-শিখা॥
ঊষর ধরায় আস্লি ভুলে তুষার দেশে রঙ্গিনী'
হিমেল দেশের চন্দ্রিকা তুই শীত-শেষের বাসন্তিকা॥
চাঁদের আলো চুরি ক'রে আনলি তুই মুঠি ভ'রে,
দিলাম চন্দ্র-মল্লিকা নাম তাই তোরে আদর ক'রে।
ভঙ্গিমা তোর গরব-ভরা,
রঙ্গিমা তোর হৃদয়-হরা,
ফুলের দলে ফুলরানী তুই ─ তোরেই দিলাম জয়টিকা॥
- ভাবসন্ধান: এটি একটি প্রকৃতির জাগিতিক পর্যয়ের গান। বিষয় ফুল। চন্দ্রমল্লিকা ফুলের রূপে মুগ্ধ কবি, নানা উপমা এবং
রূপকতায়- এর সৌন্দর্যকে এই গানে উপস্থাপন করেছেন। তাঁর কাছে এই ফুলের অপরূপ
সৌন্দর্য অপার্থিব। তাই পৃথিবীর এই ফুলকে চাঁদের দেশের পথ-ভোলা ফুলের উপমায়
উপস্থাপন করেছেন। শুধু তাই নয়, সৌন্দর্যের কল্পলোকে বিভোর কবি মনে করেন- যেন এই
ফুল চন্দ্রলোকের রঙ্-পরিদের সঙ্গিনী, তার অঙ্গশোভায় রয়েছে চন্দ্র-কিরণের
রূপ-জ্যোতি।
চন্দ্রমল্লিকার আদি নিবাস চীন ও জাপানের শীতপ্রধান অঞ্চলে। সাধারণত অক্টোবর মাসে
এই গাছের কুঁড়ি ধরে এবং নভেম্বর মাসে ফুল ফোটে। পুরো শীতকালে এই ফুল ফোটে এবং
শীতের শেষ ও বসন্তের প্রথমার্ধ পর্যন্ত এই ফুল পাওয়া যায়। কবি এই বিষয়টি তাঁর
কাব্যিক সৌন্দর্যের রসে উপস্থাপন করেছেন। কল্পলোকের চাঁদের দেশের ফুল যেন
পৃথিবীতে পথ ভুলে এসেছে। এই পৃথিবী যেন এই ফুলের জন্য অনুর্বর মরুময়। এই ফুল
ঊষর পৃথিবীতে এসেছে শীতপ্রধান অঞ্চল তথা তুষার দেশে। বরফ ঢাকা বর্ণহীন
প্রান্তরকে এই ফুল বর্ণিল করে তোলে। তাই কবির ভাষায় এই ফুল 'তুষার দেশে রঙ্গিনী'।
তিনি এই ফুলকে শীতপ্রধান দেশের চন্দ্রিকার (চাঁদ) সাথে তুলনা করেছেন। বসন্তের
ফুলকে বলা হয় বাসন্তিকা। এই ফুল শীতের শেষে বাসন্তিকা হয়ে শীতের দেশে বসন্তের
আবহ তৈরি করে। তাই এই ফুল 'শীত-শেষের বাসন্তিকা'।
কবি মনে করেন, চন্দ্রলোকের এই ফুল চাঁদের আলো চুরি করে পৃথিবীতে এসেছে। তাই কবি
একে আদর করে সম্বোধন করেছেন চন্দ্রমল্লিকা। এই ফুলে রয়েছে সৌন্দর্যের গৌরবময় এবং
অভিজাত রূপ। আবার বর্ণের বিচারে এই ফুল রঙ্গলীলার রঙ্গিমায় মনোহরা। তাই আভিজাত্য ও
সৌন্দর্যের বিচারে কবি এই ফুলকে 'ফুলরাণী' হিসেবে বরণ করেছেন। সেই সাথে সৌন্দর্যের বিচারে
জয়লাভ করা এই ফুলকে তিনি জয়টীকা পরিয়েছেন।
- রচনাকাল ও স্থান: গানটির রচনাকাল সম্পর্কে
সুনির্দিষ্টভাবে কিছু জানা যায় না। ১৯৩৪ খ্রিষ্টাব্দের এপ্রিল (চৈত্র ১৩৪০-বৈশাখ ১৩৪১) মাসে
এইচএমভি রেকর্ড কোম্পানি থেকে গানটির প্রথম রেকর্ড প্রকাশিত হয়েছিল। এই সময় নজরুলের বয়স
ছিল ৩৪ বৎসর ১১ মাস।
- গ্রন্থ:
- গানের মালা।
- প্রথম সংস্করণ
[আশ্বিন ১৩৪১ বঙ্গাব্দ (সেপ্টেম্বর-অক্টোবর ১৯৩৪ খ্রিষ্টাব্দ)। ৮১।
ভৈরবী-দাদরা।
- নজরুল রচনাবলী ষষ্ঠ খণ্ড [জ্যৈষ্ঠ ১৪১৯, জুন ২০১২। গানের মালা।
৮১।
ভৈরবী-দাদরা। পৃষ্ঠা
২৪১]
- রেকর্ড:
এইচএমভি [এপ্রিল ১৯৩৪ (চৈত্র-১৩৪০-বৈশাখ ১৩৪১)। এন. ৭২২২। শিল্পী:
কে মল্লিক
[শ্রবণ নমুনা]
এর জুড়ি
গান ছিল- ঝরল যে ফুল ফোটার আগে [তথ্য]
- স্বরলিপিকার ও স্বরলিপি:
সুধীন দাশ।
[নজরুল-সঙ্গীত
স্বরলিপি, দ্বাদশ খণ্ড।
প্রথম সংস্করণ। নজরুল ইন্সটিটিউট আশ্বিন ১৪০৪/অক্টোবর ১৯৯৩। ১৫ সংখ্যক গান]
[নমুনা]
- সুরকার:
নজরুল ইসলাম
- পর্যায়:
- বিষয়াঙ্গ: প্রকৃতি (জাগতিক, ফুল)
- সুরাঙ্গ: রাগাশ্রয়ী