স
আন্তর্জাতিক ধ্বনিলিপি :
sɔ
ইউনিকোড: u+09B8
বিশেষ্য
ঊর্ধ্বক্রমবাচকতা
{|
বর্ণ
|
বর্ণচিহ্ন |
লিখিত প্রতীক
|
প্রতীক
|
সঙ্কেতচিহ্ন
|
যোগাযোগ |
বিমূর্তন
|
বিমূর্ত
সত্তা
|
সত্তা
|}
সমার্থকশব্দসমূহ
(synonyms):
স।
এই বর্ণের নাম
-স।
বাংলা বর্ণমালার
দ্বিচত্বারিংশ
(৪২) বর্ণ,
ব্যঞ্জনবর্ণের
৩১ সংখ্যক
বর্ণ।
স-এর উচ্চারণ রূপ
এটি
উষ্ম,
অঘোষ,
স্বল্পপ্রাণ ধ্বনি।
স্বাধীনভাবে উচ্চারণযোগ্য
রূপ হলো-
শ-এর মতো।
স্থান বিশেষে এই বর্ণটি শ-এর পূরক ধ্বনি হিসেবে স (s)-এর
মতো হয়। দেখা যায়,
অন্য ব্যাঞ্জনধ্বনি এই ধ্বনির
সাথে যখন যুক্ত হয়, তখন এর উচ্চারণে নানা রকমের পরিবর্তন ঘটে। এর যুক্তবর্ণগুলো
শব্দের
আদি, মধ্য বা অন্ত্যে হতে পারে। এইভাবে এর যুক্ত বর্ণের শ্রেণিকরণ করার পিছনে
প্রধান কারণ হলো- এই যুক্তধ্বনি শব্দের আদি, মধ্য বা অন্ত্যের বিচারে ধ্বনিগত
বিচারে পরিবর্তিত হয়।
নিচে স-এর উচ্চারণ বিধি দেওয়া
হলো।
আদ্য
শ-যুক্ত যুক্তধ্বনি:
- ঋ-কার,
ক বর্গ, ট বর্গ, ত বর্গ, ম
ব্যতীত প বর্গের যে কোনো ধ্বনি, র-ফলা এবং ল ফলা
যুক্ত স, স্নিগ্ধ শ বা স-এর মতো উচ্চারিত হয়। যেমন−
সৃষ্ট
[সৃশ্.টি] [sriʃ.ʈi]
শব্দতালিকা:
- ঋ-কার
সৃজক, সৃজন,
সৃজ্যমান, সৃষ্ট।
- ক= স্কন্ধ,
স্কুটার, স্কুল, স্ক্রু ইত্যাদি।
- খ=স্খলন,
স্খলিত ইত্যাদি।
- ট=স্টক,
স্টার, স্টিম, স্টিল, স্টেজ, স্টেনগান, স্টেশন, স্টোর, স্ট্যাম্প ইত্যাদি।
- ত= স্তন,
স্তব, স্তাবক, স্তব্ধ, স্তম্ভ, স্তর, স্তিমিত, স্তুতি, স্তূপ, স্তেন,
স্তোক, স্তোতা, স্তোত্র, স্ত্রৈন, স্থগিত, স্থপতি, স্থূল, স্থাণু, স্থান,
স্থাপত্য, স্থাপন, স্থূল, স্থৈর্য ইত্যাদি।
- ন=স্নাত,
স্নান, স্নায়ু, স্নিগ্ধ, স্নেহ ইত্যাদি।
- প=স্পন্দন,
স্পর্ধা, স্পর্শ, স্পিকার, স্পৃশ্য ইত্যাদি।
- ফ= স্ফটিক,
স্ফীত, স্ফুরণ, স্ফুলিঙ্গ, স্ফূর্ত ইত্যাদি।
- র-ফলা= স্রবণ,
স্রষ্টা, স্রাব, স্রুত, স্রোত ইত্যাদি।
- ল-ফলা= স্লিপ,
স্লেট, স্লোগান ইত্যাদি।
-
ব-ফলা:
ব-ফলা যুক্ত স, শব্দের আদিতে
থাকলে, শ-এর মতো হয়। যেমন−
স্বাধীন
[শা.ধিন্] [ʃaɔ.d̪ʰin]
শব্দতালিকা: স্বকীয়, স্বকৃত, স্বখাত, স্বগত, স্বগৃহ, স্বচ্ছ, স্বচ্ছন্দ, স্বজন,
স্বজাত, স্বজাতি, স্বতন্ত্র, স্বত্ব, স্বদল, স্বদেশ, স্বধর্ম, স্বন, স্বনাম,
স্বপন্,
স্বপ্ন, স্ববশ, স্বভাব,
স্বমত, স্বয়ং, স্বয়ম্ভূ, স্বর, স্বরচিত, স্বরাজ্য, স্বরাষ্ট্র, স্বরিত, স্বরূপ,
স্বর্গ, স্বর্ণ, স্বল্প, স্বশাসন, স্বস্তিকা, স্বস্থ, স্বাক্ষর, স্বাগত,
স্বাচ্ছন্দ্য, স্বাতন্ত্র্য, স্বাতি, স্বাদ, স্বাদেশিক, স্বাধীকার, স্বাধীন,
স্বাবলম্বন, স্বাভাবিক, স্বামী, স্বায়ত্ত, স্বার্থ, স্বেচ্ছা, স্বৈর,
স্বোপার্জিত ইত্যাদি।
-
ম-ফলা:
ম-ফলা যুক্ত স,
সানুনাসিক স বা শ ধ্বনি তৈরি করে। ফলে এর উচ্চারণ চন্দ্রবিন্দুযুক্ত শ বা স-এর
মতো শোনায়। যেমন−
-
সানুনাসিক শ ধ্বনি (অ-কার এবং আকারযুক্ত স্ম, সব সময় শঁ ধ্বনি তৈরি করে)।
যেমন−
স্মরণ [শঁ. রোন্]
[ʃɔ̃.ron]
এরূপ: স্মরণার্হ, স্মরণিকা, স্মরণীয়, স্মরণার্থ, স্মর্তব্য, স্মারক,
স্মার্ত, স্মের
- কিন্তু এর
সাথে ঋ-কার থাকলে,
কম্পিত
ধ্বনি (Trilled/Rolled)
র-ধ্বনির প্রভাবে শঁ ধ্বনি
সঁ-তে পরিণত হয়। যেমন-
স্মৃতি [সৃঁ.তি] [srĩ.t̪i]
এরূপ: স্মৃত, স্মৃতি। এর সাথে অন্য শব্দ যুক্ত হয়ে যত নতুন শব্দ তৈরি হয়,
তার সবগুলোই এই উচ্চারণ রীতি অনুসারে হয়ে থাকে। যেমন- স্মৃতিশাস্ত্র,
স্মৃতিকথা, স্মৃতিস্তম্ভ ইত্যাদি।
-
স্ম এর সাথে ই-কার যুক্ত হলে, স ধ্বনি সানুনাসিক না হয়ে- নাসিক্য ম ধ্বনি
যুক্ত হিসেবে উচ্চারিত হয়। যেমন-
স্মিত [স্মি.তো]
[smi.t̪o]।
এর সাথে অন্য
শব্দ যুক্ত হয়ে যত নতুন শব্দ তৈরি হয়, তার সবগুলোই এই উচ্চারণ রীতি অনুসারে
হয়ে থাকে। যেমন- স্মিতহাস্য, স্মিতানন,
স্মিতদৃষ্টি ইত্যাদি।
- য-ফলা: শ-ফলা
যুক্ত শ, শব্দের আদিতে থাকলে, দেখা যায় এর সাথে আকার বা একার যুক্ত থকে।
- স্য
ধ্বনি:
-
তৎসম শব্দ শ
হিসেবে উচ্চারিত হয়। এর সাথে উ বা ঊ কার থাকলে, উকার উচ্চারিত হয়,
কিন্তু স্য থাকালে তা ওকার যুক্ত হয়।
যেমন−
-
স্য=
স্যন্দ
[শোন্.দো] [ʃon.d̪o]।
এরূপ:
স্যন্দ, স্যান্দন, স্যন্দিত।
- স্যূ=স্যূত
[শু.তো] [ʃu.t̪o]।
- বিদেশী
শব্দের উচ্চারণ বিদেশী ধ্বনির অনুসরণে শ বা স হয়। যেমন
স্যান্ডেল [স্যান্.ডেল্]
স্যান্ডউইচ [শ্যান্ডুউচ]
স্যার [স্যার্]
- দেশী,
অর্ধ-তৎসম, তদ্ভব শব্দের ক্ষেত্রে স্য শ বা স হয় প্রথাগত উচ্চারণে।
আঞ্চলিক উচ্চারণের প্রভাবও এক্ষেত্রে কাজ করে। এই জাতীয় শব্দ
স্যাঁতসেঁতে [শ্যাঁতশেঁতে বা স্যাঁতসেঁতে]
স্যাতলা [শ্যাতলা বা স্যাতলা]
মধ্য ও অন্ত্য যুক্তধ্বনি:
-
ছ-ফলা:
চ, ছ-ফলা
যুক্ত শ-এর উচ্চারণ অপরিবর্তিত থাকে। যেমন−
শিরোশ্ছেদ
[শি.রোশ.ছেদ্] [ʃi.roʃ.cʃʰed̪]
শব্দতালিকা: নিশ্চয়, পশ্চাৎ, পশ্চিম, পাশ্চাত্য, শিরোশ্ছেদ।
-
ন-ফলা:
ন-ফলা যুক্ত শ,
শব্দের মধ্য বা শেষে থাকলে, শ-এর উচ্চারণ অপরিবর্তিত থাকে, কিন্তু দ্বিত্ব রূপ
লাভ করে। শ্ব -এর সাথে অ-কার ধ্বনি থাকলে তা ওকারান্ত হয়। যেমন−
প্রশ্ন
[প্রোশ্.নো] [proʃ.no]
শব্দতালিকা: প্রশ্ন, শিশ্ন ইত্যদি।
-
ব-ফলা:
ব-ফলা
যুক্ত শ, শব্দের মধ্য বা শেষে থাকলে, শ-এর উচ্চারণ অপরিবর্তিত থাকে, কিন্তু
দ্বিত্ব রূপ লাভ করে। শ্ব -এর সাথে অ-কার ধ্বনি থাকলে তা ওকারান্ত হয়। যেমন−
অশ্ব
[অশ.শো] [ɔʃ.ʃo]
শব্দতালিকা: অগ্নিশ্বর, অধীশ্বর, অশ্ব, অশ্বত্থ, অশ্বারূঢ়, অশ্বিনী, আশ্বস্ত,
আশ্বাস, আশ্বিন, ঈশ্বর, নশ্বর, বিশ্ব, বিশ্বস্ত, বিশ্বাস ইত্যদি।
-
ম-ফলা:
ম-ফলা যুক্ত শ,
শব্দের মধ্য বা শেষে থাকলে, শ-এর উচ্চারণ অপরিবর্তিত থাকে, কিন্তু দ্বিত্ব রূপ
লাভ করে। তবে শেষের শ ধ্বনি সানুনাসিক হয়। যেমন−
রশ্মি
[রোশ্.শিঁ] [roʃ.ʃĩ]
শব্দতালিকা: অশ্ম, রশ্মি।
ব্যতিক্রম : কাশ্মীর [কাশ্.মির্]
-
য-ফলা:
য-ফলা
যুক্ত শ, শব্দের মধ্য বা শেষে থাকলে, শ-এর উচ্চারণ অপরিবর্তিত থাকে, কিন্তু
দ্বিত্ব রূপ লাভ করে। যেমন−
বৈশ্য
[বোইশ্.শো] [boiʃ.ʃo]
শব্দতালিকা: অবশ্য, আবশ্যক, কশ্যপ, কার্কশ্য, দৃশ্য, প্রকাশ্য, বৈশ্য।
-
র-ফলা:
র-ফলা
যুক্ত শ, শব্দের মধ্য বা শেষে থাকলে, শ-এর উচ্চারণ স হয়, দ্বিত্ব রূপ লাভ করে।
যেমন−
জনশ্রুতি
[জ.নোস্ স্রু.তি] [ɟɔ.no.sru.t̪i]
শব্দতালিকা: অপশ্রুতি, অভিশ্রুতি, অশ্রু, আশ্রয়, প্রশ্রয়, বিশ্রদ্ধ, বিশ্রম্ভ,
বিশ্রান্ত, বিশ্রাম, বিশ্রী, বিশ্রুতি, মিশ্রিত ।
-
রেফ:
রেফ-যুক্ত শ,
শব্দের মধ্য বা শেষে থাকলে, শ-এর উচ্চারণ অপরবর্তিত থাকে এবং শ দ্বিত্ব রূপ লাভ
করে। যেমন−
দর্শক
[দর্শ্.শোক্] [d̪ɔrʃ.ʃok]
-
শব্দতালিকা: অর্শ, দর্শন, বর্শা।
-
ল-ফলা:
ল-ফলা
যুক্ত শ, শব্দের মধ্য বা শেষে থাকলে, শ-এর উচ্চারণ স হয় এবং দ্বিত্ব রূপ লাভ
করে। তবে এই দ্বিত স, ল-এর পূর্বে বসে। যেমন−
অশ্লীল
[অস্.স্লিল্] [ɔs.slil]
শব্দতালিকা: অশ্লেষা, আত্মস্লাঘা [আত্মোস্-স্লাঘা], বিশ্লিষ্ট, বিশ্লেষণ,
বিশ্লেষিত।
শ্রবণ নমুনা
স-এর লিপি পরিচিতি
অন্যান্য বাংলা লিপির মতই
ব্রাহ্মীলিপি থেকে স-উদ্ভূত হয়েছে।
খ্রিষ্টপূর্ব তৃতীয় থেকে প্রথম শতাব্দীর ভিতরে এই বর্ণটি বিভিন্ন চিহ্ন দ্বারা
প্রকাশ করা হয়েছে।
নিচের ছকে এই বিবর্তিত রূপগুলোর নির্দশন তুলে ধরা হলো।
কুষাণলিপিতে
(১০০-৩০০ খ্রিষ্টাব্দ)
ও
গুপ্তলিপিতে বিচিত্র ধরনের স-এর প্রকরণ পাই।
নিচের
চিত্রে
ব্রাহ্মীলিপি
থেকে
গুপ্তলিপি
পর্যন্ত ক-বর্ণের রূপান্তরের নমুনা দেখানো হলো।
কুটিললিপিতে
আমরা স-এর যে রূপটি পাই, তারই রকমফের পরবর্তী সময়ের
চিহ্নগুলোতে পাওয়া যায়।
নিচের এই পরিবর্তনের নমুনাগুলো দেখানো হলো।
দেখুন :
স (ক্রিয়ামূল)
স
(প্রত্যয়)
স (সন্) (প্রত্যয়)