গুজরাট
ভারত প্রজাতন্ত্রের পশ্চিমাঞ্চলীয় উপকূলে আরব
সাগরের তীরে অবস্থিত রাজ্য বিশেষ। গুজরাট নামটি এসেছে এই অঞ্চলে
আগত গুজার বা গুরজার থেকে জাতির নামানুসারে। ধারণা করা হয়, এরা ছিল হুনদের একটি
ক্ষুদ্র গোষ্ঠী। এরা খ্রিষ্টীয় অষ্টম-নবম শতাব্দীতে এই অঞ্চলটি শাসন করত।
ভৌগোলিক অবস্থান: ২৩°১৩' উত্তর অক্ষাংশ
৭২°৪১' পূর্ব দ্রাঘিমাংশ। রাজ্যটির উত্তর-পশ্চিমে পাকিস্তান,
উত্তরে ভারতের রাজস্থান, পূর্বে মধ্যপ্রদেশ এবং দক্ষিণ-পূর্বে মহারাষ্ট্র। গুজরাটের উত্তর-পশ্চিমের একটি ছোট অংশ
ভারতের কেন্দ্রীয় ভূখ- দার্দা ও নগর হাভেলি এবং আরব
সাগরের সঙ্গে কেন্দ্রীয় ভূখ- দমন ও দিউ-এর মাধ্যমে সংযুক্ত।
আয়তন: ১৯৬,০২৪ বর্গকিলোমিটার (৭৫৬৮৫ বর্গমাইল)।
সীমানা গুজরাটের উপকূলের দৈর্ঘ্য ৯৯২ মাইল (১৫৯৬ কিলোমিটার)
এবং রাজের কোন অংশেরই দূরত্ব সাগর থেকে ১০০ মাইলের বেশি নয়।
রাজধানী: গান্ধীনগর। প্রাক্তন রাজধানী আহমদাবাদ।
প্রতিষ্ঠা: এই রাজটি ১৯৬০ খ্রিষ্টাব্দে সাবেক বোম্বে রাজ্যকে
ভাষার ভিত্তিতে ভাগ করা হয়। গুজরাটি ভাষার ভিত্তিতে মহারাষ্ট্র থেকে পৃথক করে গুজরাটকে
রাজ্য হিসেবে প্রতিষ্ঠা করা হয়।
জনসংখ্যা: ২০১১ সাল মোতাবেক
৬,০৩,৮৩,৬২৮।
ভূমিরূপ: গুজরাটের ভূমিরূপ বেশ বিচিত্র। আরব সাগরের তীরে অবস্থিত এই রাজ্যের
তটরেখা প্রায় ১৩০০ কিলোমিটার বিস্তৃত। এই অঞ্চলের উত্তর-পূর্ব দিকে
কচ্ছ এলাকা। এখানকার ভূমি অনুর্বর। এই অংশে রয়েছে কচ্ছের রান মরু-অঞ্চল, এখানে
রয়েছে ছোট ছোট পাহাড়। এই অঞ্চলটি সৌরাষ্ট্র এবং কাথিয়াবাড় নামে পরিচিত।
কচ্ছর রনে রয়েছে বৃহদাকার লবণাক্ত জলাভূমি এর আয়তন প্রায় ৯ হাজার বর্গমাইল (২৩,৩০০
বর্গ কিমি)। বর্ষা মৌসুমে সামান্য বৃষ্টি
হলেই রন্ প্লাবিত হয় এবং কচ্ছ জেলা একটি
দ্বীপে পরিণত হয়। আবার শুষ্ক মৌসুমে এই
ধূলিময় লবণাক্ত সমভূমিতে পরিণত হয়। এই সময় এই অঞ্চলে প্রবল ধূলিঝড় বয়ে যায়।
কচ্ছ উপসাগর এবং খাম্বাট উপসাগর
(ক্যাম্বে) নিয়ে গঠিত বিশাল অঞ্চলকে বলা হয় কাথিয়াবাড়। এই অঞ্চলটি সাধারণত শুষ্ক এবং উপকূল
থেকে বেশ উঁচু হয়ে কেন্দ্রে গিরনার পর্বতমালা সৃষ্টি
করেছে। এই পার্বত্যভূমির সর্বোচ্চ উচ্চতা ৩, ৬৬৫ ফুট (১১১৭ মিটার)। মৌসুমি কিছু
নদী ছাড়া গোটা এলাকায় কোন নদী নেই। ফলে এলাকাটি অনর্বর অঞ্চলে পরিণত হয়েছে।
এরপর কচ্ছের দক্ষিণ থেকে থেকে দমনগঙ্গা নদী পর্যন্ত এবং এটি সাধারণ পাললিক মাটি দ্বারা পূর্ণ।
এখানকার উল্লেখযোগ্য নদী হলো- সবরমতী, নর্মদা, তাপ্তি এবং দমনগঙ্গা।
রাজ্যের উত্তর এবং পূর্বাংশ আরাবল্লী, সাতপুরা, বিন্ধ্য এবং সহ্যাদ্রি পর্বতশ্রেণী
দ্বারা বেষ্টিত। গুজরাটের দক্ষিণাংশের জলবায়ু সাধারণত আর্দ্র এবং উত্তর অংশ শুষ্ক। দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলীয়
গুজরাট নর্মদা ও তাপতি (তাপি) নদী দিয়ে পূর্ব-পশ্চিমে বিভক্ত হয়েছে। উল্লেখ্য উভয়
নদীই তি খাম্বাট উপসাগরে পতিত হয়েছে। মহারাষ্ট্রের পূর্বাঞ্চলীয় সীমান্ত
বরাবর ভূখণ্ডটি পর্বতময়। এই অঞ্চলটি পশ্চিম ঘাটের
উত্তরাঞ্চলীয় বর্ধিতাংশ। উল্লেখ্য পশ্চিম ঘাট পর্বতমালা
দক্ষিণ ভারতের পশ্চিম দিকে আরব সাগরের
সমান্তরাল প্রলম্বিত।
জলবায়ু: শীতকালে (নভেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি) গুজরাটে তাপমাত্রা ২৮ ডিগ্রি
থেকে ১২ ডিগ্রি সেলসিয়াসের ভিতরে থাকে। গ্রীষ্মকালে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৩৮-৩০ ডিগ্রি
সেলসিয়াসের ভিতরে ওঠানামা করে। এই রাজ্যের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে বৃষ্টিপাত খুবই কম
হয়। কচ্ছর রানে গড় বার্ষিক বৃষ্টিপাত ১৫ ইঞ্চি (৩৮০ মিমি)-র
কম। আবার কাথিয়াবাড় উপদ্বীপের মধ্যাঞ্চল এবং উত্তর-পূর্বাঞ্চলে গড় বার্ষিক বৃষ্টিপাত প্রায় ৪০ ইঞ্চি
(১০০০ মিমি)। দক্ষিণ-পর্বাঞ্চলীয় গুজরাটে দক্ষিণ-পশ্চিমে মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে
জুন থেকে সেপ্টেম্বরে প্রচুর বৃষ্টিপাত হয়। উপকূলীয় সমভূমি অঞ্চলে
গড় বার্ষিক বৃষ্টিপাত ৮০ ইঞ্চি (২০০০মিমি)।
উদ্ভিদ ও প্রাণি: গুজরাটে বনভূমি খুবই সামান্য। এর
উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে কাঁটা জাতীয় বনভূমি এবং
কাথিয়াবাড় উপদ্বীপ বরাবর বিভিন্ন প্রজাতির
কেইপার পাওয়া যায়।
উত্তরপূর্বাঞ্চলীয় গুজরাটে পত্রমোচী উদ্ভিদ প্রজাতির মধ্যে রয়েছে- সেগুন, খয়ের, লবঙ্গ, বেঙ্গল কাইনো
ইত্যাদি। দক্ষিণের আর্দ্র অঞ্চল
ও পূর্বের পাহাড়ে পাওয়া যায় পাডাউক (মেহগনির মত দেখতে),
মাসাবার সিমাল, হালডু আদিনা কোর্ডিফোলিয়া। পূর্ব উপকূলে কাগজ
উৎপাদনের কাঁচামাল প্যাপিরাম জন্মে।
কাথিয়াবাড় উপদ্বীপের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে
অবস্থিত গির জাতীয় উদ্যানে বিরল সিংহ এবং কচ্ছের কাছে ছোট রণে বিপন্ন ভারতীয় বুনো
গাধা পাওয়া যায়। আহমদাবাদের নিকটবর্তী
নল সরোবর বার্ড স্যাংচুয়ারি সাইবেরীয় সমভূমি ও অন্যান্য শীত-অঞ্চলের বিভিন্ন প্রজাতির
পরিযারী পাখি দেখা যায় আশ্রয়স্থল। এই অঞ্চলে প্রচুর সারস, ব্রাহ্মিণী
হাঁস, বাস্টার্ড, পেলিক্যান, কর্মোর্যান্ট, ইবিসি,
স্টর্ক, হেরন ও এগরেট সচরাচর দেখা যায়। কচ্ছর রান হচ্ছে ভারতের একমাত্র ফ্লেমিংগো
পালন ক্ষেত্র। গুজরাট উপকূলীয় ও অভ্যন্তরীণ
মৎস শিকার ক্ষেত্র। এখানে প্রচুর স্যালমন, ইলিশ, জিউফিস, চিংড়ি, বোম্বে ডাক ও টুনা মাছ ধরা পড়ে।
জনগণ: ২০১১ সালের জনগণনা অনুযায়ী, গুজরাট রাজ্যের মোট
জনসংখ্যা হল ৬০,৩৮৩,৬২৮ এবং জনসংখ্যার ঘনত্বের অনুপাতে প্রতি বর্গকিলোমিটারে
মোটামুটি প্রায় ৩০৮ জন লোক বাস করে। গুজরাটের
জাতিগত বৈচিত্র্যের বিচারে ইন্ডিক (উত্তর দিক থেকে আগত) বা
দ্রাবিড়ী (দক্ষিণ থেকে উদ্ভুত)। এর ভিতরে রয়েছে
নগর ব্রাহ্মণ, ভাটিয়া, ভাদেলা, রবাড়ি ও মিনা
বর্ণের মানুষজন। পার্সিরা (পারস্য অর্থাৎ ইরান
থেকে আগত)ও উত্তরাগত। দক্ষিণী মানুষের
মধ্যে আছে ভাঙ্গি, কোলি, ডুবলা, নাইকড়া
এবং মাক্কি খার্বা। বাকি জনসংখ্যার মধ্যে
আছে আদিবাসী ভিল সম্প্রদায়। এদের ঐতিহ্য মিশ্র। তপসিলি সম্প্রদায়ের
মানুষের সংখ্যা রাজ্যের মোট জনসংখ্যার একপঞ্চমাংশ। এছাড়া
গুজরাট দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলীয় গুজরাটের পার্বত্য অঞ্চলে আদিবাসীরা
বসবাস করে।
ধর্ম: গুজরাটের প্রধান ধর্ম হিন্দু। মোট
জনসংখ্যার ৮৯ শতাংশ হিন্দু। ভগবান শ্রীকৃষ্ণ প্রধান পূজ্য দেবতা যাঁকে এই রাজ্যে
শ্রীনাথ রূপে পূজো করা হয়। ইসলাম ধর্মাবলম্বী
৯.১ শতাংশ। অবশিষ্ট জনসংখ্যার ভিতরে রয়েছে জৈন, শিখ, ইহুদি এবং খ্রিষ্টান।
ভাষাভিত্তিক জাতিগত জনগোষ্ঠী হিসেবে রয়েছে গুজরাটি, মারওয়াড়ী, বিহারি। এছাড়া পর্তুগীজদের একটি ছোট অংশ আহমেদাবাদে
বসবাস করে। গুজরাট রাজ্যে অবস্থিত অন্যান্য মানুষের মধ্যে, ভারতীয় সম্প্রদায়ভুক্ত
হল তামিল, তেলেগু, মালায়ালি, কোঙ্কনি, পাঞ্জাবি, সিন্ধি, তিব্বতি, নেপালি, ওড়িয়া,
আসামি, বাঙালি। অভারতীয় ভাষাভাষির মধ্যের রয়েছে পারশিক, দক্ষিণ কোরিয়ান,
অ্যংলো-ইন্ডিয়ান, গ্রিক ইত্যাদি।
ভাষা:
গুজরাটের প্রধান
সরকারি ভাষা গুজরাটি। গুজরাটি ভাষার প্রায় ১১টি উপভাষায়
রাজ্যের ভিন্ন অঞ্চলের বিভিন্ন মানুষ কথা বলে। এগুলির মধ্যে কিছু যেমন গুজরাটি,
গামথি, কাথিওয়াড়ী, খর্ভা, খকারি এবং পারসী উপভাষা উচ্চস্তরীয়। পারসী গুজরাটি শুনতে
খুবই মধুর হয় এবং প্রধানত এটি স্থানীয় জোরোয়াস্ট্রিস ধর্মাবলম্বী মানুষদের দ্বারা
ব্যবহৃত হয়। কিন্তু এটি সাধারণ গুজরাটি ভাষা থেকে আলাদা। রাজ্যটি যেহেতু
রাজস্থান, মহারাষ্ট্র এবং মধ্যপ্রদেশ তথা অন্যান্যদের সাথে সাধারণ সীমানা ভাগ করে
নিয়েছে, তাই এই সীমান্তবর্তী অঞ্চলের কাছাকাছি থাকা মানুষ তাদের নিজ নিজ ভাষায় কথা
বলে। সুস্পষ্ট কারণেই, রাজ্যে মারওয়াড়ী, মারাঠি, হিন্দিও কথ্য ভাষা হিসাবে প্রচলিত
আছে। জনসংখ্যার কিছু অংশ সিন্ধি ও উর্দূ ভাষাতেও কথা বলে। কচ্ছ, যেটি এ রাজ্যের
একটি গুরুত্বপূর্ণ এলাকা যেখানে এক ভিন্ন মাতৃভাষা রয়েছে, যা কচ্ছি নামে পরিচিত এবং
এটি স্থানীয় অধিবাসীদের মধ্যে জনপ্রিয়। উল্লেখ্য, এটি সিন্ধি ও গুজরাটির মিশ্রণ হিসাবে ধরা
হয়।
অর্থনীতি
কৃষি: মাটি ও পানির লবণাক্ততা
এবং পাথুরে অঞ্চল গুজরাটের বেশিরভাগ কৃষির অনুপোযুক্ত।
এই রাজ্যের প্রধান
ফসল গম, মিলেট, জোয়ার, ধান। অর্থকরী ফসলের
মধ্যে রয়েছে তুলা, তৈলবীজ চিনাবাদাম,
তামাক ও আখ। খনিজ পদার্থ:
গুজরাটে প্রচুর চুনাপাথর, ম্যাঙ্গনিজ, জিপসাম,
ক্যালসাইট ও বক্সাইট প্রভৃতি খনিজ পদার্থ পাওয়া যায়। এখানে প্রচুর লিগনাইট, কোয়ার্টজ বালি,
এ্যাগেট ও ফেল্ডস্পারেরও মজুত রয়েছে। কাথিয়াবাড় উপদ্বীপের পোরবন্দরের পাওয়া যায় উৎকৃষ্ট
নির্মাণ পাথর।
এছাড়াও গুজরাট পেট্রোলিয়াম ও প্রাকৃতিক গ্যাস উৎপন্ন হয়।
কলকারখানা: এই রাজ্যের প্রধান কারাখানা শিল্প হলো- রাসায়নিক,
ফার্মাসিউটিক্যালস্ ও পলিয়েস্টার টেক্সটাইল। রাজ্যের প্রধান শিল্পবলয় গড়ে
উঠেছে দক্ষিণাঞ্চলে। ভাদোদরার কাছে
কোয়ালিতে একটি বৃহৎ তৈল শোধনাগর রয়েছে।
কাথায়াবাড় উপদ্বীপে ক্ষুদ্র আকারের কৃষিভিত্তিক
শিল্প গড়ে উঠেছে। এছাড়া
রাজ্যের বিভিন্ন অঞ্চলে রয়েছে ভোজ্য তেল, তুলা বয়ন ও সিমেন্ট
শিল্প।
পরিবহন: গুজরাটের
শহর-নগরাঞ্চলের যোগাযোগ ব্যবস্থা
খুবই চমৎকার। আন্তঃনগর ও ভারতের বাকি
অংশের সঙ্গে সড়ক ও রেলপথে সংযুক্ত রয়েছে।
রাজ্যের উপকূলীয় জাহাজ চলাচলের জন্য বেশ কিছু বন্দর রয়েছে। এদের ভিতরে কাঁদলা রয়েছে আন্তর্জাতিক
জাহাজ টার্মিনাল। রাজ্যের অভ্যন্তরের বিভিন্ন
নগর এবং ভারতের অন্যান্য
প্রধান নগরের সঙ্গে বিমান যোগাযোগ ব্যবস্থা রয়েছে ।
সাংবিধানিক কাঠামো এবং বিচার ব্যবস্থা: গুজরাটের স্থানীয় সরকার-কাঠামো ভারতের অধিকাংশ রাজ্যের মতই
এবং তা
১৯৫০ খ্রিষ্টাব্দের জাতীয় সংবিধান অনুযায়ী
নির্ধারিত। ভারতের রাষ্ট্রপতি কর্তৃক নিযুক্ত গভর্নর হচ্ছেন রাজ্যের প্রধান নির্বাহী।
রাজ্যের সরকার প্রধান হলেন মুখ্যমন্ত্রী। গুজরাটের বিধানসভা এক কক্ষবিশিষ্ট।
হাই কোর্ট হচ্ছে রাজ্যের সর্বোচ্চ বিচারিক
কর্তৃপক্ষ। এছাড়া রয়েছে বিভিন্ন অধঃস্তন আদালত, নগর আদালত, জেলা ও সেশন আদালত
পরিচালিত হয়
জেলা-প্রশাসনের অধীনে। ১৯৬৩ খ্রিষ্টাব্দে পঞ্চায়েত (স্থানীয় সরকার পরিচালন পর্যদ) চালু হয়।
স্বাস্থ্য ও কল্যাণ: ম্যালেরিয়া, যক্ষ্মা, এইচআইভি/এইডস এবং
অন্যান্য সংক্রামক ব্যাধি এবং অন্ধত্ব নিবারণ এবং কুষ্ঠ ও পোলিও চিকিৎসার জন্য গুজরাটে স্বাস্থ্য ও চিকিৎসা সেবা চালু রয়েছে।
জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ, পারিবারিক স্বাস্থ্য এবং স্বাস্থ্যশিক্ষার
ওপর বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। এই উদ্দেশ্যে রাজ্যজুড়ে রয়েছে বহু প্রাথমিক
স্বাস্থ্য কেন্দ্র। রাজ্যের সরকারি-বেসরকারি হাসপাতাল ও
মেডিক্যাল কলেজসমূহ প্রধানত শহর এলাকায় অবস্থিত। ঐতিহ্যগত, সামাজিক, অর্থনৈতিক এবং
শিক্ষাগতভাবে সুবিধাবঞ্চিত সম্প্রদায়গুলোর সহায়তার জন্য সরকার বিশেষ কর্মসূচিও
পরিচালনা করে আসছে।
শিক্ষা:গুজরাজটে নিম্নস্তর থেকে উচ্চশিক্ষার জন্য রয়েছে বহু শিক্ষা প্রতিষ্ঠান।
উচ্চশিক্ষার জন্য রয়েছে ভাদোদরার মহারাজা সয়াজীরাও ইউনিভার্সিটি অফ বরোদা (১৯৪৯), আহমদাবাদের গুজরাট বিশ্ববিদ্যালয় (১৯৪৯)। প্রধান গবেষণা প্রতিষ্ঠানের মধ্যে আহমদাবাদের ফিজিক্যাল রিসার্চ ল্যাবরেটরি (১৯৪৭, জাতীয় মহাকাশ বিভাগের একটি সংস্থা), আহমদাবাদ টেক্সটাইল ইন্ড্রাস্ট্রিজ রিসার্চ এসোসিয়েশন (১৯৪৯), ভাবনগরের সেন্ট্রাল সল্ট এন্ড মেরিন কেমিক্যাল রিসার্চ ইনস্টিটিউট (১৯৫৯) এবং আহমদাবাদের ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ ডিজাইন (১৯৬১) এবং সর্দার প্যাটেল ইনস্টিটিউট অফ ইকোনমিক এন্ড সোস্যাল রিসার্চ (১৯৬৫) উল্লেখযোগ্য।
গবেষণা কেন্দ্র ছাড়াও গুজরাটে ক্ষুদ্রতর টার্সিয়ারি প্রতিষ্ঠানে বিশেষায়িত
শিক্ষযাকার্যক্রমের আওতায় রয়েছে বহু ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ ও কারিগরি বিদ্যালয়। আহমদাবাদের ইন্ডিয়ার ইনস্টিটিউট অফ ম্যানেজমেন্ট (আইআইএমএ) ভারতের অন্যতম সেরা একটি শিক্ষায়তন।
সাংস্কৃতিক জীবন: গুজরাটের সংস্কৃতির বড় অংশ জুড়ে আছে ধর্মীয় অনুষ্ঠান। পুরাণে বর্ণিত হিন্দু দেবতা কৃষ্ণের (বিষ্ণুর
অবতার) জীবনের বিভিন্ন আখ্যান নির্ভর সংস্কৃতিচর্চা। জনপ্রিয় গর্বা নাচে কৃষ্ণের রাসলীলা বা রাসনৃত্যের সমকালীন পরিবেশনা পরিলক্ষিত হয়।
এই নাচটি সাধারণত নবরাত্রি উৎসবে পরিবেশিত হয়। গর্বা নাচে নারী-পুরুষ হাত ধরাধরি করে গোল হয়ে হাতে তালি দিয়ে ঘুরে ঘুরে নাচে। নবরাত্রিতে গ্রামে ভাবাই
নামক জনপ্রিয় কৌতুকনাট্য পরিবেশিত হয়। এই নাটকের নারীপুরুষ সব চরিত্রে পুরুষ নটরাই অংশগ্রহণ করে।
স্থানীয় বৈষ্ণবদের রয়েছে কাব্য ও গানের নানা ধরনের চর্চা। বিখ্যাত বৈষ্ণব সাধু, কবি ও সংগীতজ্ঞের মধ্যে আছেন
পঞ্চদশ শতাব্দীতে পদকর্তা নরসিন (নরসিংহ মেহতা)। এরপর বিশেষভাবে খ্যাতি অর্জন
করেছিলেব রাজপুত রাজকন্যা মীরা বাঈ। ষোড়শ শতাব্দীতে রচিত ভজন ভারতের সকল প্রদেশেই
পরমভক্তিতে চর্চিত হয়ে থাকে। এছাড়া রয়েছে অষ্টাদশ শতাব্দীর বিখ্যাত কবি ও লেখক প্রেমানন্দ এবং
একই শতাব্দীর দয়ারাম যিনি সংগীত রচনা করে ভক্তিবাদকে জনপ্রিয় করে তোলেন।
জৈন ধারায় দ্বাদশ শতাব্দীর সৃজনশীল লেখক হেমচন্দ্র ভারতীয় দর্শনের ওপরঅনেকগুলো পাঠ্যপুস্তক প্রণয়ন করেন। তিনি সংস্কৃত ও প্রাকৃত ভাষার ব্যাকরণগত ব্যাখ্যাও
তিনি রচনা করেছেন। তিনি জৈন দৃষ্টিভঙ্গীতে
মহাকাব্যিক বিশ্ব ইতিহাস রচনা করেন।
এছাড়া রয়েছে তাঁর অনেক কবিতা।
স্থাপত্যকীরতি: গুজরাটের প্রাচীন স্থাপত্যকীর্তিতে রয়েছে শৈল্পিক ঐতিহ্য। রাজ্যের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে অবস্থিত সোমনাথ
ও দ্বারকা মন্দির এর উৎকৃষ্ট উদাহরণ। এছাড়া উত্তরে মোধেরা, ঘুমলি (পোরবন্দরের কাছে)-র থান, গিরনার পাহাড় এবং কাঠিয়াবর উপদ্বীপের পালিটানার মন্দির স্মৃতিসৌধের সৌন্দর্য বিস্ময়কর।
মুসলিম শাসনামলের বিশেষ স্থাপত্যিক রীতিতে হিন্দু ও মুসলিম ঐতিহ্যের সন্নিববেশ ঘটেছে। আহমদাবাদে পঞ্চদশ ও ষোড়শ শতাব্দীর মসজিদ ও স্মৃতিসৌধ তার প্রকৃষ্ট উদাহরণ। এছাড়াও রাজ্যের নানাস্থানে আছে বহু
সিঁড়িকূপ, প্রাচীন অন্তভৌম নির্মাণ ও জলাধার। এখনও এসব সিঁড়িকূপের জল ব্যবহৃত হয়। পাতনে রানি কা ভাব (রানীর সিঁড়িকূপ) ২০১৪
খ্রিষ্টাব্দে ইউনেস্কোর বিশ্ব ঐতিহ্য তালিকাভুক্ত হয়।
কুটিরশিল্প: গুজরাটের কুটির শিল্প খুবই উচ্চমানের। বিশেষ করে হাতের কাজের
বিলাসী দ্রব্যে জন্য গুজরাট বিখ্যাত। এছাড়া রয়েছে যে সুরাটের সোনা ও রুপার জরির কাজ
করা জামনগরের বন্ধনী, উত্তর গুজরাটের পাতনের পাটোলা সিল্ক শাড়ির নাম উল্লেখযোগ্য।
উত্তরাঞ্চলের ইদারের খেলনা, পালানপুরের সুগন্ধী দ্রব্য,
কানোদারের তাঁতের কাজের কথা সুবিদিত।
ইতিহাস
গুজরাটে রাজ্যের পূর্বাঞ্চলীয় সবরমতী ও মাহি নদী উপত্যকায় প্রস্তর
যুগের নির্দশন পাওয়া গেছে। এ সকল নিদর্শন অনুসারে ধারণা করা হয়
হরপ্পা সভ্যতার সঙ্গে এদের সম্পর্ক
ছিল। সম্ভবত গুজরাটে এই সভ্যতার বিকাশ ঘটেছিল খ্রিষ্টপূর্ব তৃতীয় ও দ্বিতীয় সহস্রাব্দে।
কাথাইয়াড় উপদ্বীপের লোথাল, রংপুর, আমরি,
লখাববাল এবং রোযদিতে এই সভ্যতার নমুনা
পাওয়া যায়। গুজরাটের ইতিহাসের সাথে বিশেষভাবে জড়িয়ে আছে
মৌর্য সম্রাজ্য। খ্রিষ্টপূর্ব তৃতীয় শতাব্দী
এই রাজবংশের প্রভাব ছিল। সম্রাট অশোকের কাথিয়াবর উপদ্বীপের গিরনার পর্বতের
শিলালিপি থেকে এ বিষয়ে অনুমান করা যায়।
মৌর্য সাম্রাজ্যের পতনের পর গুজরাট শক বা পশ্চিমা ক্ষত্রপা (১৩০-৩৯০
খ্রিষ্টাব্দ) শাসনাধীনে
চলে যায়। শক নেতৃত্বের সর্বোত্তম শাসক মহাক্ষত্রপা রুদ্রদমন সৌরাষ্ট্র (কাথিয়াবর উপদ্বীপের নিকটবর্তী) ও কচ্ছ এবং প্রতিবেশী মালবা ও অন্যান্য এলাকায় (যা এখন মধ্যপ্রদেশ-রাজস্থান) তাঁর শাসনাধীনে
এনেছিলেন।
খ্রিষ্টীয় চতুর্থ থেকে পঞ্চম শতাব্দীর শেষভাগ পর্যন্ত গুজরাট
গুপ্তরাজবংশের শাসনধীন ছিল । বালভি রাজ্যের মৈত্রক রাজবংশের হাতে গুপ্ত সাম্রাজ্যের পতন ঘটে।
এরপর মৈত্রকরা প্রায় তিনশো বছর গুজরাট ও মালবা শাসন করে। রাজধানী বালভিপুরা
(কাথিয়াবাড় উপদ্বীপের পূর্ব উপকূলের নিকটবর্তী) ছিল বৌদ্ধ,বৈদিক ও জৈন শিক্ষাধারায় বড় কেন্দ্র।
প্রতিহারদের কাছে মৈত্রক রাজবংশের পতন ঘটে। এঁরা খ্রিষ্টীয়
অষ্টম ও নবম শতাব্দী পর্যন্ত এতদঞ্চল শাসন করেন। এদের শাসনকালের অবসান
ঘটে সোলাঙ্কি রাজবংশের উত্থানের ফলে। সোলাঙ্কিদের শাসনামলে গুজরাটের সর্বোচ্চ বিস্তৃতি ঘটে। এসময় অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি ঘটে।
১২৯৭ খ্রিষ্টাব্দে গুজরাটের রাজা কর্ণদেবের বিরুদ্ধে
আলাউদ্দীন খিলজি অভিযান চালান। এই অভিযানের
নেতৃত্বে ছিলেন উলুগ খাঁ ও নসরৎ খাঁ। কর্ণদেবের রাণী কমলাদেবী বন্দী হন। কর্ণদেব
তাঁর কন্যা দেবলাদেবীসহ দাক্ষিণাত্যের দেবগিরির কাছে রাজা রামচন্দ্রের আশ্রয় নেন। সেনাপতি
নসরৎ খাঁ ক্যাম্বে বন্দর লুণ্ঠন করেন। এখান থেকে কাফুর নামক এক সুদর্শন খোজাকে
দিল্লিতে আনেন। পরবর্তী কালে এই কাফুর নিজ দক্ষতায় সুলতানের প্রধান প্রধান মন্ত্রী
ও সেনাপতি হয়েছিলেন।
১৩৭৭ খ্রিষ্টাব্দে গুজরাটে বিদ্রোহ দেখা দিলে-দিল্লির সুলতান
ফিরোজ শাহ তুঘলক মালিক মুজাফফর (ফারহাত-উল-মুলক নামেও পরিচিত ছিলেন) ও রাস্তি খানকে গুজরাতের গভর্নর নিয়োগ দেন। ১৩৮৭ খ্রিষ্টাব্দে গুজরাটের গভর্নর
হিসেবে সিকান্দার খানকে নিয়োগ দেন। এতে মালিক মুজাফফর ক্ষুব্ধ হয়ে সিকান্দার খানকে
হত্যা
করেন। এই ঘটনার পর, গুজরাটের গভর্নর হিসেবে মালিক মুজাফফর বহাল থেকে যায়।
১৩৮৮ খ্রিষ্টাব্দে
ফিরোজ শাহ তুঘলকের মৃত্যুর পর তাঁর পৌত্র গিয়াস উদ্দীন তুঘলক দ্বিতীয়, সিংহাসন
লাভ করেন। ১৩৮৯ খ্রিষ্টাব্দে নিজ আত্মীয় আবু-বকর কর্তৃক নিহত হন। এর কয়েক মাসের
মধ্যেই, ১৩৯০ খ্রিষ্টাব্দের প্রথমার্ধে ফিরোজ তুঘলকের এক পুত্র মুহম্মদ খাঁ তাঁকে
হত্যা করে সিংহাসন অধিকার করেন। তিনি অত্যাধিক মদ্যপানের কারণে ১৩৯৪ খ্রিষ্টাব্দে
অসুস্থ হয়ে মৃত্যবরণ করেন।
১৩৯৪ খ্রিষ্টাব্দে সিংহাসন লাভ করেন সিকান্দার শাহ। ১৩৯৫ খ্রিষ্টাব্দে সিকান্দার
শাহ মৃত্যুবরণ করলে, মুহম্মদ খাঁর পুত্র নাসির উদ্দিন মামুদ সিংহাসন লাভ করেন।
১৩৯৮ খ্রিষ্টাব্দে
তৈমুর লং-এর পৌত্র পীর
মোহ্ম্মদ ভারত আক্রমণ করে মুলতান জয় করে নেয়। এই সময় তৈমুর সমরখন্দে ছিলেন। পীর
মোহম্মদের মুলতান জয়ের কথা শোনার পর তিনি নিজেই ভারতে চলে আসেন। ১৩৯৮ খ্রিষ্টাব্দের
১৭ ডিসেম্বর, প্রায় ৯০ হাজার
সৈন্য নিয়ে সিন্ধু নদের পাড়ে উপস্থিত হন। এরপর ভারতবর্ষে তৈমুর ভয়ঙ্কর হত্যাযজ্ঞে মেতে
উঠেন। তিনি সিন্ধুর দুই পাড়ের মানুষকে নির্বিচারে হত্যা করেন। এরপর হত্যাযজ্ঞ
চালাতে চালাতে দিল্লীর দিকে অগ্রসর হন। কথিত আছে দিল্লী আসার পথে প্রায় ১ লক্ষ
মানুষ হত্যা করেছিলেন। ফলে এই অঞ্চল জনবিরল উপত্যাকায় পরিণত হয়েছিল।
দিল্লীর সেনাবাহিনী তাঁর হস্তিবাহিনী নিয়ে
তৈমুরকে আক্রমণ করেন। তৈমুর কৌশলে হিসেবে হাজার
হাজার উটের পিঠ খড়ের গাদা দিয়ে বোঝাই করলেন। এরপর খড়ের গাদায় আগুন লাগিয়ে উটগুলোকে
হস্তিবাহিনীর দিকে হটিয়ে দেন। সুলতানের হস্তিবাহিনী জ্বলন্ত উটের আগ্রাসনে ভয় পেয়ে
যায়। অবস্থা হিতে বিপরীত হয়ে যায়। হাতিগুলো উল্টো ঘুরে সুলতানকেই আক্রমণ করে বসে।
সুলতানের বাহিনী পরাজিত হলে, নাসিরুউদ্দিন পরাজিত গুজরাটে পলায়ন করেন।
এই সময় গুজরাটের শাসক ছিলেন মালিক মুজফ্ফর।
তৈমুর লং-দিল্লী
দখল করে সেখানে ব্যাপক গণহত্যা এবং লুটতরাজ করেন। এই সময় তিনি ইরাকের রাজধানী
বাগদাদের দখল হারানোর সংবাদ পান। বাগদাদ দখলের জন্য তিনি
ভারতবর্ষ থেকে ফিরে যান। এই সময় তিনি
মুলতানের শাসনকর্তা খিজির খাঁকে তাঁর প্রতিনিধি হিসেবে নিয়োগ দান করেন।
তৈমুরের ভারত ত্যাগের পর, নসরৎ শাহ দিল্লীর সিংহাসন দখল করেন। কিন্তু মাহমুদ
শাহের মন্ত্রী মল্লু ইকবাল তাঁকে বিতারিত করে, নাসিরউদ্দিন শাহকে দিল্লিতে আসতে
বলেন। ১৪০১ খ্রিষ্টাব্দে তিনি দিল্লিতে আসেন। দিল্লির সুলতানের
দুরবস্থার কারণে, বিভিন্ন রাজ্য স্বাধীন হয়ে যায়। এই অবস্থার সুযোগ নিয়ে মালিক
মুজফ্ফরের পুত্র তাতার খান দিল্লি আক্রমণের উদ্যোগ নেন। মুজফ্ফরের দিল্লি অভিযানে
সম্মত না হলে, তাতার খান পিতা মুজফ্ফরকে বন্দী করে, নিজেকে সুলতান হিসেবে ঘোষণা দেন।
এই সময় তিনি মহম্মদ শাহ নামগ্রহণ করেন। এরপর তিনি দিল্লি অভিযানে অগ্রসর হন।
পথিমধ্যে তাঁর চাচা শাসস খান, বিষ প্রয়োগে তাঁকে হত্যা করেন। এরপর মুজফ্ফর শাহ
মুক্তি পেয়ে পুনরায় ক্ষমতা লাভ করেন। ১৪০৭ খ্রিষ্টাব্দে তিনি নিজেকে স্বাধীন সুলতান
হিসেবে ঘোষণা দেন। এই সময় তিনি নিজেকে সুলতান মুজাফ্ফর শাহ নামে ঘোষণা দেন। ইতিহাসে
তিনি প্রথম মুজফ্ফর শাহ নামে পরিচিত।
১৪১১ খ্রিষ্টাব্দে মুজাফ্ফর শাহের মৃত্যুর পর তাঁর নাতি আহমদ শাহ (তাতার
খানের পুত্র) ক্ষমতা লাভ করেন। প্রকৃত অর্থে
গুজরাটের প্রথম স্বাধীন
সুলতান ছিলেন আহমদ শাহ।
ইতিহাসে তিনি প্রথম আহমদ শাহ।
গুজরাট-সালতানাতের সুলতানের তালিকা
- মু্জাফ্ফর শাহ প্রথম (১৪০৭-১৪১১ খ্রিষ্টাব্দ)
- আহমদ শাহ প্রথম (১৪১১-১৪৪৩ খ্রিষ্টাব্দ)
- মুহম্মদ শাহ প্রথম (১৪৪৩-১৪৫১ খ্রিষ্টাব্দ)
- কুতুবউদ্দিন আহমদ শাহ (১৪৫১-১৪৫৮ খ্রিষ্টাব্দ)
- মাহমুদ বেগারহা (১৪৫৮-১৫১১ খ্রিষ্টাব্দ)
- মু্জাফ্ফর শাহ দ্বিতীয় (১৫১১-১৫২৮ খ্রিষ্টাব্দ)
- বাহাদুর শাহ (১৫২৮-১৫৩৭ খ্রিষ্টাব্দ)
ষোড়শ শতাব্দীর মাঝামাঝি সময়ে গুজরাট মুঘল শাসনাধীন হয়। এতদঞ্চলে তাদের শাসনক্ষমতা অষ্টাদশ শতাব্দীর মাঝামাঝি পর্যন্ত স্থায়ী হয়। পরে মারাঠারা গুজরাটে তাদের কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করে।
১৮১৮ খ্রিষ্টাব্দেব্দে গুজরাট ব্রিটিশ ইস্ট উন্ডিয়া কোম্পানির প্রশাসনিক শাসনভুক্ত হয়। ১৮৫৭-৫৮
খ্রিষ্টাব্দের সিপাহী বিদ্রোহের পর গুজরাট ব্রিটিশ রাজশক্তির কর্তৃত্বাধীন হয় এবং ১০ হাজার বর্গ মাইল (২৬ হাজার বর্গ কিমি)
এলাকা এবং সৌরাষ্ট্র ও কচ্ছসহ অসংখ্য স্থানীয় রাজ্য নিয়ে গুজরাট প্রদেশ আত্মপ্রকাশ করে।
১৯৪৭ খ্রিষ্টাব্দে ভারতের স্বাধীনতার পর গুজরাট প্রদেশ বোম্বে রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত
হয়। ১৯৫৬ খ্রিষ্টাব্দে এর সঙ্গে কচ্ছ ও সৌরাষ্ট্রকে যুক্ত করা হয়। ১৯৬০
খ্রিষ্টাব্দের ১ মে ভারতের বোম্বে রাজ্য বর্তমানের গুজরাট
ও মহারাষ্ট্র বিভক্ত হয়।
১৯৬৫ খ্রিষ্টাব্দের এপ্রিল মাসে কচ্ছের রণ্ নিয়ে ভারত ও পাকিস্তান যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ে। পয়লা জুলাই অস্ত্রবিরতি ঘটে। পরে আন্তর্জাতিক ট্রাইবুনালে বিষয়টি নিষ্পত্তির জন্য উত্থাপিত হয়। ট্রাইবুনাল ভারতকে বিতর্কিত
ভূখণ্ডের নয়-দশমাংশ এবং পাকিস্তানকে এক-দশমাংশ প্রদানের রায় দেয়। দুই দেশের যুদ্ধ গুজরাটে হিন্দু-মুসলমান সম্পর্কের অবনতি ঘটায়।
১৯৮৫ খ্রিষ্টাব্দে গুজরাটে আবার সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ে তপসিলি শ্রেণির সুরক্ষা
আন্দোলনের সূত্রে। নপরে তা হিন্দু-মুসলিম দাঙ্গায় পরিণত হয়। এ দাঙ্গা প্রায় পাঁচমাস
স্থায়ী হয়। ২০০১ খ্রিষ্টাব্দে কচ্ছ জেলার ভুজে এক প্রলয়ংকরী ভূমিকম্পে ব্যাপক ক্ষয়-ক্ষতি হয়।
সূত্র: