মৃদঙ্গম
সংস্কৃত মৃদঙ্গঃ>তেলেগু, কানাড়া মৃদঙ্গম>বাংলা মৃদঙ্গম।
ঊর্ধ্বক্রমবাচকতা {ঘাত-বাদ্যযন্ত্র |আনদ্ধ  | বাদ্যযন্ত্র | যন্ত্র | ডিভাইস | যন্ত্রীকরণ | মনুষ্য-সৃষ্টি | এককঅংশ | দৈহিক-লক্ষ্যবস্তু | দৈহিক সত্তা | সত্তা | }

সমতূল্য নাম: কানাড়া, বাংলা, হিন্দি- মৃদঙ্গম, তামিল- তান্নুমাই।

ভারতীয় সঙ্গীতে ব্যবহৃত একপ্রকার তাল রক্ষাকারী  আনদ্ধ বাদ্যযন্ত্র। দক্ষিণ ভারতীয় সঙ্গীতে এই যন্ত্র শাস্ত্রীয় সঙ্গীতে ব্যবহৃত হয়। সংস্কৃত মৃদঙ্গ শব্দের রূপতাত্ত্বিক বিশ্লেষণ হলো- দক্ষিণ ভারতের তেলেগু, কানাড়া, তামিল ভাষায় সংস্কৃত মৃদঙ্গঃ শব্দের সাথে ম ধ্বনির আগমে মৃদঙ্গম শব্দ তৈরি হয়েছে। প্রাচীন ভারতে এই যন্ত্রটির দেহ কাঠামো তৈরি হতো মাটি দিয়ে। এই কারণে প্রাচীন ভারতে একে মৃদঙ্গম বলা হতো। হিন্দু পৌরাণিক কাহিনি মতে, মৃদঙ্গম গণেশ এবং শিবের সহচর নন্দী এই বাজাতেন। পৌরাণিক কাহিনি মতে মহাদেবের তাণ্ডব নাচের সাথে তাল রক্ষার জন্য মৃদঙ্গম ব্যবহৃত হতো। এই কারণে দক্ষিণ ভারতে এই যন্ত্রের অপর নাম 'দেব বাদ্যম'। খ্রিষ্টপূর্ব তৃতীয় শতাব্দী থেকে খ্রিষ্টীয় ৪র্থ শতাব্দী পর্যন্ত দক্ষিণ ভারতের শিল্প-সংস্কৃতির বিকাশকালকে বলা হয় 'সঙ্গম কাল'। এই সময়ের ভিতরে মৃদঙ্গম আদিম দশা থেকে, আধুনিক দশায় রূপ লাভ করে। 'সঙ্গমকাল'-এ এই তালযন্ত্রটি অন্যান্য যন্ত্রের সাথে যুদ্ধের সময় ব্যবহৃত হতো।

আদিকালের মৃদঙ্গমের দেহকাঠামো মাটি দিয়ে তৈরি হওয়ার কারণে, এই যন্ত্রটি অত্যন্ত ভারি হতো এবং অসাবধানে ভেঙ্গে যেতো। এই দুটি অসুবিধা থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য কাঠের দেহ-কাঠামো তৈরি শুরু হয়েছিল। বর্তমানে মৃদঙ্গমের দেহকাঠামো কাঠ ছাড়া অন্য কোনো কঠিন দ্রব্য ব্যবহৃত হতে দেখা যায় না। মৃদঙ্গমের জন্য উপযুক্ত কাঠ হিসেবে কাঁঠাল কাঠকে বিবেচনা করা হয়।

এর দৈর্ঘ্য প্রায় ৫০ সেমি এবং মধ্যস্থালের ব্যাস ২০-২৫ সেন্টিমিটার। কাঠের নলাকার খোল এর দেহগত কাঠামো। এর মধ্যভাগ স্ফীত। ফলে এর উভয়দিকের খোলা মুখের পরিধি মধ্যভাগের চেয়ে কম হয়। এর উভয় প্রান্তের খোলা মুখ চামড়া দ্বারা আবদ্ধ থাকে। এর ডান দিকের মুখটি বাম পাশ মুখ অপেক্ষা ছোটো হয়। বাম দিকের মুখের ব্যাস প্রায় ১৮ সে মি হয়। উভয় মুখে সাথাম বা কারানই নামক একধরনের কালো পদার্থের প্রলেপ দেওয়া হয়।  উভয় দিকের মুখের চামড়ার আচ্ছাদন লম্বা চামড়ার ফিতা দিয়ে টেনে বাঁধা থাকে। যন্ত্রের ধ্বনিকে সুরোপযোগী করার পর তা ধরে রাখার জন্য, অনেক সময় চামড়ার ফিতার উপর দিয়ে একটি দড়ি বা ফিতা দিয়ে বাঁধা হয়।

এর বাম দিকের মুখকে বলা হয় থোপ্পি বা এডা ভাগা, আর ডান দিকের অংশকে বলা হয় ভালান্থালাই বা বালা ভাগা। সাধারণত বামদিকের সুর মিলানোর জন্য সুজি বা আটা লাগানোর রীতি আছে। ছাউনির কিনারের বান্ধনকে পিননল বলা হয়। এই ধ্বনিগুলোর সমন্বয়ে মৃদঙ্গম থেকে অন্যান্য ধ্বনি তৈরি হয়ে থাকে।

মৃদঙ্গমের বোলবাণী:
মৃদঙ্গের উভয় মুখে নানাভাবে আঘাত করে, নানা রকম ধ্বনি উৎপন্ন করা হয়। নিচে কতিপয় উল্লেখযোগ্য বোল নিয়ে আলোচনা করা হয়।
 
নম বা নাম:
এটি কম্পিত ধ্বনি। ডান দিকে এই ধ্বনি উৎপন্ন করা হয়। এক্ষেত্রে অনামিকার অগ্রভাগ কালো অংশের ভিতরে রাখতে হয়। মধ্যমা উঁচুতে থাকে এবং কানি বরাবর তর্জনির দ্বারা আঘাত করা হয়। কনিষ্ঠা এবং নিষ্ক্রিয় থাকে।
থুম:
কম্পিত ধ্বনি। বাম দিকে বাজানো হয়। মূলত কানি বরাবর আঘাত করে খোলা শব্দ তৈরি করা হয়। এক্ষেত্রে সবগুলো আঙুল সটান অবস্থায় আঘাত করা হয়
থা:
অকম্পিত ধ্বনি। সবগুলো আঙুল সটান রেখে, বাম মুখের কানিতে আঘাত করে বাজানো হয়। এক্ষেত্রে শব্দকে অকম্পিত রাখার জন্য আঙুলগুলো চেপে রেখে শব্দের অনুরণন থামিয়ে দেওয়া হয়।
 

সূত্র :