সাবিত্রী
এই নামে ৩টি চরিত্র
পাওয়া যায়।
১.
ঊর্ধ্বক্রমবাচকতা
{|
হিন্দু দৈবসত্তা
|
দৈবসত্তা
|
আধ্যাত্মিক
সত্তা
|
বিশ্বাস |
প্রজ্ঞা
|
জ্ঞান |
মনস্তাত্ত্বিক বিষয়
|
বিমূর্তন
|
বিমূর্ত-সত্তা
|
সত্তা
|}
১.১. হিন্দু
পৌরাণিক কাহিনী মতে― বেদমাতা গায়ত্রী।
মৎস্য পুরাণের মতে― ইনি দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে নারী ও পুরুষের রূপ লাভ করেন।
তাঁর নারীররূপই সাবিত্রী নামে পরিচিত।
ইনিই
সরস্বতী,
গায়ত্রী,
ব্রাহ্মণী নামে পরিচিতা।
অন্য অর্থে যা হতে সর্বলোকের সৃষ্টি হয় তাকেই সবিতা বলে।
আর সবিতা যার দেবতা তিনি সাবিত্রী।
বা যিনি বেদ প্রসব করেন তিনিই সাবিত্রী।
১.২.
সূর্যের অধিষ্ঠাত্রী দেবী।
২. ঊর্ধ্বক্রমবাচকতা { পৌরাণিক সত্তা | কাল্পনিকসত্তা | কল্পনা | সৃজনশীলতা | দক্ষতা | জ্ঞান | মনস্তাত্ত্বিক বিষয় | বিমূর্তন | বিমূর্ত-সত্তা | সত্তা |}
অশ্বপতি নামক রাজার একমাত্র কন্যা। মায়ের নাম ছিল মালবী। অশ্বপতি সাবিত্রীদেবীকে (বেদমাতা গায়ত্রী) নিষ্ঠার সাথে পূজা করে এই কন্যা লাভ করেছিলেন। তাই এই কন্যার নামও সাবিত্রী রাখা হয়েছিল। সাবিত্রী যৌবনে উপনীত হওয়ার পর, তাঁর অসাধারণ সৌন্দর্যের কারণে, কোন সাধারণ যুবক তাঁকে বিবাহ করতে সাহসী হলেন না। পরে অশ্বপতি তাঁকে নিজের পছন্দমতো স্বামী খুঁজে নেবার অনুমতি দেন। এরপর সাবিত্রী সদলবলে স্বামীর অনুসন্ধানে বের হন। অনুসন্ধান শেষে সাবিত্রী রাজবাড়িতে ফিরে এসে দেখেন অশ্বপতি নারদের সাথে কথোপকথন করছেন। নারদ অশ্বপতিকে সাবিত্রী সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলে, অশ্বপতি সাবিত্রীর বিবাহের অসুবিধার কথা বলেন। এরপর নারদের সামনেই অশ্বপতি সাবিত্রীকে অনুসন্ধানের ফলাফল বর্ণনা করতে বলেন। উত্তরে ইনি সত্যবানকে পছন্দের পাত্র হিসাবে উল্লেখ করেন। অশ্বপতি নারদকে সত্যবানের বিষয়ে জিজ্ঞাসা করলে, নারদ সত্যবানের সবিশেষ প্রশংসা করেন এবং একই সাথে জানান যে― সত্যবান স্বল্পায়ু। এরপর অশ্বপতি সাবিত্রীকে অন্য স্বামী খুঁজে নেবার কথা বললে, সাবিত্রী সত্যবানকেই স্বামী হিসাবে গ্রহণ করবেন বলে প্রতিজ্ঞা করেন। সব শুনে নারদ সত্যবানের সাথেই সাবিত্রীর বিবাহ দেওয়ার কথা বলেন। পরে অশ্বপতি সাবিত্রীকে সাথে নিয়ে দ্যুমৎসেনের আশ্রমে আসেন এবং সেখানেই সত্যবানের সাথে সাবিত্রীর বিবাহ হয়।
বিবাহের এক বৎসর পরই সত্যবানের মৃত্যুর দিন উপস্থিত হয়। এই দিন সত্যবান বনে ফল ও কাঠ আনার জন্য উদ্যোগ নিলে, সাবিত্রী শ্বশুরের অনুমতি নিয়ে সত্যবানের সাথে বনে যান। ফল ও কাঠ সংগ্রহ করতে করতে সত্যবান হঠাৎ শিরঃপীড়া অনুভব করে অবসন্ন হয়ে পড়ে যান। পরে সাবিত্রী সত্যবানের মাথা কোলে তুলে নিয়ে অপেক্ষা করতে লাগলেন। কিছুক্ষণ পর সাবিত্রী রক্তবস্ত্র পরিহিত বিরাটকায় এক ভয়ঙ্কর পুরুষকে সত্যবানের পাশে দেখতে পেলেন। সাবিত্রী জিজ্ঞাসা করে জানতে পারেন যে― তিনিই যম। সত্যবান পুণ্যবান এবং সাবিত্রী পতিব্রতা বলে, যমদূতের পরিবর্তে যম নিজেই এসেছেন। এরপর সত্যবানকে পাশবদ্ধ করে যমকে দক্ষিণ দিকে যেতে দেখে, সাবিত্রী যমের অনুসরণ করে অগ্রসর হন। যম তাঁকে অনুসরণ না করে ফিরে যেতে বলেন। কিন্তু সাবিত্রী স্তব দ্বারা যমকে সন্তুষ্ট করলে, যম তাঁকে স্বামীর জীবন ছাড়া অন্য যে কোন বর প্রার্থনা করতে বলেন। সাবিত্রী যমের কাছ থেকে প্রথম বর প্রার্থনা করে পান কিন্তু সাবিত্রী তারপরেও যমকে অনুসরণ করা থেকে বিরত হলেন না। যম সাবিত্রীকে থামানোর জন্য পাঁচবার বর দেন। চতুর্থ বর দানের পর, যম সত্যবানের প্রাণ ফিরিয়ে দিতে বাধ্য হন এবং পঞ্চম বরে সত্যবানের প্রাণ ফিরিয়ে দিলে, সাবিত্রী যমের অনুসরণ করা থেকে বিরত হন। যমের দেওয়া এই পাঁচটি বর ছিল―
প্রথম বর : তাঁর শ্বশুরের অন্ধত্ব দূর হওয়ার বর প্রার্থনা।
দ্বিতীয় বর : তাঁর শ্বশুরের রাজ্যলাভ প্রার্থনা করেন।
তৃতীয় বর : সাবিত্রীর পিতার শতপুত্র লাভ প্রার্থনা।
চতুর্থ বর : সত্যবানের ঔরসে সাবিত্রীর শতপুত্র প্রার্থনা।
পঞ্চম বর : সত্যবান জীবিত হওয়ার প্রার্থনা।
এরপর যম সত্যবানকে মুক্ত করে দেন এবং সাবিত্রীকে আশীর্বাদ করে বিদায় নেন। এরপর সাবিত্রী সত্যবানের অচেতন শরীরের কাছে এসে, তাঁর মাথা কোলে তুলে নিয়ে বসেন। পরে সত্যবানের সংজ্ঞা ফিরে এলে, উভয়েই আশ্রমে ফিরে যান। যমের আশীর্বাদে দ্যুমৎসেনের চক্ষু ও রাজ্যলাভ এবং অশ্বপতির শতপুত্র লাভ হয়।