বিষয়: নজরুল সঙ্গীত।
শিরোনাম: মেষ চারণে যায় নবী কিশোর রাখাল বেশে
(কিশোর রাখাল বেশে মেষ চারণে যায় নবী)
মেষ
চারণে
যায় নবী কিশোর রাখাল বেশে
নীল রেশমি রুমাল বেঁধে তাঁর চারু-চাঁচর কেশে॥
তাঁর রাঙা পদতলে পুলকে ধরা
টলে
তাঁর রূপ-লাবনির ঢলে মরুভূমি গেল ভেসে॥
তাঁর মুখে রহে চাহি মেষ-শিশু তৃণ ভুলি',
বিশ্বের শাহানশাহ্ আজ মাখে গোঠের ধূলি,
তাঁর চরণ-নখরে কোটি চাঁদ কেঁদে মরে
তাঁর ছায়া ক’রে
চলে আকাশে মেঘ এসে॥
কিশোর নবী গোঠে চলে
তাঁর চরণ-ছোঁয়ায় পথের পাথর মোম্ হয়ে যায় গ'লে।
তস্লিম জানায় পাহাড় চরণে ঝুঁকে তাঁহার।
নারাঙ্গি, আঙুর, খর্জুর্, পায়ে নজ্রানা দেয় হেসে॥
-
ভাবসন্ধান: এই গানটিতে ইসলাম ধর্মের প্রবর্তক হজরত মুহম্মদ (সাঃ)-এর
কিশোর রাখালের
রূপলাবণ্যের মহিমা
উপস্থাপন করা হয়েছে। এই বর্ণনায় পাওয়া যায়- নানা রূপকল্পে লৌকিক-অলৌকিক ভাবনার
মিশ্র রূপদর্শন। তিনি এই গানে নবির জীবনাচারের সাথে প্রষচলিত কিছু কল্পকথাও উল্লেখ
করা হয়েছে।
কিশোর বয়সে নবি মেষচারণ ভূমিতে যখন যেতেন তখন তাঁর অপূর্ব
কুঞ্চিত কেশ রাশিতে থাকতো নীল রেশমি রুমাল। তাঁর রাঙা পদতলের স্পর্শে ধরিত্রী
পুলকিত হতো, আর রূপলাবণ্যের প্রবাহে মরুভূমি যেনো প্লাবিত হতো। সে লাবণ্য দর্শনে
মুগ্ধ মেষ-শিশু যেন
ঘাস খেতে ভুলে যেতো। ইসলামি-বিশ্ব প্রতিষ্ঠা এবং শাসক হিসেবে যিনি শাহানশাহ
হয়েছিলেন- কৈশোরে তাঁর অঙ্গ মেষচারণ ভূমির ধূলিতে মলিন হয়েছে। তাঁর চরণে
নখরের রূপবর্ণনার রূপকল্পে কবি বলছেন- যেন '
চরণ-নখরে কোটি চাঁদ কেঁদে মরে'। কথিত আছে নবি রৌদ্রের ভিতর দিয়ে পথ চললে, তাঁর
মাথার উপর ছায়া দানকারী মেঘ সাথে সাথে চলতো। এই গানে তারই উল্লেখ করা হয়েছে।
কবি তাঁর কল্পভাবনার আতিশয্যে উল্লেখ করেছেন- মেষচারণে চলার পথে ' পথের পাথর মোম্ হয়ে যায় গ'লে'।
শ্রদ্ধায় অবনত হয় পাহাড়, আর নারাঙ্গি, আঙুর, খর্জুর্ বৃক্ষ ও লতারা তাঁর পায়ে
তাঁদের ফল শ্রদ্ধার্ঘ হিসেবে নিবেদন করে।
রচনাকাল ও স্থান: গানটির
রচনাকাল সম্পর্কে সুনির্দিষ্টভাবে কিছু জানা যায় না। ১৯৩৪ খ্রিষ্টাব্দের মার্চ
(ফাল্গুন-চৈত্র ১৩৪০) মাসে,
এইচএমভি
রেকর্ড কোম্পানি থেকে এই গানটির একটি রেকর্ড প্রকাশিত হয়েছিল।
এই সময়
নজরুল ইসলামের
বয়স ছিল ৩৪ বৎসর ৯ মাস।
গ্রন্থ:
- অগ্রন্থিত গান। নজরুল-রচনাবলী─দশম খণ্ড [নজরুল জন্মশতবর্ষ সংস্করণ। বাংলা একাডেমী, জ্যৈষ্ঠ ১৪১৬। মে ২০০৯। ৫২ সংখ্যক গান। পৃষ্ঠা
২২০-২২১]
- নজরুল গীতি, অখণ্ড
- প্রথম সংস্করণ [আব্দুল আজীজ আল-আমান সম্পাদিত। হরফ প্রকাশনী। ৬ আশ্বিন ১৩৮৫। ২৩ সেপ্টেম্বর
১৯৭৮]
- দ্বিতীয় সংস্করণ [আব্দুল আজীজ আল-আমান সম্পাদিত। হরফ প্রকাশনী। ১ শ্রাবণ ১৩৮৮। ১৭ জুলাই
১৯৮১]
- তৃতীয় সংস্করণ [ব্রহ্মমোহন ঠাকুর সম্পাদিত। হরফ প্রকাশনী। ৮ মাঘ ১৪১০। ২৩ জানুয়ারি ২০০৪। ইসলামী গান। ১০৪৯ সংখ্যক গান। পৃষ্ঠা
২৬৫]
- পরিবর্ধিত সংস্করণ [আব্দুল আজীজ আল-আমান সম্পাদিত। হরফ প্রকাশনী। বৈশাখ শ্রাবণ ১৪১৩। এপ্রিল-মে ২০০৬] ভৈরবী-গজল। ১০৮৭ সংখ্যাক গান। পৃষ্ঠা:
২০৫-২০৬।
- নজরুল-সংগীত সংগ্রহ [রশিদুন্ নবী সম্পাদিত। কবি নজরুল ইন্সটিটিউট। তৃতীয় সংস্করণ দ্বিতীয় মুদ্রণ, আষাঢ় ১৪২৫। জুন ২০১৮। গান ৩৬। পৃষ্ঠা
১২]
-
নজরুল-সঙ্গীত স্বরলিপি,
দ্বিতীয় খণ্ড। স্বরলিপিকার:
সুধীন দাশ।
প্রথম প্রকাশ, দ্বিতীয় মুদ্রণ [কবি নজরুল ইন্সটিটিউট। পৌষ ১৪০২। ডিসেম্বর ১৯৯৫। ১১ সংখ্যক গান। পৃষ্ঠা ৬৩-৬৮]
- নজরুল সঙ্গীত সম্ভার। বাংলা একাডেমী, ঢাকা। বৈশাখ ১৩৮৯/এপ্রিল ১৯৮২। পাণ্ডুলিপি-৪২। ইসলামী ধর্ম্মসঙ্গীত।
রেকর্ড:
-
এইচএমভি [মার্চ ১৯৩৪
(ফাল্গুন-চৈত্র ১৩৪০) এন ৭২০২। শিল্পী: গণি মিঞা
(ধীরেন্দ্রনাথ দাস)।
এর জুড়ি গান -
- তোমার বাণীরে করি নি গ্রহণ [তথ্য]
- পায়োনিয়র। [মে ১৯৩৯ বৈশাখ-জ্যৈষ্ঠ ১৩৪৬) এন.কিউ ১০৩। শিল্পী: দিলওয়ার হোসেন (চিত্ত রায়)
স্বরলিপি ও স্বরলিপিকার:
সুধীন দাশ।
নজরুল-সঙ্গীত স্বরলিপি,
দ্বিতীয় খণ্ড। দ্বিতীয়
মুদ্রণ হয়, পৌষ, ১৪০২ বঙ্গাব্দ/ ডিসেম্বর, ১৯৯৫ খ্রিষ্টাব্দে। একাদশ গান]
[নমুনা]
পর্যায়:
- বিষয়াঙ্গ: ধর্মসঙ্গীত।ইসলামী গান। নাত-এ রসুল
- সুরাঙ্গ: কাওয়ালি-অঙ্গ
- রাগ: রাগের উল্লেখ নেই।
- তাল:
দাদরা।
- গ্রহস্বর: সরা।