বিষয়:
রবীন্দ্রসঙ্গীত।
গান সংখ্যা:
শিরোনাম:
গানের
সুরের আসন-খানি পাতি পথের ধারে।
পাঠ ও পাঠভেদ:
গানের সুরের আসন-খানি পাতি পথের ধারে।
ওগো পথিক, তুমি এসে বসবে বারে বারে॥
ঐ যে তোমার ভোরের পাখি নিত্য করে ডাকাডাকি,
অরুণ-আলোর খেয়ায় যখন এস ঘাটের পারে,
মোর প্রভাতীর গানখানিতে দাঁড়াও আমার দ্বারে॥
আজ সকালে মেঘের ছায়া লুটিয়ে পড়ে বনে,
জল ভরেছে ঐ গগনের নীল নয়নের কোণে।
আজকে এলে নতুন বেশে তালের বনে মাঠের শেষে,
অমনি চলে যেয়ো নাকো গোপনসঞ্চারে।
দাঁড়িয়ো আমার মেঘলা গানের বাদল-অন্ধকারে॥
পাণ্ডুলিপির পাঠ: RBVBMS 111 [নমুনা]
ভাবসন্ধান:
উপস্থিত গানে মানবযাত্রীর মতো স্রষ্টাকেও ‘পথিক’ বলে কল্পনা করা হয়েছে। কবি
পথের ধারে আসন পেতে যাত্রী ঈশ্বরের অপেক্ষায় গান গাইতে থাকেন। লক্ষ করেন,
ভোরের পাখির ডাকাডাকিতে রাঙা সূর্যালোকের খেয়া বেয়ে ‘তিনি’ মানুষের ঘাটে
এসে পৌঁছন। আর, সকালবেলার গানটি শুনবেন বলে এসে দাঁড়ান ভক্তের দুয়ারে।
সঞ্চারীতে খবর পাওয়া যায়, ঈশ্বরের আবির্ভাবের সেই বিশেষ সকালটির পরিবেশ
স্বতন্ত্র। সেই দিন তালবনের প্রান্তে মেঘের ছায়া লুটিয়ে পড়েছে, নীলাকাশের
চোখের কোল উঠেছে জলে ভরে। এই নতুন রূপসজ্জা নিয়ে ‘তিনি’-ও যেন মেঘের মতন
গোপন সঞ্চারে চলে না যান। সেই মেঘলাদিনের ছায়াঘন সঙ্গীত শুনবার জন্য
‘তাঁকে’ অপেক্ষা করবার অনুরোধ জানাচ্ছেন কবি।
তথ্যানুসন্ধান
ক. রচনাকাল ও স্থান:
MS. NO 111
পাণ্ডুলিপিতে এই গানের তারিখ পাওয়া যায়, '২৮ চৈত্র'। উল্লেখ্য,
প্রশান্তকুমার পালের রবিজীবনী সপ্তম খণ্ড (আনন্দ পাবলিশার্স, ২০০৭। পৃষ্ঠা:
১৫১) থেকে জানা যায়,
১৩২২ বঙ্গাব্দের ২১শে চৈত্র থেকে ৩১শে চৈত্র পর্যন্ত
রবীন্দ্রনাথ শান্তনিকেতনে ছিলেন।
এই সময়ের ভিতরে ২৮ শে চৈত্র এই গানটি রচনা করেছিলেন। এই
সূত্রে বলা যায়, এই গানটি শান্তিনিকেতনে রচিত। এই সময়
রবীন্দ্রনাথের
বয়স ছিল ৫৪ বৎসর ১২ মাস।
[রবীন্দ্রনাথের
৫৪ বৎসর অতিক্রান্ত বয়সে রচিত গানের তালিকা]
খ. প্রকাশ ও গ্রন্থভুক্তি:
গ্রন্থ:
কেতকী (শ্রাবণ ১৩৩৫ বঙ্গাব্দ)। দিনেন্দ্রনাথ ঠাকুরকৃত স্বরলিপিসহ মুদ্রিত হয়েছিল।
গীতপঞ্চাশিকা (আশ্বিন ১৩২৫ বঙ্গাব্দ)।
স্বরবিতান
স্বরবিতান একাদশ (১১, কেতকী, খণ্ডের (আশ্বিন ১৪১৬)) খণ্ডের ৩১ সংখ্যক গান। পৃষ্ঠা ৯১-৯৩। [নমুনা]
স্বরবিতান ষোড়শ
(১৬,
গীতপঞ্চাশিকা।
আশ্বিন
১৪১৩)
খণ্ডের ৪
সংখ্যক গান।
পৃষ্ঠা ১৮-২০।
[নমুনা]
পত্রিকা:
আনন্দসঙ্গীত পত্রিকা
(ভাদ্র ১৩২৫ বঙ্গাব্দ)।
ইন্দিরাদেবীকৃত স্বরলিপিসহ মুদ্রিত হয়েছিল।
[আনন্দসঙ্গীত
পত্রিকায় প্রকাশিত রবীন্দ্রসঙ্গীতের তালিকা]
রেকর্ডসূত্র: ১৯২৬ খ্রিষ্টাব্দ থেকে ১৯৩৫ খ্রিষ্টাব্দের ভিতরে এইচএমভি এই গানটির দুইটি রেকর্ড প্রকাশ করে। সিদ্ধার্থ ঘোষের রচিত 'রেকর্ডে রবীন্দ্রসংগীত' গ্রন্থের (সংগীত-শিক্ষায়তন, কলিকাতা, নভেম্বর ১৯৮৯) ৫০ ও ৬৬ পৃষ্ঠায় এই রেকর্ড দুটি সম্পর্কে যে তথ্য পাওয়া যায়, তা হলো-
শিল্পী: কণক দাশ। রেকর্ড নম্বর P 11783। পৃষ্ঠা: ৫০
শিল্পী: রবীন্দ্রনাথ
ঠাকুর। রেকর্ড নম্বর
BD 1239।
পৃষ্ঠা: ৬৬
গ. সঙ্গীত বিষয়ক তথ্যাবলি:
স্বরলিপিকার: স্বরবিতান ষোড়শ (১৬, গীতপঞ্চাশিকা। আশ্বিন ১৪১৩) খণ্ডের ১৮৯ পৃষ্ঠা থেকে জানা যায় গানটির স্বরলিপিকার দিনেন্দ্রনাথ ঠাকুর। ওই একই গ্রন্থের ১৯৬ পৃষ্ঠায় স্বরলিপিকারের নাম ইন্দিরাদেবীর উল্লেখ আছে। আবার স্বরবিতান একাদশ (১১, কেতকী, খণ্ডের (আশ্বিন ১৪১৬) খণ্ডের ১০৮ পৃষ্ঠায় স্বরলিপিকারের নাম দিনেন্দ্রনাথ ঠাকুর উল্লেখ আছে। ওই একই গ্রন্থের ১০২ পৃষ্ঠায় দিনেনন্দ্রনাথ ঠাকুর-কৃত স্বরলিপির অংশবিশেষ সুরভেদ হিসাবে দেখানো হয়েছে। ফলে সব মিলিয়ে স্বরলিপিকার নিয়ে একটি বিভ্রান্তিকর অবস্থার সৃষ্টি করে। উল্লেখ্য স্বরবিতান-এর উভয় খণ্ডে গৃহীত স্বরলিপি একই। স্বরবিতানের উভয় খণ্ড অনুসারে গানটির যে দুইজন স্বরলিপিকারের পাওয়া যায়, তাঁরা হলেন—
স্বরবিতান
একাদশ
(১১,
কেতকী,
খণ্ডের (আশ্বিন ১৪১৬) ও
স্বরবিতান ষোড়শ
(১৬,
গীতপঞ্চাশিকা।
আশ্বিন
১৪১৩)
খণ্ডে
গৃহীত স্বরলিপিতে রাগ-তালের উল্লেখ নেই।
উক্ত স্বরলিপিটি
৪।৪
মাত্রা
ছন্দে
'কাহারবা'
তালে
নিবদ্ধ।
তাল: কাহারবা [রবীন্দ্রসংগীতের ক্রমবিকাশ ও বিবর্তন। ডঃ দেবজ্যোতি দত্ত মজুমদার। (সাহিত্যলোক, ডিসেম্বর ১৯৮৭।)