ভারতীয় সঙ্গীত
বৈদিক যুগ খ্রিষ্টপূর্ব ১২০০-৬০০ খ্রিষ্টাব্দ)

ইন্দো-ইউরোপীয়ান ভাষাগোষ্ঠীর একটি বৃহৎ নৃগোষ্ঠীর একটি শাখা হলো- ভারতীয় আর্য জাতি। খ্রিষ্টপূর্ব ২০০০ থেকে ১৫০০ অব্দের ভিতরে পারশ্য থেকে ভারতে প্রবেশ করেছিল আর্য ভাষাভাষীর জনগোষ্ঠী। আদিতে ইরানীয় আর্য এবং ভারতীয় আর্যদের ভাষা, ধর্ম, সঙ্গীত ইত্যদির ভিতরে কোনো প্রভেদ ছিল না। ভারতে প্রবেশের পর ভারতীয় আর্যরা, স্থানীয় ভারতীয় মিশ্র জাতি সত্তার মুখোমুখী হয় এবং নিজেদের স্থায়ী বসতি স্থাপনের জন্য যুদ্ধ বিগ্রহে লিপ্ত হয়। জাত্যাভিমানে তারা স্থানীয় অধিবাসীদের তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করতো। অনেকে অস্পৃশ্য বলে স্থানীয়দের সাথে মেলামেশা করতো না। রাজন্যবর্গ বা পুরোহিতরা এসব কঠোরভাবে মান্য করলেও সাধারণ মানুষের ক্ষেত্রে তেমনটা ঘটেনি। স্থানীয় অনার্যদের সংস্পর্শে এসে এদের বিরাট একটি অংশ, মিশ্র ভাষা-সংস্কৃতির উদ্ভব ঘটিয়েছিল। বলাই বহুল্য রাজন্যবর্গ বা পুরোহিতরা তাদের কঠোর বিধি দিয়ে এই মিশ্রণ রোধ করতে পারে নি। ফলে খ্রিষ্টপূর্ব ১২০০ অব্দের ভিতরে ভারতীয় আর্য ভাষা থেকে ইরানীয় আর্যভাষার প্রভেদ সৃষ্টি হয়েছিল। সেই সময়ের ইরানী আর্য ভাষায় রচিত গ্রন্থের সাথে ভারতীয় আর্যদের দ্বারা রচিত বেদের ভাষার অনেক মিল পাওয়া যায়, কিন্তু দুটি ভিন্নতর ভাষা তাও স্পষ্টই ধরা পড়ে।  ধারণা করা হয়, বেদের শ্লোকগুলো রচিত হয়েছিল খ্রিষ্ট-পূর্ব ১২০০- খ্রিষ্টপূর্ব ৬০০ অব্দের ভিতরে।

বৈদিক ঋষিরা তাঁদের অধীত বিদ্যা রচিত শ্লোকাকারে শিষ্যদের শোনাতেন। শিষ্যরা মনে রাখতেন এবং তাঁরা আবার তাঁদের শিষ্যদের ওই শ্লোক শোনাতেন। গুরু পরম্পরায় এই শ্লোকগুলো শ্রবণের মাধ্যমে শিক্ষা হতো বলে এর নাম ছিল শ্রুতি। খ্রিষ্টপূর্ব ৪০০ অব্দের দিকে কৃষ্ণদ্বৈপায়ন সকল শ্লোককে চারটি ভাগে ভাগ করে নাম দিলেন ঋক্, সাম, যজু, অথর্ব। বেদের এই ভাষাকে ভাষাবিজ্ঞানীর নাম দিয়েছেন বৈদিক ভাষা। প্রতিটি বেদ রচিত হয়েছিল গদ্যে ও পদ্যে। এর ভিতরে গদ্য রচিত শ্রুতিগুলোর নাম দেওয়া হয়েছিল ব্রাহ্মণ। এতে ছিল তত্ত্বকথা এবং যাগযজ্ঞের বিধি। এর পদ্যে রচিত অংশের নাম দেওয়া হয়েছিল সংহিতা। এই অংশ মূলত ছন্দে গাঁথা বেদমন্ত্রসমূহ। বেদগুলোর আরও দুটি অংশ রয়েছে। এই অংশদুটি হলো- আরণ্যক ও উপনিষদ।

চারবেদের মধ্যে আদি বেদের নাম- ঋগ্বেদ। ধারণা করা হয়- ঋগ্বেদের আদি শ্লোকগুলো রচিত হয়েছিল অানুমানিক ১২০০-১০০০ খ্রিষ্ট-পূর্বাব্দের। এই সময়ের ভিতরে মূলত আদি ছন্দোবদ্ধ ঋকমন্ত্রগুলো এবং গদ্য নিবদ্ধ ব্রাহ্মণ রচিত হয়েছিল। এই ধারা খ্রিষ্টপূর্ব ৮০০ অব্দ পর্যন্ত অব্যাহত ছিল। সম্ভবত এই সময়ের ভিতরেই রচিত হয়েছিল 'আরণ্যক অংশ'। আর ৮০০ থেকে-৫০০ খ্রিষ্টপূর্বাব্দের ভিতরে রচিত হয়েছিল উপনিষদ।

আর্য অনার্যের দ্বন্দ্ব এবং মিলনের যুগপৎ ধারায় প্রাচীন ভারতে সৃষ্টি হয়েছিল সঙ্কর মানবগোষ্ঠী।  সেই সাথে সঙ্কর ভাষা ও সঙ্গীতের বিকাশ ঘটেছিল পরবর্তী ৮০০ খ্রিষ্টপূর্বের ভিতরে। আর্য ঋষিরা প্রথম দিকে অনার্যদের সংস্রব এড়িয়ে চলতেন আভিজ্যত্যের গৌরবে। পরে তা সংক্রামিত হয়েছিল নিজেদের ভিতরে। অর্থাৎ বর্ণ বিভেদের বিচারে আর্যরা বিভাজিত হয়ে গিয়েছিল। ধীরে ধীরে ব্রাহ্মণরা হয়ে উঠেছিল সমাজের শ্রেষ্ঠ গোষ্ঠী। এরা নিজেদের আধিপত্যকে সুপ্রতিষ্ঠিত করার জন্য নানা ধরণের ধর্মবিধি সৃষ্টি করেছিল। পৌরাণিক কাহিনি অনুসরণ করলে দেখা যায়, ব্রাহ্মণরা নিজেদের সৃষ্ট মতাদর্শ দিয়ে সনাতন ধর্মদর্শনকে এমন অবস্থায় নিয়ে গিয়েছিল যে, তাদের তপতাপে দেবতারা ভীত ছিল। আধিপত্য বিস্তারের এই ক্ষমতা ধরে রাখার জন্য এরা স্থানীয় রাজাদেরকে সাথে নিয়েছিল। প্রজাকে শাসন করার জন্য রাজারা অমোঘ ধর্মবিবিধকে ব্যবহার করতো। ঋষিদের প্রয়োজন ছিল জীবন-ধারণের জন্য প্রয়োজনীয় উপকরণ। তাছাড়া অনার্য তথা রাক্ষস, দানব ইত্যাদির বন্য মানবগোষ্ঠীর আক্রমণ থেকেও রক্ষা করতো রাজারা। ফলে অনেক ক্ষেত্রে ঋষিরা রীতিমতো আজ্ঞাবাহকে পরিণত হয়েছিল। ঋষিরা রাজাদের গুণকীর্তন করতেন এবং তাঁরা নিজেদের পরেই রাজপুরুষদেরকে 'ক্ষত্রিয়' হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছিলেন। এমন ভাবে তাঁর বিধি তৈরি করলেন, যেখানে ব্রাহ্মণ এবং ক্ষত্রিয় হয়ে জন্মানো ছিল বহু বহু বার জন্মগ্রহণ এবং পূন্য সঞ্চয়ের সুফল। এরই ভিতর দিয়ে সনাতন আর্য ধর্ম হয়ে গেল- সর্বভারতীয় হিন্দু ধর্ম। এসব করে ঋষিরা যে অচলায়তন তৈরি করেছিলেন, তার সুদৃঢ় দেয়ালের ভিতরে নিজেরাই বন্দী হয়ে গেলেন। অব্রাহ্মণ এবং অক্ষত্রিয় আর্যদের সাথে অনার্যদের মেলামেশা বেড়ে গিয়েছিল। এদের সংমিশ্রণে সঙ্কর জাতি সৃষ্টির পথ সুগম এবং দ্রুততর হয়ে উঠেছিল। দেহগত মিশ্রণের পাশাপাশি আদিম প্রাকৃত ভাষার সাথে বৈদিক ভাষার মিশ্রণে ভারতের বিভিন্ন প্রান্তে আদিম প্রাকৃত ভাষা নানা রূপ লাভ করেছিল। একই ভাবে ভারতীয় সঙ্গীতের নতুন রূপ লাভের পথকে প্রশস্ত করেছিল।

ভারতীয় বৈদিক গানের যুগ (খ্রিষ্টপূর্ব ১২০০-৬০০ অব্দ)
বৈদিক সাহিত্য হলো- খ্রিষ্টপূর্ব ১২০০ থেকে ৮০০ অব্দের মধ্যবর্তী সময়ে বেদের সাথে সাথে সম্পর্কিত গ্রন্থাদি। এর ভিতরে রয়েছে সংহিতা, ব্রাহ্মণ, আরণ্যক, উপনিষদ, ধর্ম, শ্রৌত, কল্পসূত্র, শিক্ষা ইত্যাদি। সাধারণত এসকল গ্রন্থাদি থেকে প্রাপ্ত সঙ্গীতবিষয়ক তথ্যাদি অনুসারে বৈদিক গানের বিচার করা হয়।

শুরুর দিকে ভারতীয় ঋষিরা শ্লোক তৈরি করতেন ছন্দে। সেখানে আবৃত্তি বিশেষ স্থান পেলেও, সুরের প্রাধান্য ছিল না। কিন্তু আর্য-লোকসমাজে গানের চর্চা ছিল। কালক্রমে ঋষিরা শ্লোকগুলোতে সুরারোপ করে যাগ-যজ্ঞে পরিবেশন করা শুরু করেছিল। এই সূত্রে সৃষ্টি হয়েছিল সাম গান। আর এসকল গানের সংকলনই হলো-  সামবেদ-সংহিতা। বৈদিক সাহিত্য থেকে গীত, বাদ্য ও নৃত্য সম্পর্কে বিস্তারিত জানা যায়। সে সময়ে গীত-বাদ্য-নৃত্যের সমন্বিত রূপ হিসেবে সঙ্গীত শব্দটি ব্যবহৃত হয় নি।

খ্রিষ্টপূর্ব ৬০০ অব্দের দিকে বৈদিক মূল গ্রন্থাদি সম্পন্ন হয়েছিল। এই সময় ভিতরে ভারতীয় সঙ্গীতের তিনটি ধারা সচল ছিল। এগুলো হলো-
১. অনার্য লোক সঙ্গীত: সেকালের ভারতের বসবাসকারী আদিবাসীদের গান, যা বংশ পরম্পরায় এখনো ভারতের বিভিন্ন আদিবাসীদের মধ্যে চলে আসছে। এঁরা নানাভাবে আর্যদের দ্বারা নিগৃহীত হলেও প্রতিরোধ গড়ে তোলার ক্ষমতা ছিল না। দু'একটি ছোটো বড় বিদ্রোহ দেখা দিলেও আর্য রাজারা তা কঠোরভাবে দমন করতেন। এঁরা মূলত আর্যদের এড়িয়ে চলার জন্য দুর্গম অরণ্যের ভিতরে নিজেদের সংস্কৃতি নিয়ে টিকে ছিলেন। আদিম আর্য লোকসঙ্গীত এবং অনার্য লোকসঙ্গীতের কোনো নমুনা আমাদের কাছে নেই। 

ভারতের লোকসঙ্গীতের চর্চার ছিল প্রধানত ছিল সামাজিক অনুষ্ঠানাদি নির্ভর (বিবাহ, অন্নপ্রাসন, নবান্ন), মানবিক প্রেম, কিছু লোককাহিনি ও ধর্মীয় কাহিনিভিত্তিক গান। এ সকল গানের বাণী ছিল আঞ্চলিক ভাষারীতি (আঞ্চলিক উচ্চারণ এবং অর্থনির্ভর শব্দ) অনুসরণে। আঞ্চলিকতার বিচারে সুরের প্রকৃতিও ছিল ভিন্ন ভিন্ন ধরনের। খাঁটি অনার্য জাতির সঙ্গীতের সুরের প্রকৃতির সাথে আর্যপল্লীগুলোর লোকসুরের পার্থক্য তৈরি হয়েছিল। আবার আর্য-অনার্য লোকসঙ্গীতের সংগীতের মিশ্র ধারার সৃষ্ট লোকগানও ছিল। আঞ্চলিকতার বিচারে অনার্য লোকসঙ্গীতকে প্রাথমিক ভাবে দুটি ভাগে ভাগ করা যায়। ভাগ দুটি হলো-

২. আর্য-লৌকিক গান: আর্য পল্লীর সাধারণ মানুষের গান। উত্তর ভারত তথা আর্যবর্তের বসবাসকারী আর্য পল্লীর গায়করা আনন্দ-বেদনায়, সামাজিক এবং ধর্মীয় অনুষ্ঠানাদি উপলক্ষে নিজেরা নতুন নতুন গান রচনা করে গান গাইতেন। অনেকাংশে এগুলো ছিল অব্রাহ্মণদের রচিত বা পরিবেশিত সংসারের আনন্দবেদনার গান। সামবেদের ভাষায় এসব গানকে উল্লেখ করা হয়েছে গ্রামগেয় গান। মতঙ্গমুনির রচিত বৃহদ্দেশী গ্রন্থে এই গানকে বলা হয়েছে দেশী গান। এই গানের চর্চা করতেন স্ত্রীলোকগণ, বালকগণ, রাখালগণ, রাজন্যবর্গ নিজের নিজের ইচ্ছানুসারে নিজের নিজের দেশভূমিতে অনুরাগ-সহকারে। এই সংজ্ঞা থেকে বিশেষভাবে জানা যায় আঞ্চলিক গানের উপস্থিতির কথা। বিভিন্ন অঞ্চলের সাধারণ আর্যভাষাভাষীরা সাধারণভাবে নিজের নিজের দেশভূমিতে অনুরাগ-সহকারে পরিবেশন করতেন।  আদিম ভারতী্য়-আর্যদের সাধারণ মানুষের সাথে ব্রাহ্মণদের গভীর সম্পর্ক ছিল পারস্পরিক স্বার্থে। ঋষিরা সাধারণ অব্রাহ্মণদের যতই অস্পৃশ্য ভাবুক, তাদের অন্ন-বস্ত্রের যোগানদার হিসেবে সাধারণ মানুষের কাছে যেতেই হতো। অন্য দিকে পরকালের স্বর্গলোকে স্থান পাওয়ার উপায় এবং অবলম্বন ছিল ব্রাহ্মণরা। ফলে ধর্মের আফিমের নেশায় বুঁদ হয়ে তারা ব্রাহ্মণদের সেবা করতেন।

৩. আদিম ভারতীয়-আর্যদের ধর্মগীত: আর্য ঋষিরা ধর্মীয় আদর্শে যে শ্রুতি রচনা করতেন, তার চর্চা শুধু তাদের শিষ্যদের ভিতরেই ছিল। এই সময় আর্য ঋষিরা তাঁদের ধর্মাদর্শনকে ছন্দে প্রকাশ করে তা শিষ্যদের শোনাতেন। এই ছন্দোবদ্ধ ধর্মবাণীর সাধারণ নাম ছিল ঋক। শিষ্যরা তা শুনে মুখস্থ করে নিতেন। এই শিষ্যরা আবার তাঁদের শিষ্যদের শোনাতেন। দীর্ঘকাল ধরে গুরুপরম্পরা এই ঋকসমূহ গুরু ও শিষ্যদের স্মৃতিতে সংরক্ষিত হয়েছিল। এই ঋকসমূহ শিষ্যরা শ্রবণের মাধ্যমে গ্রহণ করতেন, তাই এর নাম ছিল শ্রুতি। এই গানের বাণী ছিল বেদের ঋকসমূহ। কৃষ্ণদ্বৈপায়ন (বেদব্যাস) ছন্দোবদ্ধ শ্রুতিসমূহের সংকলনের নাম দিয়েছিলেন বেদ।

বেদব্যাস বিষয়াঙ্গের বিচারে প্রাথমিকভাবে বেদকে তিনটি ভাগে ভাগ করেছিলেন। এই ভাগ তিনটি হলো-

এর বাইরে তিনি সাঙ্গীতিক আদর্শের বিচারে অতিরিক্ত অপর একটি বেদ যুক্ত করেছিলেন। এর নাম দেওয়া হয়েছিল সামবেদ। মূলত যজ্ঞানুষ্ঠানে যে সকল ছন্দোবদ্ধ ঋকসমূহ সুর-সহযোগে পরিবেশিত হতো- তার নাম ছিল সাম গান

সামগানেরর ঋষিরা সুরেলা ওম্ ধ্বনি দিয়ে একটি আধ্যাত্মিক পরিবেশ তৈরি করতেন। এরপর এরই রেশ ধরে ঋকগুলোকে সুরেলা করে পরিবেশন করতেন। এই সময় এঁরা একটি বিশেষ কম্পাঙ্কের ধ্বনিকে অনুসরণ করতেন। সামগানে অংশগ্রহকারী অন্যান্য ঋষিরা মূল গায়কের সাথে সুর মিলিয়ে সুরেলা ওম্ ধ্বনি উচ্চারণ করতেন। এরপর এঁরা নির্বাচিত কোনো শ্লোক ওই সুরে আবৃত্তি করতেন। এই বিচারে এই গান হয়ে উঠেছিল সঙ্গীতোপযোগী ধ্বনিতে নিবদ্ধ আবৃত্তি। হয়তো একটি সঙ্গীতোপযোগী ধ্বনি নির্ভর শ্লোকের আবৃত্তির এক ঘেঁয়েমি দূরীকরণের জন্য- তাঁরা আবৃত্তিতে অন্য ধ্বনি ব্যবহার করা শুরু করেছিলেন। এর ফলে তাঁদের আবৃ্তিতে যুক্ত হয়েছিল দুটি সঙ্গীতোপযোগী ধ্বনি। সামবেদের সময় এসে এই সঙ্গীতোপযোগী তিনটি ধ্বনি বৃদ্ধি হয়েছিল।

বৈদিক গানের ক্রমবিবর্তনের ধারার প্রাথমিক যে তিনটি সঙ্গীতোপযোগী ধ্বনির নাম পাওয়া যায়, তা হলো-

  • আর্চিক: একটি সঙ্গীতোপযোগী ধ্বনির গান
  • গাথিক: দুটি সঙ্গীতোপযোগী ধ্বনির গান
  • সামিক: তিনটি সঙ্গীতোপযোগী ধ্বনির গান। এই ধ্বনিগুলোর নাম ছিল- উদাত্ত, অনুদাত্ত ও স্বরিত।
    • উদাত্ত: গলা ছেড়ে উচ্চস্বরে গাওয়া হতো। একালের বিচারে এগুলো ছিল তারার স্বর
    • অনুদাত্ত: স্বাভাবিক কণ্ঠস্বরের চেয়ে নিচু ও মোটা সুরে গাওয়া হতো। একালের বিচারে এগুলো ছিল উদারার স্বর।
    • স্বরিত: উদাত্ত ও অনুদাত্তের মাঝে ব্যবহৃত ধ্বনি।
কালক্রমে সঙ্গীতোপযোগী ধ্বনির সংখ্যা দাঁড়িয়েছিল ৭টি। বেদোত্তর কালের সঙ্গীতজ্ঞরা এই ৭টি ধ্বনিকে স্বরস্থানের বিচারে সাজিয়ে, প্রতিটি সঙ্গীতোপযোগীর ধ্বনির নাম দিয়েছিলেন। গানের কতগুলো স্বর ব্যবহৃত হবে, তার উপর ভিত্তি করে গানের জাতি নির্ধারিত হয়েছিল। এগুলো হলো-

চর্চার বিচারে সামগানগুলোকে চারটি ভাগে ভাগ করা হয়ে থাকে। এগুলো হলো-

বৈদিক যুগের বাদ্যযন্ত্র
বৈদিক সাহিত্যসমূহ থেকে নানা ধরনের বাদ্যযন্ত্রের বিষয়ে জানা যায়। এসকল বাদ্যযন্ত্রের শ্রেণিকরণের বিষয়টি সে সময় গুরুত্ব পায় নি। এসকল বাদ্যযন্ত্রে প্রকৃতি হিসেবে বেদোত্তোর কালে শ্রেণিকরণ করা হয়েছিল। এই শ্রেণিকরণের সূত্রে উল্লেখ করা যায়- বৈদিক যুগে অবনদ্ধ, তত, শুষি যন্ত্রের বিকাশ ঘটেছিল।

পরবর্তী অধ্যায়: বেদোত্তর যুগ: (খ্রিষ্টপূর্ব ৬০০ -খ্রিষ্টীয় ১ম শতাব্দী)


তথ্যসূত্র: