দোলনচাঁপা
নজরুলসৃষ্ট রাগ। অন্য নাম: দোলনচম্পা

১৯৪০ খ্রিষ্টাব্দে দুটি পর্বে নজরুলসৃষ্ট রাগের অনুষ্ঠান প্রচারিত হয়েছিল কলকাতা বেতারকেন্দ্র থেকে। এর প্রথম পর্ব প্রচারিত হয়েছিল ১৩ই জানুয়ারি। এই পর্বে প্রচারিত হয়েছিল ৬টি রাগ ও ওই রাগের উপর রচিত গান এই রাগটি ছিল প্রথম পর্বের ষষ্ঠ রাগ।

'বেতার জগত'-এর ১৬-১-১৯৪০ সংখ্যায় নজরুল গানটির  রাগরূপ বিশ্লেষণ করেছিলেন। গানটির সাথে রাগের আরোহ-অবরোহ, বাদী, সম্বাদী উল্লেখের সাথে সাথে রাগের প্রকৃতি বর্ণিত হয়েছে, এই ভাবে-

'ইহাতে হাম্বীর, কামোদ ও নট রূপ মাঝে মাঝে উঁকি দেয়, কিন্তু ইহার গতি অত্যন্ত দোলনশীল বলিয়া ঐসব রাগের আভাস দিয়াই ছুটিয়া পালাইয়া যায়। আরোহণে পূর্ববর্তী সুরকে ধরিয়া 'ঝুলনা' বা দোলাই ইহার প্রধান বিশেষণ, দক্ষিণ সমীরণে দোলনচাঁপার দোলনের সঙ্গে ইহার গতির সামঞ্জস্য হইতে ইহার নাম দোলনচাঁপা হইয়াছে। তীব্র মধ্যম ও গা মা না ধা-র চাঁপা ফুলের সুরভির তীব্রতা ও মাধুর্য ফুটিয়া উঠে।'

ভারতবর্ষ পত্রিকায় [২৮শ বর্ষ, ২য় খণ্ড, ৩য় সংখ্যা। ফাগুন ১৩৪৭ (ফেব্রুয়ারি-মার্চ ১৯৪১)- 'দোলন চাঁপা বনে দোল' গানটির স্বরলিপি প্রকাশিত হয়েছিল। শিরোনাম ছিল- 'দোলন-চম্পা। তাল─তৃতালী'। [নমুনা]

জগৎঘটক-কৃত স্বরলিপি-সহ মুদ্রিত হয়েছিল। পৃষ্ঠা: ৩৪১-৩৪৩] পাদটীকায় উল্লেখ ছিল-

"রাগটি কবি কাজী নজরুল ইসলাম রচিত। আদি কয়েকটি রাগ রাগিণীর মিশ্রণ-ফলে কত যে নতুন রাগের সৃষ্টি এতাবৎকাল হ'য়ে এসেছে এবং হ'তে পারে, এই রাগটি তাহার অন্যতম দৃষ্টান্ত। এমনি ক'রেই ভারতের সঙ্গীত সম্পদ চিরদিন বৃদ্ধি পেয়ে এসেছে, ইহার পিছনে থাকা দরকার- কৃষ্টি ও প্রতিভা"।
এছাড়া পাদটীকায় রাগটির পরিচয় দেওয়া হয়েছে-

'এ-রাগের আরোহাবরোহ:- সা গা হ্মা পা, গা মা ধা, পা না ধা র্সা।
                                     র্সা না ধা ণা ধা পা হ্মা পা, গা মা রা সা॥
বাদী-পঞ্চম। সম্বাদী-ষড়জ। গতি-বক্র।

রাগ পরিচিতি

আরোহণ: সা গা হ্মা পা, গা মা ধা, পা না ধা র্সা
অবরোহণ: র্সা না ধা ণা ধা পা হ্মা পা, গা মা রা সা
ঠাট: বিলাবল
জাতি: ষাড়ব-সম্পূর্ণ।
বাদীস্বর: পঞ্চম
সমবাদী স্বর: ষড়্‌জ
অঙ্গ: পূর্বাঙ্গ প্রধান।
সময়: সন্ধ্যা
সম প্রকৃতির রাগ: পাহাড়ী (খাম্বাজ ঠাটের), তিলককামোদ।
চলন: বক্র
পকড় : স র, গ স র, ধ্‌ প্, ধ্ স

এই রাগে কাজী নজরুল ইসলামের ১টি গান পাওয়া যায়। গানটি হলো-