ভারতবর্ষে গ্রামোফোন রেকর্ড

শব্দধারণ এবং তা বাজানোর প্রক্রিয়ার গবেষণার সূত্রে তৈরি হয়েছিল রেকর্ক এবং রেকর্ডবাদন যন্ত্র। নানা গবেষকের সূত্রে এ বিষয়ে যে উন্নয়ন ঘটেছিল, থমাস আলভা এডিসন  তার চূড়ান্ত একটি রূপ দিতে সক্ষম হয়েছিলেন। ১৮৭৭ খ্রিষ্টাব্দের মে-জুলাই মাসের ভিতরে থমাস আলভা এডিসন শব্দ ধারণ এবং তা পুনরায় বাজানোর প্রক্রিয়াটির উন্নয়ন ঘটে। এই বছরের ২১শে নভেম্বরে তিনি চূড়ান্ত রূপ দিতে সক্ষম হন এবং ২৯ নভেম্বর ডিসেম্বর মাসে তিনি এই যন্ত্রটিকে সর্ব সমক্ষে হাজির করেন। তিনি এর নাম দিয়েছিলেন ফোনোগ্রাফ। ১৮৭৮ খ্রিষ্টাব্দের ১৯ ফেব্রুয়ারিতে এডিসনের ফোনোগ্রাফ এই আবিষ্কারের জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র পেটেন্ড লাভ করেন। এরপর থেকে শুরু হয়েছিল তাঁর ফোনোগ্রাফের যুগ।

আমেরিকায় ফোনোগ্রাফ যুগের সূচনার মাত্র ১ বছর পরে ভারতবর্ষে এডিসনের ফোনোগ্রাফ
 
১৮৭৯ খ্রিষ্টাব্দে স্যামুয়েল হ্যারাডন নামক মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের একজন নাগরিক, একটি নিম্নমানের গ্রামোফোন যন্ত্র সাথে করে কলকাতা আসেন। তিনি কলকাতা টাউন হলে 'মহামেডান লিটারেরি সোসাইটির বার্ষিক সম্মেলনে এই যন্ত্রটি প্রদর্শন করেন। এরপর ১৮৮৮ খ্রিষ্টাব্দে কলকাতার সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজের অধ্যাপক ফাদার লাফোঁ একটি ফনোগ্রাফ কলকাতায় আনেন। অধ্যাপক ফাদার লাফোঁর প্রিয় শিষ্য জগদীশচন্দ্র বসু এই যন্ত্র নিয়ে গবেষণা করেন।
এই সময় এই বিষয়ে আমেরিকা ও ইউরোপে ব্যাপক গবেষণা চলমান ছিল এবং একে একে এদের উন্নয়নকৃত উন্নতর পণ্য বাণিজ্যিকভাবে বাজারে আসা শুরু হয়েছিল। তাই লাফোঁ এবং জগদীশচন্দ্রের গবেষণা শেষ পর্যন্ত পরিত্যাক্ত হয়েছিল।

১৮৯১ খ্রিষ্টাব্দের দিকে তিনি প্রেসিডেন্সি কলেজের পরীক্ষাগারে জন্য একটি ফনোগ্রাফ যন্ত্র আনার ব্যবস্থা করেন। গণেন্দ্রনাথ ঠাকুরেরর বাড়িতে খামখেয়ালী সভা'র প্রথম অধিবেশন হয় ২৪ মাঘ ১৩০৩ বঙ্গাব্দে [শুক্রবার ৫ ফেব্রুয়ারি ১৮৯৭ খ্রিষ্টাব্দে। এই সভায় ফনোগ্রাফ যন্ত্রে গান ও কবিতা শ্রবণের ব্যবস্থা করা হয়েছিল। এর অর্থ হলো
১৮৯৭ খ্রিষ্টাব্দের ভিতরে ঠাকুর বাড়িতে ফনোগ্রাফের অনুপ্রবেশ ঘটেছিল।
 
১৯০০ খ্রিষ্টাব্দের দিকে হেমেন্দ্রমোহন বসু একটি 'এডিসন ফোনোগ্রাফ' কিনেছিলেন। এরপর ব্যক্তিগত উদ্যোগে তাঁর কিছু বন্ধু এবং সে কালের বিখ্যাত কিছু শিল্পীর গান মোমের সিলিন্ডার রেকর্ডবন্দী করা শুরু করেছিলেন। হেমেন্দ্রমোহনের সেই সব বন্ধুদের মধ্যে ছিলেন তাঁর মামা া জগদীশচন্দ্র বসু, প্রফুল্লচন্দ্র রায়, সুরেন্দ্রনাথ মৈত্র, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, দ্বিজেন্দ্রলাল রায় প্রমুখ। সাউন্ড রেকর্ডিং-এর প্রতি হেমেন্দ্রমোহনের আগ্রহ তাঁকে প্রভাবিত করেছিল ফোনোগ্রাফ ও সিলিন্ডার রেকর্ডের ব্যবসায় আসতে।

ইতিমধ্যে গ্রামোফোন কোম্পানি রেকর্ড ব্যবসার উদ্দেশ্যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপ, রাশিয়া-সহ কিছু দেশে কণ্ঠসঙ্গীত ও যন্ত্রসঙ্গীত রেকর্ডে ধারণ ও বিক্রয়ের উদ্যোগ নিয়েছিল। এরই ধারাবহিকতায় ভারতীয় গানের রেকর্ড বাজারজাত করার উদ্যোগ গ্রহণ করে তারা। ১৮৯৯ খ্রিষ্টাব্দে কোম্পানির রেকর্ড বিশেষজ্ঞ ফ্রেডরিক উইলিয়াম গেইসবার্গ লণ্ডনে অবস্থানরত কিছু ভারতীয়দের দিয়ে ৪৪টি শ্রবণ নমুনা রেকর্ডে ধারণ করেছিলেন। এর ভিতরে ছিল হিন্দি, আরবি, ফার্সি, উর্দু, পাঞ্জাবি ভাষার গান ও আবৃত্তি। গানের তালিকায় ছিল রামায়ণ, হোলি। আবৃত্তি নমুনায় ছিল হাফিজ ও মির্জা গালিবের কবিতা, গুরু নানকের দোঁহ, কোরান শরিফ থেকে তেলাওয়াত। এর শিল্পীদের নাম তালিকায় পাওয়া যায় ক্যাপ্টেন ভোলানাথ, হরনাম দাস এবং আহমেদ। উল্লেখ্য এই রেকর্ডগুলোর এখনো কোনো সন্ধান পাওয়া যায় নাই।  তবে গ্রামোফোন কোম্পানির রেকর্ড তালিকায় এসব রেকর্ডের নাম পাওয়া যায়।
১৯০১ খ্রিষ্টাব্দে গ্রামোফোন কোম্পানি রেকর্ডের বাজার অনুসন্ধানে জন ওয়াটসন হডকে ভারতে পাঠায়। ওয়াটসন কলকাতা, মাদ্রাজ, বোম্বে ও দিল্লি ভ্রমণ করেন এবং রেকর্ড বাণিজ্যের বিপুল সম্ভাবনা দেখতে পান। ভারতীয় ভাষায় গান এবং আবৃত্তি প্রকাশের ভারতে রেকর্ড ব্যবস্থা চালু করার জন্য কোম্পানির পক্ষে কলকাতায় একটি অফিস খোলেন।  এই সূত্রে ভারতীয় সঙ্গীতের রেকর্ডের জন্য উপযুক্ত লোক পাঠানোর সুপারিশ করেন। এই অনুরোধে কোম্পানি ভারতীয় সঙ্গীত ও আবৃত্তির রেকর্ডের অভিজ্ঞাতা আছে, এই বিবেচনায় গেইসবার্গের নেতৃত্বে একটি রেকর্ড কর্মীকে পাঠান। ১৯০২ খ্রিষ্টাব্দের ২৮ অক্টোবর গেইসবার্গ তাঁর দলবল নিয়ে কলকাতায় পৌঁছান।

গেইসবার্গ প্রথমে রেকর্ডিং ব্যবস্থা স্থাপন করার পর
W.S. Burk এর একটি ইংরেজি গান রেকর্ড করেন। এরপর ৮ই নভেম্বর তিনি দুটি গান রেকর্ড করেন। প্রথম গান ছিল কীর্তন 'আমি কি সজনী কুসুমেরি'। গানটি গেয়েছিলেন নর্তকী মিস্ শশীমুখী। অপর একটি গান গেয়েছিলেন মিস্ ফণীবালা। এঁর গাওয়া গানটির হদিস পাওয়া যায় নি। এই সূত্রে রেকর্ডের বাংলা গানের প্রথম শিল্পী হিসেবে মিস্ শশীমুখী এবং মিস্ ফণীবালা স্মরণীয়া হয়ে রয়েছেন। এই গানে গেইসবার্গ সন্তুষ্ট হতে পারেন নি। এরপর তিনি আরও ভালো কণ্ঠের শিল্পীদের খুঁজতে থাকেন। এর দুই দিন পর, তৎকালিন ক্ল্যাসিকাল থিয়েটারের সহায়তায় গেইসবার্গ আরও কিছু শিল্পীর গান রেকর্ড করেন। এঁদের গানেও গেইসবার্গ সন্তুষ্ট হতে পারেন নি। এরপর তিনি ১১ই নভেম্বর গহরজানের গান রেকর্ড করেন। এ ছাড়া এই দিনে গান রেকর্ডে গান গেয়েছিলেন শৈল বাঈ। তবে গহরজানের গান শুনে গেইসবার্গ মুগ্ধ হন। তিনি গেয়েছিলেন দাদরা অঙ্গের একটি হিন্দি গান। গানটির শিরোনাম হিসেবে উল্লেখ ছিল 'Mahomedan Song'। তাঁর কণ্ঠে রেকর্ডকৃত প্রথম বাংলা গান ছিল 'ভালবাসিবে বলে ভালোবাসিনে।' এরপর তিনি গহরজানের কণ্ঠে আরও কয়েকটি গানের রেকর্ড করেন। এরপর কয়েকদিনে তিনি রেকর্ড করেন আরও কিছু শিল্পীর গান রেকর্ড করেন। এই শিল্পীরা ছিলেন হরিমতি. সুশীলা, বিনোদিনী, কিরণ, রাণী প্রমুখ। এছাড়া তিনি রেকর্ড করেছিলেন ক্ল্যাসিক থিয়েটার ও করিনথিয়ান থিয়েটার বৃন্দবাদন।

১৯০৩ থেকে ১৯০৮ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত জার্মানীর হ্যানোভারে তৈরি রেকর্ড গ্রামফোন কোম্পানি তিন ধরনের রেকর্ড বাজারজাত করে। এর সবই ছিল এক পার্শ্বিক। ১৯০৭ খ্রিষ্টাব্দের ডিসেম্বর পর্যন্ত এ সকল  রেকর্ডে থাকতো 'রেকর্ডি পরীর' ছোটো মনোগ্রাম।  এসকল রেকর্ড বাজারজাত করতো- গ্রামোফোন এন্ড টাইপরাইটার লিমিটেড। রেকর্ডগুলোর এবং আকার ছিল-

১৯০৭ খ্রিষ্টাব্দে এই কোম্পানির নিউইয়র্ক প্রতিনিধি আলফ্রেড ক্লার্ক প্যারিস অপেরার জন্য ২৪টি সমতলীয় রেকর্ড তৈরি করে। এই রেকর্ডগুলো লোহা এবং সীসার তৈরি বাক্সে ভরে সংরক্ষণ করা হয় অপেরা হাউসের নিচের কক্ষে।

১৯০৮ খ্রিষ্টাব্দের শুরুর দিকে এই রেকর্ড প্রকাশের বিষয়টি চলে যায় গ্রামোফোন রেকর্ড কোম্পানি লিমিটেডএবং এদের অধীনস্থ কোম্পানির হাতে অধীনে। সে সময় এ সকল রেকর্ডে লেখা থাকতো 'মেড ইন জার্মানি'।

১৯০৮ খ্রিষ্টাব্দে কলকাতার শিয়ালদহের ১৩৯ বেলেঘাটা সড়কে রেকর্ড উৎপাদনের জন্য কারখানা স্থাপিত হয়। এসকল রেকর্ডে তৈরির স্থানের নাম হিসেবে থাকতো- 'মেড ইন ক্যালকাটা'। কলকাতা থেকে রেকর্ড প্রকাশের ফলে রেকর্ডের মূল্যও কমে যায়। ফলে ভারতে রেকর্ড ব্যবসার একটি সুবর্ণ ক্ষেত্র তৈরি হয় এবং ভারতে সিলিণ্ডার রেকর্ডের ব্যবসা দ্রুত বন্ধ হয়ে যায়।  স্থানীয়ভাবে সিলিণ্ডার গ্রামোফোন রেকর্ডে উৎপাদনের ধারায় ব্যবসায় টিকে থাকতে না, পেরে প্রথম বিলুপ্ত ঘটে প্যাথেফোন রেকোর্ড কোম্পানির।

১৯১০ খ্রিষ্টাব্দের অক্টোবর মাসে
Gramophone record (৭ ইঞ্চি), Gramophone Concert Record । (১০ ইঞ্চি) এবং Gramophone Concert Record । (১২ ইঞ্চি) রেকর্ড কলকাতার কারখানা থেকে উৎপাদিত শুরু করে। এই সময় থেকে রেকর্ড লেবেলে 'পরী' বা কুকুরের ছবি মুদ্রিত হতো।

১৯১২-১৩ খ্রিষ্টাব্দ এক পাশে মূদ্রিত রেকর্ডগুলো দ্বিপার্শিক রেকর্ড হিসেবে পুনঃমূদ্রিত হতো। এই সময় জনপ্রিয় রেকর্ডগুলোর রঙ ছিল বেগুনি।  এসকল রেকর্ডের দাম ছিল ৩ রুপি ১২ আনা। যেখানে সাধারণ কালো রঙের রেকর্ডের দাম ছিল ৩ রুপি। পরে বহু জনপ্রিয় গান বেগুনি রেকর্ডে মুদ্রিত হয়েছিল। এত সব প্রতিযোগীদের ভিতরে গ্রামোফোন কোম্পানি ভারতে তার জায়গা ধরে রাখতে সক্ষম হয়।

১৯১৫ খ্রিষ্টাব্দের পূর্বে রেকর্ডের ঘূর্ণনমান সুনির্দিষ্ট ঠিক রাখা হতো না। ফলে এক যন্ত্রের রেকর্ড করা শব্দ বা রেকর্ড অন্য যন্ত্রে যথাযথভাবে বাদিত হতো না। এই অসুবিধা দূর করার জন্য, ১৯১৫ খ্রিষ্টাব্দের দিকে এই ঘূর্ণন গতি নির্দিষ্ট করা হয়। প্রথম এই নির্দিষ্ট গতি ছিল ৭৮-আরপিএম। তখন রেকর্ডের প্রতি পিঠে প্রায় ৪১ মিনিটের শব্দ ধারণ করা হতো। এই সময় সিলিণ্ডার বা চোঙের মধ্যে রেকর্ডের শব্দকে প্রেরণ করে শব্দের উচ্চতা বৃদ্ধি করা হয়েছিল

১৯১৫ খ্রিষ্টাব্দে গ্রামোফোন রেকর্ড কোম্পানি তাদের রেকর্ডকে 'হিজ মাস্টার্‌স ভয়েস' লেবেলে বাজারজাত করা শুরু করে। এই সময়ে এদের রেকর্ডের লেবেল  কুকুরের ছবি ছিল। কুকুরের ছবিযুক্ত লেবেল-সহ রেকর্ড প্রথম প্রকাশিত হয়েছিল ১৯১৬ খ্রিষ্টাব্দের জানুয়ারি মাসে।

এই সময় শিল্পীকে একটি টিনের চোঙের সামনে বসে গান পরিবেশন করতে হতো। এই গান মোমের চাকতির উপর রেকর্ড হতো। এই মোমের উপর মুদ্রিত রেখা তামার চাকতিতে ছাপ নেওয়া হতো। একে বলা হতো ম্যাট্রিকস। পরে ইবোনাইট মিশ্রিত গালার নরম চাকতিতে ছাপা হতো।

১৯২০ খ্রিষ্টাব্দের ইলেকট্রিক লাউড স্পীকার গ্রামোফোনে ব্যবহার শুরু হয়। রেকর্ডের ঘূর্ণন মানের বিচারে তিন ধরনের রেকর্ড বাজারজাত হয়েছিল।

১৯২৫ খ্রিষ্টাব্দে সকল ধরনের রেকর্ডের ঘূর্ণনগতির একটি আদর্শমান দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হয়। এই সময় রেকর্ডের সাধারণ ঘূর্ণন মান ৭৮ আরপিএম ঠিক রেখে অন্যান্য রেকর্ডের ঘূর্ণনগতি নির্ধারণের উদ্যোগ নেওয়া হব। এই সূতরে দুটি ঘূর্ণন গতিকে আদর্শ হিসাবে গ্রহণ করা হয়। এই মান দুটি হলো— 45 এবং 33⅓ আরপিএম।

১৯৩০ খ্রিষ্টাব্দের দিকে বেশ নমনীয় প্লাস্টিকের রেকর্ড বাজারজাত করেছিল কিছু কোম্পানি। এর মধ্যে বিশেষভাবে উল্লেখ করার মতো ছিল জার্মানির ফোনিকর্ড এবং ব্রিটিশ ফিল্মোফোন ও গুডসন। কিন্তু এদের কোনো রেকর্ডই শেষ পর্যন্ত বাজারে টিকে থাকতে পারে নি।

 
১৯৩৩ খ্রিষ্টাব্দে ভারতে কলাম্বিয়া কোম্পানির মালিকানা লাভ করেছিল কলকাতার স্থানীয় বাঙালি মালিক। এর পরিচালনায় ছিলেন নৃপন মজুমদার। তাঁর উদ্যোগে ভারতীয় কলাম্বিয়া রেকর্ড কোম্পানি হিস মাস্টার ভয়েস -এর প্রবল প্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে উঠে। এই কোম্পানির উদ্যোগে ১৯৩৭-৩৮ খ্রিষ্টাব্দের দিকে 'রিগ্যাল রেকর্ড' লেবেলে কিছুদিন রেকর্ড প্রকাশিত হয়েছিল। এসব কার্যক্রমের মধ্য দিয়ে কলম্বিয়া রেকর্ডের বাজার অনেকটাই দখল করে নিতে সক্ষম হয়েছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত হিস মাস্টার ভয়েস -এর কৌশলে এই কোম্পানি তাদের অংশভাগী হয়ে গিয়েছিল।

১৯৪০ খ্রিষ্টাব্দের বেতার সম্প্রচারের জন্য ১৬ ইঞ্চি ব্যাসের ভাইনাল রেকর্ড প্রকাশ করা হয়েছিল। এগুলোর ঘূর্ণগতি ছিল ৩৩ আরপিএম। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ভাইনাল রেকর্ড একটি দীর্ঘবাদন রেকর্ডের আদর্শ মান হিসেবে দাঁড়িয়ে গিয়েছিল।

১৯৪৮ খ্রিষ্টাব্দে কলাম্বিয়া রেকর্ড কোম্পানি প্রথম দীর্ঘবাদন রেকর্ড প্রকাশ করে। এই সময়ে ঘূর্ণন গতি ছিল 33⅓ আরপিএমি।

১৯৫৬-১৯৮৫ ফরাসি French Pathé Cellodiscs পাতলা ভাইনাল প্লাস্টিক দিয়ে রেকর্ড তৈরি করেছিল। এগুলো খুব বেশিদিন ব্যবহার করা যেতো না। 
 
গ্রামোফোন রেকর্ডের যাত্রা অনুসরণ করে, দীর্ঘকাল ধরে ভারতবর্ষে তাদের বিশাল বাজার ধরে রাখতে সক্ষম হয়েছিল। একবিংশ শতাব্দীতে কম্পিউটার, সিডি ও ডিভিডি প্রযুক্তির কারণে সারা পৃথিবীতে রেকর্ড শিল্পে যে ধ্বস নেমেছে, তারই প্রভাবে অন্যান্য রেকর্ড কোম্পানির মতো গ্রামোফোন রেকর্ড এখন বিলুপ্তির পথে।

এইচএমভি রেকর্ড লেবেল

 



হিস মাস্টার ভয়েস

 



 

 



সূত্র:
The Gramophone Company's First Indian Recordings (1899-1908)/Michaet Kinnear