১৭৪৭
 রাগ: যোগিনী (নজরুল-সৃষ্ট)। তাল:ত্রিতাল।       

শান্ত হও, শিব, বিরহ-বিহ্ববল।
চন্দ্রলেখায় বাঁধো জটাজুট পিঙ্গল
ত্রি-বেদ যাহার দিব্য ত্রিনয়ন
শুদ্ধ-জ্ঞান যা'র অঙ্গ-ভূষণ,
সেই ধ্যানী শম্ভু
কেন শোক-উতল
হে লীলা-সুন্দর, কোন্ লীলা লাগি',
কাঁদিয়া বেড়াও হ'য়ে বিরহী-বিবাগী।
হে তরুণ যোগী, মরি ভয়ে ভয়ে
কেন এ মায়ার খেলা মায়াতীত হ'য়ে,
লয় হবে সৃষ্টি
তুমি হলে চঞ্চল

ভাবার্থ ও প্রেক্ষাপট:
হিন্দু পৌরাণিক কাহিনি মতে
ভৈরব হলেন শিব বা মহাদেবের অপর নাম। শিবের স্ত্রী সতীর (মহামায়া, দুর্গা ) দেহত্যাগের পর, সে খবর শিবানী মহাদেবের বর্ণনা করছেন ।

কালিকা পুরাণ মতে– দক্ষ মহামায়াকে [দুর্গা] কন্যারূপে পাওয়ার জন্য কঠোর তপস্যা করেন দক্ষের তপস্যায় সন্তুষ্ট হয়ে মহামায়া দক্ষকে বলেন, তিনি অবিলম্বে তাঁর (দক্ষের) পত্নীর গর্ভে তাঁর কন্যারূপ জন্মগ্রহণ করবেন এবং এই কন্যা মহাদেব-এর স্ত্রী হবেন। বে তাঁকে (দুর্গাকে) যথাযথ সমাদর না করলে তিনি দেহত্যাগ করবেন এরপর দক্ষ  অসিক্লী -কে বিবাহ করেন। মহমায়ার জন্মের পর দক্ষ এঁর নাম রাখেন সতী [১-৪৪। অষ্টমোহধ্যায়, কালিকাপুরাণ]

সতী যৌবনে পদার্পণ করলে, মহাদেব-এর সাথে তাঁর বিবাহ হয়কিন্তু মহাদেব দক্ষকে যথোচিত সম্মান প্রদর্শন না করায় ইনি ক্রমে ক্রমে মহাদেব-এর প্রতি বিরূপ হয়ে উঠেনবিবাহের এক বৎসর পর, দক্ষ এক মহাযজ্ঞের য়োজন করেন এই যজ্ঞে দক্ষ মহাদেব ও সতীকে নিমন্ত্রণ করলেন নাসতী নারদের মুখে এই যজ্ঞের কথা জানতে পেরে অযাচিতভাবে যজ্ঞে যাবার উদ্যোগ নেন। কিন্তু তিনি শিব (মহাদেব)-এর কাছে সতী অনুমতি লাভের আশায় গেলে, শিব যথাযথ কারণ দেখিয়ে, সতীকে যজ্ঞে যেতে নিষেধ করেন। সতী তা অগ্রাহ্য করে দক্ষের যজ্ঞে যান। সেখানে দক্ষের মুখে শিবের নিন্দা শুনে সতী দেহত্যাগ করেন। শিবের কাছে শিবানী ভৈরবী এসে দেহত্যাগের বার্তা পৌঁছে দেন। এরপর শিব দক্ষের শাস্তি দেওয়ার জন্য তাঁর প্রলয়ঙ্করী শক্তি ীরভদ্র'কে জাগ্রত করেন এবং তাকে দক্ষের যজ্ঞ ধ্বংস করার আদেশ দেন।

শিবের এই ক্রোধের ফলাফল সম্পর্কে যোগিনীরা জানতেন। তাই শিবকে শান্ত হতে অনুরোধ করেন। এই অনুরোধই এই গানের মূল বিষয়। তাঁরা বিরহ-বিহ্বল শিবকে  স্মরণ করিয়ে দেন যে, তাঁর ত্রিনয়নে রয়েছে বেদ, ভূষণের মতো জ্ঞান তাঁকে অলঙ্কৃত করেছে। তাই তাঁর (শিবের) মতো ধ্যানী সাধক পুরুষের পক্ষে শোক-উতলা রূপ শোভা পায় না। যিনি জগৎ লীলা সুন্দর, যিনি জগতের সকল রহস্য জানেন, তাঁর বিরহ-কাতরতা কোন লীলা, যোগিনীরা তা বুঝে উঠতে পারেন নি। যোগিনীরা জানেন শিব অচঞ্চল হলে, জগতের লয় হবে। তাই মায়ারূপী প্রপঞ্চের খেলা ত্যাগ করে শান্ত হওয়ার জন্য নিবেদন করছেন এই গানের ভিতর দিয়ে।

১. প্রকাশ ও গ্রন্থভুক্তি:

২. রেকর্ড সূত্র:
                       
৩. রচনাকাল:
১৯৩৯ খ্রিষ্টাব্দের নভেম্বর মাসে, কাজী নজরুল ইসলাম উদাসী ভৈরব  নামনাটিকাটি বেতারে অভিনয় আকারে পরিবেশনের পরিকল্পনা নেন । এই বিচারে বলা যায়, গানটি রচিত হয়েছিল কাজী নজরুল ইসলাম ৪০ বৎসর বয়সের দিকে।
 

৪. প্রাসঙ্গিক পাঠ: গানটি কাজী নজরুল ইসলাম, জগৎ ঘটক রচিত উদাসী ভৈরব নামক নাটকের জন্য লিখেছিলেন। মূলত এই নাটিকাটির গান এবং অধিকাংশ সংলাপ নজরুল ইসলাম রচনা করেছিলেন।  নাটিকাটি ১৯৩৯ খ্রিষ্টাব্দের ১২ই নভেম্বর তারিখে বেতারে প্রচারিত হয়। এটি ছিল উক্ত নাটকের পঞ্চম গান। গানটি পরিবেশন করেছিলেন গীতা মিত্র-এর কণ্ঠে গীত হয়েছিল।

এই গানটি নজরুল-সৃষ্ট 'যোগিনী' রাগে নিব্দ্ধ। এই বিষয়ে জগৎ ঘটক তাঁর স্বরলিপি গ্রন্থ 'নবরাগ' -এ লিখেছেন

'বহুকাল পূর্বের কথাউদাসী ভৈরব  নামে একখানি নাটিকা বেতারে অভিনীত হবার জন্যে কবি আমাকে দিয়ে লিখিয়েছিলেন এবং এর ছয়খানি গান তিনি রচনা ও তাতে সুরারোপ করেন। সুরগুলি রাগ-ধর্মী ও তাঁর সৃষ্ট নবরাগ। বাসন্তী বিদ্যাবীথির প্রয়োজনীয় নাটিকাটি বেতারে সাফল্যের সঙ্গে অভিনীত হয়েছিল। ... গানগুলি অরুণ-ভৈরব, আশা-ভৈরব, শিবানী-ভৈরবী, রুদ্র-ভৈরব, যোগিনী ও উদাসী ভৈরব।' 

৫. সুরকার: কাজী নজরুল ইসলাম।
                                                                      
৬. স্বরলিপিকার: জগৎ ঘটক। নবরাগ, (নজরুল ইন্সটিটিউট,সেপ্টেম্বর,২০০৫)

৭. সঙ্গীত বিষয়ক তথ্যাবলী:
রাগ: 
যোগিনী
তাল :
ত্রিতাল।
গ্রহস্বর :
পা।