আমার গানের মালা আমি করব কারে দান
মালার ফুলে জড়িয়ে আছে করুণ অভিমান
মালা করব কারে দান॥
চোখে মলিন কাজল লেখা
কণ্ঠে কাঁদে কুহু কেকা,
কপোলে যার অশ্রু-রেখা একা যাহার প্রাণ
মালা করব কারে দান॥
কথায় আমার কাঁটার বেদন মালায় সূচির জ্বালা,
কণ্ঠে দিতে সাহস না পাই অভিশাপের মালা (ঐ)।
বিরহে যার প্রেম-আরতি
আঁধার লোকের অরুন্ধতী
নাম না জানা সেই তপতী তারি তরে গান
মালা করব কারে দান॥
ভাবসন্ধান: বাসন্তিকা রেকর্ড নাটিকার এই গানটি 
	ফাল্গুনীর গান। ফাল্গুন মাসের চরিত্র হিসেবে নাটিকাতে ফাল্গুনী নামটি ব্যবহার 
	করা হয়েছে। ঋতুরাজ বসন্ত আসবে বলে বসন্ত রানী বাসন্তিকা মিলনের প্রতীক্ষায় রয়েছে। 
	ফাল্গুনী বাসন্তিকার তরুণী রূপ। অন্য দিকে চৈতালী তার পরিণত রূপ। বসন্তের আগমনে 
	বাসন্তিকা ফাল্গুনী রূপে পায় চাঞ্চল্য আর চৈতালী রূপ পায় স্নিগ্ধ প্রগাঢ় প্রণয় 
	রূপ।
	  
	
	এটি 	রূপকতার আশ্রয়ে রচিত জীবন-দর্শনের গান। যার ভিত্তি হলো বসন্ত তথা যৌবন। মূলত 
	বাস্তব জীবনে সংসারের ঘাত-প্রতিঘাতে মানুষ তার মানস-যৌবন-দেবতা বসন্তকে ভুলে 
	থাকে। এর ভিতরে জন্ম নেয় কণ্ঠকময় মনজ্বালা। তাই তার প্রেমমালা হয়ে ওঠে 
	বেদনাবিধূর। এই মালা কথা ও সুরে গাঁথা। এর কথাগুলো ফুল এবং সুর তার সুতা। এই 
	মালা কাউকে না-দেয়ার অক্ষমতায় মনে জমে ওঠে করুণ অভিমান। অভিমানীর চোখের কাজল 
	মলিন হয়ে যায়। মনে করে তার মিলনাকাঙ্ক্ষার বাসনা ব্যর্থ হয়ে গেছে। 
	
	নব যৌবন রাগে চঞ্চল ফাল্গুনী উতলা। সংসারের ঘাত-প্রতিঘাতে তার মনে জমে উঠেছে 
	করুণ অভিমান। তাই 
	তার সে বেদনাই যেন বসন্তের কোকিল ও কেকার কণ্ঠের সুর প্রকৃতিকে বেদনবিধুর করে তোলে। এই অস্থিরতার মধ্যে 
	হয়তো সে এমন কোনো সঙ্গহীনের 
	সন্ধান করে। যে সঙ্গকামনায় যে অধীর, যার প্রেমহীন কপোল অশ্রুসিক্ত, ফাল্গুনী তাকেই 
	এই মালা দিতে চায়। তেমন কাউকে পায় না বলেই উতলা ফাল্গুনীর গাঁথামালা 
	অভিশাপ মনে হয়। কারণ সে মনে করে তার কথার ফুলে গাথা ফুলগুলিতে মিশে আছে 
	প্রেমকণ্ঠকের বেদনা, আর কথার মালায় রচিত প্রেমমালায় রয়েছে সূঁচ বিদ্ধের জ্বালা। 
	তাই এই মালা সে কণ্ঠে ধারণ করতে ভয় পায়। 
	
	এই গানের মালা অজানিত সূর্যকন্যার জন্যই। ফাল্গুনীর মতই বিরহই যার মনে প্রেমারতি 
	হয়ে ওঠবে, প্রেমের অন্ধকারে তার শাশ্বত প্রেম হয়ে উঠবে বাসরের পূর্বলগ্নে  
	নববধূকে দেখানো অরুন্ধতীর মতো। তার এই গানের মালা তাকেই দান করবে। মূলত এই 
	গানের উপসংহারে এমন শাশ্বত বসন্তরাজকে খুঁজে পেতে চেয়েছে ফাল্গুনী, যার কাছে 
	সে জীবন-সমর্পণ করতে পারে শাশ্বত বিশ্বাসে।