করোনা ভাইরাসের আণুবীক্ষিক চিত্র
করোনা ভাইরাস
Coronaviruses
এটি একটি এক সূত্রক আরএনএ ভাইরাস জীববিজ্ঞানের শ্রেণিবিভাজন মতে- এটি Coronaviridae গোত্রের অন্তর্গত কিছু ভাইরাসের সাধারণ নাম। উপগোত্র হিসেবে এদেরকে রাখা হয়েছে  Orthocoronavirinae উপগোত্রের অধীনে। বাল্টিমোর শ্রেণিকরের বিচারে এরা +ssRNA ভাইরাস। অর্থাৎ এদের দেহে রয়েছে এক সূত্রক আরএনএ

এক শব্দে "করোনা" গ্রিক κορώνη শব্দের অর্থ হলো- মাল্য বা জয়মাল্য। ইলেক্ট্রোনিক অণুবীক্ষণ যন্ত্রে গোলাকার এই ভাইরাসে গায়ে ছোটো ছোটো বুদ্বুদের মতো অংশ দেখা যায়। দেখতে অনেকটা কদম ফুলের মতো মনে হয়। বিজ্ঞানীরা একে  সূর্যের Corona (ছটামণ্ডল)-এর সাথে তুলনা করে নাম রেখেছিলেন- করোনা ভাইরাস। পরে ভাইরাসের নাম প্রদানকারী আন্তর্জাতিক সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল কমিটি অব ট্যাক্সনমি অব ভাইরাসেস এই ভাইরাসটিকে সার্স-সিওভি-২ হিসেবে পরিচিতি দিয়েছে। জেনেভায় বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এর নামকরণ করেছে 'করোনাভাইরাস ডিজিজ ২০১৯'। এর সংক্ষিপ্ত নাম 'কোভিড-১৯।"

বর্গ: অনির্দেশিত
পরিবার:
Nidovirales
গোত্র: Coronaviridae
উপগোত্র: Orthocoronavirinae
গণ: 
  • Alphacoronavirus
  • Betacoronavirus
  • Gammacoronavirus
  • Deltacoronavirus

করোনা ভাইরাস  সম্পর্কে প্রথম জানা যায়, বিংশ শতাব্দীর ষাটের দশকে। সে সময়ে মুরগির ব্রঙ্কাইটিস ধরনের রোগের অনুসন্ধানে এই ভাইরাসের কথা জানা যায়। এ ছাড়া সে সময়ে সর্দি-কাসি হয়েছে এমন মানুষের নাসারন্ধ্র থেকে এই ভাইরাসের দুটি প্রকরণ নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছিল। এর নাম দেওয়া হয়েছিল- human coronavirus 229E এবং human coronavirus OC43 । এরপর এই ভাইরাসের আরও বেশ কিছু নমুনা আবিষ্কৃত হয়েছে।

করোনা ভাইরাসের ক্রমবিবর্তনের ধারা

আদিম পৃথিবীতে প্রায়
৪০০ কোটি খ্রিষ্ট-পূর্বাব্দের ভিতরে সৃষ্টি হয়েছিল ফসফরিক এ্যাসিড, নানা ধরনের চিনি, নাইট্রোজেন ঘটিত ক্ষারক (পিউরিন ও পিরামিডিন)। আদি সমূদ্রের উপযুক্ত পরিবেশে এই সকল জটিল অণুসমূহের ক্রম-সংযোজনে সৃষ্টি হয়েছিল আদি নিউক্লেইক এ্যাসিড এই এ্যাসিডে বংশগত তথ্য সংরক্ষণ করা ও সুনির্দিষ্ট প্রোটিন অণু তৈরি করার ক্ষমতার সূত্রে এক ধরনের আক্ষেপ সৃষ্টি হয়েছিল। রাসায়নিক আসক্তির সূত্রে এই এ্যাসিডগুলো গড়ে তুলেছিল আরএনএ [
ribonucleic acid (RNA)] । মূলত এই সৃষ্টি প্রক্রিয়ার ভিতর মধ্য দিয়েই তৈরি হয়েছিল আদি জীবকোষ। আদি জীবকোষের এই দশা থেকেই সম্ভবত আদি জীবকণিকারূপে ভাইরাসের উদ্ভব হয়েছিল। তবে প্রাচীন শিলাস্তরে এর কোনো নমুনা পাওয়া যায় নি। জীববিবর্তনের ধারায় এই ধারণা করা হয়, শুধু ভাইরাসের আদিম কোষীয় উপকরণ বিবেচনা করে। এরপর থেকে ভাইরাসগুলো তাদের জিনোম পাল্টাতে পাল্টাতে আধুনিক দশায় এসে পৌঁছেছে।

আদিম ভাইরাসের একটি অংশ উষ্ণরক্তধারী প্রাণিকুলের ভিতরে সংক্রামক রূপ লাভ করেছিল খ্রিষ্টপূর্ব
৩৩০০ অব্দের দিকে। এই সূত্রে তৈরি হয়েছিল আদিম Betacoronavirus (বেটাকরোনাভাইরাস) গণের ভাইরাস। পরে এরা নিজেদের পরিবর্তন করে আরও কিছু গণে সম্প্রসারিত হয়েছিল। এখন পর্যন্ত করোনাভাইরাসের চারটি গণের সন্ধান পাওয়া গেছে। এগুলো হল-

বিজ্ঞানীরা মনে করেন যে, বাদুর এবং বিভিন্ন পাখির দ্বারা এই ভাইরাস ছড়িয়ে পড়েছিল ৩৩০০ থেকে ২৪০০ খ্রিষ্টপূর্বাব্দের ভিতরে। এদের দ্বারা মানুষ সংক্রামিত হওয়ার পর এরা বহুবার তাদের জিনোম পাল্টে নতুন নতুন রূপ লাভ করেছে। বোভাইন এবং মানব করোনাভাইরাস ওসি৪৩ ভাইরাস ছড়িয়ে পড়েছিল ১৮৯০ খ্রিষ্টাব্দের দিকে। অন্যদিকে ১৮ শতকের শেষদিকে বোভাইন করোনাভাইরাস ছড়িয়েছিল ইকুয়াইন করোনাভাইরাস প্রজাতি থেকে।

মানব করোনাভাইরাস এনএল৬৩ এবং বাদুড়ের করোনাভাইরাসের এমআরসিএ ৫৬৩-৮২২ বছর আগে উৎপত্তি লাভ করে। আলপাকা করোনাভাইরাস এবং মানব করোনাভাইরাস ২২৯ই-এর উদ্ভব হয়েছিল ১৯৬০ খ্রিষ্টাব্দের দিকে। আর ১৯৮৬ খ্রিষ্টাব্দে বাদুড় করোনাভাইরাস এবং সার্স-কোভির সাথে সম্পর্কযুক্ত ভাইরাস উৎপত্তি লাভ করেছিল।

করোনা ভাইরাসের যে সকল প্রজাতি মানুষের ক্ষতি করে থাকে তাকে দুটি ভাগে ভাগ করা হয়ে থাকে। এই ভাগ দুটি হলো-

কোভিড-১৯-এর আত্মপ্রকাশ ও মহামারীতে রূপ লাভ

করোনা ভাইরাসের লক্ষণ ও প্রতিরোধ
জানুয়ারি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাএই ভাইরাস আক্রান্ত রোগীদের যে লক্ষণের কথা উল্লেখ করেছে, তা হলো- প্রাথমিকভাবে জ্বর, হাঁচি, শুষ্ক কাসি, গলা ব্যথা, মাথা ব্যথা, শ্বাসকষ্ট হয়। এবং চূড়ান্ত অবস্থায় তা নিউমোনিয়াতে রূপ লাভ করে। এবং শেষ পর্যন্ত মৃত্যু ঘটে থাকে। তবে এই ভাইরাস আক্রান্ততের মৃত্যুর হার মাত্র ২%। দুর্বল শ্বাসন্তের অধিকারী, বয়স্ক মানুষ এবং শিশুদের মৃত্যুর হার সবচেয়ে বেশি।

এই ভাইরাস আক্রান্ত রোগের কাশির সাথে এই রোগ ছাড়ায়। তাই এর প্রাথমিক প্রতিরোধের জন্য মাস্ক ব্যবহার করা সঙ্গত। এছাড়া আক্রান্ত এলাকায় বিভিন্ন স্থানে এই ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ে। এ সব জায়গার দ্রব্যাদি স্পর্শ করলে হাতে এই ভাইরাস চলে আসে। এই অবস্থায় হাত দিয়ে নাক, মুখ স্পর্শ করলে, ভাইরাস দ্বারা সংক্রামণের সম্ভাবনা থাকে। তাই হাত সাবান দিয়ে পরিষ্কার না করে, মুখ বা নাক স্পর্শ করতে নিষেধ করা হয়।

চীনে আটকা পরা বাংলাদেশের নাগরিক ব্যবসা, শিক্ষাগ্রহণ, ভ্রমণ ইত্যাদি কারণে বাংলাদেশী নাগরিক থেকে চীনে নিয়মিত যাতাওয়াত করে থাকেন। চীনে করোনা ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার কারণে বহু বাংলাদেশী নাগরিক চীনে আটকা পড়ে। প্রথম দিক এক্ষেত্রে চীন স্বাস্থ্যগত নিরাপত্তার কারণে এদের চীন ত্যাগ করার অনুমতি দেয় নি। পরে বাংলাদেশের উদ্যোগে এদেরকে দেশে ফিরিয়ে আনার ব্যবস্থা করা হয়। প্রথমে উহানে থাকা ৩৬১ জন বাংলাদেশী দেশে ফেরার জন্য নিবন্ধন করেন। শেষ পর্যন্ত ৩১৪ জনের দেশে ফেরার সিদ্ধান্ত হলেও দু’জনের শরীরে অধিক তাপমাত্রা থাকায় তাদের রেখে আসা হয়। ফলে ৩১২ জন নাগরিক ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা দেন।

২০২০ খ্রিষ্টাব্দের ১লা ফেব্রুয়ারি শনিবার দুপুর ১১টা ৫৫ মিনিটে উহান থেকে ৩১২ যাত্রী নিয়ে বিমানের বিশেষ ফ্লাইটটি ঢাকার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরে পৌঁছায়। এরপর বিআরটিসির ৮টি বাসে ৩০২ জনকে আশকোনা হজ ক্যাম্পে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে তাদেরকে ১৪ দিনের জন্য চিকিৎসকদের পর্যবেক্ষণে রাখা হয়। ফিরে আসা যাত্রীদের মধ্যে ৭ জনের শরীরের জ্বর থাকায়, কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে নিবিড় পর্যবেক্ষণের জন্য প্রেরণ করা হয়। পরে এদের দেহে কোনো করোনা না পাওয়ায় সবাইকে বাড়িতে ফিরে যাওয়ার অনুমতি দেওয়া হয়।