বিষয়:
রবীন্দ্রসঙ্গীত।
গান সংখ্যা :
শিরোনাম:
তোমার নয়ন আমায় বারে বারে বলেছে গান গাহিবার
পাঠ ও
পাঠভেদ:
তোমার নয়ন আমায় বারে বারে বলেছে গান গাহিবারে॥
ফুলে ফুলে তারায় তারায়
বলেছে সে কোন্ ইশারায়
দিবস-রাতির মাঝ-কিনারায় ধূসর আলোয় অন্ধকারে।
গাই নে কেন কী কব তা,
কেন আমার আকুলতা—
ব্যথার মাঝে লুকায় কথা, সুর যে হারাই অকূল পারে॥
যেতে যেতে গভীর স্রোতে ডাক দিয়েছ তরী হতে।
ডাক দিয়েছ ঝড়-তুফানে
বোবা মেঘের বজ্রগানে,
ডাক দিয়েছ মরণপানে, শ্রাবণরাতের উতল ধারে।
যাই নে কেন জান না কি—
তোমার পানে মেলে আঁখি
কূলের ঘাটে বসে থাকি, পথ কোথা পাই পারাবারে॥
কুলের ঘাটে বসে থাকি
:গীতবিতান (কার্তিক ১৪১২, বিশ্বভারতী)
কূলের ঘাটে বসে থাকি :স্বরবিতান ত্রয়শ্চত্বারিংশ
(৪৩
এছাড়া
প্রবাসী
পত্রিকায় (কার্তিক ১৩২২ বঙ্গাব্দ)
প্রকাশিত পাঠের শিরোনাম ছিল
'ডাক'। প্রবাসীর পাঠের সাথে
গীতবিতান অখণ্ড সংস্করণের
(১৩৮০ বঙ্গাব্দ) পাঠের বানান, যতিচিহ্ন ও পংক্তিবিন্যাসে কিছু পার্থক্য আছে।
নিচে প্রবাসীতে প্রকাশিত পাঠটি তুলে ধরা হলো।
তোমার নয়ন আমায় বারে বারে
বলেছে গান গাহিবারে।
ফুলে ফুলে তারায় তারায়
বলেছে সে কোন্ ইসারায়
দিবস-রাতির মাঝ-কিনারায়
ধূসোর আলোর অন্ধকারে।
গাইনে কেন কি কব তা;
কেন আমার আকুলতা!
ব্যথার মাঝে লুকায় কথা,
সুর যে হারায় অকূল পারে॥
তুমি
যেতে যেতে গভীর স্রোতে
ডাক দিয়েছ তরী হতে।
ডাক দিয়েছ ঝড়-তুফানে
বোবা মেঘের বজ্রগানে,
ডাক দিয়েছ মরণপানে
শ্রাবণ রাতের উতল ধারে।
যাইনে কেন জান না কি?
তোমার পানে তুলে আঁখি
কূলের ঘাটে বসে থাকি
পথ কোথা পাই পারাবারে॥
ভাবসন্ধান:
কখনো ঊষা কখনো-বা সায়ংকালীন
প্রকৃতির সৌন্দর্য নানা ভাবে কবিকে গান গাইবার জন্যে ইশারা করে।
নিসর্গ-সৌন্দর্য স্রষ্টার দৃষ্টির ইঙ্গিত হয়ে কবিকে ওই বার্তা পৌঁছে দেয়।
কিন্তু, গাইবার ব্যাকুল আগ্রহের বেদনায় কথা আর সুর যায় হারিয়ে।
স্রষ্টা যেন অথই জলের যাত্রী। তিনি তাঁর তরণী থেকে কবিকে ডাক পাঠিয়েছেন। সে-ডাক
কবি শুনেছেন ঝড় আর বজ্রপাতের ধ্বনিতে। ডাক এসেছে শ্রাবণরাত্রির বর্ষণধারে,
এসেছে মৃত্যুর আহ্বান হয়ে। কিন্তু, যাওয়া হয় না, কারণ পাথার পেরিয়ে তাঁর কাছে
পৌঁছবার পথ যে জানা নেই! তাই ঘাটে বসে, দৃষ্টিতেই সমস্ত অন্তরকে মেলে দিয়ে কবি
‘তাঁর’ পানে চেয়ে থাকেন। আসলে, এই চেয়ে-থাকাই বোধ করি ‘তাঁর’ উদ্দেশে চলা।
স্রষ্টার উদ্দেশে চলবার দরুন ভালোলাগার বোধ সুরের অনতিউচ্চ স্নিগ্ধতায় গানটিতে
জড়িয়ে রয়েছে।
তথ্যানুসন্ধান
ক. রচনাকাল ও স্থান: পাণ্ডুলিপিতে
গানটির নিচে গানটি রচনার তারিখ উল্লেখ আছে, 'আশ্বিন/শান্তিনিকেতন/১৩২২'।
উল্লেখ্য ১৩২২ বঙ্গাব্দের ৭
আশ্বিন, রবীন্দ্রনাথ
শান্তিনিকেতন থেকে কলকাতায় গমন করেন। ৭ আশ্বিন থেকে ২৪ আশ্বিন [শুক্রবার ১ অক্টোবর]
পর্যন্ত তিনি কলকাতায় ছিলেন। ২৪ আশ্বিন তিনি কাশ্মীরের উদ্দেশ্যে যাত্রা করেন।
৭ আশ্বিনের
পরে শান্তিনিকেতন ত্যাগ করেন এবং এই মাসে শান্তিনিকেতনে ফিরে আসেন নি। তাই ধরে
নেওয়া যায়, রবীন্দ্রনাথ ১-৬ আশ্বিনের
ভিতর গানটি রচনা করেছিলেন। এই সময়ে রবীন্দ্রনাথের বয়স ছিল
৫৪ বৎসর ৫ মাস বয়স।
কাব্যগ্রন্থ,
দশম খণ্ডের
[ইন্ডিয়ান
প্রেস, ১৩২৩ বঙ্গাব্দ, ১৯১৬
খ্রিষ্টাব্দ] ধর্ম্ম সঙ্গীত অংশে গৃহীত গানের [পৃষ্ঠা: ৩১৯] নিচে রচনাকাল উল্লেখ আছে
'কার্ত্তিক ১৩২২'। সম্ভবত
কাব্যগ্রন্থ
-এ প্রদেয় রচনাকালটি মুদ্রণবিভ্রাট।
খ. প্রকাশ ও গ্রন্থভুক্তি:
গ্রন্থ
কাব্যগ্রন্থ, দশম খণ্ড [ইন্ডিয়ান প্রেস, ১৩২৩ বঙ্গাব্দ, ১৯১৬ খ্রিষ্টাব্দ]। ধর্ম্ম সঙ্গীত, পৃষ্ঠা: ৩১৯ [নমুনা]
দ্বিতীয় খণ্ড, প্রথম সংস্করণ (বিশ্বভারতী, আশ্বিন ১৩৩৮)। পৃষ্ঠা: ৫৩৮-৫৩৯। [নমুনা: প্রথমাংশ, দ্বিতীয়াংশ]
প্রথম খণ্ড, দ্বিতীয় সংস্করণ (মাঘ ১৩৪৮)। পর্যায়: পূজা ৮, উপবিভাগ: গান ৮। পৃষ্ঠা: ৪-৫ [নমুনা: প্রথমাংশ, দ্বিতীয়াংশ]
অখণ্ড সংস্করণ, তৃতীয় সংস্করণ (বিশ্বভারতী ১৩৮০)। পর্যায়: পূজা ৮, উপবিভাগ: গান ৮। পৃষ্ঠা ৮ [নমুনা]
গীতলেখা প্রথম ভাগ (বৈশাখ ১৩২৪ বঙ্গাব্দ)। দিনেন্দ্রনাথ ঠাকুর-কৃত স্বরলিপি-সহ মুদ্রিত হয়েছিল।
প্রবাহিনী (বিশ্বভারতী ১৩৩২ বঙ্গাব্দ)। গীতগান ৫ । পৃষ্ঠা: ৬-৭। [নমুনা প্রথমাংশ, শেষাংশ]
স্বরবিতান ত্রয়শ্চত্বারিংশ (৪৩ ) খণ্ডের (বিশ্বভারতী, মাঘ ১৪১২) ১৪ সংখ্যক গান। পৃষ্ঠা: ৪১-৪৪। [নমুনা]
পত্রিকা
প্রবাসী
(কার্তিক ১৩২২ বঙ্গাব্দ)।
শিরোনাম: ডাক। পৃষ্ঠা:
১। [নমুনা]
[প্রবাসীতে
প্রকাশিত রবীন্দ্রসঙ্গীতের তালিকা]
প্রকাশের কালানুক্রম:
প্রবাসী পত্রিকার 'কার্তিক
১৩২২ বঙ্গাব্দ' সংখ্যায় গানটি প্রথম প্রকাশিত হয়েছিল।
১৩২৩ বঙ্গাব্দে ইন্ডিয়ান প্রেস
থেকে প্রকাশিত 'কাব্যগ্রন্থ' নামক ক্রমিক পুস্তকমালার দশম খণ্ডে 'ধর্ম্ম
সঙ্গীত'-এ অন্তর্ভুক্ত হয়ে প্রকাশিত হয়। গানটির প্রথম স্বরলিপি করেছিলেন
দিনেন্দ্রনাথ ঠাকুর। উক্ত স্বরলিপি-সহ গানটি 'গীতলেখা' প্রথম ভাগে অন্তর্ভুক্ত হয়ে
প্রকাশিত হয় ১৩২৪ বঙ্গাব্দে। এরপর ১৩৩২ বঙ্গাব্দে 'প্রবাহিনী' নামক গ্রন্থে
'গীতগান' নামক অংশে অন্তর্ভুক্ত হয়ে প্রকাশিত হয়।
১৩৩৮ বঙ্গাব্দের আশ্বিন মাসে প্রকাশিত গীতবিতানের দ্বিতীয় খণ্ডের প্রথম
সংস্করণে অন্তর্ভুক্ত হয়।
১৩৪৮
খ্রিষ্টাব্দে প্রকাশিত গীতবিতানের প্রথম খণ্ডের দ্বিতীয় সংস্করণে এই গানটি
গৃহীত হয় পূজা পর্যায়ে।
১৩৭১
বঙ্গাব্দের আশ্বিন মাসে প্রকাশিত গীতবিতানের অখণ্ড সংস্করণে গানটি
পূজা পর্যায়ের অষ্টম গান হিসেবেই অন্তর্ভুক্ত হয়।
গ. সঙ্গীতবিষয়ক তথ্যাবলী:
স্বরলিপিকার:
দিনেন্দ্রনাথ ঠাকুর
[দিনেন্দ্রনাথ
ঠাকুর-কৃত রবীন্দ্রসঙ্গীতের তালিকা]
সুর ও তাল:
স্বরবিতান ত্রয়শ্চত্বারিংশ
(৪৩ ) খণ্ডে
(মাঘ
১৪১২) গৃহীত স্বরলিপিটি,
গীতলেখা
প্রথম ভাগ (বৈশাখ ১৩২৪ বঙ্গাব্দ) থেকে গৃহীত হয়েছে। এই স্বরলিপিতে রাগ-তালের উল্লেখ নেই।
উক্ত স্বরলিপিটি ৩।৩
মাত্রা ছন্দে 'দাদরা' তালে নিবদ্ধ।
[দাদরা
তালে নিবদ্ধ রবীন্দ্রসঙ্গীতের তালিকা]
রাগ :
তিলক-কামোদ।
তাল : খেমটা/ষষ্ঠী
[রবীন্দ্রসংগীত: রাগ-সুর নির্দেশিকা। সুধীর চন্দ। প্যাপিরাস, ডিসেম্বর ২০০৬।
পৃষ্ঠা: ৫৬]
[তিলক কামোদ রাগে নিবদ্ধ রবীন্দ্রসঙ্গীতের তালিকা]
রাগ: গৌড় মল্লার। তাল: দাদরা। [রাগরাগিণীর এলাকায় রবীন্দ্রসংগীত, প্রফুল্লকুমার চক্রবর্তী, জুলাই ২০০১], পৃষ্ঠা: ৯৯।
সুরাঙ্গ: স্বকীয় বৈশিষ্ট্যের গান।
গ্রহস্বর: সা।
লয়: মধ্য।