অনুভূতি
বানান বিশ্লেষণ: অ+ন্+উ+ভ্+ঊ+ত্+ই
উচ্চারণ : o.nu.bʰu.i
(ও.নু.ভু.তি)।

শব্দ-উৎস: সংস্কৃত অনুভূতি)>বাংলা অনুভূতি।
রূপতাত্ত্বিক বিশ্লেষণ: অনু-ভূ (হওয়া) +তি (ক্তিন্), ভাববাচ্য

পদ: বিশেষ্য
ঊর্ধ্বক্রমবাচকতা  {| দশা | সত্তাগুণ | বিমূর্তন | বিমূর্ত-সত্ত | সত্তা |}
অর্থ: মমতাময় বা আবেগময় দশার অভিজ্ঞতালব্ধ বোধ।
সমার্থক শব্দাবলি: অনুভূতি, বোধ।
ইংরেজি:
feeling

দর্শন শাস্ত্রের বিচারে অনুভূতি
ইন্দ্রিয় দ্বারা বাহিত সঙ্কেত মস্তিষ্কের দ্বারা প্রক্রিয়করণের মধ্য দিয়ে যে চূড়ান্ত ফলাফল পাওয়া যায়, '
আমি' নামক সত্তা গ্রহণ করে। এই ফলাফল মনোলোকে একটি বিশেষ দশায় প্রকাশ পায়। এই দশাকেই অনুভব বলা যায়। ইন্দ্রিয়ভেদে ফলাফলের প্রকৃতি হয় ভিন্ন ভিন্ন, আবার একই ইন্দ্রিয়ের ফলাফলও ভিন্ন ভিন্ন রূপে প্রকাশ পায়। তাই আমি'র কাছে অনুভূতিও হয় নানা ধরনের। 'আমি 'র কাছে প্রতিটি অনুভূতি পৃথক পৃথক বৈশিষ্ট্য নিয়ে উপস্থিত হয়। 'আমি' তাৎক্ষণিকভাবে অনুভূতি দ্বারা প্রভাবিত হয়। অনুভূতির এই তৎক্ষণিক প্রভাব দুটি প্রতিক্রিয়া হিসেবে প্রকাশ পায়।

অনুভূতি এক ধরনের জ্ঞানের জন্ম দেয়, যা স্মৃতিভাণ্ডারে সংরক্ষিত থাকে। জ্ঞান থেকে উৎপন্ন হয় উপলব্ধি।

মানুষ ইন্দ্রিয় দিয়ে অনুভব করে, তা অধিকাংশ ক্ষেত্রে স্বাভাবিক মনে করে। কারণ, অধিকাংশ অনুভূতির সাথে তার আগে পরিচয় আছে। এর পিছনে রয়েছে আদিম কিছু অনুভূতি যা মানুষের জিন সঙ্কেতের ভিতরে গ্রথিত হয়েছে। যেমন অন্ধকার বা আলো দেখার অনুভূতি। জিন-সঙ্কেতের সাথে যুক্ত হয় পূর্ব অভিজ্ঞতা, যা একজন মানুষ নিজে অর্জন করে। একজন জন্মান্ধ যদি হঠাৎ চক্ষুষ্মান হয়, তাহলে তার পূর্ব অভিজ্ঞতা না থাকার কারণে দেখার ব্যাপারটা নতুন মনে হবে। দেখার অনুভূতি বিষয়টা তার জিনসঙ্কেতে থাকা সত্যেও বিষয়টি নতুনভাবে অনুভব করবে।

জিনসঙ্কেতে থাকে মূলত কিছু অনুভবের ছাঁচ। যার দ্বারা একটি ধারণা তৈরির সুযোগ থাকে। বাস্তবে সে যা দেখে তার সাথে ওই ছাঁচের মিল ঘটিয়ে সত্যিকারের দেখার কাজটা হয়। এই ছাঁচ বিষয়টা অভিজ্ঞতা থেকেও জন্ম নিতে পারে। পাশের দুটি ছবি রয়েছে। ছবি দুটি যথাযথভাবে আঁকা না হলেও, একজন দর্শক অনুভব করবেন, এর একটা ত্রিভূজ, অপরটি আয়তক্ষেত্রে।

সঙ্গীতের বহুবার শোনা গানের প্রারম্ভিক যন্ত্রসঙ্গীত শুনেই বলা যায়, কি গান শুনতে বসেছি। এটা এতটাই সোজা ব্যাপার যে, অনেকে এটাকে হয়তো অনুভবের উদাহরণ হিসেবে আনতেই রাজি হবেন না। কিন্তু রাগ সঙ্গীতের ক্ষেত্রে? কোনো গায়ক যখন রাগ সঙ্গীতের আসরে বসে কয়েকটি স্বর নিয়ে একটু আলাপ করেন, তখন অভিজ্ঞ শ্রোতা রাগরূপটি অনুভব করতে পারেন। এমনকি দেখা যায়, শিল্পী যে বন্দিশ পরিবেশন করবেন তা হয়তো, শ্রোতা আগে শোনে নি। কিন্তু শ্রোতার অনুভবে আছে বহু রাগের ছাঁচ, সে শিল্পীর কয়েকটি স্বর নিয়ে আলাপ শুনেই আগের ছাঁচের সাথে মিলিয়ে ঠিকই রাগ নাম উল্লেখ করতে পারবেন। তালজ্ঞান যাঁর আছে, তিন ত্রিতালের বোলবাণী ও চলন শুনেই বলে দিতে পারেন। তা সে তবলায় বাজুক আর খোলে বাজুক। তা একক বাদন হোক আর সঙ্গত হোক। মূলত এই কাজটি হয়, অনুভূতির ছাঁচে। এই ছাঁচ মূলত স্মৃতিতে থাকে একক দল গঠন করে। যে কোনো বিষয়ের শৈলী যখন কারো সামনে উপস্থিত উপস্থিত হয়, তখন পুরো শৈলীকে সে অনুভব করে এবং স্মৃতিতে রক্ষিত ছাঁচের সাথে মিলিয়ে চেনার চেষ্টা করে।

ছোট ছোট অনুভূতি এককভাবে এবং দলগতভাবে ব্যবহৃত হতে পারে। আর এর পুরোটাই ঘটে মস্তিষ্কের স্নায়ুকোষগুলোর যোগাযোগের মধ্যে। কোনো অনুভব যখন মস্তিষ্কে উপস্থিত হয়, তা স্নায়ুকোষের প্রান্তদেশের সেরোটোনিন জাতীয় রাসায়নিক উপাদান সমূহের হ্রাস-বৃদ্ধি ঘটায়। এর ফলে অনুভব থেকে জন্ম নেয় আনন্দ, বেদনা, আবেগ ইত্যাদি। আর সেটা আবার অনুভব করে 'আমি'