• গীতবিতান (বিশ্বভারতী, কার্তিক ১৪১২)-এর পাঠ: প্রকৃতিৱ' : ৩১

শাঙনগগনে ঘোর ঘনঘটা, নিশীথযামিনী রে।
কুঞ্জপথে, সখি, কৈস যাওব অবলা কামিনী রে।
উন্মদ পবনে যমুনা তর্জিত, ঘন ঘন গর্জিত মেহ।
দমকত বিদ্যুত, পথতরু লুণ্ঠত, থরথর কম্পিত দেহ।
ঘন ঘন রিম্‌ঝিম্ রিম্‌ঝিম্ রিম্‌ঝিম্ বরখত নীরদপুঞ্জ।
শাল-পিয়ালে তাল-তমালে নিবিড়তিমিরময় কুঞ্জ।
কহ রে সজনী, এ দুরুযোগে কুঞ্জে নিরদয় কান
দারুণ বাঁশি কাহ বজায়ত সকরুণ রাধা নাম।
মোতিম হারে বেশ বনা দে, সীঁথি লগা দে ভালে।
উরহি বিলুণ্ঠিত শিথিল চিকুর মম বাঁধহ চম্পকমাল।
গহন রয়নমে ন যাও, বালা, নওলকিশোরক পাশ।
গরজে ঘন ঘন, বহু ডর পাওব, কহে ভানু তব দাস॥

• পাণ্ডুলিপির পাঠ: পাওয়া যায়নি।
   
• পাঠভেদ: ভারতী (আশ্বিন ১২৮৪)-তে প্রকাশিত স্বরবিতান একাদশ [আশ্বিন ১৪১৬ ] এবং স্বরবিতান একবিংশ [মাঘ ১৪১৫] খণ্ডে গৃহীত গানটির মধ্যে পাঠভেদ লক্ষ্য করা যায়।
   
• সরলার্থ: শ্রাবণের আকাশ জুড়ে ঘন মেঘের আড়ম্বড়, গভীর রাত্রি। বনপথে সখি অবলা (বলহীনা) নারী কোথায় যাব। উন্মত্ত বাতাসে যমুনা গর্জন করছে, ঘনঘন মেঘ ডাকছে। তীব্র বিদ্যুতে ঝলকানি, ঝড়ে পথপাশের গাছ লুটিয়ে পড়েছে। (এ অবস্থায় ভয়ে) আমার  দেহ কাঁপছে। আকাশের মেঘরাশি থেকে শাল-পিয়াল, তাল-তমালের নিবিড় বনে অবিরত বৃষ্টি ঝরে পড়ছে। বল সখি, এমন দুর্যোগপূর্ণ বনে নির্দয় কৃষ্ণ কোথায় রাধার স্মরণ করে তার নিষ্ঠুর বাঁশি বাজাচ্ছে। সখি (এখন) মোতির হার পরিয়ে, সিঁথি রাঙিয়ে দে। বক্ষোপরি বিলুণ্ঠিত কেশরাশিকে চম্পকমালা দিয়ে বেঁধে দে। তোমার দাস ভানু বলছে, হে বালিকা এমন গভীর রাত্রিতে ওই তরুণের কাছে যেয়ো না। গর্জনরত এই রাত্রিতে তুমি সীমাহীন ভয় পাবে।
  
  
• তথ্যানুসন্ধান
  • ক. রচনাকাল ও স্থান:  গানটির রচনাকাল সম্পর্কে সুনির্দিষ্টভাবে জানা যায় না। ১২৮৪ বঙ্গাব্দে ভানুসিংহ ঠাকুরের পদাবলীর পদগুলো রচনার সময় এই গানটি গান রচিত হয়েছিল। রবীন্দ্রনাথের 'জীবনস্মৃতি' গ্রন্থে ভানুসিংহ ঠাকুরের পদাবলীর যে কালানুক্রম পাওয়া যায়, তাতে গহন কুসুমকুঞ্জ-মাঝে' গানটিকে 'শাঙনগগনে ঘোর ঘনঘটা' গানের আগে স্থান দেওয়া হয়েছে। এই সময় রবীন্দ্রনাথের বয়স ছিল  ১৬ বৎসর।
    
    
  • খ. প্রকাশ ও গ্রন্থভুক্তি:
    • গ্রন্থ:
      • কাব্যগ্রন্থ
        • প্রথম খণ্ড [ইন্ডিয়ান প্রেস ১৩২২] ভানুসিংহ ঠাকুরের পদাবলী -১৩। পৃষ্ঠা: ৩৪৮-৩৫০ [নমুনা: প্রথমাংশ, শেষাংশ]
        • অষ্টম খণ্ড [মজুমদার লাইব্রেরি, ১৩১০ বঙ্গাব্দ। মল্লার। পৃষ্ঠা: ১১৪-১১৫ [নমুনা: প্রথমাংশ, শেষাংশ]
      • কাব্যগ্রন্থাবলী[আদি ব্রাহ্মসমাজ প্রেস, ১৩০৩। কৈশোরক। ভানুসিংহ ঠাকুরের পদাবলী। শিরোনাম ' অভিসার'। পৃষ্ঠা: ২৩-২৪] [নমুনা প্রথমাংশ, শেষাংশ
      • কেতকী (শ্রাবণ ১৩২৬ বঙ্গাব্দ) ।
      • গান
        • প্রথম সংস্করণ [সিটি বুক সোসাইটি, ১৩১৫ বঙ্গাব্দ। গান। মল্লার। পূজা: ১০২-১০৩। [নমুনা: প্রথমাংশ, শেষাংশ]
        • ইন্ডিয়ান প্রেস, ১৩১৬
      • গীতবিতান
        • প্রথম খণ্ড, প্রথম সংস্করণ [বিশ্বভারতী, আশ্বিন ১৩৩৮ বঙ্গাব্দ। ১৩১০ বঙ্গাব্দে প্রকাশিত 'মোহিত সেন সম্পাদিত কাব্যগ্রন্থের ৮ম ভাগের 'গান' অংশ থেকে গৃহীত হয়েছিল। পৃষ্ঠা: ২৪২-২৪৩] [নমুনা: প্রথমাংশ, দ্বিতীয়াংশ]
        • দ্বিতীয় খণ্ড (বিশ্বভারতী ১৩৪৮)।
        • অখণ্ড সংস্করণ, তৃতীয় সংস্করণ (বিশ্বভারতী, চৈত্র ১৪১৩), পর্যায়: প্রকৃতি ৩১। উপবিভাগ:   বর্ষা-৬, পৃষ্ঠা: । [নমুনা ]
      • ভানুসিংহ ঠাকুরের পদাবলী
        • প্রকাশক রবীন্দ্রনাথ, আদি ব্রাহ্মসমাজ যন্ত্র, ১২৯১ বঙ্গাব্দ। মল্লার। ১৩ সংখ্যক গান। পৃষ্ঠা: ৩১-৩২।
        • রবীন্দ্ররচনাবলী দ্বিতীয় খণ্ড। বিশ্বভারতী (শ্রাবণ ১৩৯১)। ১২ সংখ্যক পদ। পৃষ্ঠা ১৮-১৯ ।]
      • স্বরবিতান একাদশ (১১) খণ্ডের ২৭ সংখ্যক গান। পৃষ্ঠা : ৮১-৮৩। [নমুনা]
      • স্বরবিতান একবিংশ খণ্ডের (২১, ভানুসিংহের পদাবলী, মুদ্রণ : মাঘ ১৪১৫) ৭ম গান। পৃষ্ঠা : ২৬-২৮। [নমুনা]
    • পত্রিকা:
      • ভারতী (আশ্বিন ১২৮৪)। শিরোনাম : ভানুসিংহের কবিতা। রাগ- মল্লার। পৃষ্ঠা : ১৩৫।
            ভারতী (মূল পত্রিকা)। [ সংখ্যা পরিচিতি]
    • রেকর্ডসূত্র:
    • প্রকাশের কালানুক্রম: ভারতী পত্রিকার 'আশ্বিন ১২৮৪ বঙ্গাব্দ' সংখ্যায় গানটি প্রকাশিত হয়েছিল। গানটি রবীন্দ্রনাথের ১৬ বৎসর ৫ মাস বয়সে প্রকাশিত হয়েছিল।
      
  • গ. সঙ্গীতবিষয়ক তথ্যাবলি :
    • স্বরলিপি: [স্বরলিপি]
    • স্বরলিপিকার: দিনেন্দ্রনাথ ঠাকুর।
    • সুর ও তাল:
      • এই গানসহ ভানুসিংহ ঠাকুরের পদাবলীর গানগুলির উচ্চারণের বিষয়ে- রবীন্দ্রনাথের যেরূপ নির্দেশনা পাওয়া যায়, তা  গানটি ভারতী পত্রিকায় প্রকাশের সময়- এই কবিতার পাদটীকায় মুদ্রিত হয়েছিল। এই পাদটীকায় লিখিত হয়েছিল-

        'এই ব্রজ-গাথাগুলি হিন্দুস্থানী উচ্চারণে ও দীর্ঘ হ্রস্ব রক্ষা করিয়া সংস্কৃত ছন্দের নিয়মানুসারে না পড়িলে শ্রুতি-মধু হয় না-প্রত্যুত হাস্যজনক হইয়া পড়ে।'

        উল্লেখ্য, এই সূত্রানুসারে 'ভানুসিংহ ঠাকুরের পদাবলীর গানগুলি হিন্দুস্থানী উচ্চারণে গীত হয়ে থাকে।
      • স্বরবিতান একাদশ [আশ্বিন ১৪১৬ ] এবং স্বরবিতান একবিংশ [মাঘ ১৪১৫] খণ্ডে গৃহীত গানটির স্বরলিপিতে রাগ-তালের উল্লেখ নেই। উক্ত স্বরলিপিটি ৩। ৩।৩।৩ মাত্রা ছন্দে 'একতাল ' তালে নিবদ্ধ।
      • রাগ : কাফি কানাড়া। "সীঁথি লগা দে ভালে" হইতে "চম্পকমালে" পর্যন্ত কানাড়া এবং বাকি অংশ কাফিতে আছে। [রবীন্দ্রসঙ্গীতে রাগ-নির্ণয়। ভি.ভি. ওয়াঝলওয়ার। রবীন্দ্রনাথের প্রেমের গান ।সংগীত-শিক্ষায়তন। বৈশাখ ১৩৯০। পৃষ্ঠা : ৮১]
      • রাগ: পিল্লু-মল্লার। তাল: ত্রিতাল। [রবীন্দ্রসংগীত: রাগ-সুর নির্দেশিকা, সুধীর চন্দ, প্যাপিরাস, ডিসেম্বর ২০০৬], পৃষ্ঠা: ৭৮।
      • রাগ: সিন্ধু। তাল: ত্রিতাল। [রাগরাগিণীর এলাকায় রবীন্দ্রসংগীত, প্রফুল্লকুমার চক্রবর্তী, পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সংগীত আকাদেমি, জুলাই ২০০১], পৃষ্ঠা: ১৩৫।
    • গ্রহস্বর: রা।
    • লয়: